বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব ষোল
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায় ।। প্রথম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। দ্বিতীয় পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। তৃতীয় পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। ষষ্ঠ পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। পঞ্চম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। চতুর্থ পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। সপ্তম পর্ব ।।
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। অষ্টম পর্ব ।।
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। নবম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব দশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। পর্ব এগারো
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বারো
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব চৌদ্দ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পনের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব ষোল
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব সতের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব আঠার
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব উনিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব একুশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বাইশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তেইশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব চব্বিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ
ষোল.
দুইটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে কৃবুস প্রতিনিধি নেই। কেন নেই? অধিপতি উতু ইচ্ছে করেননি তাই। তিনি মনে করেছেন বদলানোর দরকার নেই, তাই আগের দুই মন্ত্রী এখনও রয়ে গেছেন। তাদেরকে আজ পৃথক সময়ে ডেকেছেন অধিপতি উতু। এখন পর্যন্ত নতুন মন্ত্রিসভার কোনো বৈঠকে তাদেরকে আসতে বলা হয়নি। তারাও আসতে উদ্যোগ নেননি, কিংবা বলা চলে সাহস করেননি। আসলে তারা নিজেরাও ঠিক মতো জানেন না, তাদের মন্ত্রীত্ব আছে কী নেই। অধিপতির দফতরে এসেছেন শিক্ষামন্ত্রী উমেদ। তিনি এই মুহূর্তে অধিপতি উতুর মুখোমুখি বসে আছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষেও তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চোখ-মুখে চাপা আতংক। জোর করে মুখে হাসি ধরে রাখতে চাইছেন। ফলে চেহারাটা হয়েছে দেখবার মতো। অনেকটা কৌতুকাভিনেতার মতো লাগছে তাকে।
আপনি এত ঘাবড়ে আছেন কেন? অধিপতি উতু আন্তরিক গলায় বললেন। যদিও ভেতরে ভেতরে তিনি বিষয়টা উপভোগ করছেন।
কই, না-আ-আ তো। শিক্ষামন্ত্রী উমেদের গলা কেঁপে গেল।
একজন মন্ত্রীর এই ভড়কে যাওয়া আচরণ করলে চলে? অধিপতি উতু হেসে বললেন।
ঠিক আছে, দয়া করে বলবেন কেন ডেকেছেন?
নিশ্চয়ই শুধু খোশগল্প করার জন্য নয়।
জানি, সেটা-আ-আ জানি। আপনি চাইলে আমি এখনই পদত্যাগ করতে রাজি।
আর না চাইলে?
আপনি যা বলবেন তাই করব।
তাহলে তাকান আমার দিকে।
শিক্ষামন্ত্রী উমেদ কথা না বাড়িয়ে তাকালেন অধিপতি উতুর দিকে। তন্ময় হয়ে
তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। তার মাথা ঝিমঝিম করছে। ফাঁকা-ফাঁকা লাগছে।
একটু সময় পরেই ঠিক হয়ে গেল সব।
অধিপতি উতু মৃদু হাসলেন। আবিষ্ট করার কাজ শেষ। শিক্ষামন্ত্রী উমেদ এত দুর্বল চিত্তের মানুষ, তিনি ভাবতেই পারেননি। এমন মানুষকে তো আবিষ্ট করা আর না করা সমান কথা। তারপরও কোনো ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।
কেমন লাগছে এখন? অধিপতি উতু জিগ্যেস করলেন।
ভালো লাগছে। শিক্ষামন্ত্রী উমেদ বললেন। সত্যি নিজেকে বেশ ঝরঝরে লাগছে তার।
শুনুন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আপনিই থাকবেন।
কী বলছেন ! আমি কি ঠিক শুনেছি ? উমেদ তার খুশি চেপে রাখতে পারল না।
ঠিকই শুনেছেন। শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করা কৃবুদের কাজ নয়। তাদের করণীয় আরও অনেক কিছু আছে। আপনি নিশ্চিন্ত মনে আগের মতোই কাজ করে যান। আগের ঢঙেই কাজ করব মহামান্য অধিপতি, তবে সেটা হবে আসলে আপনার কথা মতো। শিক্ষামন্ত্রী উমেদ হেসে বললেন। এতক্ষণে তার হাসি স্বাভাবিক হয়েছে, চেহারার গাম্ভীর্যও ফিরে এসেছে।
সেটা আমি জানি। মৃদু হেসে চোখে চোখ রেখে বললেন অধিপতি উতু।
শিক্ষামন্ত্রী উমেদ খুশি চিত্তে বিদায় নেওয়ার মিনিট আটেক পর অধিপতির দফতরে এলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী অতনু। তিনি নিজে এক সময় নামকরা অভিনেতা ছিলেন। এখনও সেই জনপ্রিয়তার বেশ খানিকটা অবশিষ্ট আছে। বাইরে বের হলে লোকজনের আচরণ দেখে তো তার তাই মনে হয়। আজ অধিপতি উতু কেন ডেকেছেন কে জানে? মন্ত্রীত্ব চলে গেলে যাবে। এই নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন তিনি। জীবনে তো আরও অনেক কিছু করার আছে। মন্ত্রীত্ব করাটাই তো সব নয়। এখন বলতে কোনো অসুবিধা নেই, সাবেক অধিপতি অমল ক্ষমতা হারানোতে তিনি বেশ খুশিই হয়েছেন। নতুন কোনো অভিনেত্রী একটু নাম করলেই বড্ড জ্বালাতন করতেন অমল। নারীর প্রতি সাবেক অধিপতির অস্বাভাবিক ও অশোভন দুর্বলতার কারণেই তাকে অপছন্দ ও অশ্রদ্ধা করতেন তিনি। অনেক বার মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছেন।
অধিপতি উতু খুটিয়ে দেখলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী অতুনকে। একদম শিক্ষামন্ত্রীর উল্টো চরিত্রের মানুষ। নির্ভয়, নিরুদ্বিগ্ন। অভিনেতা মানুষ, অভিনয় করছেন না তো? তার মাথার দিকে তীক্ষè দৃষ্টিতে তাকালেন অধিপতি উতু। না, আসলেই দৃঢ় চিত্তের অধিকারী সংস্কৃতি মন্ত্রী অতুন।
ভালো আছেন? অধিপতি উতু জিগ্যেস করলেন।
আমি সব সময়ই ভালো থাকি, আনন্দে থাকি। আপনি কেমন আছেন?
আপনি এসেছেন, এই মুহূর্তে তো আনন্দেই আছি। ভবিষ্যতেও আনন্দে থাকতে চাই। আনন্দে সময় কাটতে চাই।
মাফ করবেন, আপনি কী বিশেষ কিছু বলতে বা বোঝাতে চাইছেন?
অতুন, আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন। আপনার জ্ঞাতার্থে বলি, আমার কোনো জৈবিক চাহিদা নেই। আমি কেবল এই গ্রহের কল্যাণে কাজ করতে চাই। মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই। আনন্দ পেতে চাই মানব সেবা করে।
দুঃখিত, আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন।
আরে আমি কিছু মনে করিনি। মাঝে-মধ্যে স্মৃতি মানুষকে সতর্ক করে দেয়।
আপনার বেলায়ও সেটি হয়েছে।
অতুন সতর্ক হয়ে গেলেন। অধিপতি উতু কী মন পড়তে পারেন? একজন কী ভাবছে
সেটা বুঝতে পারেন?
হ্যাঁ, পারি। বুঝতে পারি।
সংস্কৃতি মন্ত্রী অতুন চমকে উঠলেন। তিনি একদম অপ্রস্তুত হয়ে মাথা নিচু করে ফেললেন।
শুনুন, এই ইলা গ্রহের ঐতিহ্য সুপ্রচীন। এই গ্রহের সংস্কৃতি অনেক বর্ণাঢ্য।
কৃবুদের দ্বারা এই সংস্কৃতি চর্চা অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। আপনি চোখ তুলে তাকান। আপনিই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকবেন।
অতুন চোখ তুলে তাকালেন। অধিপতি উতুর চোখের দিকে তাকালেন, তাকিয়েই আটকে গেলেন। আর চোখ নামাতে পারলেন না। সম্মোহিতের মতো তাকিয়ে রইলেন। আবিষ্ট হলেন কয়েক মুহূর্তের মধ্যে। তারপর বললেন, মহামান্য অধিপতি আপনি যে দায়িত্ব আমাকে পালন করতে বলবেন, সেটা তো আমার শিরোধার্য।
জানি। আমি সেটা জানি। অধিপতি উতু বললেন। তার মুখে মৃদু হাসি।
সংস্কৃতি মন্ত্রী অতুন চলে গেছে। এবার সাময়িক ফুরসত। একটা তৃপ্তিবোধ কাজ করছে ভেতরে। বড় দুটো কাজ হলো, ভাবলেন অধিপতি উতু। মন্ত্রিসভার কাউকে নিয়ে এরপর থেকে আর বাড়তি কোনো চিন্তা করতে হবে না। অনায়াসে নিজের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে।
দফতরের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে সে পা রাখতেই বুঝতে পারলেন অধিপতি উতু।
নিজের অজান্তেই একটু নড়েচড়ে বসলেন। যে আসছে সে আসলে এক তেজী ঘোড়া। তবে তেজী ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরতে তিনি খুব ভালো করেই জানেন।
ভবনে ঢুকে পড়েছে সে। দৃঢ় পায়ে এগিয়ে আসছে। আসুক।
তুখোড় ছাত্রনেতা অনি আসছে মুখোমুখি হতে। কেউ তাকে বাধা দিচ্ছে না।
সে এগিয়ে আসছে। আর মাত্র দেড় মিনিট। তারপরই সে পৌঁছে যাবে অধিপতি উতুর খাস কামরায়।
মৃদু হাসলেন অধিপতি উতু। অনিকে চমকে দেওয়ার মতো প্রস্তুতি তিনিও নিয়ে রেখেছেন।