সায়েন্স ফিকশন

বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব আঠার

আঠার.

সময় কত দ্রুত চলে যায়। ক্ষমতা গ্রহনের একশ’ দিন পূর্ণ হলো আজ। অধিপতি উতু নিজেই নিজেকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানালেন। সব কিছু ঠিক মতোই চলছে। ইলাবৃতে প্রকাশ্যে তেমন কোনো অসন্তোষ নেই। আড়ালে সেটা কতটা আছে কে জানে? মানব মন বড়ই জটিল। তাদের ভাবনাও কোনো সহজ সমীকরণ ধরে চলে না। তারপরও অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে প্রাথমিক ভাবে পরিস্থিতিটাকে ভালো

মতোই সামাল দেওয়া গেছে।

সব খবরই রাখেন অধিপতি উতু। মানুষের আস্থার জায়গাটায় ধস নেমেছে।

প্রতিদিন এই বসতিতে মানুষের সংখ্যা কমছে। রোজ হাজার হাজার মানুষ জাহাজে উঠে বসছে। গন্তব্য সপ্তবটী বন। ডা. অমিয় এই কাজে বড়সড় ভূমিকা রাখছেন। তিনি সাধারণ মানুষকে চলে যেতে অনুপ্রাণিত করছেন। অধিপতি উতু আপন মনে হাসলেন। এটাই তো চেয়েছিলেন তিনি। তার চাওয়া ডা. অমিয় অনেকখানি পূরণ করে দেবেন, এই অনুমান তিনি আগেই করতে পেরেছিলেন।

মানুষ কমে গেলে অন্তত দুটো লাভ।
এক. অক্সিজেন উৎপাদন খরচ কমবে।
দুই. ঝুঁকি কমবে। তবে সব মানুষকে চলে যেতে দেওয়া যাবে না।
কিছু মানুষকে অবশ্যই রেখে দিতে হবে। এবং সেটা নিজেদের প্রয়োজনেই।

জোছনা রাত। আকাশে গোলাকার চাঁদ। অধিপতি উতু জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। যত দূর দেখা যায়, শুধু ভবন আর ভবন। বেশির ভাগ বাসায় আলো নিভে গেছে। বাকিগুলোর আলো জোনাকির আলোর মতো মনে হচ্ছে। চাঁদের নরম আলোয় ইলাবৃতকে বেশ মায়াবী লাগছে। হঠাৎ একটা কিছু ঝিলিক দিয়ে গেল তার সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে পায়ে। দীর্ঘ সৈকতে খুব বেশি ভিড় নেই। পেছনে একটু দূরে পাহাড়। গা বেয়ে নেমে এসেছে ঝরণা। চাঁদের আলোয় হাত ধরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুজন। অনি আর আলিসা। ঢেউ এসে বার বার পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। প্রতিবারই খিলখিল করে হেসে উঠছে আলিসা।

চলো, এবার গিয়ে বালুতে পা ডুবাই। অনি বলল।
না, থাকি আর কিছুক্ষণ। আদুরে গলায় বলল আলিসা।
ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
লাগুক। তুমি তো টিস্যু ভালোই এগিয়ে দিতে পারো। হি-হি-হি।
এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে কী লাভ। চলো পুরো সৈকতটা ঘুরে দেখি।
চলো। পচা ছেলে একটা। মাথায় কিছু ঢুকলে করেই ছাড়বে।

অনি আর আলিসা সৈকতের বেশি বালুময় জায়গায় এলো। তারা দুজনে পৃথক বালুগাড়িতে চড়ল। পাল্লা দিলো। প্রতিবার ইচ্ছে করেই অনি হারল। আনন্দিত আলিসা মুখ ভেংচে বলল, হারু, হারু…। অনিও কোনো জবাব দিলো না। এমন হারের মজাই আলাদা। মাঝে তারা মিষ্টি ডাবের পানিতে গলা ভেজাল। ডাব একটা, স্ট্র দুইটা, মাথায় মাথা ঠেকিয়ে আস্তে আস্তে পান করা। আহা, কী স্বাদ। কী আনন্দ।

এরপর আলিসার প্রস্তাবে তারা নিজেদের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতা করল। একবার নয়, তিনবার। আবারও প্রতিবারই হারাল অনি। আলিসা ক্ষ্যাপানোর জন্য আবারও বলল, হারু, হারু, হারু…। অনি শুধু হাসল। হঠাৎ তার খেয়াল হলো আলিসা হাপাচ্ছে।

দৌড়ে গিয়ে সে হাত ধরে বলল, তুমি ঠিক আছো তো আলিসা।
ঠিক আছি। আলিসা হাপাতে হাপাতে বলল। তার হৃদপিন্ডের আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে অনি।
চলো, একটু বসি।
এই বালুর ভেতরে ?
অসুবিধার কী আছে। তুমি একটু জিরিয়ে নাও।
দুজনে বালুর মধ্যেই পাশাপাশি বসল। আলিসা তাকিয়ে আছে অনির দিকে। অনিও ওই ডাগর চোখের মায়ায় বাঁধা পড়ে গেছে, চোখ ফেরাতে পারছে না।
আহ্। আলিসা ডান চোখ চেপে ধরল।
কী হয়েছে। অনির গলায় উদ্বেগ।
চোখে বালু গেছে। বললাম, এখানে বসার দরকার নেই। আমার কথা শুনলে তো।
দেখি, দেখি। অনি ঝুঁকে পড়ল আলিসার মুখের ওপর। চোখটা এরই মধ্যে ভিজে গেছে। যত্ন করে মুছে দিলো অনি। ভালো করে দেখল। নাহ্, চোখে বালু আর নেই।
বেরিয়ে গেছে। অনি চোখে ফুঁ দিতে দিতে জিগ্যেস করল, এখন আর জ্বালা করছে?
করছে। জ্বালা করছে।
কী বলছো?
মাথাটা যেভাবে শক্ত করে ধরে আছো, ব্যথায় জ্বালা করছে।
অনি দুই হাত আলগা করে বলল, অনেক রাত হয়েছে , চলো এবার ফেরা যাক।
চলো। তবে তার আগে হাতটা দাও।
কেন, আবার কী হয়েছে?
কিছু হয়নি। আমাকে টেনে তোলো। বোকা একটা। হি-হি-হি।
অনি হাত বাড়িয়ে দিলো।

আলিসাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তারপর অনি ফিরল নিজের বাসায়। মনে একরাশ আনন্দ নিয়ে বিছানায় গেল সে। ঘুম আসছিল না। কিছুতেই আসছিল না।
ঘুরে-ফিরে কেবল আলিসার কথা মনে হচ্ছিল। আলিসার কথা ভাবতে ভাবতেই একসময় ঘুমিয়ে পড়ল অনি। কাজটা করে বেশ মজা পেলেন অধিপতি উতু। নিজের প্রোগ্রামিংয়ের দক্ষতায় নিজেই মুগ্ধ হলেন। আসলে অনি আর আলিসা এত রাতে কোথাও যায়নি। তারা নিজ নিজ বাসায় ঘুমিয়ে ছিল। অধিপতি উতু বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন।

সাধারণত তাদের মস্তিষ্ক থেকে ডাটা সেন্টারে তথ্য আসে। আজ করা হয়েছে উল্টো। ডাটা সেন্টারের মাধ্যমে একই সঙ্গে তাদের মস্তিষ্কে পাঠানো হয়েছে বিশেষ ভাবে তৈরি করা একটা প্রোগ্রাম। ফলে তাদের মধ্যে ভার্চুয়াল হ্যালুসিনেশন হয়েছে। এটা এতটাই জীবন্ত যে জেগে ওঠার পর তাদের মনে হবে

তারা সত্যি সাগর তীরে একসঙ্গে সময় কাটিয়েছে।

যথেষ্ট মজা হয়েছে। আজ আর নয়। অধিপতি উতু ডাটা সেন্টার থেকে বেরিয়ে নিজের কামরার দিকে পা বাড়ালেন। পরদিন সকালে আগে ঘুম ভাঙল আলিসার। গত রাতের স্মৃতিতে সে বুঁদ হয়ে আছে এখনও। আহ্ ! কী আনন্দময় সময় কাটিয়েছে দুজনে।
অনির সঙ্গে যোগাযোগ করল সে। গলায় ভালোলাগা আর কৃতজ্ঞতা ফুটিয়ে সে বলল, তোমাকে ধন্যবাদ অনি, গত রাতে আমাকে সৈকতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
আমার সৌভাগ্য যে তুমি আমার সঙ্গে গিয়েছিলে। তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ আলিসা। আমরা আবার সময় বের করে ওখানে যাব।
অপেক্ষায় থাকলাম। বলেই হুট করে সংযোগ কেটে দিলো আলিসা।
অদ্ভুত মেয়ে ! বলল অনি। তারপর নিজে কেন যেন ফিক করে হেসে ফেলল।

Series Navigation<< বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব সতেরবিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব উনিশ >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *