বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ

পঁচিশ.

ভেতরে আসতে পারি।
ডা. এলিজা সদ্য প্রকাশিত মেডিক্যাল জার্নাল দেখছিলেন। কথাটা শুনে তাকালেন দরজার দিকে। ডা. নিষ্ঠব্রত দাঁড়িয়ে।
আরে আসুন। ডা. এলিজা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন।
ডা. নিষ্ঠব্রতের হাতে একটা খাম। ভেতরে এসে সেটা এগিয়ে দিলেন ডা. এলিজার দিকে।
কী এটা?
পদত্যাগ পত্র। ডা. নিষ্ঠব্রত বললেন।
কার পদত্যাগ পত্র?
আমার। আমি আজই চলে যাচ্ছি।
আমাকে দিচ্ছেন কেন?
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। এটা অনুলিপি।
অনুলিপি আমাকে দিচ্ছেন কেন?
কারণ আপনার কাছে আমি দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।
ডা. এলিজা বিষয়টা বুঝতে চেষ্টা করলেন। ডা. অমিয় স্যার ভারপ্রাপ্ত অধিপতি হয়েছেন বলেই কী ডা. নিষ্ঠব্রত চলে যাচ্ছেন?
দাঁড়িয়ে কেন, বসুন। ডা. এলিজা আন্তরিক গলায় বললেন।
না, ঠিক আছে।
কেন চলে যাচ্ছেন?
আমি মনে করি এখানে আমার কাজ শেষ, তাই।
কোথায় যাচ্ছেন?
আগের জায়গায়, আগের কাজে।
আগের কাজে মানে, কী কাজ?
কৃবুদের পেশা জিগ্যেস করতে নেই ম্যাডাম। আমরা যখন যা প্রয়োজন করতে
পারি। হা-হা-হা।
তাহলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন?
ফেলিনি ম্যাডাম। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।
অর্থ তো একই দাঁড়ায়, ঠিক না?
তা অবশ্য ঠিক।
ভালো থাকবেন।
আপনিও ভালো থাকবেন। হয়ত আবার পথে কোনোদিন দেখা হয়ে যাবে। হা-হা-হা।
ডা. নিষ্ঠব্রত আর দাঁড়ালেন না। হাসতে হাসতেই চলে গেলেন।
ডা. এলিজা একটুও দেরি না করে যোগাযোগ করলেন ডা. অমিয়’র সঙ্গে।
স্যারকে খুলে বললেন সব কিছু। মন দিয়ে পুরোটা শুনে ভারপ্রাপ্ত অধিপতি বললেন,
অসুবিধার তো কিছু নেই। আমি তো আগেই আপনাকে দায়িত্ব দিয়ে এসেছি। সব রকম নির্দেশনাও দেওয়া আছে। আপনার ওপর আমার পুরো আস্থা আছে।
নির্ভয়ে কাজ চালিয়ে যান।
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ডা. অমিয় ছেলেকে বললেন, কী নিয়ে যেন কথা বলছিলাম আমরা?
তুমি বলছিলে, তোমার অস্বস্তি হচ্ছে। অরি বলল।
হ্যাঁ, হচ্ছে। চিকিৎসকের কাজ চিকিৎসা করা। ভারপ্রাপ্ত অধিপতি হওয়া নয়।
এছাড়া তো ভালো কোনো বিকল্প ছিল না।
কেন, তুমি নিজে হতে পারতে।

এটা খুব খারাপ উদাহরণ হতো। যদিও আদিকাল থেকেই প্রচলিত হয়ে গেছে, যিনি অধিপতিকে পরাজিত করবেন তিনিই নতুন অধিপতি হবেন। আমি এটা মোটেও চাইনি। এই ভাবনাটাই বরং সেকেলে। বসতি হওয়া উচিত গণতান্ত্রিক। আর তার অধিপতি নির্বাচন করা উচিত গণতান্ত্রিক উপায়ে। তোমার অস্বস্তি হোক, ক্ষতি নেই। একটা প্রক্রিয়া তো শুরু করা গেল। ডা. অমিয় ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। কখন এতটা বড় হয়ে গেল তার আদরের অরি। তিনি ছেলেকে বললেন, শুরুটা হয়ত হলো। তবে একটা জিনিসের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
জিনিসটা কী বাবা?
জিনিসটা হলো সময়। এখন সময়ের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
আমি ঠিক বুঝলাম না।
এই পরিবর্তনের জন্য মানুষের এই ভোগান্তির হয়ত প্রয়োজন ছিল। তবে এখন তাদের এই ভোগান্তি ভোলার জন্য সময়ের প্রয়োজন। সময় সব ক্ষত ভরাট করে দেয়।
ও এই কথা।
শুধু তাই নয়, গা ঝাড়া দিয়ে উঠার জন্য সময়ের প্রয়োজন। শত্রুকে চেনার জন্য সময়ের প্রয়োজন। এমন কী নিজেদেরকে শক্তিশালী করার জন্য সময়ের প্রয়োজন।
তুমি কী মস্তিষ্কে নিউরাল ইমপ্ল্যান্টের কথা বলছো?
হ্যাঁ, শক্তিশালী হতে গেলে বিকল্প তো আর কিছু নেই। আর যাই হোক মানুষ তো কখনও হেরে যেতে পারে না।
হ্যাঁ, মানব মস্তিষ্কে নিউরাল ইমপ্ল্যান্ট অচিরেই শুরু করতে হবে।
শুরু করতে হবে বলেছো কেন, এরই মধ্যে তো শুরু হয়ে গেছে।
শুরু হয়ে গেছে?
হ্যাঁ, শুরু হয়ে গেছে। তুমি নিজে কিছু টের পাওনি?
হ্যাঁ, পেয়েছি।
তোমার মাথায় তোমার অজান্তেই নিউরাল ইমপ্ল্যান্ট করা হয়েছে। আমাদের এখন আরও সতর্ক ও সাবধান হতে হবে।
কেন সতর্ক ও সাবধান হতে হবে, একটু খুলে বলবে?

শুধু নিউরাল ইমপ্ল্যান্ট করলেই হবে না, কৃবুরা যাতে সেটাতে নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারে সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। আর নিউরো-লেসের মাধ্যমে ব্যবহারের জন্য নিজেদের একটা তথ্য ভান্ডারও গড়ে তুলতে হবে। এই তথ্য ভান্ডার হবে শত সুপার কম্পিউটারের চেয়েও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন, বেশি শক্তিশালী। এর জন্য তো সময়ের প্রয়োজন। আমাদের এজন্য আরও ভোগান্তির ভেতর দিয়ে যেতে হবে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে যেতে হবে। অরি মুগ্ধ চোখে বাবার দিকে তাকাল। বলল, তুমি এরই মধ্যেই এত কিছু ভেবেছো !
ভাবনাটাও সময়ই ভাবিয়ে নেয় অরি। সময় আমাদের হাতে ধরে অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়। সময় আমাদের অভিজ্ঞ করে। আসলে সময়ের চেয়ে বড় শিক্ষক আর কেউ নেই। চাইলেও কেউই সেটা হতেই পারে না।

এই জন্যই কী তুমি সময়ের কথা এত করে বলছিলে।ঃ
ভারপ্রাপ্ত অধিপতি ডা. অমিয় মৃদু হেসে মাথা নেড়ে অরির কথায় সায় দিলেন।
তারপর তিনি বললেন, আমাদের আরও একটা কাজ অবশ্যই করতে হবে।
কী কাজ? অরি বলল।
বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। অক্সিজেনের প্রাকৃতিক উৎস তৈরি করতে হবে। ওই অক্সিজেন ট্রির ওপর কিছুতেই নির্ভর করা যাবে না। এই প্রক্রিয়াটা খুবই ঝুঁকিপূর্ন। এই কাজের জন্যও তো সময়ের প্রয়োজন।

হ্যাঁ, সবগুলো কাজের জন্যই সময়ের প্রয়োজন। আমাদেরকে প্রক্রিয়াটা শুরু করে যেতে হবে। পরে অন্যরা এসে অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করবে। তবে একটা বিষয়ে কিন্তু আমার এখনও অস্বস্তি হচ্ছে।
কোনো বিষয়ে, বলো?
আমাদের সব কথা ইচ্ছে করলেই বিশেষ একজন শুনতে পাচ্ছেন। হয়ত শুনছেনও।
অরি অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকল। ডা. অমিয় ছেলের দিকে তাকিয়ে তাকে অভয় দিয়ে বললেন, তাতে অবশ্য আমাদের খুব একটা অসুবিধা নেই।

Series Navigation<< বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *