বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব উনিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায় ।। প্রথম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। দ্বিতীয় পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। তৃতীয় পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। ষষ্ঠ পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। পঞ্চম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। চতুর্থ পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। সপ্তম পর্ব ।।
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। অষ্টম পর্ব ।।
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। নবম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব দশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। পর্ব এগারো
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বারো
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব চৌদ্দ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পনের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব ষোল
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব সতের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব আঠার
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব উনিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব একুশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বাইশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তেইশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব চব্বিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ
উনিশ.
সন্ধ্যার জাহাজে সাচি বন্দরে এসে নামল অরি। সপ্তবটী বন থেকে এই প্রথম এসেছে, তার উপরে তরুণ। টিকিট, পরিচয়পত্র এমন কী সঙ্গের মালপত্রও একটু বাড়তি পরীক্ষা করা হলো। শারীরিক তল্লাশি তো ছিলই। তবে উদয় নামের কর্মকর্তাটি বেশ সাহায্য করেছেন। নইলে আরও কত সময় লাগত কে জানে। সব
রকম নিয়ম ও আনুষ্ঠানিকতা পেরিয়ে অরি যখন বন্দরের বাইরে এলো তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। সপ্তবটী বন থেকে ইলাবৃতে এমনিতেই খুব কম সংখ্যক যাত্রী আসে। তারপরও যারা এসেছিল তারা চলে গেছে। মাত্র তিনটি বায়ুগাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমটির চালককে কিছু বলার আগেই বলল, যেতে পারব না। আসা-যাওয়ার ভাড়ায় এসেছি।
কোথায় যাবেন? দ্বিতীয় চালক খুব অবহেলা ভরে জিগ্যেস করল।
আলাবাগ। আপনি যাবেন?
রাত করে আর উল্টো রুটে যাব না ভাই। তাছাড়া আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। আসার সময় দেখেছি বউয়ের জ্বর এসেছে। বাচ্চা দুটোকে কিভাবে সামলাচ্ছে কে জানে? এতগুলো কথাই শুধু বলল না দ্বিতীয় চালক, সঙ্গে বড় একটা দীর্ঘশ্বাসও ছাড়ল।
আর তৃতীয় চালক তো মাথার ক্যাপ দিয়ে মুখ ঢেকে ঘুমাচ্ছে। তাকে কি জিগ্যেস করার দরকার আছে? আছে, দরকার আছে। অরির ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠল। ওই একটা বায়ুগাড়ির চালককেই জিগ্যেস করার বাকি আছে। আর যদি ছয় ঘন্টা হেঁটে যেতে চাও তো ভিন্ন কথা। অরি অনিচ্ছা সত্ত্বে এগিয়ে গেল।
এই যে ভাই যাবেন?
কোনো সাড়া নেই।
আরে কী মুশকিল। ভাই, আপনি কী শুনতে পাচ্ছেন?
না, তারপরও সাড়া নেই।
অরির এবার জেদ চেপে গেল। চালকের গায়ে হাত রেখে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল, ভাই,
আপনি কী যাবেন?
এবার চমকে সোজা হয়ে বসল চালক। তার গলায় রঙচঙা মাফলার। মুখ থেকে কোলে পড়ে যাওয়া ক্যাপ সামলাতে সামলাতে বলল, দিলেন তো ঘুমটা ভাঙিয়ে। কী সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম।
আপনি কী আলাবাগ যাবেন?
হাই তুলে চালক বলল, যেতে তো চাচ্ছিলাম না।
অনুগ্রহ করে চলুন। আমার তাড়াতাড়ি পৌঁছানোটা খুব দরকার।
আচ্ছা চলুন। এত করে বলছেন যখন। তৃতীয় চালক আবার হাই তুলে বলল।
অরি আর দেরি না করে বায়ুগাড়িতে উঠে বসল। শুনতে পেল দ্বিতীয় চালকের গলা, বড় ভাই, গাড়ি উড়ান দেওয়ার আগে চোখে-মুখে পানি দিয়ে নেন। যেভাবে হাই তুলছেন।
আমি ঘুমাইতে ঘুমাইতেই চালাব, তোমার কোনো অসুবিধা আছে?
তৃতীয় চালক খানিকটা ধমকের গলায় বলল।
না, বড় ভাই নাই।
তাহলে চুপ থাকো। এত কথা বলো কেন?
বায়ুগাড়ি ছুটছে। আশপাশ দিয়ে আলোর গোলার মতো বেরিয়ে যাচ্ছে আরও অনেক বায়ুযান। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল অরি। নিচের ভবনগুলো আলোয় ঝিকমিক করছে। সিট বেল্টটা বেঁধে বসুন। জরিমানা হয়ে যাবে তো। চালক পেছনে না ফিরেই বলল। অরি সিট বেল্ট বাঁধল। এই কাজটা তার আগেই করা উচিত ছিল। সিট বেল্ট বাঁধার বিষয়টি তার খেয়াল হয়নি কেন? আসলে মাথার নিউরণগুলো উত্তেজিত হয়ে আছে।
দুইদিন ধরে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় আছে সে। বাবা ঠিক আছেন তো? গত পরশু রাতে ঘুমাতে যাবে, হঠাৎ একটা মেসেজ এলো। বাবা পাঠিয়েছেন। ‘অরি, শরীর ভালো নেই। পারলে আমাকে নিয়ে যাও।’ নিচে বাবার স্বাক্ষর। ঘাবড়ে যাওয়ার মতো মেসেজ। এক মুহূর্ত দেরি না করে বাবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করল অরি।
না, কিছুতেই যোগাযোগ করা গেল না। অসংখ্যবার চেষ্টা করেছে, লাভ হয়নি। রাতের ঘুম উবে গেল। খাবার ইচ্ছে চলে গেল। মাকে মেসেজের কথা কিছু বলেনি অরি। শুধু বলেছে, ইলাবৃতে যাবে বাবাকে নিয়ে আসতে। মায়ের কত প্রশ্ন।
তোমার বাবার শরীর ঠিক আছে তো? উনি নিজে থেকেই আসতে চাইছেন?
একেবারে চলে আসবেন তো? বোধোদয় হতে উনার কেন এত সময় লাগল?
ইত্যাদি, ইত্যাদি। প্রশ্নের কী শেষ আছে। শেষমেশ মা বায়না ধরল, নিজেও আসবে।
তাকে বুঝিয়ে রেখে আসতেও তো কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি। ঘড়ি দেখল অরি। ৭ টা ২০ বাজে। সাড়ে সাতটার মধ্যে তার পৌঁছে যাওয়ার কথা।
মাথাটা একটু দুলে উঠল কী? বড় একটা হাই ছাড়ল অরি। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসছে। দুচোখ বুজে আসছে, ঘুম পাচ্ছে। চেষ্টা করেও সজাগ থাকতে পারছে না সে। ঘুম পাচ্ছে। বড্ড ঘুম পাচ্ছে। এক সময় সত্যি ঘুমিয়ে পড়ল সে।
কোনো কথা বলছেন না। আপনি কি ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি? জিগ্যেস করল চালক।
সাড়া মিলল না। আবার জিগ্যেস করার পরও উত্তর মিলল না। চালক নিশ্চিত হলো অরি ঘুমিয়ে পড়েছে। হাসল সে। কেউ দেখল না, তার হাসি কতটা রহস্যে ভরা।
অস্ত্রোপচার কক্ষের বিছানায় শুয়ে আছে অরি। সূক্ষ্ম ও জটিল একটা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে তার মাথায়। আরও নিখুঁত ভাবে বললে তার মস্তিষ্কে। একটা নিউরাল ইমপ্ল্যান্ট* করা হয়েছে সেখানে। এর মাধ্যমে মস্তিষ্ক ও সুপার কম্পিউটার যুক্ত হয়ে একত্রে কাজ করতে পারবে। সিঙ্গেল ইন্টারফেস হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু কিভাবে একত্রে কাজ করবে? নিউরো-লেসের* মাধ্যমে। সুপার কম্পিউটার থেকে ডাটা নিউরো-লেসের মাধ্যমে নিউরাল সিগন্যালে পরিবর্তিত হয়ে চলে যাবে মস্তিষ্কে। এতে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বেড়ে যাবে বহু গুণ।
অরির মস্তিষ্ক এখন আর কোনো সাধারণ মস্তিষ্ক নয়। সে এখন তীক্ষ্ন ক্ষমতাসম্পন্ন মস্তিষ্কের অধিকারী। এই মস্তিষ্ক দিয়ে চাইলে সে এখন অনেক কিছু করতে পারবে। কৃবুসদের সঙ্গে আরও গভীর ভাবে যোগযোগ করতে পারবে।
তাদের মাথায় কী চলছে তা বুঝতে পারবে সহজেই। জেগে ওঠার পর অরি কী করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সারারাত পর্যবেক্ষণে থাকবে। সকালে চেতনা ফিরবে তার। তবে চেতনা ফেরার আগেই আবার ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হবে তাকে। শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টিও জোগান দেওয়া হবে ঠিকমতো। এ সব কাজে ব্যবহৃত কোনো সূচের চিহ্নও থাকবে না অরির শরীরে। জেগে ওঠার আগেই মিলিয়ে যাবে। তার ঘুম ভাঙবে সন্ধ্যার
পর রাতে। যখন থেকে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল তার কিছুক্ষণ বাদে। তখন আবার তার অবস্থান হবে বায়ুগাড়িতে। সিট বেল্টটাও আগের মতোই বাঁধা থাকবে।
এখন পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক মতো করা গেছে। আশা করা যায় বাকি সব কিছুও ঠিকমতো হবে। অরির শিয়রে দাঁড়িয়ে ভাবছেন বিশেষ একজন। তার চোখে মমতা। আর মুখে রহস্যের হাসি।
*নিউরাল ইমপ্ল্যান্ট : সক্ষমতা বাড়াতে মস্তিষ্কে ডিভাইস বা চিপস যোগ করার একটি পদ্ধতি।
এই ডিভাইস বা চিপস স্নায়ুবিক সংকেত গ্রহণে সক্ষম।
*নিউরো-লেস : মস্তিষ্ক ও সুপার কম্পিউটারের মধ্যে যোগসূত্র তৈরির শক্তিশালী ও উচ্চতর এক প্রযুক্তি।