বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব চব্বিশ

চব্বিশ.

‘সুপ্রিয় ইলা গ্রহবাসী,

সুন্দর এই গ্রহের প্রতিটি বাসিন্দাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বিশেষ এক পরিস্থিতিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই আজ আমি ডা. অমিয় ভারপ্রাপ্ত অধিপতির দায়িত্ব নিয়েছি। আপনাদেরকে জানিয়ে রাখতে চাই, আগামী তিন মাসের মধ্যে এই ইলাবৃতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত অধিপতির কাছে আমি ক্ষমতা হস্তান্তর করব। গণতান্ত্রিক এক বসতির যাত্রা সেদিন থেকেই শুরু হবে। তার আগে আমাদের কাজ হলো সেই যাত্রার ভিত্তি তৈরি করে দেওয়া। আশা করি আপনারা সবাই এই কাজে আমাকে সহযোগিতা করবেন এবং আন্তরিক ভাবে পাশে থাকবেন। আপাতত এই বসতির কর্মকা- যেভাবে চলছে, চলবে।

পরিস্থিতি বুঝে কোথাও নিতান্তই প্রয়োজন মনে হলে সেখানে সংস্কার করা হবে। প্রিয় কৃবুদেরকে বলছি, আপনারা মোটেও ভয় পাবেন না। অসহায় বোধ করবেন না। অতীতের মতোই এই গ্রহে এই বসতিতে আমরা সবাই মিলে-মিশে থাকব। মানুষের প্রতি আমার আহবান, কোনোভাবেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না।
নিরাপত্তা যেন বিন্দুমাত্র বিঘ্নিত না হয়। আইন-শৃঙ্খলার লঙ্ঘন হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবাইকে শুভকামনা জানাচ্ছি।’

টিভিটিতে ইত্তেলা চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত ভারপ্রাপ্ত অধিপতির ভাষণ দেখছিলেন বয়স্ক সেই দম্পতি। ভাষণ শেষ হলে বৃদ্ধ ওলন স্ত্রীকে বললেন, কী বলেছিলাম না, এত ভেবো না। এখন দেখলে তো। এখানে থাকার ব্যাপারে তোমাকে আর কোনো চিন্তা করতে হবে না।
দুশ্চিন্তা সরে গিয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠা স্বামীর মুখ দেখে বৃদ্ধা উষারও আনন্দ হচ্ছিল খুব। তিনি একটু কাছে ঘেঁষে স্বামীর কাঁধে মাথা রাখলেন। মুখে বললেন না কিছুই। শরীরটা ভালো লাগছিল না। আজ তাই অফিসে যায়নি ইকো। কে জানত এত বড় একটা সুখবর অপেক্ষা করছে। অ্যামি রান্নাঘরে ব্যস্ত ছিল। ভাষণ শুরু হতেই ইকোর ডাকে সে এ ঘরে চলে আসে। দুজনে খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল ডা. অমিয়’র কথা। ভাষণ শেষ হতেই ইকো বলল, এতদিনে একজন যোগ্য মানুষ পদটাতে বসলেন। আর অ্যামি হালকা উঁচু তলপেটটায় হাত বুলিয়ে বলল, আমার কী যে আনন্দ হচ্ছে।

আমাদের বাবুটা সুস্থ, স্বাভাবিক পরিবেশে এই গ্রহের আলোর মুখ দেখবে।
ইকো দেখল, অ্যামির দুচোখ জলে টলমল করছে।

উদয় একটু আগেই বন্দরে এসেছেন। এসেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন কাজে। চারপাশে কেমন একটা ফিসফাস শুনছিলেন, সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। হঠাৎ যোগাযোগ করে উপমা বললেন, বিশ্বাস করতে পারবে না, কী ঘটে গেছে। উদয় বিরক্তি মেশানো গলায় বললেন, ভনিতা না করে কী ঘটেছে সেটা বলবে? এরপর উপমা যা বললেন সেটা শুনে নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না তার। ডা. অমিয় এখন ভারপ্রাপ্ত অধিপতি। আহ্ বুক থেকে যেন একটা পাথর নেমে গেল।

উদয় সহকর্মীদেরকে ডেকে বলতে থাকলেন সুখবরটা।

ভাষণ শেষ হওয়ার পর অনির সঙ্গে যোগাযোগ করল আলিসা। উদ্বেগ ভরা গলায় বলল, এখন কী হবে? অনি জবাব দিলো, কিছুই তো বুঝতে পারছি না। ঠিক তখনই তাদের সংযোগে ঢুকে পড়লেন সেই বিশেষ একজন। কিংবা বলা যেতে পারে এই দুজনের মস্তিষ্কে সংযোগ স্থাপন করলেন তিনি। তারপর ভারি গলায় বললেন, একদম চিন্তার কিছু নেই। মোটেই হতাশ হবে না তোমরা। মনে করো এটা আমাদের সাময়িক কৌশল মাত্র। তোমরা যেমন ছিলে, যেভাবে ছিলে, তেমনই থাকো, সেভাবেই থাকো। বাড়তি কিছু করার প্রয়োজন হলে আমি তোমাদের বলব। একটু থেমে তিনি আরও যোগ করলেন, ও ভালো কথা, তোমাদের বিয়েটা যথাসময়েই হবে। ওটা নিয়েও চিন্তার কিছু নেই।

এই ইলাবৃতে অনি আর আলিসার মতো আরও যারা আছে, তাদের মস্তিষ্কও ঠিক একই মেসেজ পেয়েছে বিশেষ একজনের কাছ থেকে। কৃবুদেরকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন শান্ত থাকতে। শুধু নির্দেশ দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি, কার্যকরী পদক্ষেপও নিয়েছেন। কৃবুদের প্রত্যেকের মস্তিষ্কে শান্ত ও অহিংস থাকার প্রোগ্রামটা এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

Series Navigation<< বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তেইশবিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *