সায়েন্স ফিকশন

বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বারো

বারো.

অধিপতি উতু পর পর তিনটি বৈঠক করলেন। প্রতিটি বৈঠকই গুরুত্বপূর্ণ।

কৌশলগত কারণেই বৈঠকগুলো আলাদা আলাদা কক্ষে করতে হয়েছে। তবে একটিতেও তিনি দীর্ঘ সময় ব্যয় করেননি। কাজ হাসিলের জন্য যতটুকু সময় দরকার ঠিক ততটুকুই ব্যয় করেছেন, এক সেকেন্ডও বেশি নয়।

প্রথম বৈঠক অধিপতি উতু প্রথম বৈঠকটি করেছেন বিজ্ঞানী ঈশানের সঙ্গে। তাকে রাখা হয়েছে সুরক্ষিত বহুতল ভবনের সুপরিসর এক কামরায়। যাতে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা আছে। অধিপতি উতুকে দেখে কষ্ট করে হাসলেন বিজ্ঞানী ঈশান। সামান্য ভুলের জন্য এত বড় মাশুল দিতে হবে কে জানত? দীর্ঘদিনের সাধনা, পরিকল্পনা সব ভেস্তে গেল। এখন তো বেঁচে থাকা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।

উতু কী তাকে মেরে ফেলতে এসেছে?
নাকি তাকে নিয়ে আরও জটিল খেলায় মেতে উঠতে চায় সে?
যাই হোক, উতুকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না যে মানসিক ভাবে তিনি কতটা ভেঙে পড়েছেন।
কী এত চিন্তা করছেন, স্যার?
অধিপতি উতু বললেন। তার মুখে রহস্যময় হাসি।
সৃজনশীল একজন মানুষ তো সব সময়ই চিন্তার মধ্যে থাকেন। সেটাই তো স্বাভাবিক। তুমি কী বলো? প্রচ্ছন্ন একটা খোঁচা দিয়ে বললেন বিজ্ঞানী ঈশান।

তা যা বলেছেন। অধিপতি উতু খোঁচাটাকে সযত্নে এড়িয়ে গেলেন। মোটেও গায়ে মাখলেন না। বরং মুখের হাসিটাকে ধরে রেখে বললেন,
একটা কথা কী আপনি সত্য করে বলবেন?
কী জানতে চাও, বলো?
সেদিন সাংবাদিক আশীষকে আপনি সংবাদটা কেন দিয়েছেন? আপনাদের মধ্যে তো তেমন সুসম্পর্ক নেই। যত দূর জানি, কোনোদিনই ছিল না। তাহলে কেন করলেন কাজটা?

ধরা পড়ে গেছেন। জানতেন ধরা খাবেন। শেষ চেষ্টার সময় মানুষ তো কত কী করে। তার সবকিছু যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। তিনি ও সাংবাদিক আশীষ পরস্পরকে অসম্ভব ঘৃনা করেন। তাহলে তিনি সেদিন কেন তাকে খবরটি দিতে গেলেন?

মানবজাতির জন্য তার মনের গভীরে কী সুপ্ত অবস্থায় কোনো মায়া লুকিয়ে আছে?

এত দিনের ক্ষমতার ঘোর কাটিয়ে, সব যখন প্রায় শেষ, তখন তার ঘুমন্ত বোধ জেগে উঠেছিল?
প্রশ্নগুলো তাকে ওই ঘটনার পর থেকেই খুব ভাবাচ্ছে। তবে এখন এসব বিষয়ে কোনো চিন্তা করা যাবে না। সেটা উচিতও হবে না। তাকে মুখে কুলুপ এটে থাকতে হবে। না, উতুর প্রশ্নের জবাব তিনি দেবেন না। কিছুতেই দেবেন না। বিজ্ঞানী ঈশান তাই চুপ করে থাকলেন।

আপনি কিছু বলবেন না, তাই তো? তাহলে আমি বলছি, শুনুন। সেদিন যখন মুখ ঢেকে বসে ছিলেন তখনই কৌশলে করেছেন কাজটা। সাংবাদিক আশীষ খবরটা পেয়ে ডা. অমিয় ও কবি ইরেশকে সতর্ক করে দেন। কবি আর সাংবাদিক দুজনেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাদের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, উনারা এই বসতি ছেড়েছেন। ডা. অমিয়ের দায়িত্ব জ্ঞানে সত্যি মুগ্ধ হয়েছি। বিরল একজন মানুষ। অধিপতি উতু প্রতিটা শব্দ কেটে কেটে উচ্চারণ করলেন। একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলেন বিজ্ঞানী ঈশানের দিকে।

মিনিট খানেক চুপচাপ কাটল। বিজ্ঞানী ঈশানের পক্ষ থেকে কথা বলার কোনো তাড়া নেই। অধিপতি উতুই আবার কথা বলা শুরু করলেন।
ডা. ওশিনের ক্ষেত্রে আপনি এতটা কঠিন না হলেও পারতেন। এখন আমি তাকে খুব ভালো মতো কাজে লাগাতে পারতাম। স্বীকারোক্তি আদায়ের সময় কী যেন বলেছিলেন তাকে?
হঠকারিতা করেছে সে। মানবিক আচরণ হঠকারিতা! আর আমি যে

বিশ্বাসঘাতকতা করলাম, আমাকে কী করবেন, স্যার? কিচ্ছু করতে পারবেন না। সবকিছু এখন আমার নিয়ন্ত্রণে।
হঠাৎ যেন কথায় পেয়ে বসেছে অধিপতি উতুকে। চুপ করে তাকিয়ে থাকা বিজ্ঞানী ঈশানকে তিনি বললেন, এবার কাজের কথায় আসি। আপনাকে চাইলেই মেরে ফেলতে পারি। কিন্তু আপনাকে আমি নিজের প্রয়োজনেই বাঁচিয়ে রাখব।
আপনাকে আমার দরকার আছে। ও ভালো কথা, আপনাকে দিয়েই আবিষ্ট করার কাজটা আমি শুরু করতে চাই।
এবার কেঁপে উঠলেন বিজ্ঞানী ঈশান। তার তৈরি করা অস্ত্রে তাকেই ঘায়েল হতে হচ্ছে ! এর থেকে তো মেরে ফেললেও ভালো ছিল। এমনিতেও তার শরীরের অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। আয়ু আর কতটুকু অবশিষ্ট আছে কে জানে?

স্যার, তৈরি ত ?
আপনি আমার চোখের দিকে তাকান। তাকান বলছি। হ্যাঁ, একদৃষ্টে তাকান। এই তো আর একটু…। আর একটু সময়। ব্যাস ! হয়ে গেছে।
আপনি এখন আমার আবিষ্ট করা প্রথম মানুষ। আমি যা বলব, আপনি তাই করবেন।
হঠাৎ মাথায় তীব্র ব্যথা অনুভুত হলো বিজ্ঞানী ঈশানের। এরপর কিছুক্ষণ ঝিমঝিম ভাব। তারপর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হলো সব। এই তিন পর্বে সময় লাগল বড় জোর বিশ সেকেন্ড।

আপনি এখন থেকে আমি যা বলব তাই করবেন। ঠিক আছে? অধিপতি উতু বললেন।
হ্যাঁ, ঠিক আছে। তুমি যা বলবে তাই করব। বিজ্ঞানী ঈশান বললেন।
আর তুমি নয়, বলুন আপনি।
ঠিক আছে। আপনি যা বলবেন তাই করব উতু।
না, শুধু উতু বলবেন না। বলুন অধিপতি উতু।
অধিপতি উতু, বলুন আমাকে কী করতে হবে?

ভালো, এটাই তো চাই। আপনি গণমাধ্যমের কাছে আমার প্রশংসা করে কথা বলবেন। আমাকে আন্তরিক সমর্থন জানিয়েছেন সেই কথাও যেন থাকে আপনার বক্তব্যে।
ঠিক আছে অধিপতি উতু। আপনি যা চাইছেন, যেমনটি চাইছেন, তাই হবে, তেমনটিই হবে। আপনার ভাবনা আপনি চাইলেই আমার মাথায় জমা হবে। এরপর কেবল আপনি চাইলেই আপনার কথা আমার মুখ দিয়ে আমার কথা হয়ে বের হবে।

আমি জানি। আমি সেটা জানি। মৃদু হেসে উঠে পড়লেন অধিপতি উতু।
দ্বিতীয় বৈঠক ডা. অমিয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠকটি করলেন অধিপতি উতু। তাকেও রাখা হয়েছে

একই বহুতল ভবনের আলাদা কামরায়। তলাটাও ভিন্ন। সৌম্য-শান্ত হয়ে বসেছিলেন তিনি। অধিপতি উতুকে দেখে ধীরে চোখ তুলে তাকালেন। এই পরিস্থিতিতেও একজন মানুষ এতটা অবিচল থাকেন কী করে? অবাক হলেন অধিপতি উতু।
তিনি বললেন, আমার সঙ্গে আপনার পরিচয় নেই। তাই পরিচিত হতে এলাম। কেমন আছেন আপনি?
ভালো আছি। আপনিই কী নতুন অধিপতি? ডা. অমিয় ভরাট গলায় জানতে চাইলেন।
হ্যাঁ, আমিই নতুন অধিপতি। আমার নাম উতু।
বসুন, অধিপতি উতু। আপনার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে ভালো লাগল।
চিকিৎসক হিসেবে আপনার সুখ্যাতি তো গ্রহ জুড়ে। আমারও নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে আপনার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে।
চিকিৎসা আর করতে পারছি কোথায়? বসে অলস সময় কাটাচ্ছি।
দুঃখিত শ্রদ্ধেয় ডা. অমিয়। দুঃখপ্রকাশ করতেই আমি এসেছি।

আপনি কী আমাকে বিশেষ কিছু বলতে চান? বিনা দ্বিধায় বলতে পারেন। আমার সব ধরণের মানসিক প্রস্তুতি আছে।

অধিপতি উতু একদৃষ্টে তাকালেন ডা. অমিয়’র দিকে। হঠাৎ তার মনে হলো, না, উনাকে আবিষ্ট করা ঠিক হবে না। উনার ভাবনায় জটিল কিছু নেই। মানুষের কল্যাণের বাইরে উনি কিছুই চিন্তা করেন না। তাছাড়া ‘সবুজে বাঁচো’ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। সেক্ষেত্রে অন্যরকম একটা লাভ হতে পারে। চোখ সরিয়ে নিয়ে
হেসে অধিপতি উতু বললেন, বিশেষ কোনো কথা বলতে তো আমি এখানে আসিনি। সত্যি বলছি, আমি এসেছি দুঃখপ্রকাশ করতে। তবে আপনার যে কোনো প্রয়োজনে আপনি আমাকে জানাবেন আমি যথাসাধ্য সাহায্য করব।

ধন্যবাদ। আপনার এই কথাটা আমার মনে থাকবে। আশা করি আপনি মানুষের পাশে থাকবেন।
অবশ্যই থাকব। এটা তো এখন আমার কর্তব্য। এ বিষয়ে আপনার যে কোনো উপদেশ আমি মেনে চলার চেষ্টা করব।
আপনার এই কথাগুলো শুনে ভালো লাগল। সত্যি বলতে কী, অনেকটাই আশ্বস্ত হলাম।
আশ্বস্ত না হওয়ার তো কিছু নেই। আমরা মিলে-মিশে এই গ্রহে থাকব। আপনাকে কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা নামিয়ে দিয়ে আসবে। আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য একটা বিশেষ নম্বরও জানিয়ে দেবে। আজ আমাকে উঠতে হচ্ছে। একটু ব্যস্ততা আছে।
ঠিক আছে। ডা. অমিয় বললেন। হাসিতে তাঁর মুখ আরও উজ্জ্বল দেখাল।

অধিপতি উতু উঠে দাঁড়ালেন। তার মুখে মৃদু হাসি।

তৃতীয় বৈঠক মন্ত্রীদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রথম বসলেন অধিপতি উতু। সেই অর্থে এটাই প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠক। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কারও কোনো কথা বলার দরকার
হচ্ছে না। কে কী বলতে চায়, কার কী প্রশ্ন, সেটা অধিপতি উতু এমনিতেই বুঝে ফেলছেন ! যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সেটা নিয়ে কেবল তিনি মুখ খুলছেন। এখানে উপস্থিত সবারই একটা বিষয়ে অভিন্ন আগ্রহ। আর সেটা হলো, সাবেক অধিপতি অমলের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ? অধিপতি উতু এটুকু বলে একটু থামলেন, সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। তারপর কৌতুকভরে বললেন, আমি তার অধিপতি উপাধি কেড়ে নিয়েছি। এবার নাম থেকে ‘অ’ অক্ষরটাও সরিয়ে দেবো। এরপর যেটা অবশিষ্ট থাকবে, সেই দুর্গন্ধযুক্ত পর্দাথের দিকে কেউ ফিরেও তাকাবে না।

উপস্থিত সবাই হো-হো করে হেসে উঠলেন।

প্রশ্ন জাগতে পারে, কেমন করে ‘অ’ অক্ষরটা সরাব ? তার অনিয়মের ফিরিস্তি সবার কাছে তুলে ধরতে হবে। অনিয়মের তালিকার ভারই ‘অ’ অক্ষরকে সরিয়ে দেবে।
আমাদের আর খুব বেশি কিছু করতে হবে না।
অধিপতি উতু আবার একটু থামলেন। এবং সেটা ইচ্ছে করেই। আবহ তৈরি করতে এই থামাটুকুর দরকার আছে। তিনি এরপর কঠিন গলায় বললেন, সবাই ভাবছেন, সাবেক অধিপতির সাজা বা শাস্তি হবে কি না ? হবে, অবশ্যই হবে। এই গ্রহে অনিয়ম করলে কী সাজা হতে পারে, সেটা আইনে সুলিখিত ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। আর আমরা কেউই তো আইনের উর্ধ্বে নয়। আমার জ্ঞানে যতটা বুঝতে পারছি, তাতে উনি আর স্বাধীন জীবন কাটাতে পারবেন বলে মনে হয় না। উনাকে হয়ত আমৃত্যু কারাগারেই কাটাতে হবে।

উপস্থিত সবাই উৎফুল্ল হয়ে সামনের টেবিল চাপড়ে দিলেন।

শব্দ থামার পর অধিপতি উতু আবার বলতে শুরু করলেন, এখানকার অনেকের মনে প্রশ্ন, ডা. অমিয়কে কেন এভাবে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে? এই বিষয়ে শুধু আপাতত একটা কথাই বলব, উনাকে দিয়ে আমাদেরই উপকার হবে। হিসাব কষেই কাজটা করা হয়েছে। উনি নজরদারিতে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। বাড়তি ঝুঁকির কিছু নেই । আমার ওপর এটুকু বিশ্বাস রাখা উচিত।

সবাই হাততালি দিয়ে উঠলেন।
হাততালি থামলে অধিপতি উতু বললেন, জানি, জিগ্যেস করার প্রয়োজন নেই।
তবুও নিয়ম রক্ষার জন্যই একটা কথা জিগ্যেস করছি। এই বসতির প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় সর্বোচ্চ পদে যোগ্য কৃবুস প্রতিনিধিকে নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্যতিক্রম বাদে প্রতিটি ক্ষেত্রে সেটা নিশ্চয়ই পালন করা হয়েছে এবং হচ্ছে?

হাত উঁচিয়ে, মাথা নেড়ে সবাই সায় দিলেন।

অধিপতি উতুর মুখে হালকা হাসির রেখা ঝিলিক দিয়েই মিলিয়ে গেল। তিনি বললেন, এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ। অভিনন্দন। আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন অবশেষে বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, কিছু অর্জন করার চেয়ে সেটা ধরে রাখা আরও বেশি কঠিন। তাই আমাদের আরও কর্মঠ, সচেষ্ট ও সতর্ক থাকতে হবে। কী সবাই রাজি?

হ্যাঁ, রাজি। হাত তুলে আবারও সায় দিলেন উপস্থিত সবাই।

আরও একবার এক ঝলকে সবাইকে ভালো করে দেখে নিলেন অধিপতি উতু। এরপর গলার স্বর খাদে নামিয়ে তিনি বললেন, অনেকের প্রশ্ন ক্ষমতার পালাবদলের পরও আমরা ইচ্ছে করেই সহিংসতা এড়িয়ে গেলাম কেন? এখানে আমার বিশেষ একটা কথা বলার আছে। আর সেটা হলো, ইচ্ছে করে নয়, আমরা সচেতন ভাবেই সহিংসতা এড়িয়ে গেছি। বুদ্ধির জোর যেখানে কমজোর হয় বা খাটো পড়ে যায়, সেখানেই

সহিংসতা অবধারিত হয়ে ওঠে। আমরা মানে কৃবুস তো মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান। আমরা বুদ্ধি দিয়ে লড়ব, বুদ্ধি দিয়ে চলব, বুদ্ধি খাটিয়ে কৌশলে চলব।
আমরা কেন সহিংসতায় জড়াবো? যে কাজ বুদ্ধি দিয়ে হয়, সেটার জন্য রক্তে হাত লাল করার তো কোনো প্রয়োজন দেখি না। আরেকটা বিষয় জানিয়ে রাখি, সরাসরি সম্প্রচার করা জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠান দেখে মানুষ আরও বেশি ভড়কে গেছে।

তাদের প্রতিক্রিয়া জরিপ করে এই ফল মিলেছে। মানুষ বুঝতে পারছে তারা অসহায়।
অসহায়দের প্রতি সহিংসতা বড় ধরণের অপরাধ। ঘৃণিত একটা কাজ। মনে রাখতে হবে, মহাবিশ্বে এই গ্রহই কিন্তু একমাত্র গ্রহ নয়, আরও গ্রহ আছে। তাদের কাছে কী বার্তা যেত ? কৃবুদের ভাবমূর্তি তৈরিরও তো একটা ব্যাপার আছে।
কিছুতেই সেটা নেতিবাচক হতে দেওয়া যায় না। আশা করি, সবার মাথায় জমে থাকা সব প্রশ্নের উত্তর আমি পরিস্কার করে দিতে পেরেছি?
আবার মাথা নাড়লেন সবাই, একইসঙ্গে একই ঢঙে। কিছু না বলেও তারা অনেক কিছু বলে দিলেন। হ্যাঁ, অবশ্যই পেরেছেন মহামান্য অধিপতি উতু। সব প্রশ্নের উত্তর আমরা একদম পরিস্কার ভাবে বুঝেছি।
অধিপতি উতু মুচকি হেসে এবার উঠে দাঁড়ালেন। হাত নেড়ে সবাইকে বিদায় জানালেন এবং হাওয়া হয়ে গেলেন মুহূর্তেই। বৈঠক কক্ষের দরজা তখনও বন্ধ। তবে কী অধিপতি উতু সশরীরে এখানে আসেননি? এটা কী তাহলে হলোগ্রাফির
তেলেসমাতি? নাকি তার চেয়ে উচ্চ প্রযুক্তির, আরও আধুনিক এবং বেশি জীবন্ত কিছু?
উপস্থিত সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি না করে বরং কৌতূহল চেপে উঠে পড়লেন। তাদের হাতে এখন অনেক কাজ। অনেক ব্যস্ত তারা। বসে থাকা তাদের চলে না।

Series Navigation<< বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। পর্ব এগারোবিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তের >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *