উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব বিশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব দুই
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব তৃতীয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব চর্তুথ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব পাঁচ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব ছয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব সাত
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব আট
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব নয়
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব দশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব এগারো
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব বারো
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব তেরো
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব চৌদ্দ
- উপন্যাস।। সেলিনা হোসেন ।। মগ্ন চৈতন্য শিস ।। পর্ব পনেরো
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।।সেলিনা হোসেন।। পর্ব ষোল
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব সতেরো
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব আঠারো
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব উনিশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব বিশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব একুশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব বাইশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব তেইশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব চব্বিশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব পঁচিশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব ছাব্বিশ
একদিন মিতুলও আমার দিকে এমন পিঠ দিয়ে ঘুমিয়েছিলাে। আঃ ক’দিন পর মিতুলের পিঠ, বুক, চোখ, নাক, চুল সব আমার দখলে আসবে। আমি যে-কোনাে সময় মিতুলের যে-কোনাে জায়গা ছুঁতে পারবাে। কতদিন গেছে মিতুলকে ছুঁয়ে দেখবার প্রবল ইচ্ছে জেগেছিলাে। কিন্তু মিতুল নেই বলে পারতাম না। তখন অকারণে নিজের হাত কামড়াতাম। মিতুলের শরীরটা ঝরনার মতাে। যেন চমকার শীতল জলে নেয়ে ওঠা যায়। মিতুলের বুকে কবুতরের শরীরের উষ্ণতা। অনন্তকাল মুখ রেখে শুয়ে থাকা যায়। একটুও বরফ জমার ভয় নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় মিতুল শুধু আমার ভালােবাসা নয়। আমার লেখালেখির রেশমি সুতাে। গােলকধাঁধায় নামিয়ে দিয়ে আবার টেনে ওঠায়। পথ ভুলতে দেয় না। তখন মগকে জলপিপির ডাক শুনলাম। কাগজ টেনে বসলাম। উপন্যাস অর্ধেকের বেশি শেষ করে ফেলেছি। প্রকাশকও ঠিক আছে। লেখা হয়ে গেলেই ছাপতে পারবাে। কয়েক পৃষ্ঠা লেখার পর রায়হান উঠে এলাে আমার কাছে। কাল সারারাত ঘুমােইনি অথচ আমার একটুও ঘুম আসছে না জামেরী।
রায়হানের কন্ঠে ভিখেরির দীনতা। সে কণ্ঠ আমার অন্তর ছুঁয়ে গেলাে। এখন ওর জন্যে আমার একরাশ মমতা।
তুই বােধহয় ভীষণ চিন্তা করছিস, এ জন্যে ঘুম আসছে না।
আচ্ছা জামেরী, ছন্দা বােধহয় পুলিশের কাছে আমার নাম বলে দিয়েছে, না?
তখুনি আমি আমার মানসপটে ছন্দার অবিশ্বাসী ঘৃণার দৃষ্টি দেখতে পেলাম।
উত্তর দিতে পারলাম না। ইউক্যালিপটাসের ডালে দোয়েলটা কিচ্ কিচ্ করে উঠলাে। ডানা ঝাপটালাে। সেই শব্দে চমকে উঠলাে রায়হান।
ঐ বুঝি দরজায় কে কড়া নাড়ছে। আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবি আমি নেই।
এই বলে ও দৌড়ে বাথরুমে চলে গেলাে। ওর চেহারায় ভয়, সন্ত্রাস।
আমি চেয়ারের ওপর হাত-পা ছেড়ে দিয়ে বসলাম। একি হলাে রায়হানের? ও তাে এমন দুর্বল স্নায়ুর লােক ছিলাে না। ছন্দার কান্নায় ও কি নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়েছে। এ অবস্থা বেশিদিন চললে ও পুরােপুরি পাগল হয়ে যাবে। অথচ এটা হতে দেয়া উচিত নয়। তার আগে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি রায়হানকে ডাকতেও পারলাম না। ওর বিশ্বাস এখন মাটির নিচের শিকড় শক্ত করে আঁকড়ে আছে। উপড়ে ফেলা কঠিন। আমার কথা কিছুতেই বিশ্বাস করবে না। কিছুক্ষণ পর ওর নিজেই দরজা একটু ফাঁক করে ফিসফিসিয়ে আমাকে ডাকলাে।
হেই জামেরী— চলে গেছে ওরা?
হ্যাঁ।
ও বেরিয়ে এলাে।
চোখে-মুখে স্বস্তির ভাব।
কে এসেছিলাে?
কেউ না।
তার মানে তুই আমাকে বলবি না?
রায়হানের কণ্ঠে ক্ষোভ।
আমার এক বন্ধু। তুই তাকে চিনবি না রায়হান।
বুঝেছি তাের এখানে থাকা নিরাপদ নয়। অনবরত লােকজন কেবল দরজায় কড়া নাড়ে। আমি চললাম।
কোথায় যাবি?
খবরদার জিজ্ঞেস করবি না। আমি কোথায় যাই না যাই তাের কি রে শালা?
রায়হান রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলাে। ইচ্ছে করে দুপ দুপু শব্দে সিড়ি দিয়ে নামলাে। আমি একটুক্ষণ শুনলাম। তারপর আবার লেখার জগতে ফিরে এলাম। একটানা কয়েক পৃষ্ঠা লিখে ফেললাম। লিখে বেশ খুশি লাগলাে। অনেকক্ষণ গলা ছেড়ে গান গাইলাম।
সেদিন বিকেলে অকারণে মার্কেটে ঘুরলাম। মিতুলের জন্যে চমৎকার একটা নীল বেনারসি কিনলাম। যা দেখি তাই আমার কিনতে ইচ্ছে করে। কিন্তু টাকার অভাবে বেশিদূর এগােতে পারলাম না। এ দোকান ও দোকান ঘুরতে আমার একটুও ক্লান্তি নেই। আমি কেবল জিনিস পছন্দ করলাম। আর মনে মনে মিতুলকে সাজালাম। বইয়ের দোকানের সামনে শরাফীর সঙ্গে দেখা।
ও আমাকে দেখে চেঁচিয়ে উঠলাে।
এ্যাই জামেরী? কি রে কি খবর?
এই এমনি ঘুরছি।
ঘুরছিস ভালাে কথা। কিন্তু হাতে শাড়ির প্যাকেট কেন রে?
বিয়েটা এবার—।
ও বুঝেছি। কনগ্রাচুলেশন। সাহস যে করতে পেরেছিস এ জন্যে তােকে ধন্যবাদ ।
আমি হাসলাম।
দেখি কেমন শাড়ি কিনেছিস?
শরাফী আমার হাত থেকে প্যাকেটটা টেনে নিয়ে খুললাে।
নীল কেন রে, বিয়েতে সবাই লাল কেনে।
আমার মনে হয়, নীল শাড়িতে মিতুলকে বেশি মানাবে।
যাকগে সেটা তার ব্যাপার। চল লিবার্টিতে বসি। আজ আমি তােকে মিষ্টিমুখ করাবাে। গাজির্য়ান তাে নেই যে এ সময় আদর করে খাওয়াবে।
শরাফী আমাকে টানতে টানতে রেস্তোরাঁয় নিয়ে এলাে। কি খাবি বল?
তোর যা ইচ্ছে।
এ সময়টায় এমন টেনশন থাকে আমরা। খাওয়া-দাওয়া মুখে রুচিতে চায় না।
নিজের অভিজ্ঞতা অন্যের ওপর ফলাচ্ছিস। মনে হচ্ছে আমার বিয়ের খবরে তুই উত্তেজিত হয়ে উঠেছিস?
অনেকটা তাই রে। আনিস বিয়ে বাড়িতে গেলে আমার মন খারাপ হয়ে যায়। মনে হয় দিনটা যদি আমার হতাে। শরাফী হাে হাে করে হাসতে আরম্ভ করে। আমিও হাসতে হাসতে বললাম, একবার বিয়ে করে শখ মেটেনি। তা মিটেছে দোস্ত। তবুও ঐ নতুন বিয়ের জায়গায় নিজেকে ভাবতে বেশ লাগে।
বেয়ারা মিষ্টি নিয়ে এলাে। শরাফী গলগল করে কথা বলে যাচ্ছে। আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। শুনতেও না। এ জন্যে লােকে বলে অহংকারী। আসলে আমার চরিত্রের ধাতই এই। চুপ করে থাকাটা স্বভাবের সবচেয়ে প্রিয় অংশ। সবসময় মাথার মধ্যে কোনাে না কোনাে চিন্তা ঘুরপাক খায়। বেশি কথা বললে চিন্তার সঙ্গতি নষ্ট হয়। এটা আমার বিশ্বাস। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেটুকু কথা না বললেই নয়, সেটা আমি বলি। তবে শুনতে পারি। মন-মেজাজ খারাপ না থাকলে যে কারাে কথা আমি নিবিষ্ট মনে শুনি।
কি রে, কি ভাবছিস? তাের ‘সরােবরে ঘােলা জল’ বইটা তাে ভালাে প্রশংসা পাচ্ছে। বিভিন্ন কাগজে তিন-চারটে সমালােচনা বেরিয়েছে। দেখেছিস?
ভালাে লিখেছে। তবে উত্তর পত্রিকায় সমালােচনা আমার বেশি ভালাে লাগেনি। মুস্তফা জামিল আরাে একটু বেশি লিখতে পারতাে। অহেতুক কৃপণতা। করে তাে লাভ নেই। যােগ্যত্যুর যােগ্যমূল দিতে হবে।
আমি হাসলাম। শরাফী এখন রগরগে আবেগের কড়াইয়ে ফুটছে। ওকে থামায় কার সাধ্যি।
তুই কিছু বলছিস না যে জামেরী?
বলার কি আছে? যার যতটুকু ভালাে লেগেছে, সে ততটুকু লিখেছে। সাহিত্য এমন একটা ব্যাপার যে, জোর করে ভালাে লাগানাে যায় না। সেটা ব্যক্তিগত রুচির ওপর নির্ভর করে।
আমেরী, তবুও সাধারণ ভালাে লাগার একটা মাপকাঠি আছে। যেটা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমার বিশ্বাস, তাের বইটা সাধারণের ভালাে লাগার উর্ধ্বে উঠেছে। যে কোনাে রুচির পরীক্ষায় ওটা টিকবে।
তুই বন্ধু বলে বেশি বলছিল।
কক্ষনাে না। তুই আমার সাহিত্যের বােধকে অবিশ্বাস করছিস?
ছিঃ ছিঃ কি যে বলিস!
আসলে এটা এক ধরনের নােংরামি জামেরী। ইচ্ছাকৃত ব্যাপার। যার যতটুকু আপা কাটুক আহ্মান্ধ করতে আমাদের বুক ফেটে যায়। নিজের ওজন যাচাই করতে পারি না বলে অহেতুক কৃপণতা দেখাই।
তই ক্ষেপেছিস শরাফী?
জ্যাপাক্ষেপির প্রশ্ন নয়। কেননা এটা কেবল তাের ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়। এটা আমাদের সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে। বল, পারে কি না?
হ্যাঁ, তা পারে।
সেজন্যেই এসব জিনিস হতে দেয়া উচিত নয়। সমালােচনার সুস্থতা নষ্ট হয়। আমার আলােচনাটা লিখে শেষ করেছি। ওটা আগামী সপ্তাহে দৈনিক ছায়াপথে ছাপা হবে।
জানিস শরাফী, এক ধরনের লােক আছে যারা হৃদয়ের চোরাকুঠির দেয়াল ভাঙতে চায় না। পরিশেষে ঐ দেয়ালের চাপেই ওরা মরে। সেজন্যে ওদের বিরুদ্ধে লাফালাফি না করে নিজের কাজ করে যাওয়া ভালাে। জানি তাে ওরা ডােবার জন্যেই সাহিত্য করে। তাের সঙ্গে আমি একমত নই। কাজের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা হৈ চৈ- এরও দরকার আছে। নইলে বড় একতরফাভাবে পথ ছেড়ে দেয়া হয়। ওরা পাঠককে বিভ্রান্ত করে।
পাঠক কোনােদিন বিভ্রান্ত হয় না শরাফী।
বেয়ারা চা দিয়ে গেলাে। শরাফী আর কোনাে কথা না বলে চায়ে চুমুক দিলাে। আমিও। দুজনেই বডড সিরিয়াস হয়ে পড়েছি। আমি জানি, পাঠকের ওপর আমার এত আহা শরাফীর খুব একটা ভালাে লাগে না। এ নিয়ে ও আমার সঙ্গে অনেক তর্ক করেছে। আজ চুপ করে গেলাে। জানে তর্ক বৃথা। আমার বিশ্বাস থেকে ও আমাকে টলাতে পারবে না। আমি পরিবেশ হালকা করার জন্যে বললাম, রামীন কেমন আছে রে?
আর বলিস না, তিন দিন ধরে মেয়েটার জ্বর। কখনাে কমে, কখনাে বাড়ে। একেবারে ছাড়ে না। আর মেয়েটাও হয়েছে তেমনি। এক মুহূর্ত আমাকে ছাড়তে চায় না। গত দু’দিন কোথাও বের হইনি। আজ কমলা কেনার নাম করে বেরিয়ে এসেছি। একটানা ঘরে বসে থাকা যায় নাকি? দম আটকে আসতে চায়। শরাফী ঠোঁট ওল্টালাে। অথচ আমি ঘরে থাকতে ভালােবাসি। বেশি বেরুতে হলে আমার বিরক্তি ধরে। বললাম, চল আমার ঘরে যাই। ফুটপাথ থেকে কয়েকটা চমকার বই কিনেছি। দেখলে খুশি হয়ে যাবি।
কি বই?
চল না। এখানে বললে তাে আর যাবি না।
একটার নাম বল।
যে বইটা তুই অনেক খুঁজেছিস সেটা পেয়েছি। শুনলে নির্ঘাত লাফিয়ে উঠবি। হেনরী মিলারের-ট্রপিক অব ক্যান্সার?
শরীফ চেচিয়ে উঠলাে।
হ্যাঁ। তবে আমি এখনাে পড়িনি।
তাের পড়তে সময় লাগবে। আমাকে দে, আমি আগে পড়ে নিই। তারপর তুই পড়বি। চল এখুনি যাই। ক’দিন ধরে মেয়ের মাথার কাছে বসে রাত কাটাই। আজ অন্তত হেনরী মিলারকে সঙ্গে করে রাতটা পাড়ি দেয়া যাবে।
ওর জ্বর কি বেশি?
এ কদিন বেশি ছিলাে। আজ একটু কম। জানিস জামেরী, ওর ঐ রােগাক্রান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুতেই আমার ঘুম আসতে চায় না।
বাবা হওয়া এমনি মজার।
আমরা দুজনেই হাসলাম। নিজের অজান্তে মিতুলের নীল শাড়িটা বুকে চেপে ধরলাম ।
মনে হচ্ছে বুকের লােমে ভীষণ ছােট্ট একটা হাত আমায় কাতুকুতু দিচ্ছে। আমার ঐ রকম একটা মেয়ে থাকলে কি যে ভালাে লাগতাে! গ্রীন মার্কেটের ফলের দোকানে দাঁড়িয়ে আমি শরাফীর মেয়ের জন্যে অনেক কমলা কিনে ফেললাম। জানি না কেন। আমার বিয়ের এখনাে দিন-বিশেক বাকি। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বের সাঁকো পেরিয়ে মনটাকে বাগে আনলাম। ঠিক করলাম আজ তাতখান লেনে যাবাে। এর মধ্যে মিতুল কম করেও চার-পাঁচ দিন তাগদা দিয়েছে। ভেবেছিলাম বিয়ের আনন্দে মিতুল ঐ দিকটা অন্তত ভুলে থাকবে। কিন্তু দেখলাম তার উল্টো। যতই দিন যাচ্ছে ততই ও অস্থির হয়ে উঠছে। যেন এ ব্যাপারটা ওর জীবন-মরণ সমস্যা। আমার একটু ভালাে লাগে না। এত বাড়াবাড়ির খুব একটা গভীর কারণ খুঁজে পাই না। তবুও আজ শুক্রবার দেখে মনটা স্থির করলাম। যা হয় যাবােই।
মিতুলের মা আমাকে শুক্রবার যেতে বলেছিলেন।
দুরু দুরু বুকে দরজায় কড়া নাড়লাম। দরজা খুললাে ছােকরা চাকর। আমাকে বসতে দিয়ে ও চলে গেলাে। ঘরটা অবিকল তেমনি আছে। আগের দিন যেমন দেখেছিলাম। ওষুধের শিশি যেন আরাে কয়েকটা বেশি জমেছে। ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠায় ধুলাের আস্তর। বসে বসে আকাশপাতাল ভাবছি। বেশ অনেকক্ষণ পর মহিলা এলেন। আমাকে দেখে গম্ভীর হতে গিয়েও হাসলেন। যেন কষ্টের হাসি। হাসতে মন চায় না। অথচ না হাসলেই নয়।
আমি সালাম দিলাম।
কেমন আছেন?
ভালো।
ভদ্রমহিলা আজ একটু আড়ষ্ট।
আমি আবার মিলের জন্যে এসেছি।