ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব পাঁচ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব দুই
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব তৃতীয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব চর্তুথ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব পাঁচ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব ছয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব সাত
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব আট
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব নয়
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব দশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব এগারো
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব বারো
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব তেরো
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব চৌদ্দ
- উপন্যাস।। সেলিনা হোসেন ।। মগ্ন চৈতন্য শিস ।। পর্ব পনেরো
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।।সেলিনা হোসেন।। পর্ব ষোল
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব সতেরো
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব আঠারো
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব উনিশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব বিশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব একুশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব বাইশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব তেইশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব চব্বিশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব পঁচিশ
- উপন্যাস।। মগ্ন চৈতন্যে শিস।। সেলিনা হোসেন।। পর্ব ছাব্বিশ
সেদিন আমার বাবার কথা মনে হয়েছিল। বাবার জন্যে আমি স্কুলে- পাড়া ছেলের মতো কেঁদেছিলাম। মনে হচ্ছিলাে বুকে তলায় কোথায় কি যেন আটকে আছে। চোখ বুজে থাকতে থাকতেই কখন ঘুম এসেছিলো টের পাইনি। রাতজাগা শরীর আর কোনাে নিষেধ শােনেনি। ঘুম ভাঙলো দরজার খটখট শব্দে। হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেলে আমার বুকের ভেতর কেমন একটা ঝাঁকুনি হয়। কিছুক্ষণ সময় চুপ করে বসে থাকতে হয় সেটা কাটিয়ে ওঠার জন্যে। ডাক্তার দেখোনাে দরকার। অথচ আলসেমির জন্যে হয়ে ওঠে না। দরজার খটখট শব্দের জোর বাড়তে থাকে।হঠাৎ মনে হলাে নিশ্চয় রায়হান। ও রেগে গেলে এমন শব্দ করে।দরজা খুলতেই হাঁড়িমুখাে রায়হান চেঁচিয়ে উঠলাে, উঃ, বেলা এগারোটা পর্যন্ত ঘুম? তােকে দিয়ে হবে কিরে চাঁদ?দেখ রায়হান, ছাই ফেলতে কিন্তু ভাঙা কুলােরও দরকার হয়। হুঁ, কথা শিখেছিস বড় বড়। তা শিখবিই না বা কেন? কথার ব্যবসা করেই তাে খাচ্ছিস। তা রাত জেগেছিলি বুঝি?হ্যাঁ। সারারাত।কি করলি? বই পড়লাম।ওঃ, এই করেই স্বাস্থ্যটা শেষ করবি বুঝতে পারছি। বােস রায়হান, আমি হাতমুখ ধুয়ে নিই। বাথরুমে ঢুকে ঠাণ্ডা পানিতে অনেকক্ষণ ধরে হাতমুখ ধুয়ে মেজাজ ঠাণ্ডা করলাম। রায়হানের সঙ্গে আমি রাগ করি না। ওর কথাবার্তা একটু ত্যাড়া। এমনি চেঁচিয়েই কথা বলে। চেঁচিয়ে নিজের দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। অন্যদিকটা বিবেচনা করে না। ওর মতের বাইরেও যে আর কারাে মত থাকতে পারে সেটা সহ্য করা ওর পক্ষে অসম্ভব। বাথরুমে টোকা পড়লাে, হেই জামেরী, তুই কি সারাদিন বাথরুমে কাটাবি? নাকি আমাকে তাড়াতে চাইছিস? সােজাসুজি বলে ফেল। কেটে পড়ি। অগত্যা বেরিয়ে আসতে হলাে। তাের টেবিলে দুই কাপ চা কেন রে জামেরী? মিতুল এসেছিলাে, ও বানিয়ে রেখে গেছে।খাসনি কেন?কি জানি, খাওয়া হয়নি। আমার ঘুম এলাে, ঘুমিয়ে পড়লাম। হুঁ, বুঝেছি। রায়হান ঠা ঠা হাসতে লাগলাে। আমি ওর দিকে বিশেষ মনােযােগী না হয়ে চা বানাতে লাগলাম। রায়হান হাসি থামিয়ে আমার ছােট্ট ঘরে পায়চারি করতে লাগলো।আমি একটা সমস্যায় পড়েছি জামেরী ! আগে তাে চা খেয়ে নিই, তারপর শুনবাে। পেট চোঁ চোঁ করছে।রায়হানের সঙ্গে কথা বলতে আমার ভালাে লাগছে না। তবু আমি নিজেকে সংযত রাখলাম। ওর সমস্যা মানেই তাে ব্যবসা – সংক্রান্ত। ওতে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। শুনতে ভালাে লাগে না। কিভাবে কেমন করে টাকা বানাবে, এই চিন্তায় থাকে কেবল। স্বার্থ – সম্পর্কিত কি একটা ব্যাপার নিয়ে ও যেন কাকে খুন করেছিলাে। আমি এইটুকু জানি মাত্র। এর বেশি কিছু ও আমাকে বলেনি। আমিও জানতে চাইনি। মেলা টাকা পয়সা খরচ করে নাকি ও ব্যাপারটা চাপা দিয়ে ফেলেছে। মাঝে মাঝে এ নিয়ে ভাবলে আমি হোঁচট খাই। কিন্তু রায়হানের বিবেক ওকে তেমন আলােড়িত করে না। ও দিব্যি দিন কাটায়। চা বানিয়ে ওকে এক কাপ দিলাম। টেবিলের ওপর থেকে বিস্কুট নিয়ে খেতে খেতে বললাে, আমার সঙ্গে এক জায়গায় যেতে পারবি জামেরী?কোথায়?বল না যাবি কি না?না শুনলে কি করে বলবাে?কাফ রেস্তোরায়।ওখানে কি?ছন্দাকে আসতে বলেছি।ও তাই বল। তা তােদের মধুগুঞ্জনে আমি গিয়ে কি করবাে?মধুগুঞ্জন? থােঃ ছন্দার সঙ্গে একটা বােঝাপড়া হবে।প্রেম জমে উঠতে না উঠতেই বােঝাপড়া। কি ব্যাপার বলতাে? সমস্যাটা তাে ওখানে।রায়হান হাতের বিস্কুট জানালা দিয়ে খুঁড়ে ফেলে দেয়। আমি চুমুকে চুমুকে চা খাই। ও চা না খেইে আবার পায়চারি শুরু করে। ওর সামনে কাপটা এগিয়ে দেই। ও এক ঢােক খেয়েই মুখটা বিকৃত করে। কাপটা ঠক করে টেবিলের ওপর রেখেই বলে, কি তেতাে চা বানিয়েছিস? ও কি মানুষ খেতে পারে। আমাকে কোনাে কথা বলার সুযােগ না দিয়েই বলে, আচ্ছা জামেরী, তুই মেয়েদের বিশ্বাস করিস?আমি ওর চোখে চোখ রেখে বললাম, করি।ও আমার মুখের ওপর ঝটকা দিয়ে বললাে, আমি করি না।সেটা তাের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তুই ভীষণ উত্তেজিত। একটু শান্ত হয়ে বােস দেখি রায়হান। রায়হান হঠাৎ শান্ত ছেলের মতাে চেয়ার টেনে আমার মুখােমুখি বসলো।তুই তো জানিস জামেরী একটা বুলেটের বিনিময়ে আমি একটা জীবন হরণ করেছিলাম। ঐ খুন আমার প্রয়ােজন ছিলাে। জামিল আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও ওকে আমি খুন করেছি। এর প্রধান কারণ আমাদের মতপার্থক্য। আমি মনে করি ও আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলাে। সে অপরাধের জন্যে ওকে শান্তি পেতে হবে। ইচ্ছে করলে জামিলও আমাকে খুনকে করতে পারতাে। কিন্তু সে সুযোগ ও পায়নি। পেলেও ওর তেমন সাহস ছিলাে না। সুযােগের সদ্ব্যবহার করেছি আমি। আমার বুকের ভেতর সাহস নামক বস্তুটা সমুদ্রের মতাে গর গর করে। ওকে মারতে আমার একটুও হাত কাঁপেনি। এ জন্যে আমার কোনাে গ্লানি নেই। অপরাধবােধও নেই। যাকে আমি অপ্রয়ােজনীয় মনে করেছি, তাকে নির্ধিধায় নর্দমায় নিক্ষেপ করেছি ব্যস। ঝামেলা চুকে গেছে।রায়হান আগ থেকে পানি ঢেলে খেলাে। ওর কথা শুনতে আমার ভালােই লাগছিলাে। আমি লেখার উপাদান পাচ্ছিলাম। এতক্ষণ ওর ওপর আমার যে রাগ ছিলাে, সেটা উবে গেছে। ওকে এখন সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করছি। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি দেখে আমি নিজের ওপর খুশি হলাম। অবশ্য যে – কোনাে লােকের সঙ্গে আচরণে আমি অধিকাংশ সময়ই ঠাণ্ডা মাথায় এগােই। তারপর অন্তরটা হাতড়ে ফিরি। অবয়বে লালিত্য থাকলে পরে অবশ্যই সেটা উপন্যাসের চরিত্রে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কাউকে মনে ধরে গেলে তাকে আমি অসাধারণ সৃষ্টি হিসেবে দাঁড় করাতে পারি। রায়হানকে কোনাে প্রশ্ন করলাম না। আমার ইচ্ছে ও নিজে থেকেই সব কথা বলুক। ওর ভেতরের উৎসমুখ খুলে গেছে। নিজেকে হালকা করার জন্যে আমার এখানে এসেছে। এখন অনর্গল কথা বলবে। শুধু কথা বলতেই চায়।জানিস জামেরী, মাস তিন চার আগে একদিন হাসতে হাসতে এ ঘটনার কথা ছন্দাকে বলেছিলাম। ব্যস, সেই থেকে ছন্দা একদম গুম হয়ে গেছে। আমার খুনের সমুদয় দায় দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছে। যত সব বাজে ভাবনা। কোনাে মানেই হয় না এ ধরনের আচরণের। আসলে ছন্দা সমস্ত ব্যাপারটাকে পেঁচিয়ে ফেলেছে।তাের কি মনে হয় জামেরী?আমার মনে হয় ছন্দার ব্রেনে অতিরিক্ত কতগুলাে সেলের জন্ম হয়েছে। নইলে এমন অর্থহীন ভাবনায় ও সমস্ত কিছু গুলিয়ে ফেলছে কেন?আমার সমর্থনে রায়হান উৎসারিত হয়ে ওঠে। আমি ইচ্ছে করেই ওকে সমর্থন করলাম। আমার এখন রায়হানের কথা শােনা দরকার। পরে ঠাণ্ডা মাথায় ঘটনার বিশ্লেষণ করতে হবে।ঠিক বলেছিস জামেরী। ছন্দাকে আমি ভালােবাসতে চাই। অথচ ছন্দা আমাকে অস্বীকার করছে। বলছে, খুনীকে ভালােবাস পাপ। পাপ? ছন্দা আমাকে পাপের কথা শেখায়।