ছোটগল্প।। আজো ভালোবাসি।। জেবুন্নেছা জেবু

তনি বললো, তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো তা কখনো আমাকে বুঝাতে চেও না আমি তো জানি। আমার অপারগতাই আমার নিজেরই কষ্ট। ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়াটা যতো কষ্ট তার চেয়ে পরিস্থিতির কারনে সম্পর্ক ছিন্নকারীর মনে আরো দ্বিগুণ কষ্ট হয়, আমি প্রকাশ করি না, তোমার দুঃখ বাড়াতে চাই না বলে।
সিফাত বললো, আমি তোমাকে পাবো না জেনেও ভালোবেসেছি নিজের অজান্তেই। এটা আমার ইচ্ছে কৃত নয়, বিশ্বাস করো! তনি আমি শত চেষ্টা করে ও তোমাকে ভুলতে পারি না নিজেকে বুঝাতে পারিনা।
বার বার আমি ভিখারীর মতো তোমার কাছে মিনতি করি, একটু কথা বলার আকুল ফরিয়াদ জানাই, তুমি কি তা বুঝো না?
আমি তোমার কাছে ভিক্ষা চাই দয়াকরে একটু কথা বলো! আমাকে না বলো না দয়াকরো! আর কিছু চাই না আমাকে বাচঁতে দাও!
উফ! সিফাত , আমাকে যন্ত্রণাময় অবস্থায় ফেলিও না। তোমার বুঝা উচিত নিজেদের আবেগকে প্রশ্রয় দিতে নেই।
ক্ষমা করো আমায়,
এতে শান্তি তো দুরে বরং অশান্তির আগুনে জ্বলতে হবে আমি কোন কিছু শুনতে চাই না। আমার সংসার সন্তান সব কিছু তছনছ হউক সেটা চাও?
কি সব বলছো, তনি আমি কি একবার ও বলেছি সব ছেড়ে ছুড়ে আমার কাছে আসতে?
সিফাত তোমার বুঝা উচিত আমরা মানুষ। মানুষের ভাবনার সাথে মস্তিষ্ক জুড়ে থাকে আর মন তার মন্ত্রে মোহিত হয়ে চলে।
একটু কথা বললে কি এমন ক্ষতি হবে তোমার?
তনির চোখ জলে টল মল করছে।
সিফাত বললো, ঠিক আছে আমি আর কখনো তোমাকে অনুরোধ করবো না যতই কষ্ট হউক…
সিফাত তনিকে কল দিয়ে বললো ঠিক আছে বন্ধুত্ব বজায় থাকুক কারন তোমাকে হারিয়ে মরতে চাই না।
মাঝে মাঝে বাঁচার প্রয়োজনে কলিজা ও অপারেশন করে কেটে ফেলতে হয়।
বিশ্বাস করো তনি কতোটা ভালোবাসলে মানুষের বেতরে কলিজা নাড়ীভুড়ী সব ছিড়ে যেতে চায় আর্তনাদ করে চোখের জলে বুক ভেসে যায় কতো যন্ত্রণা নিয়ে লোক আত্নহত‍্যা করে বুঝতে পারছি। তনি বললো আবার ও কষ্ট কথা কেনো বলো। বন্ধু হলে হাসো গল্প বলো। আমরাতো দুনিয়ায় আবার আসবো না তাই না?
হ‍্যা, সেটা তো সত্যি কিন্তু মন মানে না, আচ্ছা যে যারে চায় তারে কেনো পায় না?
হয়তো স্রষ্টা কে ডাকতে প্রাথর্নায় বলতে!
সিফাত বললো আমি তা মানি না, কই ইউরোপীয় দেশে তো এমন সমাজ ব‍্যাধি নেই ওরা কতো উন্নত, কিভাবে না পাওয়া বঞ্চিত হওয়া দুঃখ কষ্ট ধার্মিকতার ফল হতে পারে বলো?
তনি বললো সিফাত তুমি আবেগে হিতাহিত জ্ঞান হারাচ্ছ।
তনি কেনো আজকে তুমি তোমার স্বামীকে বলতে পারো না? তুমি আমাকেই ভালোবাসো আর আমি তোমাকে।
সিফাত বলা সহজ কিন্তু এই তুমিও একদিন বদলে যাও সেটা আমি চাই না বলেই বলি না।
তনি তাহলে তুমি আমার ব‍্যাপারে সন্দিহান?
সিফাত মানুষের মন গভীর ভাবে বিশ্লেষন করেছো কখনো?
আগে সেটা করো তারপর তুমি নিজেই বলবে দুরে একজন কেউ তোমার জন‍্য প্রার্থনা করে ভালোবাসে ভালো কামনা করে সেই অনুভূতি কতোটা মধুর হয়।
পাওয়া মানে পাওয়া নয় এটার ভবিষ্যত অন্ধকার শেষটা বিচ্ছিন্ন বা বিচ্ছদের আর না পাওয়ার মাঝে আছে গভীর ভালোবাসা যা দেখা যায় না অনুভব করা যায়। আর মানুষ বাচে তার নিজস্ব অনুভবে।
শোনো সিফাত একটা ছাদ বিছানা বালিশ থালা বাটি মরিচ হলুদ রান্না হিসেব সংসার একই গন্ডি এটাতে থাকে বাস্তবতা, ভালোবাসার মতো মানসিকতা বজায় থাকে না।
এই যে আমরা কথা বলছি আমাদের মধ‍্যে কোন পাপ নেই, আন্তরিকতা আছে কতো সুন্দর করে শেয়ার করা সুখ দুঃখ এটা সত্যি বাস্তবে সম্ভব হয় না। সবচেয়ে কাছে থাকা মানুষ গুলোর সাথে সব বলা যদি সম্ভব হতো তাহলে মা বাবা কে কেনো সবকিছু বলা যায় না? বহু বছর ভালোবাসার সম্পর্কে বিয়ে করার পর তা আবার ভেঙ্গে যায় কেনো বলো?
কেনো ভেঙ্গে যায় সম্পর্ক গুলো তা আসলে বলতে গেলে বহু কারন যখন মানুষ বুঝে ফেলে একে অপরকে তখনই অবহেলা শুরু হয়।
জগতে বেশীর ভাগ মানুষই ভুল বশতঃ বালুচরে জল ঢালে আর উলুবনেই মুক্তো ছড়ায়, বেশী মূল‍্যায়নের আশায় তারা নিজের চেয়ে অন‍্যেকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে নিজেরই গুরুত্ব হারায় অতপরঃ তারা হতাশায় জীবন কাটায়। মুক্তো না হারালে মুক্তোর মূল‍্য বুঝা দায় কয়লা ভেবে যাকে হামেশা দুর দুর করি হারিয়ে তাকেই খুজে বেড়াই।
যখন বুঝে আমরা বুঝি নিজের কষ্ট স্রেফ নিজেরই, চোখের জলটা ও নিজেকেই মুছতে হয়। তখন সম্পর্কে ঘাটতি দেখা দেয়।
মানুষ কৌতুহলবশত বিপরীত মুখী মানুষকে প্রাধান্য দেয় কিন্তু তারা বুঝে না বৈপরীত্য কিছুটা সময় ভালো লাগে মাত্র, পরবর্তীতে একই পরিস্থিতি মিলতে হয় খাবার দাবার রং পোশাক নিত‍্য যাপনের বিষয়ে আশি ভাগ মিল থাকা দরকার।
সিফাত বলে ঠিক তাই।
তনি বললো ধরো আমি কোন ভুল করেছি বা আমার স্বামী ভুল করতেই পারে, মানুষ ভুল না করাটা হলো অস্বাভাবিক, ভুল করতে হয়, না হয় জগতের সব অজানা বিষয় হতে বঞ্চিত থাকা হয়, ভুল করে বলেই সংশোধন এতো সুন্দর, ফিরে আসা মানুষ গুলোই পরিশুদ্ধ হয় সবচেয়ে বেশী বিষয়টা সবাই বুঝে না সিফাত।

আমি সব সময় বলি তুমি আমার সাথে কথা বলো না, তার মানে এই নয় আমি তোমাকে ভালোবাসি না কিংবা ইগনোর করছি বরং ব‍্যাপারটা উল্টো। আমি তোমার ভালো চাইছি এটা বুঝতে হবে। মানুষটা যেখানে যেই অবস্থায় থাকুক ভালো সুস্থ সুন্দর উন্নত থাকুক আরো সফল হউক এই প্রার্থনা করাই হলো আসল ভালোবাসা, বাকী সব ক্ষনিকের পিপাসা। আমি বুঝি তনি পরিস্থিতি অবস্থান বদলায় কিন্তু অনুভূতি বা মায়া বদলায় না কারো বেশী কম তফাৎ এইটুকুই।
সিফাত মনে রেখো, কিছু মানুষের অভিনয় দেখলে তুমি অবাক হয়ে যাবে ভালোবাসায় কখনো যদি অসম্মান আচরন দেখো তবে মূহুর্তেই বুঝে নিও তোমাকে ব‍্যবহার করা হচ্ছে।
আচ্ছা বলো আজ কি রান্না করবা?
তনি বললো- বাজারের যা হাল মনে হয় সামনে মাছ মাংস খাওয়া ছাড়তে হবে। বাজার হতে আসলেই রান্না করবো। সিফাত বললো তা ঠিক আজ অফিস বন্ধ বলেই একটু সময় পেলাম তোমাকে ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন‍্য। আমার ও রান্না করতে হয় মাঝে মাঝে টিপস দিও। আম্মুর শরীর টা ভালো নেই।
মায়ের যত্ম নিও, পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষটা হলো মা কেনো জানো?
বলো,
কারন মা তার সংসার সন্তান স্বামীর কাছ হতে সর্বদাই বঞ্চিত কেউ তার মনের খবর রাখা বা ভালোবাসার প্রয়োজন মনে করে না। ভাবে মা হলেই তার কিছুই লাগে না অনুভূতি থাকে না অবহেলা পেতে পেতে ওরা লাশ হয়ে বেঁচে থাকে। মাকে বেঁচে থাকতে সুখ দিও মরে গেলে কেঁদে কোন লাভ নেই।
তনিমার আজ মনটা খুব ভালো সকালে উঠেই ফ্রেশ হয়েই চা নাস্তা তৈরী করেই তার স্বামী আর মেয়েকে ডেকে উঠালো। তনির মেয়ে মিলির বয়স আট বৎসর তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ছে আর স্বামী মুহিত পেশায় সরকারী চাকুরীজীবি। টেবিলে নিয়ম অনুযায়ী রুটি ভাজি চা খেতে খেতে তনি বললো আজ মিলিকে স্কুল হতে ফেরার পথে আমি একটা কেকের অর্ডার করে রেখেছি ওটা আনতে ভুলবা না।
মুহিত বললো কেক কেনো?
তনি বললো তোমার প্রেমিকা হলে নিশ্চয় মনে থাকতো আজকের দিনটা বলাই লাগতো না। থাক লাগবে না আমিই আনবো…
মিলিকে নিয়ে স্কুলে যাও।
আরে বলোতো আমার এতো কাজের ভীড়ে মনে থাকে না সত্যি।
হ‍্যা আমার সবকিছুতে উদাসীনতাই বলে দেয় আমার প্রতি কোন মনযোগ নেই তোমার সব কিছু চেয়ে চেয়ে নিতে আর ভালো লাগে না।
আজ আমার জন্ম দিন সেটা ও মনে থাকে না কোনদিন।
তোমার একটা সারপ্রাইজ কখনো পেলাম না। স‍্যাটেল ম‍্যারেজ এর বাধ‍্যগত সংসার এ এসে ভাবি প্রেমের বিয়েতে হয়তো একজন রোমান্টিক স্বামী আমার জীবনে পেতাম। তনি প্রায় বিশেষ দিনে এই ভেবে কাঁদে।
মুহিত উফ্ অফিসে যাবার সময় তোমার ন‍্যাকামো ভালো লাগে না বলেই মেয়েকে নিয়ে চলে যায়।
তনি অনেক ক্ষন একা একা কেদেঁ তারপর চোখ মুছে মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখলো অনেক বড় একটা sms সাথে লিখা
আমার প্রিয় তনি,
চাই না তোমার সুখের সংসারে অশান্তি হউক, তাই কেকটা নিয়ে আসার খুব ইচ্ছা হলে ও তা বিসর্জন দিলাম অপারগতায় কেকের টাকাটা বিকাশ করলাম অবশ্যই তোমার পছন্দের কেকটা নিয়ে একটা ছবি দিও মনে শান্তি পাবো এই ভেবে যে প্রিয় মানুষের জন‍্য অন্তত জনম দিনের কেকটাতো দেয়া হলো।
তনি কল করে সিফাতকে ধন‍্যবাদ জানালো। আর ভাবছে কতো তফাৎ দুজনের মধ‍্যে প্রশ্ন জাগে মনে আসলে সিফাত ও কি বিয়ের পর মুহিতের মতো হতো, হয়তো হ‍্যা কিংবা না তবুও ভালোবাসা পাবার অদম‍্য লোভ ব‍্যাকুল করে তোলে তনিকে।
তনি আবার ও সিফাত কে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করে আচ্ছা একটা কথা সত্যি করে বলো তোমার সাথে আমার বিয়ে যদি হতো বিয়ের দশ বছর পর ও কি এমন করেই আমার জন‍্য করতে?
সিফাত বললো তুমি তুলনা করে কস্ট পাচ্ছো?
আমি সত্যি টাই বলবো মিথ্যা বলবো না, সেটা হলো যে মানুষটা তোমার সন্তান সংসার তোমার সবার সব বিষয় ঠিক রাখে তার একটু ভুল হতেই তো পারে।
তুমি ই তো বলতে কাঠাঁল খেতে হলে কাটাঁ ও আটাঁ দুটোই মেনেই খেতে হয় ভালো মন্দ সব ভালোবেসে পাশে থাকতে হয়। আজ কেনো এমন ভাবে ভাবছো?
তনি বললো বন্ধু কেমন হয় তুমি তা বুঝালে সিফাত, ধন্যবাদ তোমার অনন্য বন্ধুত্বকে।
সিফাত তনিকে কল দিয়ে বললো ঠিক আছে বন্ধুত্ব বজায় থাকুক কারন তোমাকে হারিয়ে মরতে চাই না।
মাঝে মাঝে বাঁচার প্রয়োজনে কলিজা ও অপারেশন করে কেটে ফেলতে হয়।
বিশ্বাস করো তনি কতোটা ভালোবাসলে মানুষের বেতরে কলিজা নাড়ীভুড়ী সব ছিড়ে যেতে চায় আর্তনাদ করে চোখের জলে বুক ভেসে যায় কতো যন্ত্রণা নিয়ে লোক আত্নহত‍্যা করে বুঝতে পারছি।
তনি বললো আবার ও কস্ট কথা কেনো বলো।
বন্ধু হলে হাসো গল্প বলো। আমরা তো দুনিয়ায় আবার আসবো না তাই না?
হ‍্যা সেটা তো সত্যি কিন্তু মন মানে না আচ্ছা যে যারে চায় তারে কেনো পায় না?
হয়তো স্রষ্টাকে ডাকতে প্রাথর্নায় বলতে!
সিফাত বললো আমি তা মানি না, কই ইউরোপীয় দেশে তো এমন সমাজ ব‍্যাধি নেই ওরা কতো উন্নত, কিভাবে না পাওয়া বঞ্চিত হওয়া দুঃখ কস্ট ধার্মিকতার ফল হতে পারে বলো?
তনি বললো সিফাত তুমি আবেগে হিতাহিত জ্ঞান হারাচ্ছ।
তনি কেনো আজকে তুমি তোমার স্বামীকে বলতে পারো না যে তুমি আমাকেই ভালোবাসো আর আমি তোমাকে।
সিফাত বলা সহজ কিন্তু এই তুমিও একদিন বদলে যাও সেটা আমি চাই না বলেই বলি না।
তনি তাহলে তুমি আমার ব‍্যাপারে সন্দিহান?
সিফাত মানুষের মন গভীর ভাবে বিশ্লেষন করেছো কখনো?
আগে সেটা করো তারপর তুমি নিজেই বলবে দুরে একজন কেউ তোমার জন‍্য প্রার্থনা করে ভালোবাসে ভালো কামনা করে সেই অনুভূতি কতোটা মধুর হয়।
পাওয়া মানে পাওয়া নয় এটার ভবিষ্যত অন্ধকার শেষটা বিচ্ছিন্ন বা বিচ্ছদের আর না পাওয়ার মাঝে আছে গভীর ভালোবাসা যা দেখা যায় না অনুভব করা যায়। আর মানুষ বাচে তার নিজস্ব অনুভবে।
শোনো সিফাত একটা ছাদ বিছানা বালিশ থালা বাটি মরিচ হলুদ রান্না হিসেব সংসার একই গন্ডি এটাতে থাকে বাস্তবতা, ভালোবাসার মতো মানসিকতা বজায় থাকে না।
এই যে আমরা কথা বলছি আমাদের মধ‍্যে কোন পাপ নেই, আন্তরিকতা আছে কতো সুন্দর করে শেয়ার করা সুখ দুঃখ এটা সত্যি বাস্তবে সম্ভব হয় না। সবচেয়ে কাছে থাকা মানুষ গুলোর সাথে সব বলা যদি সম্ভব হতো তাহলে মা বাবা কে কেনো সবকিছু বলা যায় না? বহু বছর ভালোবাসার সম্পর্কে বিয়ে করার পর তা আবার ভেঙ্গে যায় কেনো?
কেনো ভেঙ্গে যায় সম্পর্ক গুলো তা আসলে বলতে গেলে বহু কারন যখন মানুষ বুঝে ফেলে একে অপরকে তখনই অবহেলা শুরু হয়।
জগতে বেশীর ভাগ মানুষই ভুল বশতঃ বালুচরে জল ঢালে আর উলুবনেই মুক্তো ছড়ায়, বেশী মূল‍্যায়নের আশায় তারা নিজের চেয়ে অন‍্যেকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে নিজেরই গুরুত্ব হারায় অতপরঃ তারা হতাশায় জীবন কাটায়। মুক্তো না হারালে মুক্তোর মূল‍্য বুঝা দায় কয়লা ভেবে যাকে হামেশা দুর দুর করি হারিয়ে তাকেই খুজে বেড়াই।
যখন বুঝে আমরা বুঝি নিজের কস্ট স্রেফ নিজেরই, চোখের জলটা ও নিজেকেই মুছতে হয়। তখন সম্পর্কে ঘাটতি দেখা দেয়।
মানুষ কৌতুহলবশত বিপরীত মুখী মানুষকে প্রাধান্য দেয় কিন্তু তারা বুঝে না বৈপরীত্য কিছুটা সময় ভালো লাগে মাত্র, পরবর্তীতে একই পরিস্থিতি মিলতে হয় খাবার দাবার রং পোশাক নিত‍্য যাপনের বিষয়ে আশি ভাগ মিল থাকা দরকার।
সিফাত বলে ঠিক তাই।
তনি বললো ধরো আমি কোন ভুল করেছি বা আমার স্বামী ভুল করতেই পারে, মানুষ ভুল না করাটা হলো অস্বাভাবিক, ভুল করতে হয়, না হয় জগতের সব অজানা বিষয় হতে বঞ্চিত থাকা হয়, ভুল করে বলেই সংশোধন এতো সুন্দর, ফিরে আসা মানুষ গুলোই পরিশুদ্ধ হয় সবচেয়ে বেশী বিষয়টা সবাই বুঝে না সিফাত।

আমি সব সময় বলি তুমি আমার সাথে কথা বলো না, তার মানে এই নয় আমি তোমাকে ভালোবাসি না কিংবা ইগনোর করছি বরং ব‍্যাপারটা উল্টো। আমি তোমার ভালো চাইছি এটা বুঝতে হবে।
মানুষটা যেখানে যেই অবস্থায় থাকুক ভালো সুস্থ সুন্দর উন্নত থাকুক আরো সফল হউক এই প্রার্থনা করাই হলো আসল ভালোবাসা, বাকী সব ক্ষনিকের পিপাসা।
আমি বুঝি তনি পরিস্থিতি অবস্থান বদলায় কিন্তু অনুভূতি বা মায়া বদলায় না কারো বেশী কম তফাৎ এইটুকুই।
সিফাত মনে রেখো,
কিছু মানুষের অভিনয় দেখলে তুমি অবাক হয়ে যাবে ভালোবাসায় কখনো যদি অসম্মান আচরন দেখো তবে মূহুর্তেই বুঝে নিও তোমাকে ব‍্যবহার করা হচ্ছে।
আচ্ছা বলো আজ কি রান্না করবা?
তনি বললো- বাজারের যা হাল মনে হয় সামনে মাছ মাংস খাওয়া ছাড়তে হবে। বাজার হতে আসলেই রান্না করবো।
সিফাত বললো তা ঠিক আজ অফিস বন্ধ বলেই একটু সময় পেলাম তোমাকে ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন‍্য।
আমার ও রান্না করতে হয় মাঝে মাঝে টিপস দিও। আম্মুর শরীর টা ভালো নেই।
মায়ের যত্ম নিও, পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষটা হলো মা কেনো জানো?
বলো,
কারন মা তার সংসার সন্তান স্বামীর কাছ হতে সর্বদাই বঞ্চিত কেউ তার মনের খবর রাখা বা ভালোবাসার প্রয়োজন মনে করে না। ভাবে মা হলেই তার কিছুই লাগে না অনুভূতি থাকে না অবহেলা পেতে পেতে ওরা লাশ হয়ে বেঁচে থাকে। মাকে বেঁচে থাকতে সুখ দিও মরে গেলে কেঁদে কোন লাভ নেই।
তনিমার আজ মনটা খুব ভালো সকালে উঠেই ফ্রেশ হয়েই চা নাস্তা তৈরী করেই তার স্বামী আর মেয়েকে ডেকে উঠালো।
তনির মেয়ে মিলির বয়স আট বৎসর তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ছে আর স্বামী মুহিত পেশায় সরকারী চাকুরীজীবি। টেবিলে নিয়ম অনুযায়ী রুটি ভাজি চা খেতে খেতে তনি বললো আজ মিলিকে স্কুল হতে ফেরার পথে আমি একটা কেকের অর্ডার করে রেখেছি ওটা আনতে ভুলবা না।
মুহিত বললো কেক কেনো?
তনি বললো,
তোমার প্রেমিকা হলে নিশ্চয় মনে থাকতো আজকের দিনটা বলাই লাগতো না। থাক লাগবে না আমিই আনবো…
মিলিকে নিয়ে স্কুলে যাও।
আরে বলোতো! আমার এতো কাজের ভীড়ে মনে থাকে না সত্যি।
হ‍্যা আমার সবকিছুতে উদাসীনতাই বলে দেয় আমার প্রতি কোন মনযোগ নেই তোমার, সব কিছু চেয়ে চেয়ে নিতে আর ভালো লাগে না।
আজ আমার জন্ম দিন সেটা ও মনে থাকে না কোনদিন তোমার একটা সারপ্রাইজ কখনো পেলাম না।
স‍্যাটেল ম‍্যারেজ এর বাধ‍্যগত সংসার এ এসে ভাবি প্রেমের বিয়েতে হয়তো একজন রোমান্টিক স্বামী পেতাম।
তনি প্রায় বিশেষ দিনে এই ভেবে কাঁদে। মুহিত উফ্ অফিসে যাবার সময় তোমার ন‍্যাকামো ভালো লাগে না বলেই মেয়েকে নিয়ে চলে যায়।
তনি অনেক ক্ষন একা একা কেদেঁ তারপর চোখ মুছে মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখলো অনেক বড় একটা sms সাথে লিখা- আমার প্রিয় তনি, চাই না তোমার সুখের সংসারে অশান্তি হউক, তাই কেকটা নিয়ে আসার খুব ইচ্ছা হলে ও তা বিসর্জন দিলাম। অপারগতায় কেকের টাকাটা বিকাশ করলাম অবশ্যই তোমার পছন্দের কেকটা নিয়ে একটা ছবি দিও মনে শান্তি পাবো এই ভেবে যে প্রিয় মানুষের জন‍্য অন্তত জনম দিনের কেকটাতো দেয়া হলো।
তনি কল করে সিফাতকে ধন‍্যবাদ জানালো। আর ভাবছে কতো তফাৎ সিফাত আর মুহিত দুজনের মধ‍্যে প্রশ্ন জাগে মনে আসলে সিফাত ও কি বিয়ের পর মুহিতের মতো হতো,
হয়তো হ‍্যা কিংবা না তবুও ভালোবাসা পাবার অদম‍্য লোভ ব‍্যাকুল করে তোলে তনিকে।
তনি আবার ও সিফাত কে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করে আচ্ছা একটা কথা সত্যি করে বলো তোমার সাথে আমার বিয়ে যদি হতো বিয়ের দশ বছর পর ও কি এমন করেই আমার জন‍্য করতে?
সিফাত বললো তুমি তুলনা করে কষ্ট পাচ্ছো? আমি সত্যি টাই বলবো মিথ্যা বলবো না, সেটা হলো যে মানুষটা তোমার সন্তান সংসার তোমার সবার সব বিষয় ঠিক রাখে তার একটু ভুল হতেই তো পারে তুমি ই তো বলতে কাঠাঁল খেতে হলে কাটাঁ ও আটাঁ দুটোই মেনেই খেতে হয় ভালো মন্দ সব ভালোবেসে পাশে থাকতে হয়। আজ কেনো এমন ভাবে ভাবছো?
তনি বললো বন্ধু কেমন হয় তুমি তা বুঝালে সিফাত, ধন্যবাদ তোমার অনন্য বন্ধুত্বকে। বন্ধু ঘর বাধাঁয় ভাঙ্গে না চাইলেই তুমি আমার মনকে উসকে দিতে পারতে। তোমার বন্ধুত্ব ভালোবাসায় আমি সত্যি বিস্মিত।
মুহিত মেয়েকে স্কুল হতে ফেরার সময় কেক নিয়ে বাসায় আসলো, বললো চলো রাতে রেস্টুরেন্টে খাই, তোমার জন্মদিনটা আমার জন‍্যও স্পেশাল।
তনিমা বললো তাই বুঝি?
অবশ্যই , যদিও আমি প্রকাশ করি কম আচ্ছা সবাই সব পারে বলো?
আমার বন্ধু সিফাত যাকে পরিচয় করে দিয়েছিলাম তোমাকে একবার, সে কি করেছে জানো! কেকের জন‍্য বিকাশ করেছে আমাকে।
মুহিত বললো ওহ! মনে আছে, আসলে ও তোমাকে খুব পছন্দ করে, ভালোবাসে তা আমি বুঝতে পারি।
তনি বললো,
তোমার হিংসে হয়,
মুহিত বললো হিংসে তো হয়, তবে কেউ কাউকে ভালোবাসা, দুর হতে সম্মান করাতে আপত্তি বা অপরাধ দেখি না, আমি তো জানি তুমি কেমন।
একটা কাজ করি সিফাতের নাম্বার টা দাও তো! আমার বউকে যে গিফট করেছে তার প্রতি আমার একটা দায়িত্ব তো আছে।
সিফাত কে সরাসরি ফোন দিয়ে মুহিত বললো, আমি তনির বর মুহিত বলছি আপনি রাতে রেস্টুরেন্টে আমাদের সাথেই খাবেন এটা আমার বিনীত অনুরোধ।
সিফাতকে কিছু বলার সুযোগ দিলোই না।
তনি বললো, আমিতো তোমার কান্ড দেখে অবাক হচ্ছি এত্তো উদারতা ব‍্যাপার কি?
আরে জীবনে চলার পথে বুদ্ধিমান স্বামীদের উদার হতে হয় সেটা সব ক্ষেত্রেই।
তনি বললো খুলে বলো তো!
মুহিত বললো বেশী বাধা ধরা নিয়মে বেশী অঘটন হয়, যেখানে বাধা সেখানেই আর্কষন বেশি।
অনেক স্ত্রী স্বামীদের আসামীর মতো চোখে চোখে রাখে, মনে হয় ওদের পায়ে বেড়ী জীবনে শেঁকল এই দূর্বিসহ জীবন হতে মুক্তি পেতে আমি দেখেছি অনেক ভালো ভালো ছেলে নষ্ট পথের পথিক হতে।
তনি বললো— হ‍্যা মানুষ বিয়ে করলেই তার ব‍্যাক্তিসত্তাকে বিক্রয় করে না। আপাদমস্তক মানুষটা সুখী জীবন পেতে বিয়ে করে দুঃখ কারাবাস করবে কেনো?
সবার বুঝা উচিত সেটা।
নিজের টা ষোল আনা বুঝলে হবে না, নিজেকে দিয়ে সব চিন্তা করা উচিত।
আচ্ছা তুমি আজকে লাঞ্চ করে অফিসে যাবা না?
না বসকে ম‍্যানেজ করতে বলেছি।
আচ্ছা সিফাত এখনো বিয়ে করেনি?
তনি বললো না সিফাত বললো আমার পরিচিত মেয়ে আছে দেখবো?
তনি ওকে জিজ্ঞেস করে দেখো আজ।
সময় মতো সবাই রেস্টুরেন্টে উপস্থিত সিফাতের কাছে ব‍্যাপারটা স্বপ্নীল মনে হচ্ছে।
রেস্টুরেন্টে তনি স্বাভাবিক সাজে ছিলো একটা টিয়ে রং এর শাড়ী পরেছে অসাধারণ লাগছিলো দেখতে। খাবারের মেনু পছন্দের জন‍্য মেনু বুকটা তনি নিয়ে বললো কে কি খাবে বলে দাও। মেয়ে মিলি বললো আম্মু সেট মেনু দাও। সিফাত ও তাই বললো।
কথা প্রসঙ্গে খেতে খেতে মুহিত সিফাতকে প্রশ্ন করলো বিয়ে করতে এতো দেরী কেনো ভাই?
Pls don.t mind বড় ভাই হিসেবে বলছি কাউকে ভালোবেসে দেবদাস হলে কি চলবে? কলেজ জীবনে আমিও একজনকে ভালোবেসে দেবদাস হবার ইচ্ছে পোষন করি, পরে পরিবারের ইচ্ছার কাছে হার মেনে তনিকে দেখতে গিয়ে কেনো যেনো তার রূপে ফেঁসে গেলাম।

সিফাত বললো আসলে সবাই জীবনকে ঠিক অন‍্যের নিয়মে চালিয়ে নিতে পারে না ভাইয়া। সত্যি বলতে কি যাকে ভালোবাসি তাকে নিয়ে কোন রকম খারাপ চিন্তা ভাবনা করি না কিন্তু তার সাথে কথা বলতে না পারলে আমার কলিজা ছিড়েঁ য়ায় তবুও প্রকাশ করিনা।
খুব করে ভালোবাসলে যা হয় ছেড়ে থাকা যায় না বা তার জায়গাটা কাউকেই দেয়া যায় না।
ভীষণ মিস করা হতে ভয়ংকর ভাবে অনুভব করার নাম যদি ভালোবাসা হয় অপরাধ হয় হউক তবুও তার জায়গাটা কেবলই তার।
মুহিত বললো তাতেতো আপনারই ক্ষতি, তনিমা বলে উঠে তোমার ভালোবাসা ভালো আছে তুমি ও ভালো থাকো এটাই হউক সমাধান।
সিফাত হাসলো বললো তবুও আমি আমার সাথে সংর্ঘষে যাবো না এটা আমার একান্তই নিজের বিষয়।
মুহিত বললো ঠিক আছে মানলাম এই নাম্বারটা রাখুন আমার ও তনির পরিচিত মেয়েটা খুব ভালো কথা বলে দেখতে পারেন।
খাবার শেষ করে সিফাত এর মায়ের জন‍্য ও খাবার প‍্যাক করে দিতে বললো মুহিত। সিফাত বুঝতে পারে মুহিত সত্যি বিবেকবান ভালো মানুষ। বিলটা সিফাত দিতে চাইলে মুহিত হাত ধরে বলে আপনি তনিকে যা গিফট করেছেন সেটাই বড়।
তনি সিফাতকে সেদিন ইচ্ছা মতো গাল মন্দ করে। এটা তনির পুরনো অভ‍্যাস কাউকে বেশী মিস করলে তাকে বকা ঝকা না করলে তার হয় না।
তনির ভালোবাসাটা একটু ব‍্যতিক্রম সে যাকে ভালোবাসে বা তার কাছের মানুষগুলো তার কাছে যেনো শিশু ইচ্ছা মতো বলা আর পরে নিজেই নিজে অনুতপ্ত হওয়াই স্বভাব, তার ভাবনাগুলো খুব স্বচ্ছ আর স্বার্থহীন।
তনিকে মুহিত কিছুই বলে না তার খুশীতে বাধা দেয় না ইদানিং মুহিত চায় তনি ভালো থাকুক। মুহিত কখনো তনিকে বলেনি মাঝে মাঝে প্রচণ্ড মাথা ব‍্যাথার কারনটা। ইদানিং চোখে ঝাপসা দেখছে তার এতো সুন্দর চোখ দুটো ধীরে ধীরে আলো হারাচ্ছে।
তনির ব্রেন টিউমার যা অপারেশন করলেও বাচাঁর সম্ভাবনা কম বরং না করে যতোদিন বাঁচা সম্ভব হয় বাঁচুক সেটাই ভালো।
মুহিত রাত দিন নামাজে তনির জন‍্য হায়াত চায় আজকে সিফাতকে কেঁদে কেঁটে যখন বলছিলো সিফাতের নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে বুক ভেঙ্গে যায় পাড় ভাঙ্গার মতো শূন্য মনে হয় সব।
সিফাত সব শুনে ভীষন মর্মাহত হয় আর বলে এটা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, আপনি আবার চেকআপ এর ব‍্যবস্থা করুন pls…জীবনের আয়োজনে আমাদের চেষ্টাতে আমরা অসম্ভবকে ও সম্ভব করতে পারি। স্রষ্টার কাছে সব আছে , টাকা যা লাগে আমি দেবো তবুও নিরাশ হবেন না।
মৃত্যু মানুষের একটি অবধারিত বিষয়, কবে কখন এসে নিয়ে যাবে কেউ জানে না। তবুও আমরা আশা ত‍্যাগ করতে পারি না। আশা নিয়ে মানুষ বাচেঁ সত্যিকারের ভালোবাসার জন‍্য কতো কি করে যায় মানুষ।
চিরকাল কিছুই থাকে না, মৃত্যুর মতো হঠাৎ করে বদলায় জীবন, আজকে যা আছে কাল তা থাকার গ‍্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। স্রেফ স্রষ্টাই পারেন সব পরিবর্তন করতে। চলমান জীবনে সর্বস্ব উজাড় করে ভাবতে নেই জীবন এখানেই শেষ… মুলতঃ জীবিত কালে শেষ বলে কিছু নেই জীবনের প্রয়োজনে চালিয়ে নিতে হয় বাঁচার লড়াই।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *