বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পনের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায় ।। প্রথম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। দ্বিতীয় পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। তৃতীয় পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। ষষ্ঠ পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। পঞ্চম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। চতুর্থ পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। সপ্তম পর্ব ।।
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। অষ্টম পর্ব ।।
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। নবম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব দশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। পর্ব এগারো
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বারো
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব চৌদ্দ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পনের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব ষোল
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব সতের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব আঠার
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব উনিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব একুশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বাইশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তেইশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব চব্বিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ
পনের.
সংকটে তরুণরা আলোর দিশা দেখায়। যুগে যুগে বার বার সেটা প্রমাণিত হয়েছে। ক্ষমতার পালা বদলের পর ইলাবৃতে বড় ধরণের কোনো বিক্ষোভ হয়নি, এটা সত্য। তবে ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হয়েছে তরুণরা। একটা নীরব আন্দোলন গড়ে তুলেছে তারা। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে আছে অনি। তুখোড় ছাত্রনেতা। ঝকঝকে এক তরুণ। লম্বা, সুঠাম গড়ন। ধারাল চোখ-মুখ। মাথা ভর্তি কোকড়ানো কালো চুল।
ভিড়ের মধ্যেও সহজে তাকে আলাদা করে চোখে পড়ে। নেতৃত্ব দেওয়ার গুণ তার ভেতরে সহজাত। একই সঙ্গে বাগ্মী। যখন বক্তৃতা দেয়, শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শোনে। পরনের পোশাকেও তার রয়েছে অন্যরকম একটা স্বকীয়তা। আর তাই তরুনদের মধ্যে সে খুবই জনপ্রিয়। সুদর্শন হওয়ায় অনেক তরুনীই বলতে গেলে তার জন্য পাগল।
গত চার দিনে চব্বিশটা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণসংযোগ করেছে অনি। দারুণ সাড়া মিলেছে। তরুণদের ভেতরের ছাই-চাপা আগুন এখন আর চাপা নেই। তাতে আন্দোলনের বাতাস লেগেছে। তাদের আন্দোলন অহিংস। তাদের দাবি যৌক্তিক। এই আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন অধিপতির কাছে সুস্পষ্ট তিন দফা দাবি জানানো হচ্ছে। তরুণরা আশাবাদী, তিনি সেগুলো মেনে নেবেন। আর মেনে না নেওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।
সবচেয়ে পুরানো, নামী ও ঐতিহ্যবাহী ঈক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ গণসংযোগ করতে এসেছে অনি। বরাবরের মতোই তার সঙ্গে আছে আশু আর আলিসা। আশু উঠতি সংগীত শিল্পী। দারুণ গায়। একবার গান ধরলে একদম ভিড় জমে যায়। আলিসা অল্প সময়ে অভিনয়ে খুব নাম করেছে। তাকে একনজর দেখতে শিক্ষার্থীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এই দুজন সঙ্গে থাকায় অনির কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়।
নিজের জনপ্রিয়তাকে খাটিয়ে বাকি কাজটুকু সে অনায়াসে করে ফেলতে পারে।
আজকের চিত্র অবশ্য আলাদা। ঈক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেন উৎসবের আমেজ।
অনিদের আসার খবর আগে থেকেই চাউর হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। তারপর সাদরে নিয়ে আসা হয়েছে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে। এখানেই আয়োজন করা হয়েছে আজকের গণসংযোগ অনুষ্ঠান। মিলনায়তনে তিল ধারণের জায়গা নেই। ভিড় গড়িয়েছে বাইরের অনেকটা পর্যন্ত। মিলনায়তনে উপস্থিত সবার নজর মঞ্চের দিকে। এলোমেলো আলাপচারিতায় ব্যস্ত প্রায় সবাই। হঠাৎ মৃদু গুঞ্জণ। উপস্থাপক সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শান্ত হতে বললেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংসদের সহ-সভাপতি ওসা উপস্থাপকের দায়িত্ব নিয়েছে।
ওসার গলা একটু খসখসে। তবে বাচনভঙ্গিটি ভারি চমৎকার। রসবোধও বেশ। সে বলল, আমার এই কর্কশ গলা দিয়ে আপনাদের আর জ্বালাতন করব না। প্রিয় শিল্পী আশু তার কণ্ঠ সুধা দিয়ে আপনাদেরকে মুগ্ধ করতে আশুই হাজির হচ্ছে। আসছেন আশু।
আশুর নাম শুনতেই সবার কী উল্লাস। সে মঞ্চে এলো, বিনা বাক্য ব্যয়ে গান ধরল। গান ধরতেই মিলনায়তনে পিনপতন নীরবতা। দর্শক-শ্রোতাদের অনুরোধে একে একে পাঁচটি গান গাইতে হলো তাকে। শেষদিকে দর্শকরা সুর মেলাল তার সঙ্গে।
দুঃখিত, আপনাদেরকে আবার কিঞ্চিৎ যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। ওসার এই কথা শুনে মিলনায়তন জুড়ে হাসির রোল। সে বলল, এতক্ষণ সুমধুর সংগীতে কান ভরেছে। এবার নয়ন ভরবে। নয়ন জুড়াবে। আর তার আবৃত্তি শুনে মন ভরবে। আমরা সবাই হাততালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানাই। এবার আসছেন আপনাদের প্রিয় অভিনেত্রী আলিসা।
হাততালির শব্দে কানে তালা লাগার জোগাড়। আলিসা হাসিমুখে মঞ্চে এসেই হাত নাড়ল উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে। হাততালির আওয়াজ আরও বাড়ল, সঙ্গে যোগ হলো কলরোল। আলিসা সুরেলা গলায় বলল, কেমন আছেন আপনারা?
ভালো। সমস্বরে জবাব এলো।
তাহলে চলুন কবিতার ছন্দময় ভুবন থেকে একটু ঘুরে আসি। কী রাজি সবাই?
আবার সম্মিলিত জবাব, রাজি।
এবার তো তাহলে আমাদের কথা থামাতে হয়। আমাকে আবৃত্তি করার একটু অবসর দিতে হয়। আশা করি সবাই একটু থেমে এই অবসরটুকু আমাকে দেবেন। গোটা মিলনায়তন মুহূর্তে নিশ্চুপ। আলিসা গুনে গুনে সাতটি কবিতা আবৃত্তি করতে বাধ্য হলো। একটা শেষ হয়, সঙ্গে সঙ্গে আরেকটার অনুরোধ। আলিসাও কম যায় না, শেষ দিকে বেছে বেছে ছোট কবিতাগুলো আবৃত্তি করল। সুন্দর আবৃত্তি তো আছেই, কবিতা বাছাইয়ের জন্যও তাকে একটা ধন্যবাদ দিতে হয়। সে জানে তরুণদের পছন্দ। দ্রোহ ও প্রেমের কবিতা দিয়ে সবাইকে একেবারে মাতিয়ে দিলো সে।
আবার একটু জ্বালাতন করব। জানি, বিরক্ত হচ্ছেন। ওসার কথা শুনে মিলনায়তনের সবাই আবার হেসে ওঠল। হাসি থামতেই সে বলল, আনন্দ অনেক হলো। এবার একটু বাস্তবতায় ফেরা যাক। আমাদের চলমান আন্দোলন নিয়ে এখন কথা বলবেন সুযোগ্য ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রনেতা অনি। মঞ্চে আসছেন তুমুল জনপ্রিয় তরুণ অনি। হাততালি। উল্লাস। চিৎকার। সোরগোল। মিলনায়তনে হঠাৎ যেন অদৃশ্য কোনো ঢেউ বয়ে গেল। স্মিত হেসে মঞ্চে এলো অনি। উপস্থিত সবাই উঠে দাঁড়াল। অনি হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাল। হাত নেড়ে সবাইকে শান্ত হতে বলল। অদ্ভুত সম্মোহনীয় গলায় বলল, দয়া করে বসে পড়–ন সবাই।
সম্মোহিতের মতো সবাই বসে পড়ল। কারও মুখে কোনো কথা নেই। কেবল অনির কথা শুনতে চাইছে। শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।
বক্তব্য শুরু করল অনি। না, ভুল হলো। তুখোড় এক ছাত্রনেতা পাকা অভিনেতার মতো শুরু করল তার মঞ্চ উপস্থাপনা।
‘আমি এখানকার সবাইকে আমার কাছের মানুষ মনে করি। কাছের মানুষকে আমি কিছুতেই আপনি বলতে পারব না। কেমন আছো তোমরা?’
ভালো। খুব ভালো। একসঙ্গে বলে উঠল সবাই। সঙ্গে হাততালি।
‘তোমাদের খুব বেশি সময় আমি নেবো না। আমি গান গাইতে পারি না। আমি আবৃত্তি তেমন করে করতে পারি না। তবে আমি একটা জিনিস পারি। এবং নিষ্ঠার সঙ্গে আমি সেই কাজটিই করি। আমি আসলে তরুণদের মনের কথা আবৃত্তি করি। আমি তরুণদের মনের ভেতরের গানটা গাওয়ার চেষ্টা করি। আমি তরুণদের গান গাই। আমি তরুণদের কবিতা আবৃত্তি করি।’
আবার হাততালি। অনি একটু থামল। তার মুখে হালকা হাসি লেপ্টে আছে।
‘আমাদের প্রাণপ্রিয় এই ইলা গ্রহে নতুন অধিপতি এসেছেন। ইলাবৃতে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমরা তরুণ, আমরা নতুন। আমরা ইতিবাচক পরিবর্তনের পক্ষে। আমরা জীবনের অগ্রযাত্রার পক্ষে, জয়যাত্রার পক্ষে। কারণ আমরা মানে এই তরুণরা জীবনের গান গাই। জীবনবোধের কবিতা আবৃত্তি করি।’
মিলনায়তনে কোনো শব্দ নেই। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে অনির কথা শুনছে।
‘তোমরা জানো আমার নাম অনি। পোশাকি নাম অনিকেত। আর অনিকেত মানে গৃহহীন। এই আধুনিক সাইবার যুগে কে গৃহহীন? একমাত্র বাউল গৃহহীন। আমি এক বাউল, মহাজাগতিক বাউল। আমি জীবনের গান শোনাতে এসেছি। আমি আমাদের নায্য দাবির কথা বলতে এসেছি।’
তন্ময় হয়ে শুনছে উপস্থিত সবাই।
‘তোমরা সবাই জানো, নতুন অধিপতি প্রতিটি শীর্ষ পদে কৃবুস প্রতিনিধি বসিয়েছেন এবং বসাচ্ছেন। আমি বলি, মহামান্য অধিপতি, এবার একটু থামুন। আমাদের তিন দফা দাবি মন দিয়ে শুনুন। এবং যত দ্রুত সম্ভব মেনে নিন। আপনি একটা কথা মনে রাখবেন, আমাদের দাবি আপনাকে মানতেই হবে। না মানা পর্যন্ত আমাদের এই অহিংস আন্দোলন চলবে। আমরা ধৈর্য ধরে আছি। কিন্তু দয়া করে ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না। তার ফল ভালো হবে না।’
অনি একটু থেমে উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বলল, ‘তোমরা কী বলো, তোমরা কী আমার কথার সঙ্গে একমত?’
হ্যাঁ, একমত। দৃঢ় কণ্ঠে একসঙ্গে জানাল সবাই।
‘আমি জানি তোমরা সবাই এরই মধ্যে তিন দফা জেনে গেছো। তারপরও চলো আমরা সবাই মিলে আবার সেটা বলি।
দফা এক : শিক্ষাঙ্গনের কোন শীর্ষ পদে কৃবুস প্রতিনিধি বসানো যাবে না।
দফা দুই : আমাদের সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ওপর কোনো ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে না।
দফা তিন : শিক্ষিত প্রতিটি তরুণ-তরুণীকে চাকরি দিতে হবে।’
এই দফা তিনটি এখন শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে ফেরে। অনির সঙ্গে উপস্থিত সবাই দফাগুলো বলছিল। তবে একটা বিষয় ছিল লক্ষ্য করার মতো। সবাই দফাগুলো বলছিল শপথের মতো করে। হঠাৎ মঞ্চে উঠে এলো সশস্ত্র দুই অ্যাব সদস্য। ভড়কে গেল সবাই। শুধু অনির মুখে মৃদু হাসি। সে যেন জানত এ রকম একটা কিছু হবে। উপস্থিত সবাই ক্ষুব্দ হয়ে উঠতে পারে, এই আশংকায় সে বলল, তোমাদের ভয়ের কিছু নেই। তোমরা শান্ত হয়ে বসো।