বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তেইশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায় ।। প্রথম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। দ্বিতীয় পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। তৃতীয় পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। ষষ্ঠ পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। পঞ্চম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। চতুর্থ পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। সপ্তম পর্ব ।।
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। অষ্টম পর্ব ।।
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। নবম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব দশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। পর্ব এগারো
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বারো
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব চৌদ্দ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পনের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব ষোল
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব সতের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব আঠার
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব উনিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব একুশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বাইশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তেইশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব চব্বিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ
তেইশ.
অধিপতি উতু অপেক্ষায় ছিলেন। ভেতরে কাজ করছিল বাড়তি আগ্রহ ও কৌতূহল। বিজ্ঞানী ঈশান মারা যাওয়ার একদিন বাদে যোগাযোগ করেছিলেন শ্রদ্ধেয় ডা. অমিয়। এই প্রথম তিনি যোগাযোগ করলেন। কারণটাও বেশ অদ্ভুত। তাঁর ছেলে অরি দেখা করতে চায়। সম্ভব হলে, বিধিনিষেধের বেড়াজাল না থাকলে একটু ছুঁয়ে দেখতে চায়।
একদম ছোটদের মতো আবদার। অরি ইলাবৃতে এসেছে এ খবর অধিপতি উতু আগেই পেয়েছেন। সে সম্ভবত বাবাকে নিয়ে যেতে চায়। বিষয়টা অত সহজে ঘটতে দেওয়া যাবে না। ডা. অমিয়’র অন্তত আরও কিছু দিন এই বসতিতে থাকার প্রয়োজন আছে। সেই প্রয়োজনটা নিজের স্বার্থেই। উনাকে দিয়ে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাতে হবে।
অধিপতি উতু কিছু না ভেবেই সানন্দে সাক্ষাতে রাজি হয়ে গেছেন। পরদিনই তাদেরকে আসতে বলেছেন। ডা. অমিয় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন, এটার তো বড় একটা সামাজিক মর্যাদা আছে। মানুষের মাঝে তার গ্রহনযোগ্যতা একটু হলেও বাড়বে।
অবশ্য পরে অধিপতি উতুর মনে হলো, অরি কেন দেখা করতে চায়? কেন সে ছুঁয়ে দেখতে চায়? অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই তো? ছেলেটি তরুণ প্রযুক্তিবিদ। এসব প্রশ্ন সে কারণেই তার মনে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ ভেবেছেন তিনি। ভাবনার এক পর্যায়ে মনে হলো, সাক্ষাতের জন্য রাজি যখন হয়েছেন তখন আসুক না। তারপর অবস্থা বুঝে না হয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আর ডা. অমিয় তো জেনেশুনে ছেলেকে হঠকারী কিছুর দিকে ঠেলে দেওয়ার লোক নন। এছাড়া অনায়াসে ঘায়েল করার মতো দুটো গোপন অস্ত্র তো তার ঝুড়িতে রয়েছেই। প্রথমটি হলো তাকে আবিষ্ট করে ফেলা। আর দ্বিতীয়টি হলো, সে সজ্ঞানে কমপক্ষে দুইবার এই বসতির যোগযোগ নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা বলয় ভেঙেছে। এর যুতসই প্রমাণ তার হাতে রয়েছে।ঃ
চাইলেই সেটা ব্যবহার করে শাস্তি দেওয়া যাবে।
ডা. অমিয় ও অরি এখন অধিপতি উতুর খাস কামরায়, তার সামনে বসে। অরি একবার তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিয়েছে। আর ডা. অমিয় হাসিমুখে বসে আছেন। অধিপতি উতু তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে তাকালেন অরির দিকে। আরও স্পষ্ট করে বললে তার মাথার দিকে।
না, অস্বাভাবিক তেমন কিছু চোখে পড়ল না অধিপতি উতুর। এবার তিনি গল্প করার মেজাজে ফিরলেন।
তা অরি, কেমন লাগছে ইলাবৃতে ?
ভালো। চোখ না তুলেই অরির সংক্ষিপ্ত জবাব।
এখানে থেকে গেলেই পারো, আমরা একসঙ্গে কাজ করব।
থাকা সম্ভব নয়। মা একা ওখানে রয়েছে।
তোমার বাবাও তো এখানে একা।
সেজন্যই তো উনাকে বলি আমাদের ওখানে চলে যেতে।
উল্টোটাও তো হতে পারে। তোমার মাকে এখানে নিয়ে আসো।
মা এখানে ফিরতে চান না। তাই আমাকে মায়ের কাছেই ফিরতে হবে।
অরি কথা বলার সময় আর একবারও চোখ তুলেনি। এখনও চোখ নিচু করেই আছে।
অধিপতি উতু এইটুকুই নিশ্চিত হতে চাইছিলেন। না, কথাবার্তা ও আচরণে তো অস্বাভাবিক কিছু নেই। সন্দেহ করার মতো কিছু তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আপনার ছেলে তো দেখছি খুব বেশি ভদ্র। অধিপতি উতু বললেন হাসিমুখে বসে থাকা ডা. অমিয়কে। জবাবে তিনি কিছুই বললেন না, শুধু হাসিটা একটু চওড়া হলো। অরি, তুমি নাকি আমাকে ছুঁয়ে দেখতে চাও? অধিপতি উতু মুচকি হেসে বললেন।
হ্যাঁ, চাই।
কেন চাও?
অধিপতিকে ছুঁয়ে দেখেছি, ফিরে গিয়ে সবার কাছে গল্প করতে পারব। আমার কাছেও এটা বিশেষ একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে।
তাহলে আর দেরি কেন? আসো।
বাবা কী আমাদের ছবি তুলতে পারবে? অরি এবার চোখ তুলে হেসে জিগ্যেস করল।
বেশ বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। অধিপতি উতু এতক্ষণে খেয়াল করলেন। তিনি ডা. অমিয়কে বললেন, আপনি তাহলে আমাদের ছবি তুলুন।
ডা. অমিয় হাসিমুখেই মাথা নেড়ে সায় দিলেন।
অরি এগিয়ে গেল অধিপতি উতুর দিকে। বাড়িয়ে দিলো ডানহাত। অধিপতি উতুও তার ডান হাত বাড়িয়ে দিলো। করমর্দনের এই দৃশ্য ধারণে ব্যস্ত ডা. অমিয়। সামনের দুজনই তার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে।
বিশেষ একজন যেন বড়শির ছিপ ফেলে বসে ছিলেন। অরির লিম্বিক সিস্টেমের* ওপর আগেই নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন তিনি। ছোঁয়ার মাধ্যমে অরি অধিপতি উতুর উপস্থিতি নিশ্চিত করার পরই পরবর্তী ধাপের জন্য সেই বিশেষ তিনি সচেষ্ট হলেন।
নিউরো-লেসের মাধ্যমে নিজের সবটুকু আবিষ্ট ক্ষমতা পাঠিয়ে দিলেন অরির মস্তিষ্কে। অরির শরীর বিশেষ করে মাথাটা কেঁপে উঠল।
সেদিকে তাকালেন অধিপতি উতু। তার চোখ আটকে গেল অরির চোখে। চমকে উঠলেন তিনি। বিস্ময়ে তার চোখ দুটো বড় হয়ে গেল। এক ঝটকায় খানিকটা সরে গেলেন তিনি। কিন্তু কিছুতেই অরির চোখ থেকে চোখ সরাতে পারলেন না।
কী হলো? ডা. অমিয় উদ্বিগ্ন হয়ে এগিয়ে আসতে থাকলেন। হাত উঁচিয়ে তাকে থামিয়ে দিলেন অরি।
তুমি আমার সঙ্গে চালাকি করেছো। কাজটা তুমি ঠিক করোনি অরি। অধিপতি উতু চিৎকার করে উঠলেন। রাগে, আক্রোশে তিনি ফুঁসছেন।
ক্ষমতার জন্য চালাকি তো আপনিও করেছিলেন। সেটাও কী ঠিক ছিল? অরি শ্লেষভরে জবাব দিলো।
আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই। তুমি আগুন নিয়ে খেলছো।
অধিপতি উতু গজরাতে গজরাতে বললেন।
আমি আগুন নেভাতে এসেছি। আপনার ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা থাকার তো আর কেনো প্রয়োজন নেই। ওটা আপনার মধ্যে আর সেভাবে অবশিষ্ট থাকছে না।
চুপ করো বদমাইশ। আমি জানি, কে তোমাকে দিয়ে এ কাজ করাচ্ছে। অধিপতি উতু থরথর করে কাঁপতে শুরু করলেন।
ডা. অমিয় ঘটনার আকস্মিকতায় ভড়কে গেছেন। অজানা একটা ভয় তাকে ঘিরে ধরেছে। কী হতে চলেছে? এখানে যা ঘটছে, তিনি জীবনে তা দেখেননি।
অরি পাল্টা বলল, চুপ আপাতত আপনি করবেন। এতক্ষণে নিশ্চয়ই সেটা বুঝতে পেরেছেন।
বটে। দেখাচ্ছি তাহলে। অধিপতি উতুর চোখে আগুনের হলকা। কোটর থেকে বেরিয়ে এসেছে বড় বড় চোখ।
অরি হাসল। সেই হাসিতে জেতার আভাস।
চোখে চোখে আরও কিছুক্ষণ লড়াই হলো। কিন্তু মানব মস্তিষ্কের সঙ্গে যোগ হওয়া আবিষ্ট ক্ষমতার সম্মিলিত শক্তির কাছে শেষ পর্যন্ত হেরে যেতে বাধ্য হলেন অধিপতি উতু। কাঁপতে কাঁপতে কাটা কলাগাছের মতো পড়ে গেলেন তিনি। এবং সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞান হারালেন।
অজ্ঞান হয়ে গেলেন? ডা. অমিয় উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন।
হ্যাঁ। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে। জবাবে অরি বলল।
এখন কী করব?
তোমাকে কিছু করতে হবে না। তুমি চুপ করে বসে থাকো। যা করার আমি করব।
ডা. অমিয় ছেলের কথার জবাবে কিছুই বললেন না, শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন।
অরি পকেট থেকে নোট প্যাড বের করে কী যেন লিখতে থাকল।
পাঁচ মিনিটের আগেই জ্ঞান ফিরল অধিপতি উতুর। তার হাবভাব বদলে গেছে। ঘুম থেকে উঠছেন এমন ভাবে উঠে বসলেন তিনি। তারপর মোলায়েম গলায় অরির দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে এখন কী করতে হবে?
অরি নোট প্যাডটা মেলে ধরল তার সামনে।
পরের সব কিছু হলো দ্রুত গতিতে। গ্রহীয় চ্যানেল ইত্তেলায় যোগযোগ করে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হলো। অধিপতি উতু নিজের বিধ্বস্ত বেশকে ঠিকঠাক করে নিলেন। তারপর শুরু হলো গ্রহবাসীর উদ্দেশ্যে জরুরি ভাষণ।
‘সুপ্রিয় ইলা গ্রহবাসী,
সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজ বিশেষ কারণে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। কৃবুদের কাজ হলো মানব কল্যাণে কাজ করা, সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করা। এই বোধ থেকে আজ এই মুহূর্ত থেকে আমি অধিপতির পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। আমি উতু সজ্ঞানে এই দায়িত্ব ডা. অমিয়’র কাছে হস্তান্তর করছি। কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি গ্রহবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। বিদায়। সবাই ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।’
মুহূর্তের মধ্যে এই খবর ছড়িয়ে পড়ল গোটা ইলাবৃতে। বিশেষ একজন তো ভালো করেই জানতেন এমনটি ঘটবে। তিনি সবার অলক্ষ্যে মুচকি হাসলেন।
*লিম্বিক সিস্টেম : মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের গঠন, বিন্যাস ও কর্মপদ্ধতিকে একত্রে বলা হয় লিম্বিক সিস্টেম। এটি মস্তিষ্কের প্রধান আবেগময় কেন্দ্র। অসংখ্য নিউরণ ও স্নায়ুর জটিল নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে এই লিম্বিক সিস্টেম কাজ করে থাকে। মানুষের ঘুম, ক্ষুধা, আবেগ, আচরণ, স্মৃতি, দেখা ও শোনার ক্ষমতাসহ অনেককিছু নিয়ন্ত্রিত হয় এই লিম্বিক সিস্টেমের মাধ্যমে। এক কথায়, লিম্বিক সিস্টেমের কার্যকারিতায় আমরা সচল থাকি।