বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। ষষ্ঠ পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায় ।। প্রথম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। দ্বিতীয় পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। তৃতীয় পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। ষষ্ঠ পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। পঞ্চম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। চতুর্থ পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। সপ্তম পর্ব ।।
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। অষ্টম পর্ব ।।
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। নবম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব দশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। পর্ব এগারো
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বারো
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব চৌদ্দ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পনের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব ষোল
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব সতের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব আঠার
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব উনিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব একুশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বাইশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তেইশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব চব্বিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ
ষষ্ঠ পর্ব
মন ভালো নেই কবি ইরেশের। খবরটা জানার পর থেকে কেমন অস্থির লাগছে তাঁর। খুব বুঝতে পারছেন, সামনে আরও খারাপ সময় আসছে। ইলা গ্রহে মানুষ আক্ষরিক অর্থে তাদের কর্তৃত্ব হারিয়েছে অনেক আগেই। এবার বোধ হয় শ্রেষ্ঠত্বও হারাবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সুযোগ-সুবিধা মানুষ লুফে নিয়েছিল কিছু না ভেবেই। যন্ত্র নির্ভরতা দিনকে দিন কেবলই বেড়েছে। শুরুতে তারা ভেবে দেখেনি এই অন্ধ নির্ভরতায় কতটা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। মানব সভ্যতার জন্য কতখানি হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। যখন বিষয়টা খুব প্রকট আকারে স্পষ্ট হতে শুরু করল, তখন আসলেই দেরি হয়ে গেছে। যন্ত্রমানবরা অনেকটা সময় নিয়ে ভেতরে ভেতরে নিজেদেরকে গুছিয়ে নিয়েছে। তাদের চাওয়ার গণ্ডি আস্তে আস্তে বেড়েছে। এখন তো সেটা একদম মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
হঠকারী শাসক ক্ষমতায় থাকলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। তিনি বুঝতেও পারছেন না কী নিপুন দক্ষতায় তাকে ব্যবহার করছে যন্ত্রমানবরা। প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে এখন আর এখানে কিছুই অবশিষ্ট নেই। গোটা বসতিই পরিনত হয়েছে কংক্রিট আর ধাতব জঙ্গলে। বলা নেই, কওয়া নেই, একদিন হঠাৎ করে শুরু হলো গাছ কাটা। গাছ নাকি বড্ড জায়গা নষ্ট করে। বসতির চকচকে ভাবটা চলে যায় গাছের কারণে। এখন মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে ধাতব খুঁটি। যেগুলো থেকে প্রয়োজন অনুসারে পরিমান মতো অক্সিজেন নির্গত হয়। বাহারি একটা নামও দেওয়া হয়েছে এই ধাতব খুঁটির, অক্সিজেন ট্রি।
প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন কবি ইরেশসহ কয়েকজন। ‘সবুজে বাঁচো’ নামে একটা আন্দোলনও গড়ে তুলেছেন তারা। সাড়া তেমন মেলেনি। মানুষের এত সময় কোথায়? সবাই যে যার মতো জীবন উপভোগে ব্যস্ত। আর ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘সবুজে থাকার যাদের এত শখ, তারা সাগর পার হয়ে সপ্তবটী বনে গিয়ে থাকুন। দয়া করে এখানকার শান্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। শান্তি বিনষ্টকারী কোনো ধরণের অপচেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না। সবাইকে এই বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক করা হলো।’
পরিবেশবাদী প্রিয় বন্ধু ঋভু এরপরই রাগে-ক্ষোভে বনা লে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে কবি ইরেশকে তিনি বলে গেছেন, ‘এই ইলাবৃত ক্রমেই আরও বাসযোগ্যতা হারাবে। এখানে থাকার আর কোনো অর্থ হয় ন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবেও বিকল্প চিন্তা করা উচিত। যারা যত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে তারা ততটা ঝুঁকিমুক্ত হবে।’ ঋভু গেছেন ছোট্ট একটা দল নিয়ে। তারপর গেছে আরও অনেকেই। নিজেকে প্রায়ই ধিক্কার জানান কবি ইরেশ। ঋভু যেতে পারলেন, তাহলে তিনি কেন পারলেন না ? আয়েশি জীবন, যশ-খ্যাতির মায়া তিনি কী ত্যাগ করতে পারলেন না ? ত্যাগের মনোভাব তো একজন কবির মধ্যেই সবচেয়ে বেশি থাকার কথা। আসলে যেতে তো কবি ইরেশও চেয়েছিলেন। মন¯’ও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু তাকে যেতে দেননি দুই ব্যক্তি। ডা. অমিয় ও সাংবাদিক আশীষ। এখানেই নাকি তার থাকাটা বেশি প্রয়োজন।
ডা. অমিয় যোগাযোগ করেছিলেন। শারীরিক অবস্থা জেনে নিয়ে জিগ্যেস করলেন আসল প্রশ্ন : ডা. ওশিনকে ধরে নিয়ে গেছে জানেন ?
জানি। খবরটা আগেই শুনেছি।
কী ভয়ংকর কাণ্ড বলুন তো !
ভয়ংকর তো বটেই। তবে আপনি একটা কথা বলুন তো।
কী কথা জানতে চাইছেন ?
ডা. ওশিনের পরিচয় সম্পর্কে আপনি কী আগে থেকেই জানতেন ?
না, জানতাম না। তবে তার কিছু বিষয় আমাকে অনেক সময় ভাবিয়ে তুলত। বিশেষ করে অপারেশন টেবিলে তার আচরণ।
আর সেই কারণেই আপনি এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছেন। ওকে দিয়ে আমার অস্ত্রোপচার করালেন এবং পরিচয়ও নিশ্চিত হলেন।
এছাড়া আমার কাছে এই মুহূর্তে বিকল্প তো ছিল না।
ডা. ওশিনের জন্য আমার মায়া হচ্ছে।
সেটা তো আমারও হচ্ছে। চিকিৎসক হিসেবে সে অসাধারণ। মানুষের মধ্যে থেকে মানবিক বিষয়গুলোও সে সুন্দর অর্জন করেছিল। কিš‘ শেষ রক্ষা করতে পারল কী ?
ওরা কতটা সক্রিয় এবং সংঘবদ্ধ এবার বুঝতে পেরেছেন তো ?
হ্যাঁ , পেরেছি।
আরও অনেক কিছুর জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকুন।
জানি, সামনে আরও অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। এবার রাখতে হবে।
রাখুন। ভালো থাকবেন।
আপনিও ভালো থাকবেন। ওষুধগুলো ঠিক মতো খাবেন।
হা-হা-হা। আ”ছা, খাবো।
ডা. অমিয়ের সঙ্গে কথা শেষ করে নিজের ডিজিটাল পেজ খুলে বসলেন কবি ইরেশ। বেশ কিছু দিন পর আজ একটা কবিতা লিখলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও শেয়ার করে দিলেন কবিতাটা।
‘আজ আমি একটা মেয়ের কথা বলতে চাইছি।
আজ এক মায়াময় হাতের কথা বলতে চাইছি।
মেয়েটি তার সুন্দর হাত কখনও আমার হাতে রাখেনি।
তারপরও শক্তহাতে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল সে।
ইশ, তরুণবেলায় যদি তার মতো একজন প্রেয়সী থাকত !
এই পড়ন্ত কালে যদি তার মতো মেয়ে থাকত আমার !
আজ আমি নিখোঁজ মেয়ের কথা বলতে এসেছি।
আজ আমি আমার মেয়ের কথা বলতে এসেছি।’
আধাঘন্টার মধ্যে গোপন নম্বর থেকে যোগাযোগ করলেন প্রবীন সাংবাদিক আশীষ। কিছু বলার আগেই শোনা গেল তাঁর গলা, আবার কী শুরু করলেন, বলুন তো।
কেন, আমি আবার কী করলাম ?
এই কবিতাটা লেখার কী খুব বেশি দরকার ছিল ?
হ্যাঁ, ছিল।
কেন,শুনি ?
কারণ মানুষ অকৃতজ্ঞ নয়। কবিরা ভিতু নয়, সাহসী। এই বার্তা ওদের কাছে যাওয়া দরকার।
বিপদের ঝুঁকি তো এতে আরও বাড়বে। আপনি সেটা একটু বিবেচনা করবেন না ?
বিপদ যা আসার আসবেই। আমরা চাইলেই ধেয়ে আসা বিপদকে আর কোনো ভাবেই আটকাতে পারব না।
কী বলছেন এসব ?
এতকিছুর পরও কঠিন সত্যটা মানতে চাইছেন না ?
আলামত কিছুটা টের পাচ্ছি। তবুও আমি তো শেষ পর্যন্ত আশাবাদী থাকতে চাই।
দেরি হয়ে গেছে। আমরা বড্ড দেরি করে ফেলেছি।
কবি ইরেশের আগেই ওপাশ থেকে সংযোগ কেটে দেওয়া হলো। তার আগে অবশ্য প্রবীন সাংবাদিক আশীষের একটা জোরালো দীর্ঘশ্বাস শোনা গেল।