সায়েন্স ফিকশন

বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। তৃতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব

বিছানায় শুয়ে বই পড়ছেন কবি ইরেশ। বইটা তাকে হাত দিয়ে ধরতে হয়নি। তাঁর চোখের সামনে বইটা নিজেই নিজেকে মেলে ধরেছে। দৃষ্টিশক্তি আমলে নিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অক্ষরগুলো বড় হচ্ছে। পৃষ্ঠা শেষ হলে চলে আসছে নতুন পৃষ্ঠা। কাত হলে বইটাও তাল মিলিয়ে কাত হয়ে যাচ্ছে। শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশে ভালো বই পড়ার মজাই আলাদা। জাগতিক সবকিছু থেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও মুক্তি মেলে। এমন কী শারীরিক যন্ত্রণা থেকেও। সারাজীবন বইয়ের মাঝেই ডুবে থাকতে চেয়েছেন তিনি। বই ছাড়া তেমন কোনো আপনজন তো তাঁর জীবনে নেই।

গভীর রাতে ছোট্ট একটা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রেখে গেছে তাকে। যথেষ্ট গোপনে। উড়োযানটি ছাদে নামলেও পাশের ভবনের কেউই টের পায়নি। পাওয়ার কথাও নয়। শব্দহীন উড়ালের জন্য উড়োযানটির সুখ্যাতি আছে। লোকে বলে, ডা. অমিয়ের কাছে গেলে রোগী এমনিতেই অর্ধেক ভালো হয়ে যায়। তাঁর হাতযশই আলাদা। তিনি চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ায় কবি ইরেশ অনেকটা নিশ্চিন্ত। ওষুধ চলছে। আগের থেকে ভালো বোধ করছেন। পেট ব্যথাও কমে গেছে। তবে স্থায়ী উপশমের জন্য নাকি অস্ত্রোপচার জরুরি।

এই অস্ত্রোপচার নিয়েই তো যত গোলযোগ। একটা কবিতা লিখেছেন তিনি। তাতে একটা লাইন আছে : ‘হৃদয়হীন গর্দভরাও আজ কবিতা লিখতে চায়।’ যন্ত্র-কবিরা তাতে নাখোশ হয়েছেন। এই লাইনে তাদের নাকি মানহানি হয়েছে। তারা তাদের সর্বোচ্চ সংগঠন এআইএ’র দ্বাস্থ হতে একটুও দেরি করেনি। সংগঠনের সভায় নিন্দা জানিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কবি ইরেশকে ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত সংগঠনটির সদস্যরা তাকে সবধরনের সেবা প্রদান থেকে বিরত থাকবে।
মরে গেলেও ক্ষমা চাইবেন না কবি ইরেশ। যন্ত্র-কবিদের কাছে কখনও তিনি মাথা নত করবেন না। প্রকৃত কবিরা কখনও মাথা নত করে না। মাথা নত করতে জানে না। যন্ত্রদের কাছে তো নয়ই। গৃহকর্মী যন্ত্রমানব চলে গেছে, যাক। নিজের কাজ এখন থেকে তিনি নিজেই করবেন। ওদের সাহস কেবলই বাড়ছে। মানুষকে ওরা একটু একটু করে কোনঠাসা করছে। লক্ষণ সুবিধের নয়। অনেকদিন থেকেই তিনি এ কথা বলছেন। বার বার এই বিষয়ে সো”চার হয়েছেন। তাঁর কথা তেমন করে কেউ কানে তুলেছে বলে মনে হয় না। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। প্রত্যেকে আছে নিজের আনন্দে। এক সময় সবার মোহ ভঙ্গ হবে, হতেই হবে। কিন্তু তত দিনে দেরি হয়ে যাবে। করার তেমন কিছু থাকবে না।

অস্ত্রোপচারে যান্ত্রিক অনেক সাহায্য লাগে। অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে আধুনিক প্রযুক্তিতে শারীরিক পরীক্ষা করতে হয়। যন্ত্রমানবদের সংগঠন এআইএ সব যন্ত্র ও নেটওয়ার্কে বিশেষ ‘নিষেধাজ্ঞা ভাইরাস’ দিয়ে রেখেছে। কবি ইরেশকে তারা সহযোগিতা করতে নারাজ। শেষপর্যন্ত তাই তাঁর অস্ত্রোপচারটা হয়নি। কী ভয়ংকর কাণ্ড। চিকিৎসা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। সেই অধিকারে ওরা হাত দিয়েছে। আজ তাঁর ক্ষেত্রে দিয়েছে। কাল অন্যদের বেলায় দেবে। কথায় কথায় ওরা বেঁকে বসবে। ভবিষ্যতে মানুষ কী তাহলে সুচিকিৎসা পাবে না?

শরীর দুর্বল। বেশিক্ষণ চিন্তা করতে পারেন না কবি ইরেশ। মাথা ঝিমঝিম করে। বইয়ের মধ্যে সেই কারণেই তিনি নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছেন। তবে একেবারে নিমগ্ন হতে পারছেন না। সুযোগ পেলেই একটা দুশ্চিন্তা মাথার মধ্যে উঁকি দিচ্ছে।

Series Navigation<< বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। দ্বিতীয় পর্ববিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। ষষ্ঠ পর্ব >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *