সায়েন্স ফিকশন

বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায় ।। প্রথম পর্ব

এক.
ইলা গ্রহ নিয়ে অনেক জনশ্রুতি আছে। প্রচলিত আছে রহস্যময় নানা উপকথা। সেই সব বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় অনেক জ্যোতির্বিদকে এখনও দ্বিধা-দ্বদ্বে ভুগতে দেখা যায়। এই গ্রহটি নিয়ে এ পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য যে রচনাটিকে ধরা হয়, সেটি হলও : ‘অনেক দূরের অজানা ছোট্ট গ্রহের ইতিকথা ’। রচনাটির লেখক প্রখ্যাত মহাকাশবিদ অংশুকর। তিনি তাঁর রচনা শুরু করেছেন সহজ ও সাবলীল ভাষায়। পড়তে শুরু করলে সহজেই বোঝা যায়, সব ধরণের পাঠক যাতে অনায়াসে বুঝতে পারে, সেদিকে তিনি যথেষ্ট মনোযোগ রেখেছেন। স্বাদু গদ্যে জটিল ও কঠিন সব বিষয়কে তিনি সহজবোধ্য করে তুলে ধরেছেন দারুণ দক্ষতায়। এটাই তাঁর রচনাশৈলীর অনবদ্য বৈশিষ্ট্য। আলোচিত রচনাটির শুরুতে তিনি লিখেছেন – ‘অনেক দূরে, অনেক অনেক দূরে…। অনেক আলোকবর্ষ দূরের একটা গ্রহ। ছোট্ট একটা গ্রহ। সেই গ্রহটির নাম ইলা। যার আড়াই ভাগ স্থল, দেড় ভাগ জল। গ্রহটির উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বিস্তীর্ণ এলাকা বরফে ঢাকা। সাগর একটা। হ্যাঁ, গ্রহটিতে মাত্র একটাই সাগর। সাঙ্গ নামের সেই সাগর স্থলকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করেছে। সাগরের একদিকে মানব বসতি। অন্যদিকে বন। বনটির নাম ভারি সুন্দর। সপ্তবটী। সবুজ আর সবুজে ভরা। আর মানব বসতির নাম ইলাবৃত। বসতিটি বলতে গেলে কংক্রিট ও ধাতব স্থাপনার এক নগরী। হ্যাঁ, গোটা বসতিই কালক্রমে পরিণত হয়েছে ইস্পাত কঠিন একটা নগরীতে। বুদ্ধি আর মেধা খাটিয়ে জীবনযাপনকে সহজ থেকে সহজতর করেছে ইলার বাসিন্দারা। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ শিখরে তারা পৌঁছেছে অনেক আগেই। গ্রহটির উত্তরণ ও উৎকর্ষতা সত্যি ঈর্ষণীয়। বেঁচে থাকার অদ্ভুত এক প্রতিযোগিতায় সামিল সেখানকার মানুষ…।’

কাঠখোট্টা মহাকাশ গবেষকরা অবশ্য নাক সিটকান এই রচনার প্রসঙ্গ উঠলে। তাদের মন্তব্য হলও, এটা কি গবেষণাপত্র নাকি রূপকথার বয়ান ? প্রতিটি বিষয় লেখার ক্ষেত্রে তো আলাদা ভাষাশৈলী রয়েছে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা সেই রীতি মেনে চলা তো সাধারণ ভদ্রতা ও সৌজন্যতার মধ্যেই পড়ে। অংশুকরের আগে ও পরে অনেকেই ইলা গ্রহকে নিয়ে গবেষণামূলক রচনা লিখেছেন । তবে সব মহলে সেগুলো ততটা গ্রহণযোগ্য হয়নি। মহাজাগতিক ও গাণিতিক জটিল সূত্র, সমীকরণ আর হিসাব-নিকাশের ভারে বেশির ভাগ রচনাই দুর্বোধ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ফলে সাধারণ পাঠক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। গণমাধ্যমেও বিভিন্ন সময়ে অনেক খবর ও বহু লেখা প্রকাশ হয়েছে গ্রহটিকে নিয়ে। অনেক তথ্য, ইতিহাস ও গল্প ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভার্চুয়াল জগতের আনাচে-কানাচে।

ইলাচন্দ্রিকা* মোটেই দীর্ঘ করার ইচ্ছে নেই। অবশ্য একটা বিশেষ তথ্য উল্লেখ না করলেই নয়। প্রায় সব লেখা ও গবেষণা প্রবন্ধে তথ্যটা পাওয়া যায়। সেটা হলো, এই গ্রহের বাসিন্দারা হাজার হাজার বছর আগে থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু করেছিল। সুপার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এসএআই) তাদের জীবনযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েছে এক শতাব্দী আগে। আরও সঠিক গাণিতিক ভাবে বলতে গেলে একশ’ এগারো বছর আগে। সব মিলিয়ে, অনেকের মতেই, ইলা হলো এক রোমাঞ্চকর গ্রহের নাম। আর এর কাহিনি আরও রোমাঞ্চে ভরা। এই কথার সত্যতা পরখ করার সুযোগ সামনের প্রতিটি অংশে পাঠক পাবেন, এটা হলফ করেই বলা যায়।

*ইলাচন্দ্রিকা : ইলা গ্রহকে নিয়ে লেখার সময় একটা রেওয়াজ লেখক ও গবেষকদের মধ্যে চালু আছে। গৌরচন্দ্রিকার ঢঙে তারা লেখার শুরুতেই গ্রহটি নিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় কথা ও তথ্য উল্লেখ করে থাকেন। বিশেষ এই ভূমিকা বা মুখবন্ধকে বলা হয়ে থাকে ইলাচন্দ্রিকা।

Series Navigationবিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। দ্বিতীয় পর্ব >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *