বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। দ্বিতীয় পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায় ।। প্রথম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। দ্বিতীয় পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। তৃতীয় পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। ষষ্ঠ পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। পঞ্চম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। চতুর্থ পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। সপ্তম পর্ব ।।
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। অষ্টম পর্ব ।।
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। নবম পর্ব
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব দশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ।। ইলাবৃত ।। কমলেশ রায় ।। পর্ব এগারো
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বারো
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব চৌদ্দ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পনের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব ষোল
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব সতের
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব আঠার
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব উনিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব একুশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব বাইশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব তেইশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব চব্বিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনি।। ইলাবৃত।। কমলেশ রায়।। পর্ব পঁচিশ
দ্বিতীয় পর্ব
শেষপর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নিলেন ? প্রবীণ সাংবাদিক আশীষ ঠাণ্ডা গলায় বললেন। তিনি গোপন একটা নম্বর থেকে যোগাযোগ করেছেন প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা.অমিয়’র সঙ্গে। তেমন কিছু করতে পারিনি। এ মুহূর্তে কিছু করা সম্ভবও নয়। নিজেকে এতটা অসহায় জীবনে আর কখনও লাগেনি। ডা. অমিয় বললেন। ক্ষোভ ও রাগে তার গলা অন্যরকম শোনাল। ভীষণ ঠাণ্ডা মাথার কেউ রেগে গেলে হয়ত এমনটা হয়।
কবি এখন কেমন আছেন ?
আছেন হয়ত ভালোই। তবে অস্ত্রোপচারটা করতে পারলে বেশি ভালো হতো। সেটা তো…।
হয়ত বলছেন কেন ? তিনি আপনার হাসপাতালে নেই?
না, বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। অস্ত্রোপচার করা না গেলে এখানে রেখে কী লাভ। বরং ঝুঁকিই বেশি। আর ওষুধ তো বাসায় বসেই খেতে পারবেন।
কী বলছেন আপনি!
এছাড়া আর উপায় ছিল না। সাক্ষাতে বিস্তারিত বলব। দেখবেন, বিষয়টা যেন আপাতত কেউ জানতে না পারে।
কি একটা অস্তির সময়ে আছি। আরও কত কি অপেক্ষা করছে কে জানে। সাবধানে থাকবেন। প্রবীন সাংবাদিক আশীষ সংযোগ কেটে দিলেন।
কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকলেন ডা. অমিয়। তারপর জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আপন মনে হাসলেন। গণমাধ্যম কর্মীরা ভিড় জমিয়েছে হাসপাতালের সামনের দিকটায়। এই ভয়টাই তিনি করেছিলেন। জনসংযোগ কর্মকর্তা উর্মিকে ডেকে পাঠালেন তিনি। গণমাধ্যমকে খুব দক্ষতার সঙ্গে সামলতে হবে। কবির ব্যাপারটা এখন কিছুতেই প্রকাশ হতে দেওয়া যাবে না। কাউকে এ বিষয়ে কিছু জানতে দেওয়া যাবে না।
উর্মি দ্রুততম সময়ে এসে হাজির হলেন। সচরাচর ডা. অমিয় তাকে ডাকেন না। নির্দেশনা পাঠিয়ে দেন। নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু, তাই ডেকে পাঠিয়েছেন। কেন্দ্রীয় হাসপাতালের মহাপরিচালক ডা. অমিয়ের কক্ষটি খুব বেশি বড় নয়। আবার একেবারে ছোটও নয়। একদম মাপ মতো, জ্যামিতির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সবকিছু করা। সুন্দর, ভীষণ পরিপাটি, অঙ্ক কষে গুছানো।
সামনে ক্রিস্টালের টেবিল। স্বচ্ছ চেয়ারে বসে আছেন সৌম্যকান্তি ডা. অমিয়। বয়স সত্তরের কোঠায়, তবে দেখায় ষাটেরও কম। মাথায় মানানসই টাক। টাক কারও চেহারায় এতটা আভিজাত্য এনে দিতে পারে উনাকে না দেখলে অনুমান করা মুশকিল। উর্মিকে দেখে সুন্দর করে হাসলেন তিনি। এসেছেন, বলে একটু থেমে একটা বোতাম টিপতেই সামনে একটা চেয়ার দৃশ্যমান হলো। গম্ভীর গলায় তিনি বললেন, বসুন।
উর্মি বসতেই আরামদায়ক চেয়ারটার বিশেষত্ব বুঝতে পারলেন। কোনো রকম ভনিতা না করে কাজের কথা বলতে শুরু করলেন ডা. অমিয়। বুঝিয়ে বললেন তাকে কি করতে হবে। সব বুঝে নিয়ে মাথা নেড়ে সায় দিলেন উর্মি। হাতে সময় কম। যত তাড়াতাড়ি এখান থেকে উঠতে পারেন তত ভালো।
ডা. অমিয় হেসে বললেন, বুঝতে পারছি, আপনার বোধ হয় উঠার তাড়া আছে। ঠিক আছে, উঠে পড়ুন। শুভকামনা।
সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। ঠিক এক ঘণ্টার মধ্যে। উর্মি উপস্থিত সাংবাদিকদের বললেন, আপনারা কষ্ট করে এসেছেন সেজন্য আমরা মানে কেন্দ্রীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। আপনাদেরকে অশেষ ধন্যবাদ। আমরা জানি, কবি ইরেশের অসুস্ততা নিয়ে গোটা ইলা গ্রহের মানুষ উদ্বিগ্ন। তিনি ভালো আছেন। তার চিকিৎসার বিষয়ে আপনাদেরকে বলবেন আমাদের হাসপাতালের শ্রদ্ধেয় মহাপরিচালক ডা. অমিয় মহোদয়।
উপস্থিত সাংবাদিকরা পরস্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন। কোথায় ডা. অমিয় ? তিনি তো সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেই। তাহলে তিনি কথা বলবেন কী করে?
একটু পরেই সবার ভুল ভাঙল। হলোগ্রাফিক যোগাযোগ স্থাপপন করা হলো। সবার সামনে ফুটে উঠল ডা. অমিয়’র ত্রিমাত্রিক ছবি। যেন অবিকল ডা. অমিয় সামনে হাজির। সাংবাদিকদের মাঝে চাপা সোরগোল শুরু হলো। সবাইকে শান্ত হতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি শুরু করলেন তার কথা।
‘আমি জানি, উর্মি আপনাদেরকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছে। এই রকম একজন সুদর্শনা ধন্যবাদ জানানোর পর আমার ধন্যবাদ আপনাদের কাছে কতটা প্রিয় হবে সেটা আমি সহজেই অনুমান করতে পারি। তারপরও আমি আপনাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। (উপস্থিত সবাই হেসে ফেললেন)।
আপনারা সবাই অসম্ভব ব্যস্ত মানুষ। খবরের পেছনে ছোটা মানুষ। আপনাদের সময়ের অনেক দাম। আমি আপনাদের খুব বেশি সময় নেবো না। শুধু দৃঢ় ভাবে বলতে চাই, কবি ইরেশ এখন একেবারেই ঝুঁকিমুক্ত। উনার চিকিৎসা চলছে। আশা করছি, শিগগিরই উনি সুস্থ হয়ে যাবেন। আর একটা কথা, আপনাদের আর কষ্ট করে হাসপাতালে আসার দরকার হবে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে কবির সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনাদের জানিয়ে দেবে।
এটাকে আমরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব মনে করছি। আশা করছি, বরাবরের মতোই এই ব্যাপারেও আপনাদের সহযোগিতা আমরা পাবো। উপস্থিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই দেখুন, এটাও কিন্তু উর্মি জানিয়ে ফেলেছে। (আবার চাপা হাসি)। আপনাদের হয়ত অনেক প্রশ্ন আছে। কিন্তু আজ আমাদের ক্ষমা করতে হবে। কবির সুচিকিৎসা ও নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা বাড়তি আর কোনো তথ্য আপনাদেরকে এ মুহূর্তে দিতে পারব না। আপনারা সমাজের বিবেক, একই সঙ্গে সুবিবেচক। নিশ্চয়ই আমাদের সীমাবদ্ধতাটুকু আপনারা বুঝতে পারবেন। আজ তাহলে রাখি। সবার মঙ্গল হোক। সবাই নিরাপদে থাকুন। বিদায়।’
হলোগ্রাফিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। ডা. অমিয়ও অদৃশ্য হলেন। উর্মিও কাউকে কথা বলার আর কোনো সুযোগ দিলেন না। সবাইকে বিদায় জানিয়ে উঠে পড়লেন। ত্রিমাত্রিক ভিজুয়াল টিউবের (টিভিটি) সব চ্যানেল সরাসরি এই সংবাদ সম্মেলন প্রচার করছিল। প্রবীন সাংবাদিক আশীষ তার রুমে বসে দেখছিলেন এই বিশেষ সম্প্রচার। তিনি আপন মনে হাসলেন। তবে সেই হাসি মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হলো। তারপরই একটা আশঙ্কা ঘিরে ধরল তাকে। তিনি ভালো করেই জানেন, এই আশঙ্কাটা অমূলক নয়, বরং অবশ্যম্ভাবী। ভয়টা সেখানেই।
*হলোগ্রাফিক যোগাযোগ : ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরির একটা বিশেষ প্রক্রিয়া হলো হলোগ্রাফি। আর এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে যোগাযোগের উচ্চতর এক মাধ্যম হলো হলোগ্রাফিক যোগাযোগ।