উপন্যাস// মরুঝড়// মোহিত কামাল// এক
- উপন্যাস// মরুঝড়// মোহিত কামাল// এক
 - উপন্যাস// মরুঝড়// মোহিত কামাল// পর্ব দুই
 - উপন্যাস ।। মরুঝড় ।। মোহিত কামাল ।। পর্ব তিন
 - উপন্যাস ।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল ।। পর্ব চার॥
 - উপন্যাস ।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল ।। পর্ব পাঁচ
 - উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল ।। পর্ব ছয়
 - উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল ।। পর্ব সাত
 - উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব আট
 - উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব নয়
 - উপন্যাস ।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব দশ
 - উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব এগারো
 - উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব বারো
 - উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব তেরো
 - উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব চৌদ্দ
 - উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব পনেরো
 - উপন্যাস।। মরুঝর।। মোহিত কামাল।। পর্ব ষোল
 - উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব সতেরো
 - উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব আঠারো
 
[এ উপন্যাসের ঝড় কেবল মরুভূমির বিস্তৃত বৃত্তেই সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে গেছে সজল বাংলাদেশেও। 
সংকট আর সমূহ সমস্যার এই ঝড় বয়ে চলেছে মনের গহন প্রদেশে, ঘরে ঘরে, 
পরিবারে পরিবারে ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে তছনছ হয়ে যাওয়া প্রকৃতির মতো 
এ ঝড়েও লণ্ডভণ্ড মনঃপ্রকৃতি, সর্বোপরি মনোভুবন।
উপন্যাসের মূল স্রোতে আছে স্বদেশে রেখে যাওয়া স্বজনদের জন্য মরু-শ্রমিকের বুকের প্রান্তরে 
রোপিত মমতার মৌলিক টান; আছে তার সংগোপন হাহাকারও। 
আছে বুকের কন্দরে কন্দরে ভালোবাসার মশাল জ্বেলে অপেক্ষায় থাকা বিরহিণী 
এক কিশোরী বধূর তীব্র যাতনাময় উপলব্ধির উজ্জ্বল উদ্ভাস। আর এসব কিছুর সঙ্গে 
একাকার হয়ে গেছে গ্রামীণ পরম প্রকৃতি। স্বামীর অনুপস্থিতিতে দেশে শ্বশুরবাড়িতে একা থাকা 
বউয়ের সঙ্গে শাশুড়ির দ্বন্দ্বের মনোসামাজিক ব্যবচ্ছেদও প্রতিভাসিত ঠাস-বুনোট চরিত্র চিত্রণ 
আর কাহিনি-বিন্যাসের মধ্য দিয়ে। আছে অরক্ষিত নারীকে মুখোশধারী পুরুষের লোভনীয় ফাঁদে 
জড়ানোর সমূল স্বরূপেরও সমাচার। প্রাসঙ্গিক চরিত্র ও ঘটনার মধ্য দিয়ে এই সঙ্গে উঠে এসেছে 
মরুর দেশের ধনাঢ্য পরিবারের আলো ঝলমল জীবনের অন্তরালে লুকানো বিষাদ আর ধনদৌলতের 
মিথ্যে মরীচিকার চালচিত্র। এসব নিষ্ঠুরতার পাশাপাশি মানবিকতারও প্রকাশ ঘটেছে উজ্জ্বলভাবে।
কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের জাদুকরী রচনাশৈলী আর সুচারু কাহিনি বিন্যাসের কল্যাণে 
`মরুঝড়’ উপন্যাস হয়ে উঠেছে আমাদের নিগূঢ় বাস্তবতার এমন একটি নিরেট সাহিত্যিক উপাখ্যান, 
যার পাঠে আত্মমগ্ন না হয়ে পারা যায় না।]
লেখকের কথা
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার 
আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম গত বছরের গোড়ার দিকে। ছিলাম সেখানকার এক অভিজাত হোটেলে। 
সেখানে স্বল্পকালীন অবস্থানের সুযোগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও ইন্দোনেশিয়াসহ 
আরো নানা দেশের অসংখ্য কর্মীকে দেখেছি, যারা একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দেশটির নানা ক্ষেত্রে কাজ করে চলেছেন। 
ভবন নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদেরও দেখা পেয়েছিলাম। 
মরুভূমিতে ঘুরে ঘুরে শুনেছিলাম তাদের আনন্দ-বেদনার জীবনগাথা। 
দেশে থাকা স্বজনদের জন্য তাদের হাহাকারদীর্ণতা, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি তাদের গভীর মমত্ববোধ, 
ঘাম-ঝরানো শ্রম দেওয়া সত্ত্বেও তাদের নিগ্রহের শিকার হওয়ার মতো অবিশ্বাস্য সব ঘটনার কথা শুনতে শুনতে 
মনের অজান্তে ভিজে উঠেছে দুই চোখ। এখানেই কি তাদের দুঃখের শেষ! ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সির ফাঁদে পড়ে 
লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের যথাযথ কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন এবং অপরাধের সঙ্গে তাদের জড়িয়ে পড়ার 
লোমহর্ষক বর্ণনাও শুনেছি। এদের অনেকের কারণে নষ্ট হয়েছে বা হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। পাশাপাশি সততা, নৈতিকতা, 
পেশাগত দক্ষতা ও আন্তরিকতার যে পরিচয় তারা দিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত, শুনেছি তাদের সেই গৌরবের কথাও। 
এদেরই পাঠানো অর্থে গড়ে উঠেছে দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ।
এসব-কিছুরই সমাহারের ফসল আমার উপন্যাস ‘মরুঝড়’। 
এই উপন্যাসের সমগ্র পরিসর জুড়ে আছে স্বদেশে রেখে যাওয়া স্বজনদের জন্য মরু-শ্রমিকদের অপার মমত্ববোধের কথা, 
আত্মীয়স্বজনহীন পরবাসে তাদের অসহায়ত্বের কথা, বুকের গহিন গভীরে পরবাসী স্বামীর জন্য ভালোবাসার দীপ্র আলোকশিখা 
জ্বালিয়ে রেখে বিরহিণী কিশোরী বধূর তীব্র যাতনার কথা, গ্রামীণ প্রকৃতি আর স্বামীর অনুপস্থিতিতে শ্বশুরবাড়িতে থাকা স্ত্রীর 
শাশুড়ির সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তার নির্যাতিত হওয়ার কথা, নারী নিপীড়ন এবং নারীর প্রতি সহিংসতার 
মর্মস্পর্শী ঘটনা পরম্পরার বিবরণ, আছে সেই অরক্ষিত নারীরও কথা, মুখোশধারী পুরুষেরা যাদের লোভের ফাঁদে ফেলে 
করতে চায় চির নরকবাসী। তুলে ধরা হয়েছে নিষ্ঠুরতার পাশাপাশি মানবিকতারও সমূল সমাচার।
প্রিয় পাঠক, বইটি পড়ে ভুলত্রুটি নির্দেশ করলে আমার যারপরনাই খুশি হওয়ার কারণ ঘটবে। সবার জন্য ভালোবাসা।
মোহিত কামাল 
ধানমন্ডি, ঢাকা
মরুঝড়// মোহিত কামাল
॥ এক ॥ 
মরুর বুক চিরে ছুটে গেছে সড়কটি। সড়ক বললে ভুল হবে। মহাসড়ক বলাও ঠিক হবে না। বলা যেতে পারে রাজপথ। 
আমাদের দেশের রাজপথ নয়, প্রকৃত রাজাদের চলার পথ। সোজা রাস্তার দুপাশে খেজুরগাছের সারি। 
অকল্পনীয় চওড়া রাস্তার মাঝ বরাবর গড়ে তোলা হয়েছে মূল সড়কের মতো দৃষ্টিনন্দন প্রশস্ত সড়ক-ডিভাইডার। 
ডিভাইডারের বুকজুড়েও সারবাঁধা খেজুরগাছ; কোথাও-বা নিমপ্রজাতির গাছ। 
প্রতিটি গাছের গোড়ায় বালি-মাটি ঘেঁষে আছে কালো পাইপলাইন; প্রায় সর্বক্ষণ গাছে গাছে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা। 
মরুর বুকে এভাবেই গড়ে উঠেছে সবুজ প্রকৃতি। রোদে পুড়ে শ্রমিকের ঘামঝরানো শ্রমে গড়ে তোলা 
কৃত্রিম এই প্রকৃতিকে পুরোপুরি সবুজও বলা যাবে না। রোদে পুড়ে হলুদ হয়ে গেছে বেশিরভাগ সবুজ পাতা। 
থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা খেজুর-ঝাড়ের হলুদ বর্ণের ছটা সবুজ প্রকৃতিজুড়ে ফুটিয়ে তুলেছে হলুদ-সবুজের মিশেলে 
এক নিষ্প্রভ রঙের আভা। তাই সবুজ দেখে যেভাবে প্রাণ জুড়ায়, এই সবুজ-হলুদ দেখে সেভাবে প্রাণ জুড়ায় না।
সূর্য এখনো মাথা বরাবর ওঠেনি। অথচ এসিবিহীন বাসে বসে রুস্তমের শরীর পুড়ে যেতে থাকে। 
ঘামছে না শরীর কেবলই পুড়ছে। রাস্তার ডান দিক দিয়ে ছুটে যাচ্ছে অত্যাধুনিক সব গাড়ি। এসি নেই, এমন গাড়ি বিরল। 
কেবল তাদের জন্যই এসির ব্যবস্থা নেই। মাথা গোঁজার যে ঠাঁই, সেখানেও নেই। 
এসিতে থাকলে মরুভূমির বুকে কাজ করা যাবে না—এই অজুহাতে শীতল বাতাস থেকে বঞ্চিত রাখা হয় শ্রমিকদের। 
রুস্তমও বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কম দামের শ্রমিক। 
জমি বিক্রি করে পাওয়া মোট ছয় লাখ টাকা খরচ করে দুবাইয়ের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। কাজের অভিজ্ঞতা নেই, 
কোথায় যাচ্ছে, কত টাকা মাইনে পাবে, ছয় লক্ষ টাকা তুলতে শরীর কতখানি পোড়াতে হবে, জানা ছিল না তার। 
তার মতোই দশা অসংখ্য শ্রমিকের।
গাড়ির ভেতর থেকে বাইরের দিকে তাকাতে তাকাতে চোখ ঝাপসা হয়ে উঠল। 
রোদের তেজ ভেদ করে হঠাৎ কুয়াশা এলো কোত্থেকে? ড্রাইভার বলল, দূরে কোথাও মরুঝড় শুরু হয়েছে। 
বালি উড়ছে আকাশে। আকাশ ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। খবরদার, কেউ জানালার গ্লাস খোলা রাখবেন না!
ড্রাইভারের কথায় হুঁশ হলো রুস্তমের। ঝাপসা চোখের তারায় ভেসে উঠেছিল কলির মুখ। 
বালিঝড়ের সঙ্গে মিশে ঘোলাটে হয়ে যেতে বসেছে বিয়ের রং। 
জীবনের রং যেখানে হলুদ, বিয়ের রং সেখানে সবুজ থাকে কীভাবে ? 
মরুঝড়ের কথা শুনে বুকের ঝড় থেমে গেলেও ঘোলাটে আকাশে ভবিষ্যতের আশা যেন বালি হয়ে উড়তে লাগল সামনে।
গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার বোঝার চেষ্টা করছে ঝড়ের গতিপ্রবাহ। 
এরকম ঝড়ের মুখে কনস্ট্রাকশনের জায়গায় পৌঁছাতে কমপক্ষে কুড়ি মিনিট সময় লাগবে। 
কিন্তু এখন সামনে থেকে প্রবলবেগে উড়ে আসছে সমুদ্রের তরঙ্গ রাশির মতো বালির ঢেউ। 
সঙ্গে সঙ্গে সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যেতে শুরু করেছে একের পর এক অসংখ্য গাড়ি। 
প্রবল মরুঝড়ের সময় সড়কে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক নয়। 
মরুতে ঢেউয়ের মধ্যে ঢুকে পড়াও যুক্তিসংগত নয়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। পেছনে ফেরারও উপায় নেই। 
গাড়ির ভেতরে বসে সামনে, ডানে-বাঁয়ে মাথা ঘুরিয়ে রুস্তম দেখতে থাকে শুধু বালিঝড়ের তাণ্ডব। 
চারপাশ পরখ করাশেষে ড্রাইভার বলে, ভয় পাবেন না কেউ। ভয়ের কিছু নেই। বালির ঢেউ মাটি কামড়ে আসছে না। 
প্রবল বাতাসের তোড়ে উড়ে উড়ে আসছে বালিকণা। এ ধরনের ঝড় কিছুক্ষণ পরই থেমে যায়। 
বালির ঢেউ মাটি কামড়ে এলে বিপদ হতে পারত। গাড়িগুলো বালির নিচে চাপা পড়ে যেত। সে ভয় আর নেই।
‘ভয় নেই’ শুনেও রুস্তমের উদ্বেগ কমছে না, বরং বাড়ছে উৎকণ্ঠা। বিস্ময় আর ভয়ের দৃষ্টিতে দেখতে থাকে উড়ন্ত বালিঝড়ের দাপট।
কিছুক্ষণের মধ্যে ঝড় থেমে যায়। আবার চলতে শুরু করে গাড়ি। রাস্তা সচল হলেও কমে যায় গাড়ির গতি। 
চাকায় বাতাস টানটান ভরা থাকলে বালির ওপর দিয়ে গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। 
টায়ারের বাতাস কমিয়ে দিলে মরুর বালির ঢেউয়ের ওপর দিয়ে পাজেরোগুলো ছন্দের তালে নাচতে নাচতে এগোতে পারে। 
কিন্তু কোনো ড্রাইভারই গাড়ি থামিয়ে চাকার বাতাস ছাড়ছে না। বরং গতি কমিয়ে চলছে সার সার গাড়ি। 
সামনে রাস্তা ফাঁকা। পিচঢালা রাস্তায় সাদা সাদা মার্কিং বুকে নিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে মূল সড়ক। 
তার স্বরূপ ফুটে ওঠার পর গাড়িগুলো চলতে শুরু করেছে রাস্তার জন্য নির্ধারিত গতিতে। 
রুস্তমের বুকে সাহস জাগল। বুঝল এটাই জীবনের বাস্তবতা। ঝড় আসতে পারে জীবনে। 
তবে তার স্থায়িত্ব দীর্ঘ হয় না। ঝড়ের সময় সাহস হারালে চলবে না। বরং বিপদে মাথা উঁচু করে রাখতে হবে। 
ভাবতে গিয়ে মনে পড়ল ঐতিহাসিক তথ্য। নবিজিও তো এ ধরনের ঊষর মরুভূমির মধ্যেই জীবনযাপন করেছেন। 
কত শ্রম দিয়েছেন। মরুর বুকে পায়ে হেঁটে বা উটের পিঠে বসে পাড়ি দিয়েছেন মক্কা থেকে মদিনা।
 বিস্তীর্ণ বালি-সমুদ্র দেখে তার কল্পনার সীমানাও বিস্তৃত হতে লাগল। 
মনের মধ্যে জেগে উঠল প্রতিজ্ঞা—শ্রম ঢালতে হবে মরুর বুকে। যত শ্রম তত বেশি দিরহাম। 
নবিজির যুগে মানুষেরা কঠোর জীবনযাপন করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। সে কেন পারবে না? 
কেন সফল হবে না জীবনে ? 
বর্তমানে এক দিরহাম মানে বাইশ টাকা। উপার্জন ভালো হলে বাড়িতে টিনের ঘর তোলা সহজ হবে। 
পুকুরটা সংস্কার করা যাবে। বাড়ির পাশে কয়েক কাঠা জমিও কিনতে হবে। 
দারিদ্র্যের কারণে বাড়ির অন্য শরিকরা জমিগুলো বিক্রি করে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। 
জমিজিরাত হাতছাড়া করা যাবে না। বাড়ির সৌন্দর্য বাড়াতে হবে। বাবাশূন্য সংসারে মায়ের কষ্ট দূর করতে হবে। 
নতুন বউয়ের মুখে ফোটাতে হবে হাসি। বাড়ির পরিবেশ সুন্দর করতে হবে। শিক্ষা ছাড়া জীবনের দাম নেই। 
কঠিন মূল্যে তাকে অনুভব করতে হচ্ছে এই সত্য। 
এইচএসসি পাস করে মরুর বুকে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বোধবুদ্ধি গভীর হচ্ছে। 
জীবনের রূঢ় বাস্তবতাই গভীর করে তুলছে তার জীবনবোধ।  
ড্রাইভারের তাড়া খেয়ে সবার সঙ্গে বাস থেকে নামতে থাকে। নামার পরই কনস্ট্রাকশন স্পট। 
সবাই মাথার ওপর আরবদের মতো মাথা-কান ঢেকে চোখের ওপর টেনে দিচ্ছে গোত্রা নামের সাদা কাপড়। 
কালো গোল চাকার মতো সুতোয় মোড়া চাকতি বসিয়ে দিচ্ছে মাথার চারপাশ ঘেঁষে। 
এই চাকতিকে বলে তাগিয়া। কানের দুপাশে কাপড় যেন উড়তে না পারে সেজন্যই এই কৌশল। 
বাস থেকে নেমে প্রত্যেকেই যার যার দায়িত্ব বুঝে নিল সুপারভাইজারের কাছ থেকে। 
দীর্ঘদেহী পাকিস্তানি সুপারভাইজার কথা বলেন আরবিতে। 
সব কথা পুরোপুরি না বুঝলেও কী করতে হবে বুঝে নিতে পারে। প্রত্যেক শ্রমিকের কাজের লিস্ট থাকে। 
টানা আট ঘণ্টা ডিউটিতে কী কী করতে হবে আগে থেকেই সেটা ঠিক করা থাকে। 
কাজে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। সুপারভাইজারের নাম আলি হায়দার খান। আর তার নাম রুস্তম আলি। 
নামের কারণে সুপারভাইজার গোপনে রুস্তমকে পছন্দ করলেও ওপরে ওপরে সেটা প্রকাশ করেন না। 
যখন চোটপাট দেখান, আলি হায়দার খানকে তখন ঠিক জানোয়ারের মতো লাগে। 
এখনো জানোয়ারের মতোই চোখদুটো বড়ো বড়ো করে কঠিন সব শর্তারোপ করছেন শ্রমিকদের ওপর। 
‘রুস্তম আলি!’ ডাকার সঙ্গে সঙ্গে জানোয়ারের চোখদুটো যেন মানুষের চোখের আকৃতিতে ফিরে এলো। 
গলার স্বর নরম করে বললেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার স্যার আসার পর আমার সামনে আসবে না তুমি।’
মুখ থেকে ‘কেন’ বলে পালটা প্রশ্ন বেরিয়ে এসেছিল, কিন্তু নিজেকে দমন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রইল। 
রুস্তমকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন, ‘যাও, কাজে লেগে যাও।’
কাজের দিকে এগিয়ে গেল রুস্তম। প্রশ্ন জাগল, ব্যাপার কী, ইঞ্জিনিয়ারের সামনে যেতে নিষেধ করা হলো কেন ? 
ভেবে কূল না পেলেও তপ্ত বালুর তাপে সিদ্ধ হয়েও কাজের মধ্যে ডুবিয়ে দিলো নিজেকে। 
তার মধ্যেই মনের মধ্যে ফুঁসে উঠল একটা জেদ। পলকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, ইঞ্জিনিয়ার এলে তার সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াবে, 
দেখবে কী হয়! 
চাকরি গেলে যাবে! তবু প্রশ্নের উত্তর পেতে হবে। 
ইঞ্জিনিয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে বুক উঁচিয়ে বলবে, আমি রুস্তম আলি, বাংলাদেশ থেকে এসেছি। 
রুস্তমের ভাবনার রেশ কেটে গেল পেছন থেকে আলি হায়দার খান যখন বলে উঠলেন,
‘তোমাকে অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে। কাজ করছ কম। ভাবছ বেশি। 
ডিউটির পুরোটা সময় ব্যবহার করে নির্ধারিত কাজ শেষ করতে হবে আজই।’
চারপাশে একবার মাথা ঘুরিয়ে রুস্তম দেখল, হ্যাঁ, কাজ তেমন এগোয়নি। কোথাও জড়তা আছে। 
জড়তার খোলস ছেড়ে বেরোতে পারছে না। আলি হায়দার খানের তাড়া খেয়ে আবার কাজে মন দিলো। 
দুটো লম্বা পাইপ জোড়া লাগাচ্ছে সে। হাঁটুসমান উঁচু পিলারে মুখোমুখি বসানো রয়েছে পাইপদুটো। 
একটার ভেতরে আরেকটাকে ঢুকিয়ে প্যাঁচকল সেঁটে ঘোরাচ্ছে। সিস্টেম এত চমৎকার, 
গায়ের জোর খাটানোর প্রয়োজন হচ্ছে না। চট করে মনে পড়ল সদ্য বিয়ে করা বউ কলির কথা। 
বিয়ের এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে কলিকে ছেড়ে আসার সময় কলি বলেছিল, ‘যেখানে থাকবেন, 
ভালো থাকবেন। আমারে মনে করবেন। আপনার মনের গহিনে আছি, থাকব আমি। ভুলে যাবেন না।’ 
কলির কথাটা শুনে ভীষণ ভালো লেগেছিল।

			
দারুণ উদ্যোগ। এই বইটি লেখকের সৃষ্ট কর্মের অসাধারণ এক সংযোজন,যা উনাকে সাহিত্য ভুবনে পাঠকরা মনে রাখবে।কেননা এর আগে কেউ
এই প্রেক্ষাপটে লিখেননি।অসাধারণ একটা উপন্যাস।