উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব সতেরো

তের

মুঠোফোন সাইলেন্ট করে বালিশের কাভারের ভেতর রেখেছিল কলি। কিছুক্ষণ পরপর বের করে দেখত কল এসেছে কি না। আজকের কললিস্টে কোনো কল নেই। সেলফোন চেক করার মধ্যে নির্ভরতা নেই, ব্যাকুলতা কাজ করছে মনে। রুস্তমের খবরের আশায় নির্জনে অপেক্ষা করছে জাফর আহমেদের কলের। একাকী ঘরে আছে শুধু তার দেহটা। বঞ্চিত-লাঞ্ছিত বুকে বিরহী সন্ধ্যা নেমে এলেও মনে হঠাৎ আলো জ্বলে উঠল মেসেজটোনের সংকেত পেয়ে। মুঠোফোন হাতে নিয়ে বুঝল এসএমএস ঢুকেছে সেটে। বুঝল মেসেজটি পাঠিয়েছেন জাফর আহমেদ। চকিতে দেখল দরজা ভেজানো থাকলেও হুক লাগানো নেই। সাবধানতার মার নেই। দ্বিধা ঝেড়ে খাট থেকে নেমে সন্তর্পণে এগিয়ে গেল দরজার দিকে। হুক আটকে দরজা বন্ধ করার নিয়ম নেই। শাশুড়ির এই আদেশ অমান্য করেনি কখনো। এখন অমান্য করল। ঠুস করে শব্দ হওয়ায় কী রি-অ্যাকশন হয় বোঝার জন্য কিছুটা সময় হুকে হাত রেখে অপেক্ষা করল। দরজা লাগানোর বিষয়টি বোঝেননি শাশুড়ি। শ্বশুরবাড়ি থেকে গতকাল বেড়াতে আসা ননাস, রওনক জাহান এদিকে খেয়াল করতে পারেন, তা মাথায় স্থান দিলো না। খেয়াল করলে এটা-সেটা বুঝিয়ে তাকে ঘোল খাইয়ে দেওয়া যাবে ভেবে খাটে ফিরে মোবাইল সেটের মেসেজ অপশনে গিয়ে দেখল জাফর আহমেদ লিখেছেন, ‘কথা বলা যাবে?’

গোপন সতর্কতায় একবার তাকাল জানালা দিয়ে বাইরের দিকে। দ্রুত নেমে আসা সন্ধ্যায় এখন এদিকটায় কেউ আসার কথা না ভেবে জানালার কাছে ঠেস দিয়ে বসল আয়েশি কায়দায়। তারপর জবাব পাঠাল, আপনার কলের অপেক্ষা করছিলাম। কথা বলা যাবে। কল করুন।

কল এলো না। আবার মেসেজ এলো, ‘আশেপাশে কেউ নেই তো?’
‘নেই। কল করুন।’
‘আমার কলের জন্য অপেক্ষা করছেন জেনে খুশি হলাম।’
‘রুস্তমের খবর জানার জন্য অস্থির হয়ে আছি। বিস্তারিত শুনতে চাই। প্লিজ কল করুন।’
‘হ্যাঁ। রুস্তমের খবর আছে! আনন্দসংবাদ আছে!’
‘কী সংবাদ, জানতে চাই। ধৈর্যহারা হয়ে যাচ্ছি। কল করুন, প্লিজ!’

এসএমএস থেমে গেছে। কালবৈশাখি বয়ে যাচ্ছে বুকে। ঢিবঢিব বেড়েছে, সঙ্গে বেড়েছে শ্বাসপ্রশ্বাস। মনিটরের দিকে চেয়ে আছে চাতক পাখির মতো। হঠাৎ ভেসে উঠল সাইলেন্ট কলসংকেত। মুহূর্তের জন্যও দেরি করল না কলি। ইয়েস বাটনে চাপ দিয়ে ফিসফিস করে প্রশ্ন করল, ‘কী আনন্দসংবাদ?’

‘আগে বলুন, আপনার আনন্দযজ্ঞে স্থান হবে তো আমার? আমার মন জায়গা পাবে তো আপনার আনন্দে?’
‘আপনার কথা মাথায় ঢুকছে না। রুস্তমের খবর কী ? বলুন প্লিজ।’
‘খবর শোনার পরও আমার গোপন কলে একইরকম অংশ নেবেন তো?’
‘গোপনেই কথা বলছি আমি।’
‘আপনার কথা শুনে থেমে গেছে কলিজার গোপন রক্তপাত!’
অধৈর্য হয়ে কলি প্রশ্ন করল, ‘কী বলছেন এসব? রুস্তমের খবরটা বলুন, প্লিজ!’
‘আপনাদের যুগল ছবিটা কাজে দিয়েছে!’
‘ওঃ! বিয়ের ছবিটা!’
‘হ্যাঁ! উলটো পিঠে নাম লিখে সিগনেচার দিয়েছিলেন, মনে আছে?’
‘জি। জি। মনে আছে।’
‘ছবিটার কারণে মুক্তির নির্দেশ জারি হয়েছে। শিগ্গির মুক্তি পাবেন রুস্তম।’
‘উনি কি জেলেই ছিলেন?’
‘হ্যাঁ। দ্বিতীয় বিয়ের কারণে জেলে ছিলেন।’

‘রুস্তম মুক্তি পেয়েছে! আনন্দসংবাদ! রুস্তম দ্বিতীয় বিয়ে করেছে! নিশ্চিত কষ্টের সংবাদ! কালবৈশাখির পর সোঁদা গন্ধের মতো। কলির ভবিষ্যতের চলার চাকাটা ভেঙে খাদে পড়ে আছে। সে স্তব্ধ হয়ে তাকাল বাইরের দিকে। ঘুটঘুটে অন্ধকার না হলেও মনে হলো অদৃশ্য জেলখানার বিদ্যুৎহীন অন্ধকার ঘরে বসেই সে মুক্তি দিয়েছে রুস্তমকে।

‘রুস্তম মুক্তি পেয়েছে শুনে খুশি হননি?’
প্রশ্ন নয়, যেন নির্মম চাবুক এসে সপাং করে আঘাত হানল পিঠে। কলি জবাব দিলো, ‘জেলখানা থেকে স্বামী মুক্তি পাবে, এ খবর শুনে খুশি হবো না ভাবলেন কীভাবে?’
‘ভাবিনি। জিজ্ঞেস করলাম রুস্তমের প্রথম বউকে!’
‘প্রথম শব্দটা আবার বসাল চাবুকের ঘা। এবার আর কষ্ট টের পেল না। বরং দৃপ্তকণ্ঠে বলল, পুরুষমানুষ তো চারটে বিয়ে করতে পারে। চার নম্বর বউ বরণ করলেও, রুস্তমের মুক্তি ঘটলে খুশিই থাকব আমি।’
‘আপনি তো সংঘাতিক শক্ত মেয়ে!’

‘শক্ত কি না জানি না। তবে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতিপত্র লিখেছি নিজ হাতে। সিগনেচারও করেছি বলপেন দিয়ে। দুই আঙুলের ফাঁকে যখন নিব ঘুরছিল, তখন চোখ বেয়ে নামছিল রক্তজল। অশ্রুজলে মিশিয়ে দিয়েছি বুকের ক্ষতের রক্তের ফোঁটা। সেই ফোঁটায় মুক্তি হবে না রুস্তমের, বিশ্বাস করিনি। আত্মবিশ্বাস ছিল মুক্তি ঘটবেই তার। বিশ্বাসটা সফল হয়েছে। আনন্দ হচ্ছে তাই।’

‘সম্মতিপত্র পাঠিয়েছিলেন কীভাবে?’
‘ডাকবাক্সে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেই ডাকে মুক্তি ঘটেছে রুস্তমের, নিশ্চিত আমি। কেবল যুগল ছবির কারণে মুক্তি ঘটেছে, মনে করি না।’

‘উপজেলা পরিষদে এসেছিলেন আপনি?’
‘না। চাচাতো দেবরকে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।’
‘ওঃ! সেই বিচ্ছু ছেলেটা আপনার চাচাতো দেবর?’
‘হ্যাঁ। কিন্তু বিচ্ছু না, ও আমার বন্ধু, খেলার সাথি।’
‘জেলাস হচ্ছি! আপনার কাছের মানুষ তাহলে সে-ই কুটুমবন্ধু? আমি কেউ না?’
‘শৌর্যের সঙ্গে আপনার তুলনা আসছে কেন?’

‘তুলনা করছি না। আমিও আপনার বন্ধু হতে চেয়েছি। বিপদে পাশে থাকতে চেয়েছি। সুহৃদ হতে চেয়েছি। একজন সেই স্পটে থাকলে অন্যজন কি জায়গা পাবে?’
‘আপনার জায়গায় আপনি থাকুন। শৌর্যের জায়গায় আছে শৌর্য। আমার জায়গায় আমি আছি। যে যার জায়গায় থাকলে বিশৃঙ্খলা ঘটবে না জীবনে।’
‘আমি তো এখন কান দিয়ে ঢুকে যাচ্ছি আপনার মস্তিষ্কে। আপনি ঢুকেছেন আমার মস্তিষ্কে। এখানে তো শৌর্যের স্থান নেই। আপনার কথা মানছি। আপনি থাকুন আমার মাথায়। আমি থাকি আপনার মাথায়। রাজি?’
কথার জালে জড়াতে ভালো লাগছে না এখন। আবার লাইনও কেটে দেওয়া যাচ্ছে না। অদ্ভুত এক অনুভূতি নিয়ে কলি কানের কাছে ধরে আছে ফোনসেট। ফিসফিস করে বলল, ‘আপনি তো মজার মানুষ! এত সুন্দর কথা বলতে পারেন!’

‘আপনিও মজাদার! আমি পাশে থাকতে চাই। এড়িয়ে যাবেন না তো?’

জাফর আহমেদের সরাসরি প্রশ্নের জবাব হওয়া উচিত ‘আর এগোবেন না’। কিন্তু বলতে পারল না কথাটা। যে উপকার করেছে, তাকে আঘাত দেওয়া গেল না। হঠাৎ মনে হলো, জানালার পাশ থেকে একটা অদৃশ্য ছায়া সরে গেল! কার ছায়া? কেউ কি দাঁড়িয়ে শুনছে তার কথা? নাকি ভূতুড়ে ছায়া! কেঁপে উঠল কলি। আকস্মিক বলল, ‘এখন রাখি, পরে কথা বলব।’
লাইন কেটে জানালা দিয়ে এপাশ-ওপাশ যতটুকু দেখা যায় দেখল সে। কাউকে দেখা গেল না।
হঠাৎ খেয়াল হলো, দরজায় নক হচ্ছে। দ্রুত উঠে দরজা খুলে চমকে উঠল। সামনে দাঁড়ানো ননাস,  রওনক জাহান। সরাসরি প্রশ্ন করলেন, ‘রুমে ফিসফিস করে কার সঙ্গে কথা বলছিলে, কলি?’

‘না তো! কথা বলছিলাম না!’

‘মিথ্যা বললে কেন? মিথ্যার আড়ালে কি কোনো গোপন কথা লুকোতে চাচ্ছ?’ দৃঢ়কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন রওনক জাহান।
অতর্কিত আক্রমণে বিষাদ আর বিস্ময়ের পাহাড় ডিঙানোর শক্তি হারিয়ে ফেলল কলি। অসহায় ভঙ্গিতে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল সে।
‘কার  সঙ্গে  গোপনে  কথা বলাবলি করো? রোজ বলো? কবে থেকে  চলছে গোপন অভিসার?’
মুখে ছিপি লেগে গেছে কলির। কথা বেরোচ্ছে না। কোনো জবাব আসছে না মাথায়।
পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকা কলিকে ধাক্কা দিয়ে আবার প্রশ্ন করল, ‘সে পুরুষ? কার সঙ্গে চলছে তোমার পরকীয়া!’

নির্বাক কলি হুংকার দিয়ে পালটা প্রশ্ন করল, ‘কী বলছেন এসব?’
‘অশ্লীলতা করবে, আর প্রশ্ন করতে পারব না!’
‘মুখ সামলে কথা বলুন। কোনো অশ্লীলতা ঘটেনি।’গর্জে উঠে জবাব দিলো কলি।

‘চোরের দেখছি বড়ো গলা! হাতে ওই ফোনটা কোথায় পেলে? আম্মাজান তো বলেছেন ঘরে মাত্র একটাই ফোন রয়েছে। কার সঙ্গে গোপনে চালাচ্ছ সম্পর্ক?’

অপ্রেমে ঝরে শুকিয়ে যাচ্ছিল শরীরী বাসনার পাপড়ি। বরফশীতল জলধারা নিভিয়ে দিচ্ছিল দেহের আগুন। প্রশ্নবাণে আরও নিভে গেল কলি। মুঠোয় ধরা মোবাইল ফোনটাকে মনে হচ্ছে সাপের পিচ্ছিল মাথা। ক্লান্তি, ঘৃণা আর বিষাদ স্পর্শের সঙ্গে যুক্ত হলো বিষ। আবেগশূন্য নির্বাক কলি নির্বোধের মতো চেয়ে রইল ফোনসেটের দিকে। পেছন থেকে ছুটে এসে শকুনের মতো ছোঁ মেরে শাশুড়ি কেড়ে নিলেন হাতে ধরা মুঠোফোন।

চিৎকার দিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘এটা শৌর্যের ফোন?’
‘না। না।’
দিশেহারা কলির জবাব শুনে আবার প্রশ্ন করলেন, ‘তবে কার? আর কোন পুরুষের সঙ্গে গাঁট বেঁধেছিস?’
অশ্লীল প্রশ্নের জবাব দিতে পারল না কলি।
‘ছিনাল, বেশ্যা মেয়ে! চুলের মুঠি ধরে টান দিয়ে রুশনা বেগম কলিকে ফেলে দিলো মাটিতে। লাথি মেরে প্রশ্ন করলেন, কবে থেকে চলছে বেলেল্লাপনা?’

জবাব না পেয়ে আবার বিষদাঁত বসিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করল, ‘কবে থেকে এ ঘরকে বানিয়েছিস হেরেমখানা?’
মেঝেতে নিজেকে পড়ে থাকতে দেখে হুঁশ হলো কলির। উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করার মুহূর্তে লাথি দিয়ে এবার ননাস প্রশ্ন করলেন, ‘মুখে তালা মেরেছিস কেন? কথা বল? নইলে সালিশ ডাকব। এ বাড়ি থেকে দূর করে দেবো তোকে?’

স্বামীর খবর পাওয়ার জন্য ব্যাকুল মনের তাড়া সামলাতে না পেরে যে ভুল করেছে, তার বোঝা বেশি ভারী মনে হতে লাগল। নির্বাসনের কথা শুনে চুপ থাকতে পারল না। দুঃস্বপ্ন মোচনের তাগিদে সর্বশক্তি নিয়ে লাফিয়ে উঠে উচ্চেঃস্বরে কলি বলল, ‘আমার স্বামীর খবর নিতেই ফোন জোগাড় করেছি। সে ফোনে এখন খবর পেলাম জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। প্রথম পক্ষের অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করায় জেল হয়েছিল তার। দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতিপত্রও ডাকযোগে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম আমি। স্বামীকে জেল থেকে মুক্তির জন্য করেছিলাম এমন আত্মঘাতী কাজটি!’

কলির মুখে শব্দ-বাক্যের বন্যার দাপটে স্তব্ধ হয়ে গেল রওনক জাহান। রুশনা বেগম তৃপ্ত হলেন না। ফাটা গলায় প্রশ্ন করলেন, ‘ফোন জোগাড় করেছিস, আমি জানলাম না কেন? দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি পাঠিয়েছিস, জানাসনি কেন আমাকে?’

শাশুড়ির চেয়েও উচ্চকণ্ঠে গর্জে উঠে কলি জবাব দিলো, ‘আপনি জানিয়েছিলেন আমাকে? ছেলে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে, জেনেও গোপন করেছিলেন কেন সে খবর?’
অকাট্য যুক্তি শুনে দমে গেলেন রুশনা বেগম। দমে গেল রওনক জাহানও। দরজার বাইরে কেউ ডাকছে। শুনে সেদিকে এগিয়ে গেলেন রওনক।
ফুপাতো ভাই, ওয়ার্ড কমিশনার মুনির আহমেদকে দেখে রওনক প্রশ্ন করলেন, ‘ভাইজান! আপনি? কোনো খবর আছে?’

‘হ্যাঁ। সুখবর আছে। উপজেলা অফিসে শুনে এলাম রুস্তম জেলে ছিল। প্রশাসনের উদ্যোগের কারণে ছাড়া পাওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছে। শিগ্গির মুক্তি ঘটবে তার।’

দরজায় দাঁড়িয়ে রুশনা বেগমও শুনলেন আনন্দের এ খবর। শুনে ভেতরে এসে কলিকে শুনিয়ে বাঁকা স্বরে বললেন, ‘ইস! কত দেমাক! প্রশাসনের কারণে ছাড়া পেয়েছে ছেলে। আর একজন দাবি করছেন, তার কারণে ছাড়া পেয়েছে! ছোটো বউ এলে বুঝবে। শাশুড়ির সঙ্গে লাগার মজাটা টের পাবে।’

মুনিরকে দেখলে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন রুশনা বেগম। স্বামী বেঁচে থাকতেই একমাত্র ননদকে বাপের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছিলেন রুস্তমের বাবা। সে সম্পত্তির বিরোধ ভয়াবহ, জানেন তিনি। বিরোধের কারণে কখনো ননদ এ বাড়িমুখো হয়নি। তবে মুনির আসত প্রায়ই। মুনিরের সঙ্গে রওনকের ঘনিষ্ঠতা ছিল। এতদিন আসেনি। আজ রুস্তমের সুখবর দেওয়ার নাম করে এসেছে এ বাড়িতে! আসল উদ্দেশ্য রওনক। বুঝতে অসুবিধা হলো না। বিষয়টি এড়িয়ে আবার ঢুকলেন ঘরে। প্রথমে ভয় কাজ করেছিল। ভেবেছিলেন জাফর আহমেদ এখানে আসার পেছনে কাজ করেছে মুনিরের ষড়যন্ত্র! প্রমাণ না পেলেও সে উদ্বেগ কাটেনি এখনো। একদিকে ছেলের বউয়ের আচরণ, অন্যদিকে মুনিরের আগমনে উদ্বিগ্ন তিনি। ক্ষুব্ধতা আর উদ্বিগ্নতার মিশ্র আক্রমণে দিশেহারা না হলেও ধনাঢ্য পরিবারে রুস্তমের বিয়ের খবর শুনে মিশ্র আবেগে ডুবে গেলেন। বড়ো বউকে সাজা দেওয়া গেলেও, বড়ো বউ কলি ছিল ঘরেই। মান-অভিমানের মধ্যেও আদর-মমতার ঘাটতি হয়নি। ঝগড়াঝাঁটির মধ্যেও ঘর ছেড়ে যায়নি বড়ো বউ। বড়োলোকের দুবাই-কন্যা কি ছিনিয়ে নেবে ছেলেকে! ফিরে আসবে তো রুস্তম! নাকি দুবাই-কন্যার শিকলে বাঁধা পড়ে থাকবে? মিশ্র প্রশ্ন ও আতঙ্কে বিপর্যস্ত রুশনা বেগম দেখলেন, মুনিরের সঙ্গে রওনক এগিয়ে যাচ্ছে ঝোপঝাড় পেরিয়ে পুকুরের দিকে। সন্ধ্যারাতে সেখানে কী কাজ? মনে মনে গুমরে উঠলেও বাধা দিতে পারলেন না মেয়েকে। ত্রিশোর্ধ্ব মেয়েকে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। তবু সন্দেহের সুচালো ধারে আক্রান্ত হচ্ছেন রুশনা বেগম।

প্রায় ত্রিশ মিনিট পর ফিরে এসেছে রওনক জাহান। মেয়ের মুখে বিষাদ। আনন্দ নেই চোখের তারায়।
রুশনা বেগম খেয়াল করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মুনির কি চলে গেছে?’
‘হ্যাঁ। চলে গেছে।’
‘আড়ালে নিয়ে কী বলল তোমাকে?’
‘যা বলে গেল, মুখে উচ্চারণ করতে পারছি না।’
‘রুস্তম ভালো আছে তো?’
মায়ের উদ্বিগ্ন প্রশ্ন শুনে বলল, ‘রুস্তম ভালো আছে। বিষয়টা তোমার আদরের বউমাকে নিয়ে।’
‘কী বিষয়? আর কী করেছে ওই বজ্জাত!’

‘পরিষদে রটে গেছে তোমার বউমার সঙ্গে সমাজসেবা অফিসের জাফর আহমেদের দহরম-মহরম চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। গোপনে নাকি ওই লোক কথা বলা ছাড়াও সাক্ষাৎ করেছে। রসালো ঘটনাটা গ্রামেও নাকি চাউর হয়ে গেছে! তোমার বউমার হাতে গোপনে রাখা ওই ফোনটাও জাফর আহমেদের দেওয়া। সেটটি মুনির ভাইকে দেখালাম এখন। কললিস্ট দেখে বুঝেছেন, জাফর আহমেদের সঙ্গে কলি কথা বলেছে আজ সন্ধ্যায়ও। ফিসফিস করে ওই লোকটার সঙ্গেই পরকীয়ায় লিপ্ত ছিল সে।’

মেয়ের কথা শুনে দাঁত ও নখের আঁচড় খেলেন রুশনা বেগম। ত্বক ফুঁড়ে ছোপ ছোপ রক্তকণা ভেসে ওঠার পরও নিভে গেলেন তিনি। যে ক্রোধ ও ঈর্ষার আগুন ছুড়ে দিতেন বউয়ের ওপর, একইরকম আগুন তেড়ে এলো নিজের দিকে। মুনিরের কথা মেনে নিতে পারছেন না! মুনিরের এই অপবাদের পেছনে প্রতিশোধের স্পৃহা রয়েছে ভেবে মেয়ের উদ্দেশে বললেন, ‘মুনিরের সব কথা অকপটে বিশ্বাস করবে? সে তো তোমাদের ক্ষতি ছাড়া ভালো চাইবে বলে মনে হয় না।’

‘বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ব্যাপার না, আম্মা। মুঠোফোনটার মালিকও জাফর সাহেব। হাতেনাতে প্রমাণ রয়েছে।’
আকস্মিক নিভে গেলেন রুশনা বেগম। ধীরপায়ে এগিয়ে গেলেন বউমার ঘরে। আটকানো দরজায় হাত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলে গেল। দরজায় দাঁড়িয়েই বুঝলেন, ‘ঘরে নেই বউমা!’

‘খপ করে কামড় বসে গেল বুকে। কোথায় গেল? কখন বেরোল? উৎকণ্ঠা নিয়ে এলেন রসুইঘরে। নেই। হাঁসের খামারের কাছে এলেন, সেখানেও নেই। তবে কি টয়লেটে গিয়েছে? সেদিকে তাকিয়ে দেখলেন, ঘুটঘুটে অন্ধকার। লাইট জ্বলছে না। অন্ধকারে একা যাওয়ার কথা নয়। বাড়ির পেছনটা ঘুরে শৌর্যদের ঘরের সামনে এসে ডাকলেন দেবরকে। ভাবির ডাকে আতর আলি মুনশি বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে।

‘ভাবি, কী হয়েছে?’

‘সব কথা তোমাকে বলতে পারছি না। বউমার সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। এখন কোথাও দেখছি না। আশেপাশে খুঁজে দেখবে? ঝোপঝাড়ে ঢুকে বসে আছে কি না?’
কাকিমার কথা বারান্দায় দাঁড়িয়ে শুনেছে শৌর্য। বাবাকে উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে শৌর্য অভিযোগ করে বলল, ‘মা-মেয়ে মিলে ভাবিকে মেরেছে। লাথি দিয়েছে। ভাবির ওপর অত্যাচার করেছে তারা!’
শৌর্যের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলেন রুশনা বেগম! মনে মনে ভাবলেন, এই বিচ্ছুটা জানল কীভাবে? নিশ্চয়ই বউমাকে লুকিয়ে রেখেছে সে!
আতর আলি মুনশি বললেন, ‘ভাবি ছি! বউমার গায়ে কি হাত তোলা শোভন!’
‘কেউ বেলেল্লাপনা করলে শাসন করতে হবে না?’
কাকিমার কথায় খেপে গিয়ে শৌর্যই জবাব দিলো, ‘আপনিই কুটিল বুড়ি, নিরাপরাধ ভাবিকে পিটিয়েছেন!’
ছেলের ঔদ্ধত্য দেখে হতবাক হয়ে গেলেন আতর আলি মুনশি।
ফুঁসে উঠতে গিয়ে নিজেকে সামলাতে পারলেন রুশনা বেগম। পিছু হটে গেলেন।

ঘর থেকে টর্চ নিয়ে বেরিয়ে গেল শৌর্য। ভাবির প্রিয় জায়গাগুলো তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগল। ঝোপঝাড় পেরিয়ে গেল পুকুরপাড়ে, শিম ও কচুবাগানেও খুঁজল। না। কোথাও নেই!
আতর আলি মুনশি, রওনক জাহান ও রুশনা বেগমও খুঁজলেন পুরো বাড়ি। না। নেই বউমা কি ভূত না পেতনি? নিশ্চিত জিনের আসর আছে তার ওপর। নিশ্চয়ই কোনো গাছ-টাছের মাথায় চড়ে বসে আছে ভেবে গাছে গাছে টর্চের আলো ফেলতে লাগলেন রুশনা বেগম। খুঁজে পেলেন না বউমাকে।
পুকুরপাড়ে এসে দেখলেন, শৌর্যও খুঁজছে ভাবিকে! আগের ধারণা বদলে গেল। শৌর্যই লুকিয়ে রেখেছে যে ধারণা করেছিলেন, ভুল মনে হলো এখন। তার আক্রমণাত্মক অভিযোগের কথা ভুলে বললেন, ‘পুকুরে ঝাঁপ দেয়নি তো, শৌর্য?’

‘ভাবি তো সাঁতার জানে। ঝাঁপ দিলে সাঁতরে ফিরে আসত পাড়ে।’
‘গলায় কলসি বেঁধে যদি ঝাঁপ দিয়ে থাকে?’
কাকিমার এবারকার প্রশ্ন শুনে আতঙ্কিত শৌর্য পুকুরের পানিতে টর্চ ছুড়তে লাগল। কোথাও বুদ্বুদ বা পানি নড়াচড়ার আলামত পেল না। পুরো পুকুরের নিথর পানি ধারণ করে আছে আঁধারের কালো প্রলেপ।
হাহাকারে ভরে ওঠে শৌর্যের মন। মনে মনে বলল, ‘ভাবি! ভাবি! লুকিয়ে আছো কোথায়? ফিরে এসো, ভাবি?’
পুকুরপাড়ে এলেন আতর আলি মুনশি। শৌর্যের উদ্দেশে বললেন, ‘খালপাড় দেখেছ, শৌর্য? শিমবাগানের মাচার ঝাড়টাও দেখা দরকার।’

বাবার কথা শুনে, অন্ধকারে টর্চের আলোয় ছুটে চলল শৌর্য।
অভিমান ভুলে সামনে ছুটে চলল সে। তন্নতন্ন করে খুঁজল। কিন্তু কোথাও দেখা মিলল না ভাবির। হতাশ হয়ে পুকুরপাড়ে ফিরে শৌর্য শুনল, কাকিমা তার বাবাকে বলছেন, ‘সমাজসেবা অফিসের জাফর আহমেদ নাকি একা থাকেন উপজেলা পরিষদ কোয়ার্টারে। সেখানে পালিয়ে গেল না তো, বউমা?’

‘কী বলছেন এসব?’ রাগ ঝরে পড়ল আতর আলি মুনশির কথায়।

কাকিমার ধারালো প্রশ্নটি ঢুকল শৌর্যের কানেও। ‘বুককাটা প্রশ্নটি ফালাফালা করে দিয়েছে তার পাঁজর। নির্বাক দাঁড়িয়ে পড়ল সে। কল্পচোখে ভেসে উঠল জাফর আহমেদের রুম থেকে ভাবির বেরোনোর দৃশ্যটা। মুঠিতে চেপে ধরা মুঠোফোন লুকোনোর দৃশ্যটাও ভেসে উঠল। সন্ধ্যারাতে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবির ফিসফিস কথাও লুকিয়ে শুনেছিল সে। কথাগুলো পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও বুঝতে পারল, সন্ধ্যায় জাফর আহমেদের সঙ্গেই কথা বলেছে ভাবি! এসব লুকোতে পারল তার কাছ থেকে!’

দেবরকে স্তব্ধ হয়ে যেতে দেখে রুশনা বেগম আবার বললেন, ‘খবর তো কিছু রাখো না। পুরো গ্রামে রটে গেছে। বউমার গোপন সম্পর্ক চলছে ওই বদমায়েশ জাফরের সঙ্গে। এজন্যই সন্ধ্যায় শাসন করেছিলাম।’
আতর আলি মুনশি বললেন, ‘ছি! ভাবি, এমন কথা আপনার মুখ দিয়ে বের করা উচিত নয়। আমরা তো জানি, বউমা কত ভালো। কত লক্ষ্মী একটা মেয়ে।’
বাবার কথার সঙ্গে একমত হলেও কাকিমার এখনকার কথায় প্রতিবাদী হতে পারল না শৌর্য। জাফর আহমেদকে ঘিরে রটানো বদনাম তার পাঁজরে ঢুকিয়ে দিয়েছে গোপন জ্বালা। মাথা নিচু করে এগিয়ে যেতে লাগল ঘরের দিকে।

আতর আলি মুনশি বলল, ‘বউমা নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি থানায় জানানো দরকার! নইলে পরে আইনগত নানা সমস্যা হতে পারে।’
‘আমার মনে হয়, রাতে ঝামেলার দরকার নেই। দিনে উপজেলা কোয়ার্টার চেক করে, পরে জানানো যাবে থানায়।’

‘আপনি যা ভালো মনে করেন, জানাবেন। দিনে যা করার করব।’
বাবা আর কাকিমার এ কথাগুলো ঢুকেছে শৌর্যের কানে।
অবুঝ কিশোরের বুক ফেড়ে বেরোল হুহু কান্না। নিঃশব্দ কান্নার আওয়াজ বেরোল না বাইরে। অন্তর্মুখী কষ্টের ঢেউ টের পেল না অবুঝ মন। কেবল শূন্য শুষ্ক চোখ মেলে বেরোতে লাগল ঘুটঘুটে অন্ধকার…

ভাবিকে কেবল ভাবি মনে হলো না। মনে হলো মায়াবী নারী। মায়ার ঢেউ তুলছে যেন বুকের ভেতর। ভরা বর্ষায় নদীতে যেমন বয়ে যায় দুরন্ত ঢেউ, তেমনি ঢেউয়ের তোড়ে ডুবে যেতে লাগল শৌর্য। বিপন্ন-বিধ্বস্ত কিশোর একবার ডোবে, একবার ভাসে। বিষে ভরে উঠছে চোখ। ঘুম নেই দু-চোখে। নির্ঘুম রাতে হঠাৎ শুনল, ‘কুটুমবন্ধু! তুমি আমার খেলার সাথি!’

স্পষ্ট কথাটা কানে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে অন্ধকারেই চারপাশে তাকাল মাথা ঘুরিয়ে। হতাশ হয়ে শুয়ে পড়ল হাত-পা ছড়িয়ে। আচমকা আবার বুকের ভেতর থেকে বেরোল উড়ানি শব্দ— ‘কুটুমবন্ধু! আমার পাশে দাঁড়াও!’ কেঁপে উঠল শৌর্যের পুরো শরীর। লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে একবার সুইচবোর্ডে হাত রাখল। থেমে গেল হাতের ইমপালস। সুইচ না টিপে অন্ধকারেই কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করল কথাটা। শব্দ শুনতে পেল না। তবে পাশের গোলাঘরে নড়াচড়ার খসখস শব্দ পেল। নতুন করে আবার ভাবল, ‘গোলাঘরে লুকিয়ে নেই তো ভাবি?’ সঙ্গে সঙ্গে টর্চ হাতে চুপিসারে ঢুকল সেখানে।

মুলিবাঁশ দিয়ে বানানো চাল রাখার বড়ো গোলার ঢাকনা খোলা দেখে অবাক হলো সে। সাধারণত চালের গোলার মুখ সাঁটানো থাকে। গোলার ভেতরে আলো না ফেলে উঁকি দিয়ে পরোক্ষ আলোয় দেখল কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে কেউ। ভালো করে দেখার পর বুকের ভেতরে গোপন চিৎকার উঠল, ‘ভাবি!’ অস্ফুট চিৎকার করে চোখ মেলে দেখল, অঘোরে ঘুমাচ্ছে এক মায়াবী কিশোরী! মুখের ত্বক চুইয়ে নেমে যাচ্ছে পৃথিবী ভোলানো মায়াবী জোছনার আলো! একবার চোখ বন্ধ করল। আবার তাকাল বিস্ফারিত চোখ মেলে। মনজুড়ে মন-কেমনের আলোর নাচন। পূর্ণ জোছনার মায়াবী ঢেউ চোখে ভরে পূর্ণতা নিয়ে পূর্ণকিশোর এবার শরীর উঁচিয়ে গোলার ভেতর হাত ঢুকিয়ে স্পর্শ করল খেলার সাথির কপাল। চোখ খুলে মুহূর্তে চমকে উঠল কলি।

খপ করে ধরে ফেলল হাত।
অনুচ্চস্বরে শৌর্য বলল, ‘ভয় পেয়ো না। আমি তোমার কুটুমবন্ধু।’
আশ্বাস পেয়ে আবার চোখ বুজল কলি। বন্ধ চোখের আলোয় প্রশ্ন জাগল, ‘এ হাতে কী আছে? আগুন, মায়া, না অন্য কিছু!’
উত্তর পেল না। অনুভব করল মনজুড়ে বয়ে যাচ্ছে চাঁদের আলো। ছড়িয়ে যাচ্ছে আগুনের মায়া। এই মায়া ছড়িয়ে গেল দেহে। বোধে। নড়ে উঠে দেহটা সংযত করে কলি উঠে দাঁড়াল গোলার ভেতর।
কোনো শব্দ নেই। বাক্যের স্ফুরণ নেই। অথচ সহস্র কথা বলা হয়ে গেল দুজনের। শৌর্যের ঘাড়ে হাত দিয়ে শরীরের ভর নিয়ন্ত্রণে রেখে, গোলার ভেতর থেকে একটা পোঁটলা হাতে নেমে এলো কলি। হাতে মৃদু টান দিয়ে বুঝিয়ে বলল, ‘বাইরে চলো চুপিচুপি।’

এখনো ভোরের লাল রং আকাশে লাগেনি। এখনো ফজরের আজান হয়নি। মন চূর্ণ করা মাতম নেই, শেষরাতে আঁধারেই কেবল মিশে আছে কান্না, কষ্ট, অপমান। বুকের শিরায় টান ধরা বিপন্ন সময়ের রক্তাক্ত ক্ষত নিয়ে কলি বলল, ‘কুটুমবন্ধু, আমার বাপের বাড়িতে রেখে আসবে আমাকে?’
জবাব দিতে পারল না স্তব্ধ শৌর্য। তাকিয়ে রইল কেবল। বুকের ভেতর বহমান ঝড়ে বিপন্ন হলেও ভেঙে পড়ল না।

‘এ বাড়িতে আর থাকা সম্ভব নয়। তোমার ভাই দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। নিশ্চিত হয়েছি। জেল থেকে ছাড়াও পেয়ে যাবেন। দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতিপত্র তোমার হাতে পাঠিয়েছিলাম। এখন তোমার সাহায্যে ফিরে যেতে চাই আমাদের বাড়ি। যাবে না সঙ্গে ? আলো ফোটার আগেই যেতে হবে। শাশুড়ি আমাকে ছিনাল বলেছে, বেশ্যা বলে গাল দিয়েছে। চুলের ঝুঁটি ধরে মেরেছে। লাথি দিয়েছে। অশ্লীল অপমান করেছে। এ বাড়িতে থাকার অধিকার হারিয়ে ফেলেছি। দিয়ে আসবে না ভাই!’

শৌর্যের চোখ ফেটে পানি এলো। জলভরা চোখে একবার তাকাল পুবের দিকে। আকাশে কোমল লালিমা উঁকি দিচ্ছে। লালের সঙ্গে মিশে গেল কলির ইচ্ছা। একাকার হলো নিজের ইচ্ছাও। ঠোঁট কামড়ে বুকের কান্না ঠেকিয়ে জবাব দিলো, ‘যাব।’

‘তাহলে চলো। এখনই বেরিয়ে পড়ি।’
‘দুটো প্রশ্নের জবাব দেবে?’
‘জানা থাকলে দেবো।’
‘আমাদের ঘরে এসে লুকিয়েছিলে কেন?’

‘সঠিক উত্তর জানা নেই। কেউ যেন ঠেলে তোমাদের ঘরে নিয়ে এসেছে আমাকে। অথচ রাতেই একা বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম এই প্যাকেট হাতে।’
‘কে নিয়ে এসেছে ঠেলে?’
‘জানি না। তবে মনে হয় আমার ভেতরে ঢুকে আছে আরেকটা আমি। সেই আমি ঠেলেছে আমাকে। সবাই যখন খুঁজছিল আমাকে, তোমাদের ঘরে কেউ ছিল না। এমনকি তোমার মাও না। ওই ফাঁকে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছি। কেন আশ্রয় নিয়েছি, সত্যিই জানি না আমি।’
‘জাফর আহমেদের মোবাইল ফোন নিয়েছিলে কেন? গোপন কোনো সম্পর্ক কি হয়েছে তার সঙ্গে?’
‘তোমার কি মনে হয়? গোপন কোনো সম্পর্ক হতে পারে, আমার?’
‘না। মনে হয়নি।’
‘তবে প্রশ্ন করলে কেন?’
‘রটেছে কথাটা। তাই জিজ্ঞেস করলাম।’
‘মিথ্যা রটনায় অন্তত তুমি কান দিয়ো না। তুমি বিশ্বাস করলেই খুশি থাকব আমি। তোমার ভাইয়ের খবর পাওয়ার তাড়নায় তাৎক্ষণিক ভুল করেছিলাম। এটা কেবলই ভুল। ভুলের মাশুল তো কিছুটা হলেও দিতে হবে। তবে এতবড়ো মাশুল দেবো, ভাবিনি।’

‘ভাবি, আমি জানি, ভুল করোনি তুমি।’
‘সত্যি বলছ?’
‘হ্যাঁ। সত্যি।’
‘আমার আর কোনো দুঃখ নেই। আমাকে রেখে এসো, চলো।’
‘চলে গেলে তোমার আর দেখা পাব না?’
‘জানি না।’
‘তোমার কুটুমবন্ধুর জন্য খারাপ লাগবে না?’
চোখের পানি মুছে কলি বলল, ‘লাগবে।’

পুবাকাশে আরও ঘনীভূত হচ্ছে কচি লাল আলো। আজান হচ্ছে—এগিয়ে যাচ্ছে দুজন সামনে…
হাতের পোঁটলাটা বুকের সঙ্গে ধরা। যতই বাড়ির কাছে পৌঁছাচ্ছে ততই জমাট শোক তরল হয়ে যাচ্ছে। শোকের তলানি থেকে বেরোচ্ছে শৌর্যের শুকনো মুখ। কুটুমবন্ধুর জন্য আদরের অশ্রুহীন কান্না ঝরে পড়ছে চোখ থেকে।
কান্নার আড়ালের দাহ টের পেল না শৌর্যও। বাকহীন জড়তায় থেমে গেল না পায়ের গতি। দৃপ্তপায়ে চলছে ভাবির সঙ্গে।
বাড়ির একদম কাছে এসে থেমে কলি বলল, ‘তোমাকে নিয়ে বাড়িতে ঢোকা  কি ঠিক হবে, শৌর্য?’
অবাক হয়ে কলির মুখের দিকে তাকিয়ে শৌর্য বলল, ‘কেন, ভাবি?’

স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগের লোভে মুঠোফোন হাতে নিয়ে যে কলঙ্কের দাগ খেলাম। গ্রামের মানুষ ছি ছি করছে। স্বজনরাও বাদ পড়ছে না সে দল থেকে। তোমাকে নিয়ে পালিয়ে আসার সংবাদেও তেমন ঢিঢি রটবে না তো?’
‘আমরা কি পালিয়ে এলাম? পালানোর প্রশ্ন উঠবে কেন? নিরাপদে তোমাদের বাড়িতে পৌঁছে দিলাম তোমাকে। এটাকে সুন্দর চোখে দেখবে না ওরা? বদনাম রটাবে কেন, ভাবি?’
‘ঘটনা তো ভালো। ভাবির নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছ তুমি। তোমার দৃষ্টিতে অবশ্যই এটা সুন্দর! কিন্তু অন্যরা সুন্দর করে বিচার করবে না যে। বাঁকা চোখে ঢেলে দেবে বিষ! আরও ঢিঢি রটবে তখন!’
‘মিথ্যা ঢিঢি কি টিকে থাকবে? মিথ্যা ফুঁড়ে সত্য কি বেরোবে না কোনোদিন?’

‘হয়তো বেরোবে। ততদিনে কালিমার যন্ত্রণা ছড়িয়ে যাবে রুস্তমের বুকেও। ছারখার হয়ে যাবে জীবন। যদিও তছনছ হওয়ার আর অবশিষ্ট কিছু নেই এখন।’
আকস্মিক দেহের মধ্যে গোলযোগ টের পেয়ে ভীত শৌর্য বলল, ‘ভাবি, শরীরে শক্তি পাচ্ছি না। আর এগোনো কি ঠিক হবে?’
‘তোমার দেহ তো জীর্ণশীর্ণ নয়, শুকনো নয়। শক্তি পাবে না কেন? মনে হয় ভয় পাচ্ছ। মনের শক্তি হারিয়ে ফেলছ। মনের শক্তি খোয়ালে দেহের শক্তি জাগে না, ভাই! দেখো আমাকে। কষ্টে পুড়ে গেছি, নিঃশেষ হয়ে যাইনি। হাঁটছি। থামব না। তুমি কেন থামবে?’

‘একবার তাকাল ভাবির মুখের দিকে। মুখের ওপর খেলা করছে উড়ু চুল। রোদের আলো চিকমিক করছে গালে, চোখের পাতা স্থির। পাতার ফাঁক দিয়ে বেরোচ্ছে আগুনের ছটা। সেই আগুন নিজের চোখে ভরে ঝলসে উঠল, সারাশরীরে ছড়িয়ে গেল সে আগুন। শুকনো কান্না নিমেষেই টগবগে জল হয়ে নেমে এলো গাল বেয়ে।’
‘কাঁদছ কেন, শৌর্য?’
কান্নার দাপট আরও বেড়ে গেল। কাঁপা কণ্ঠে বলল, ‘তোমার সব অপমান, সব কষ্ট আমি নিয়ে গেলাম। অবশ্যই ফিরে আসবে তুমি আমাদের বাড়িতে আবার। বলে গেলাম।’
‘শৌর্যের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল কলি। নির্বাক তাকিয়ে রইল খেলার সাথির দিকে। কীসের দাবি? কীসের শক্তিতে এ কথা বলছে শৌর্য, বুঝল না সে।’

নিজেকে সামলে শৌর্য আবার বলল, ‘তুমি ঠিকই বলেছ ভাবি। আমার ফিরে যাওয়া উচিত। বাড়িতে খোঁজ পড়ার আগেই ফিরে যাওয়া উচিত। টেলিফোন করে জানিয়ে দিয়ো তোমার খবর। আমি সঙ্গে এসেছি, বলার দরকার নেই কাউকে। বোলো, একাই চলে এসেছ। পাশের গ্রামই তো।’
সূর্য এখন কিছুটা উপরে উঠে গেছে। রোদের তেজ সামান্য বেড়েছে। পেছন ফিরে কলি দেখল, রবির তেজে ছুটছে শৌর্য। ওর মাথার ওপর খেলা করছে হেমন্তের নরম রোদের ঢেউ। ওই ঢেউ মিশে যাচ্ছে মাটিতে। মাটি থেকে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে শূন্য আকাশে।

পুকুরপাড়ে স্কুলের পথে জবাকে এগিয়ে দিতে এসেছেন জোছনা বেগম! বললেন, ‘দেখ তো মা, ওই বাঁশঝাড়ের সামনে দেখা যাচ্ছে বোরকা পরা একজন। কে? চোখ সরু করে জবা কিছুক্ষণ দেখে চিৎকার করে উঠল, ‘আপু! কলি আপু!’
খপ করে বুকে কামড় বসে গেল জোছনা বেগমের। জানান না দিয়ে একা এলো কেন? মাঠের দিকে তাকিয়ে কাকে দেখছে মেয়ে? নিজেই তাকালেন। দূরে দেখলেন এক কিশোরকে। ফিরে যাচ্ছে বড়ো রাস্তার দিকে। কে এই ছেলে?

স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের সামনে থেকে ছুটে কলিকে পেছন থেকে জাপটে ধরল জবা! সপ্তম শ্রেণি-পড়ুয়া জবা ঘোষণা করল, ‘আজ স্কুলে যাব না, কী বলো আপু!’
আনন্দে চকিতে নড়ে উঠল কলি। শৌর্য থেকে চোখ ফিরিয়ে শরিক হলো বোনের আনন্দে। ফিরে দেখল মাকে। দৌড়ে জড়িয়ে ধরল মায়ের গলা। আকস্মিক শুরু করল বুকফাটা কান্না।
গরমিলের আভাস পেয়ে বিষণ্নতা চেপে ধরল মায়ের গলা। কাঁদার সুযোগ দিলেন মেয়েকে। চুরমার করে ভেঙে যেতে লাগল ধৈর্যের বাঁধ। গলা থেকে হাত সরে যাওয়ার পর অস্থির হয়ে একসময় প্রশ্ন করলেন, ‘ওই ছেলেটা কে?’

ভেবেছিল আড়ালে রাখবে শৌর্যের কথা। আড়ালে রাখা গেল না। মায়ের প্রশ্নের জবাবে সত্য কথা বেরিয়ে এলো, ‘ও আমার চাচাতো দেবর, শৌর্য।’
‘চলে গেল কেন? এতদূর এসে এভাবে ফিরে যেতে দেওয়া কি ঠিক হলো?’
‘না। ঠিক হলো না। তবু যেতে দিতে হবে যে আম্মা।’

মায়ের কাছ থেকে বোনকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে জবা বলল, ‘চলো। মজার মজার কথা আছে তোমার সঙ্গে।’বোনের আগ্রহে বাধা না দিয়ে চোখের পানি সামলে এগিয়ে যেতে লাগল বাড়ির দিকে। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের উদ্দেশে বলল, ‘তুমিও এসো। দাঁড়িয়ে রইলে কেন?’
বুকের মধ্যে হানা দিয়েছে অচেনা অন্ধকার। শঙ্কার আগুন জ্বলে উঠল অন্ধকার ফুঁড়ে। একবারমাত্র প্রশ্ন করলেন, ‘রুস্তমের খবর কী?’
‘মেয়ের খবর না নিয়ে জামাইয়ের খবর নেবে আগে? আমি এসেছি, খুশি হওনি, আম্মা?’

উত্তর না পেয়ে আবার টানটান উদ্বেগ নিয়েই জবাব দিলেন, ‘জামাইয়ের ভালো খবরের সঙ্গে মেয়ের ভালোটা যে জড়িয়ে থাকে। মায়েরা তাই আগে জামাইয়ের খবর নেয়। জানো না তুমি, মা?’
‘জানি। জামাইয়ের খবর শুনে খুশি হবে না। এখন না-শোনাই ভালো। আগে ঘরে যেতে দাও। ঘরে গিয়ে বলব।’

‘অখুশি হওয়ার মতো কি ঘটেছে কিছু?’
‘ঘটেছে আম্মা। ঘরে চলো। পরে বলব।’
‘ধৈর্য ধরতে পারছি না। এখনই বলো।’
‘প্রথমে সুখবর দিই। তোমাদের জামাই জেলে ছিল। ছাড়া পাবে। এটা আনন্দসংবাদ!’
‘জেলে ছিল? ছাড়া পাবে? কী বলছ?’

‘হ্যাঁ। প্রথম বউয়ের অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন, দুবাইয়ের আমিরের মেয়ে এখন তার দ্বিতীয় বউ!’
জোছনা বেগমের মনে হলো জীবনের ঝুলন্ত ব্রিজ পার হচ্ছেন সবাই। ছিঁড়ে গেছে ব্রিজের কপিকল। পড়ে যাচ্ছেন গভীর খাদে। এই খাদ থেকে মুক্তি নেই আর।
‘আমি শক্ত আছি। তুমিও শক্ত হও মা। তাকে জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতিপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। তার মুক্তি হওয়াতে দুঃখ নেই আর। দুঃখ হচ্ছে তার বাড়ি ছেড়ে আসতে। শাশুড়ি, ননাস আমাকে পিটিয়েছে। বেশ্যা, ছিনাল বলে গাল দিয়েছে। তাই চলে এসেছি ওই বাড়ি ছেড়ে। খুশি হওনি তুমি?’

শক্ত করে মেয়ের হাত আঁকড়ে ধরে জোছনা বেগম বললেন, ‘অবশ্যই খুশি হয়েছি, মা। আমরা তোমার পাশেই আছি। পাশেই থাকব।’
মায়ের কথা শুনে সহজ হয়ে গেল কলি। জবার হাত ধরে এগিয়ে গেল ঘরের দিকে।
‘হাত ছাড়িয়ে জবা দৌড়ে পৌঁছে গেছে বাড়ির উঠোনে। সেখানে খেলা করছিল ছোটো ভাই কাঁকন।
তাকে কোলে নিয়ে লাফাতে শুরু করেছে।
পাশাপাশি হাঁটতে গিয়ে, জোছনা বেগম আবার প্রশ্ন করলেন, ‘শাশুড়ি-ননাস মেরেছে কেন? গালাগাল দিয়েছে কেন? কোনো ঘটনা কি ঘটেছে? কোনো রটনা কি ছড়িয়েছে তোমার নামে?’ প্রশ্ন করার সময় মাঠ পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়া কিশোরটার দেহভঙ্গি ভেসে উঠল চোখে।

‘কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিকৃত করে সরল ঘটনায় ছড়ানো হয়েছে দুর্গন্ধ! এর জন্য প্রধানত দায়ী শাশুড়ি! ননাসও যোগ হয়েছে শেষের দিকে।’

উত্তর শুনে মনের সন্দেহ দূর হলেও একেবারে নিরস্ত হলেন না জোছনা বেগম। মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন, ‘নিজের কাছে পরিষ্কার থাকাটাই আসল ব্যাপার। নিজের প্রতি বিশ্বাসটাই আসল সত্য। মনে রেখো, জীবনযুদ্ধের কঠিন ঢেউয়ের মধ্যে পড়েছ। ডুবে গেলে চলবে না। সাঁতরে পার হতে হবে তেড়ে আসা ঢেউয়ের দাপট। তোমার পাশেই থাকব আমি।’

ধীরে ধীরে স্বাভাবিক শ্বাসক্রিয়ায় ফিরে কলি তাকাল পেছনে। শূন্য মাঠের সীমানায় কোথাও দেখা যাচ্ছে না শৌর্যকে। চোখের সীমানা থেকে দূরে সরে গেছে কুটুমবন্ধু! এমন নির্মল সহজসরল বন্ধু কি জুটবে আর জীবনে? মনের গহিনে রোমাঞ্চকর উদ্যানে আকস্মিক ঘটল কষ্টের বিস্ফোরণ। কল্পচোখে পরক্ষণেই দেখল ছিন্নভিন্ন হয়ে চারপাশে ছড়িয়েছিটিয়ে আছে দ্বিতীয় বউ-সহ রুস্তমের দেহ। মাঝে ফুল হয়ে ফুটে আছে শৌর্য। হাসছে! হাত নেড়ে নেড়ে জোর গলায় বলছে, ‘তোমার সব অপমান, সব কষ্ট আমি নিয়ে গেলাম। অবশ্যই ফিরে আসবে তুমি আমাদের বাড়িতে আবার!’

উপজেলা পরিষদের মূল সড়ক পেরিয়ে বিষণ্ন মনে বাড়ি ফেরার সময় আতর আলি দেখলেন ছেলেকে। কাঁদোকাঁদো মুখ, অশ্রু শুকানো চোখ মেলে মাটির দিকে তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছে বাড়ির দিকে।

ছেলেকে দেখে মোচড় খেলো বাবার মুখ। ডাক দিলেন, ‘শৌর্য!’
বাবার কণ্ঠ শুনেও মুখ তুলে তাকাতে পারল না সে।
মাটির দিকেই তাকিয়ে রইল।

‘উপজেলা পরিষদে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারিনি। তবে আলামত দেখে মনে হচ্ছে এখানে আসেনি বউমা। চিন্তামুক্ত হতে পারছি না। তুমি কি খুঁজে দেখবে?’

‘খোঁজাখুঁজি করতে হবে না। বাড়িতে গিয়ে বলো, ভাবি নিরাপদে তাদের বাড়িতে পৌঁছেছে।’
‘খোঁজ পেয়েছ তুমি?’
‘হ্যাঁ। বললামই তো! চিন্তার কারণ নেই। যাও, বাড়ি যাও।’বাবাকে বাড়ি যাওয়ার কথা বললেও উদ্দেশ্যবিহীন শৌর্য হাঁটতে লাগল পথ ধরে।
‘ওদিকে যাচ্ছ কেন? বাড়ি চলো।’
‘তুমি যাও। আসছি আমি।’

ভোরে উঠে আজ ছেলেকে দেখতে পাননি। খোঁজও করেননি। অবশ্য এমনিভাবেই দুজনের কাজ শুরু হয় প্রতিদিন। যে যার নিয়মে চললেও চলার মধ্যে একটা যোগসূত্র থাকে। কিন্তু আজ মনে হলো, সেই যোগসূত্রটা যেন ছিঁড়ে গেছে।

Series Navigation<< উপন্যাস।। মরুঝর।। মোহিত কামাল।। পর্ব ষোলউপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব আঠারো >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *