উপন্যাস// মরুঝড়// মোহিত কামাল// পর্ব দুই

মুগ্ধ হয়ে বউয়ের মুখের দিকে পলকহীন তাকিয়ে ছিল। আত্মমগ্ন কলি আবারও বলেছিল, ‘কাজ করতে করতে যখন ক্লান্ত হয়ে যাবেন, আমার কথা ভাববেন। ভাবলেই শক্তি পাবেন মনে।’ এখনো ক্লান্ত নয় রুস্তম। মরুতাপ সহ্য করেও সহজে কাজ করে যাচ্ছে। কলির কথা, কল্পনায় কলির হাস্যোজ্জ্বল মুখ কাজে এনে দিয়েছে অফুরন্ত কর্মোদ্দীপনা। কাজেকর্মে এতটুকু বেগ পেতে হচ্ছে না। প্রিয় মুখ যে দেহমনে কীভাবে শক্তি জোগাতে পারে, সেটা টের পাচ্ছে! ‘রুস্তম আলি!’ মাথা ঘুরিয়ে দেখল আলি হায়দার খান তাকে ডাকছেন। হাতের ইশারায় কাছে যেতে বলছেন। আলি হায়দারের ডাকের ধরন আর দেহভঙ্গি দেখে বুঝতে পারল এটা কোনো মধুর ডাক নয়। এই ডাকের আড়ালে নিশ্চয়ই লুকিয়ে আছে কোনো দুঃসংবাদ। বুকের ভেতরটা হঠাৎ করেই ধক করে ওঠে। কাজ বন্ধ করে ধীরপায়ে এগিয়ে যায় রুস্তম। কাছে যেতেই ফুঁসে ওঠেন আলি হায়দার খান,
‘শুরুতেই তোমাদের সাবধান করে দিয়েছিলাম, কাজের সময় যেন কারও কল না আসে। কাজের সময়-ঘণ্টা সম্পর্কে কি কিছুই জানে না তোমার পরিবার ?’
রুস্তমকে বুঝতে বেগ পেতে হলো না যে দেশ থেকে ফোনকল এসেছে। নিশ্চয়ই কলি। ভাবনাটা মনে আসতেই তার শরীরে বয়ে গেল রোমাঞ্চের ঢেউ। বলল, ‘মনে হচ্ছে জরুরি কোনো কল।
না হলে এ সময় ফোন করত না।’

‘কথা না শুনে, না বুঝে মতামত দিচ্ছ’, দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলেন আলি হায়দার খান।
‘সাধারণ একটা কলকে জরুরি কল বলছ। অনেকবার বলেছি, না বুঝে কোনো কাজে হাত দেবে না।
কোনো ধরনের কমেন্ট করবে না।’
‘আমার মন বলছে জরুরি কল’, রুস্তম সোজাসাপটা উত্তর দেয়। তার স্বরে ভণিতা নেই। রুস্তমের হাতে মোবাইল সেটটা তুলে দিতে দিতে আলি হায়দার বললেন,
‘তুমি তো দেখছি মুখেমুখে তর্ক করতে শিখে ফেলেছ। ফলটা ভালো হবে না।’
তার কথার কোনো জবাব না দিয়ে মোবাইল সেটটা হাতে নিয়ে রুস্তম বলল, ‘হ্যালো।’
অপর প্রান্ত থেকে প্রিয় কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। কলিই ফোন করেছে! কলের কথা শুনে প্রথমে কলির নামই মনে পড়েছিল তার। তাই কণ্ঠস্বর শুনে মন যেমন আনন্দে জেগে উঠল, তেমনি কেঁপে উঠল বুক।
‘জানি এ সময় ফোন করা নিষেধ। নিশ্চয়ই সুপারভাইজার রাগ করেছেন,’ কলি বলতে লাগল।

কলির সঙ্গে আলি হায়দার খানের রূঢ় আচরণের কথা অনুমান করে রুস্তমের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।
তার উচিত ছিল অন্তত কলির সঙ্গে নরম সুরে কথা বলা। মন অশান্ত হয়ে উঠল রুস্তমের। কলিকে তাই জিজ্ঞেস করল, ‘সুপারভাইজার কি তোমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন ? তার কথার অর্থ কি তুমি বুঝতে পেরেছ ?’
‘না, দুর্ব্যবহার করেননি। তবে বলেছেন, কাজের সময় ফোন দেওয়া নিষেধ। উর্দুতে বলেছেন। বুঝতে অসুবিধা হয়নি। ডিশে হিন্দি আর উর্দু সিনেমা দেখার ফল’, একদমে কথাগুলো শেষ করে কলি।
‘তুমি কী জবাব দিয়েছ ?’
‘বলেছি, বিষয়টা জরুরি, কথা বলতে হবে আমার স্বামীর সঙ্গে। তাই শুনে আপনাকে ডেকে দিয়েছেন।
আপনার হাতে কি মোবাইল রাখার অনুমতি নেই ? আরেকজনের মাধ্যমে কথা বলতে হয় কেন,’ জিজ্ঞেস করে কলি।

রুস্তম বুঝতে পারল, জরুরি কলের কথা শুনেও কলিকে দুকথা শুনিয়েছেন আলি হায়দার খান। নিয়োগের সময় শর্তই ছিল যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। কেবল সুপারভাইজারের নম্বর দিতে হবে স্বজনদের। সে কারণে শ্রমিকদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের অনুমতি নেই। আলি হায়দার তাকেও কথা শুনিয়েছেন, তবু কলির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে এ মুহূর্তে বেশ ভালো লাগছে। গলার স্বর নরম করে প্রশ্ন করল, ‘কী জরুরি কারণ, কলি ?’
‘আম্মাজানের শরীর খুব খারাপ। হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তাররা বললেন, ভর্তি করাতে হবে।’
মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে রীতিমতো একটা আতঙ্ক জেগে উঠল মনে। উৎকণ্ঠা ঝরে পড়ল স্বর থেকে, ‘বেশি খারাপ ?’
‘কমবেশি বলেননি ডাক্তাররা। বলেছেন অবস্থা খারাপ। ভর্তি করানো ছাড়া উপায় নেই।’
কথা শেষ করার আগেই আলি হায়দার ডাক দিয়ে বললেন, ‘দ্রুত কথা শেষ করো, রুস্তম।’ আলি হায়দারের কথা কানে না তুলে কলিকে রুস্তম বলল, ‘তুমি যা বোঝো করো। আমার করার কিছু নেই এখন। হাতে দিরহামও নেই যে পাঠাব। তবে লোন করে পাঠাতে পারব।’

লাইন কেটে যাওয়ার পর কেমন নিশ্চুপ-নির্বিকার হয়ে যায় রুস্তম। ধু-ধু মরুর দিকে কেমন অসহায় দৃষ্টি মেলে তাকায়।
‘কলি কেমন আছো ?’ ইচ্ছা হয়েছিল এমন প্রশ্ন করার। কিন্তু সুযোগ হলো না। তবু কয়েক মুহূর্তের জন্য বউয়ের কথা শুনেছে, তাতেই মনে ঢের  শান্তি পেয়েছে। কিন্তু মায়ের জন্য একটা উদ্বেগের ঢেউ বয়ে যেতে থাকে।
এরকম দশায় আলি হায়দার এবার তার সামনে এসে প্রশ্ন করলেন, ‘কথা শেষ হয়েছে ?’
শান্ত গলায় রুস্তম জবাব দিলো, ‘হয়েছে।’
‘হয়েছে তো দেখতে পাচ্ছি’, কিছুটা ব্যঙ্গ-মেশানো স্বরে আবার বললেন আলি হায়দার।
‘দেখেও তো প্রশ্ন করলেন আপনি,’ বলল রুস্তম।
উত্তর শুনে চমকে উঠলেন আলি হায়দার। নিজের ভুল টের পেয়ে নরম গলায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী জরুরি কথা হলো রুস্তম ?’
সুপারভাইজারের গলার স্বর নরম হওয়ায় রুস্তমও শিথিল হয়ে গেল। মায়ের অসুস্থতার খবর জানাল ঠান্ডা গলায়। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে আলি হায়দার প্রশ্ন করলেন, ‘মায়ের অসুস্থতা! দিরহাম লাগবে ?’
‘লাগবে।’
‘দেখি অ্যাডভান্সের ব্যবস্থা করতে পারি কি না। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। আমিই ব্যবস্থা করে দেবো। তবে মনে রেখো, ছুটিছাটা পাবে না। কাজের চাপ বেশি এখন। সামনের মাসে সব কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। ঘণ্টা বুঝে কাজ, বুঝেছ ?’
‘বুঝেছি।’
‘শুধু বুঝেছি বললে হবে না। ভালোভাবে বুঝতে হবে। এদেশে মায়ার বশে কোনো বাড়তি সুযোগ দেওয়ার উপায় নেই। মায়া করতে গেলে দুর্নীতি করতে হবে। দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। এটা হচ্ছে কান্ট্রি অভ্ নো করাপশন। শূন্য পার্সেন্ট দুর্নীতির দেশ হচ্ছে দুবাই। এজন্যই মরুর বুকে গড়ে উঠেছে সড়ক, জনপদ, গাছগাছালি, সুরম্য অট্টালিকা। আশা করি মায়াদয়ার সুযোগে আমাকে দুর্নীতির দিকে ঠেলে দেবে না।’
‘আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য দিরহাম লাগবে। এখানে আবার দুর্নীতির প্রসঙ্গ এলো কেন ?’ দৃঢ়ভাবে প্রশ্ন করল রুস্তম।
‘মায়ের চিকিৎসা মানেই মমতার ব্যাপার। মমতার খাতিরেও নিয়মের বাইরে কিছু করা যাবে না। এখানে নিয়ম পালনই বড়ো কথা।’
‘নিয়মের বরখেলাপ হবে না। আমি শৃঙ্খলা রক্ষা করতে জানি। আপনাকেও দুর্নীতি করতে হবে না। লোন নেব,
ধীরে ধীরে শোধ করে দেবো। আপনার কাছ থেকে লোন পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছি, তাতেই অনেক খুশি আমি। আপনাকে ধন্যবাদ।’
‘বসকে কখনো ধন্যবাদ দিতে হয় না।’

কথার পিঠে কোনো কথা না বলে কাজে ডুবে গেল রুস্তম। কিন্তু কাজে মন বসছে না। হাত-পা চলতে চাইছে না। নিজেকে শক্তিহীন লাগছে। কাজ করতে গিয়ে শক্তি খরচ না হলেও ভেতরের উদ্যম শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। মনের এরকম দশায় নিজেকে সামান্য একটা কীটের মতো মনে হতে লাগল। মাটির ওপর যেন ভাসছে। বহুযুগ ধরে ভেসে চলেছে। তার এই ভাসমান জীবনের কি ইতি ঘটবে না ? ভাবনার গতি থেমে গেল। আচমকা দেখল পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এই প্রজেক্টের প্রধান প্রকৌশলী, দুবাইয়ের স্থায়ী বাসিন্দা আমির হামজা আল শামস। সবাই তাঁকে আল শামস বলেই ডাকে। আল শামস আরবি ভাষায় কথা বলেন। রুস্তমও ইতোমধ্যে আরবি বলা শিখে ফেলেছে। পুরোপুরি বলতে না পারলেও কাজ চালিয়ে নিতে পারে। আল শামসকে হঠাৎ পাশে দাঁড়াতে দেখে রুস্তমের মধ্যে একটা নার্ভাসনেস কাজ করছে।
‘কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে তোমার ?’ প্রশ্ন করলেন আল শামস।
‘না, কষ্ট হচ্ছে না।’
‘তুমি তো কাজ না করে দাঁড়িয়ে ছিলে। একটা কিছু ভাবছিলে। কাজের প্রতি অমনোযোগী হলে তোমাকে চাকরিতে রাখা যাবে না, মনে রেখো। অমনোযোগী, অযোগ্য কাউকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ছাঁটাই করার নির্দেশ আছে। এটা আমার নৈতিক দায়িত্ব।  নির্দেশ অমান্য করার ক্ষমতাও আমার হাতে নেই। কথাটার অর্থ নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ।’
রুস্তম জবাব দিলো, ‘বুঝেছি। আপনারা দুর্নীতিমুক্ত দেশের বাসিন্দা। এজন্য এত উন্নতি হয়েছে এ দেশের।
আমরাও মরুর তাপ দেহে ধারণ করে গড়ে তুলছি সব বড়ো বড়ো ভবন, সুন্দর সুন্দর সড়ক।’
ইতোমধ্যে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আলি হায়দার খান। রুস্তমের শেষ কথাগুলো শুনে আল শামসের উদ্দেশে চট করে বলে বসলেন, ‘ওর কথায় মনে কষ্ট পাবেন না স্যার। ও হচ্ছে মিসকিনদের দেশের এক বড়ো মিসকিন।’
অভাবী রুস্তমের পক্ষ নিয়ে সাফাই গাইতে গিয়ে সুপারভাইজার যা বললেন, তা মেনে নিতে পারল না রুস্তম। কেমন একটা বিদ্রোহের ভাব জেগে উঠল মনে। নিয়ন্ত্রণ না হারিয়ে গলায় জোর এনে বলল, ‘আমাদের দেশ মিসকিনের দেশ নয়। আমিও মিসকিন নই। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এখানে কাজ করছি। আমার সেই কঠোর শ্রমের বিনিময়ে দিয়ে থাকেন সামান্য কয়টি দিরহাম। যোগ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করেন শ্রমিকদের। ধনবান হলেও আপনাদের মনই মিসকিনসুলভ মন। আমরা মিসকিন নই।’ আলি হায়দার খানের কথার জবাব দিতে গিয়ে বুকের ভেতরে জমানো ক্ষোভ হঠাৎ উথলে বেরিয়ে এলো। বিস্ফোরণ ঘটল যেন এক বিদ্রোহী মনের। ‘যোগ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করেন শ্রমিকদের’—কথাটা বিষাক্ত তিরের মতো আঘাত হানল আল শামসের বুকে। রাগ করার পরিবর্তে বরং কিছুটা অবাকই হলেন। নরম গলায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার নাম কী ?’
‘রুস্তম আলি।’
‘বাঃ! তোমার নামের সঙ্গে তাহলে ‘আলি’ আছে ? আলি হায়দার খানের নামের সঙ্গেও তো ‘আলি’ আছে।
তা, কোন দেশ থেকে এসেছ তুমি ?’
‘বাংলাদেশ থেকে।’
‘ওঃ! এ কারণেই আলি হায়দার তোমাদের দেশকে মিসকিনের দেশ বলেছে!’

এ কথার কোনো জবাব দিলো না রুস্তম। মাথা নিচু হয়ে গেল আলি হায়দারের। সুপারভাইজারকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুস্তম ভয় পেলেও, ‘মিসকিন’ বলার সাজা দিতে পেরে তৃপ্তি পেল। আল শামসের প্রতি মনে শ্রদ্ধা জাগলেও জানে, বেশিরভাগ দুবাইবাসী বাংলাদেশের মানুষদের মিসকিন হিসেবে দেখে। বাংলাদেশকেও মিসকিনদের দেশ বলে থাকে। অথচ এই মিসকিনরাই এ দেশের সৌন্দর্য বাড়িয়ে চলেছে। ঘাম ঝরিয়ে রোজগার করে। এই রোজগার হচ্ছে রক্তবেচা রোজগার। বাংলাদেশকে কি মিসকিন বলা সাজে ওদের ? রুস্তমের দিকে তাকিয়ে আল শামস এবার বলেন, ‘কাজ শেষ হলে আমার তাঁবুতে দেখা করবে তুমি।’ আল শামসের এই আহ্বানে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালেন আলি হায়দার খান। রুস্তমের কিছুটা ঘাবড়ে যাওয়ার দশা হলো। আল শামস আবারও বললেন, ‘ভয় পাচ্ছ কেন ? ভয়ের কিছু নেই। তোমাকে অন্য একটি প্রজেক্টে নিতে চাই।’
রুস্তম এবার চট করে প্রশ্ন করল, ‘মরুতে ? নাকি শহরে?’
‘হাউজিং কমপ্লেক্সে থাকবে তুমি। দুবাইয়ের প্রয়াত সুলতান শেখ জায়েদের নামে মসজিদ কনস্ট্রাকশনের কাজ প্রায় শেষ। সেখানে বাকি কাজ করার জন্য বিশেষ শ্রমিক খুঁজছিলাম। তাই তোমাকে সিলেক্ট করলাম। যেহেতু একই কোম্পানির ভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করবে, সেজন্য লেবার কার্ড ট্রান্সফারের প্রয়োজন নেই তোমার।’ রুস্তমের উদ্দেশে কথাগুলো বলে শেষ
করার পর আলি হায়দার খানের উদ্দেশে আল শামস প্রশ্ন করলেন, ‘কী বলো হায়দার ?’
আচমকা প্রশ্নের জবাব দিতে পারলেন না আলি হায়দার খান। যাকে মিসকিন বলে তিনি হেয় করার চেষ্টা করেছেন,
তাকেই কি না বস চয়েস করেছেন উন্নত এলাকায় কাজ করার জন্য! অপমানটা চুপচাপ হজম করে কিছুটা
নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকলেন।

আল শামস আবার বললেন, ‘রুস্তম দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের মনমানসিকতার ক্ষুদ্রতা। সেই ক্ষুদ্রতা দেখতে পাই না আমরা। রুস্তমকে সাহসীই বলতে হবে, নৈতিক শক্তিতে উন্নত না হলে মানুষ সাহসী হয় না। সঠিক কথা বলেছে। কাজের ক্ষেত্রে এমন ছেলেকেই বেশি প্রয়োজন।’ আলি হায়দার খান জবাব দিলেন, ‘জি স্যার। ঠিক বলেছেন আপনি। আমার ভুল হয়েছে। ওকে ‘মিসকিন’ বলাটা ঠিক হয়নি। বাংলাদেশকেও ‘মিসকিনদের দেশ’ বলা উচিত হয়নি।’
আল শামস বললেন, ‘কথাটা স্বীকার করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। দেখছ তো ওর ধর্ম আর তোমার ধর্ম এক। তোমাদের দুজনের নামেও আছে একই পদবি। অথচ আমরা আমাদের আরেক ভাইকে আক্রমণ করে কথা বলছি। এভাবে কথা বলে আমরা ভুল করি। নিজের ভুল ধরাও বড়ো কাজ। তুমি সেই ভুল ধরেছ। রুস্তমকে সরি বলো।’ বসের নির্দেশ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আলি হায়দার বললেন, ‘আমি দুঃখিত রুস্তম। তোমাকে ওভাবে সম্বোধন করা আমার ঠিক হয়নি।’ কথাটা মুখে বললেও মনে মনে ভাবল, যে ভয় করেছিলাম, সেটাই ফলে গেল।
‘আলি’ পদবি এক হওয়ার কারণে রুস্তমকে দূরে দূরে রাখার প্রচেষ্টা সফল হলো না।

Series Navigation<< উপন্যাস// মরুঝড়// মোহিত কামাল// একউপন্যাস ।। মরুঝড় ।। মোহিত কামাল ।। পর্ব তিন >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *