ফারুক নওয়াজ এর কিশোর কবিতা

এমনই হিমদিনে

ফুটেছে হিমদিনে শেফালি করবী আজ.
রূপসী প্রকৃতি তাই হয়েছে গরবী আজ।

ফুটেছে কুরচি, ওট, হলদে গাঁদা, শিমুল —
শুকিয়ে গেছে ঝরে শাদাটে ইমলি ফুল
ঘাসেতে কুয়াশা গাছ ভিজেছে শিশিরে খুব
ফোটেনি গন্ধরাজ দিয়েছে কোথা সে ডুব।

গোলাপে ভরেছে ডাল পেকেছে বইচি ফল
ধুলাতে তবুও আজ ধূসর দূর্বাদল।
বসেনি ঘাসফড়িং তামাটে কাশশিসে..
সুখেও দুঃখ রয় দুখেও সুখ মিশে।

এমনই হিমদিনে পিঠার বাস আসে.
তবুও বাতাসে আজ শোকেরও শ্বাস ভাসে।
এখন করোনাকাল বাহিরে চোখ রাঙায়..
তবুও মানছে কে পাখিরা ঘুম ভাঙায়।

থেকে যাবো মায়া হয়ে

সহস্র বছর পেরিয়ে যখন
স্মৃতি হয়ে যাবে লীন..
কেউ কী জানবে আমিও ছিলাম
পৃথিবীতে একদিন?

যে-গাছ আমাকে ছায়া দিয়েছিল
যে-বন দিয়েছে মায়া..
ঊষসীর ঘুম ভেঙে যে বিহগ
জাগিয়ে দিয়েছে কায়া..
কেউই থাকবে না তারা–
যদি থাকে বেঁচে নদীটি আমার
সেও হবে গতিহারা।

যে-গিরি আমায় শিখর উঁচিয়ে
ডেকেছিল মায়াটানে..
আঁধারের সেই খজ্যোতিরা– যারা
আবেগ ঢেলেছে প্রাণে..
সেই ঝিল্লিরা– রাতভর যারা
শুনিয়েছে নিশিগীতি..
কেউ থাকবে না; তারাও তখন
হয়ে যাবে বিস্মৃতি।

যদি বেঁচে থাকে কবিতা আমার
থাকে তাতে নাম লেখা..
যদি সে কবিতা হৃদয়ে কারোবা
এঁকে যায় মৃদু রেখা..
হয়তো আমার নামটি তখন
দুলবে তাদের ঠোঁটে..
এমন হলে তো মরার পরেও
মরব না আমি মোটে।

মনে হয় আমি মরব না ঠিকই
বেঁচে থাকবোই নামে..
মিনজিরি বনে হাওয়া বইলেই
কোনো এক অজ-গ্রামে..
ঝাবুক পাতায় উদাস দুপুরে
বাতাস বাজালে বাঁশি..
ইমলিশাখায় ঘুমলি ঘুঘুরা
বসে যদি পাশাপাশি..
সেখানেই আমি তাদের ভেতরে
থেকে যাবো মায়া হয়ে..
থেকে যাবো আমি পাতার কাব্যে
মহুয়ার ছায়া হয়ে।

মউল বনের সোহেলি পাখিটা ডাকলেই মধুশিসে
বিদ্যাপাতায় কাচপোকাগুলো
যদি থাকে মিশেমিশে..
বথুয়া শাকের গন্ধে হঠাৎ
লাফারুটা জেগে ওঠে..
রবিশশস্যের মাঠে যদি শাদা
তিনিশ ফুলেরা ফোটে..
তাহলেই আমি তাদের মধ্যে বয়ে দেবো প্রাণধারা
যেহেতু আমার প্রতিটি পদ্যে ছুঁয়েছুঁয়ে থাকে তারা।

মরে যাবো আমি, মরে যাবো ঠিকই
মরে যাবো আমি, তবে–
আমার কবিতা যদি বেঁচে থাকে
আমাকে ভাবতে হবে।

কবিতা আসেনি

গত নিশীথেও ঝিম মেরে ছিল মন..
ঘুমহারা চোখে থেকেছি যতক্ষণ-
কবিতার পাখি ডাকে নাই একবারও..
রাত বলেছিল এবার ঘুমাতে পারো।

ঢুলুঢুলু চোখে কেটেছে কতোটা
খবর রাখিনি তার..
ইমলির বনে হিমহিম হাওয়া
বয়ে গেছে এন্তার..
তুরমার ঝোপে হয়তো ঝিঁঝিরা
একটানা গেছে ডেকে..
মউলের পাতা আলো করে জুনি
জ্বলে গেছে থেকে থেকে..
হয়তো অচেনা রাতজাগা পাখি
কেঁদেছে পিপুল বনে..
হয়তো আঁধারে ঝাবুকের শাখা
দুলে গেছে অকারণে–
হয়তো তখন কবিতার পাখি
মেলেছিল দুটি পাখা..
নিদ্রার ঘোরে এসব কিছুই
হৃদয়ে হয়নি রাখা।
ঘুমিয়ে গিয়েছি হঠাৎই কখন
কিছুই জানি না আমি..
আমার এভাবে ঘুমের কারণ
জানেন অন্তঃযামী।

যখন ডেকেছে ভোরের বিহগ
ভেসেছে আজানধ্বনি..
ঘুমলাগা চোখ ফুটিফুটি হয়ে
খুলে গেছে তক্ষণি।
ঘুম ভেঙে দেখি মার্জারদুটো
ঘুমিয়ে বুকের কাছে..
ভাবলাম আহা কবিতা আসেনি
এরা তো আমার আছে।
এই দুটি প্রিয় অবুঝপ্রাণির
মমতার বন্ধনে..
আশার কবিতা লিখি আমি রোজ
হতাশার ক্রন্দনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *