উপন্যাস।। ছায়াপথ।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। সাত পর্ব

তোরা বস আমি চা দিচ্ছি।

ঠিক এই সময়ই নিশা বাসায় আসে। সে রাতের টিউশনিটা শেষ করে এসেছে। নিশা তার মাকে বলল, মা তুমি বসো। আমি চা দিচ্ছি। আসিফের মা আবার জায়নামাজে বসে পড়েন। নিশা মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই কদিনে মা কেমন শুকিয়ে গেছেন। মনে হচ্ছে তাকে আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।
নিশা চা নিয়ে আসে। নাদিম জিজ্ঞেস করে, শুধু টিউশনিই করছো না লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছো?

নিশা বলে, চলছে দুটিই।
তোমার পরীক্ষার আর কতদূর?
পরীক্ষা তো এসেই গেছে। এই তো কয়েক মাস মাত্র।

নাদিম একবার মনে মনে ভাবছিল বলবে, পরীক্ষার সময় টিউশনিটা ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু পরক্ষণেই তার মাথায় আসে তাহলে এদের কীভাবে চলবে? নাদিম যদিও সাহায্য করতে পারে কিন্তু সে সাহায্য তো আর তারা নেবে না? তাই চুপ করে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল।
নিশা আসিফের পাশে বসেছে। তার হাতেও চায়ের কাপ। একবার নাদিম নিশার দিকে তাকায়? এইটুকু মেয়ে আজ সংসারের হাল ধরেছে। ভাবতে ভাবতে নাদিমের বুক ভারি হয়ে আসে। চা খাওয়া শেষ করার আগেই এখান থেকে উঠে আসতে হয় তাকে। তা না হলে সে হয়তো কেঁদেই ফেলত।

ক্লাসে নাদিম অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে ইউনির্ভাসিটিতে আসলেও মধুর কেন্টিনে বসে আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে যায়। কখনো ক্লাসে উপস্থিত হলেও পিছনের একটা ডেস্কে চুপচাপ বসে থাকে। লেখাপড়ার আগ্রহ কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছে। তার শিক্ষকরা নাদিমের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছেন। একজন শিক্ষক তাকে ডেকে কাউন্সেলিং করেছিলেন কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।

নাবিলা বুঝতে পারছে নাদিম তাকে এড়িয়ে চলছে। আগের সেই আবেগময় কথা, সেই পাগলামি এমনভাবে ভাটা পড়েছে যেন ভালোবাসার গভীর জলাশয়ে জেগেছে নতুন চর– যে চরের শুকনো বালুকণা কোনো ভাবেই ভিজে না। নাবিলার অনুশাসনের ধারও সে ধারে না। নাবিলা কিছুতেই বুঝতে পারছে না নাদিমের মুখ ফেরানোর যৌক্তিক কারণ কী থাকতে পারে?

ক্লাস শেষে ডিপার্টমেন্টের সামনে থেকে নাবিলা নাদিমকে আবার বাজপাখির মতো জাপটে ধরে নিয়ে গেল টিএসসি-র চত্বরে। নাবিলার চোখে মুখে রাগ আর যন্ত্রণা একাকার হয়ে ফুটে উঠেছে। নাদিমের দিকে তীব্রভাবে তাকিয়ে বলল, নাদিম তোমার কি হয়েছে আমাকে বলো। তুমি যেভাবে অ্যাভয়েড করছো আমি সহ্য করতে পারছি না। আমার দিকে চেয়ে দেখো আমি তীরবিদ্ধ। আমি কেমন ছটফট করছি। আজকে তোমাকে অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে আমার সাথে কেন এমন ব্যবহার করছ।

তুমি আমাকে ভুলে যেতে চেষ্টা করো। আমি আমার অবস্থানে নেই।
কেন? তোমার কী হয়েছে?
তা বলা যাবে না। তবে এটুকু বলতে পারি আমার মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করছে। আমার বোধশক্তি আগের মতো নয়।
তুমি এভাবে কথা বলো না নাদিম, প্লিজ। তাহলে আমি বাঁচতে পারব না।

দেখ নাবিলা, আমার জীবনের সিদ্ধান্ত কীভাবে নিচ্ছি আমি জানি না। আমারও সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে বিশেষ একটা ঘটনায়। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা আমার পক্ষেও খুব সহজ হবে না। জীবনকে অত্যধিক ভালোবেসে ফেলেছিলাম। খুব সুন্দর করে সাজাতে চেয়েছিলাম তোমার সাথে আমাকে। কিন্তু পারব কিনা আমি জানি না। যদি না-ই পারি তাহলে আমাকে ক্ষমা করো। নাদিম অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল।

তুমি বুঝতে পারছো না… কিন্তু আশ্চর্য হচ্ছি তোমার কথা বলার ধরন দেখে। এটা কী করে হয়? আমার বিশ্বাস ছিল পৃথিবী উলট-পালট হয়ে যেতে পারে কিন্তু তোমার কোনো পরিবর্তন হবে না। এখন আমি কী শুনছি আর কী দেখছি? না, আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছি না।

তুমি অধৈর্য হয়ো না।
কেন হব না? তোমার কী হয়েছে অন্তত সেটা জানার অধিকার আমার আছে এবং তোমার বলাও উচিত।
আমি জানি উচিত কিন্তু
কিন্তু কীসের আবার?
বলব। তবে আজ নয় অন্য একদিন। চলো আজ যাই। পরে কথা হবে।

নাদিম উঠে যেতে চাইল। নাবিলা নাদিমের হাত ধরে টেনে বসাল। গম্ভীরভাবে বলল, তোমার হাতের উষ্ণতা তো আগের মতই আছে। চোখের ভিতর আমার প্রতিচ্ছবি এখনো আগের মতই… তাহলে তুমি আজ এমন বদলে গেছ কেন?
নাদিম বলল, সময় তো ফুরিয়ে যায়নি নাবিলা। আমরা তো অপেক্ষা করছি অনেক বছর ধরে। আজও না-হয় অপেক্ষার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম। নাবিলা নাদিমের দিকে তাকিয়ে রইল হতবাক হয়ে। তার ঠোঁট দুটি তিরতির করে কাঁপছে। কী যেন বলতে গিয়েও থেমে গেল। নাদিম আস্তে আস্তে চলে গেল কলা ভবনের দিকে। নাবিলা সে দিকে তাকিয়ে রইল।

শামসুন্নাহার হলের পুবপাশে জাহিদের সঙ্গে নাবিলার দেখা। নাবিলাকে বিমর্ষ ও মলিন দেখাচ্ছে। জাহিদ জিজ্ঞেস করল, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? নিশ্চয়ই নাদিমের সাথে তোমার বনিবনা হচ্ছে না ইদানীং।

নাবিলার কথা বলার আগ্রহ ছিল না তবুও একটু দাঁড়াল।
জাহিদ আবার বলল, নাবিলা তোমার সিদ্ধান্তটা ভুল হয়েছে।
কোন সিদ্ধান্তটা?
নাদিমকে ভালোবাসার।
তা আমিই বুঝব। তুমি কি আর কিছু বলবে?

না। তোমাকে আমি আর কী বলব? যা ভালো মনে করেছি তাই বললাম। জাহিদ তাকিয়ে থাকে নাবিলার বেন্ড দিয়ে মোড়ানো রেশমি চুলের দিকে।
তাহলে আমি আসি জাহিদ।
যাবে বইকি? তবে আমি আগেও তোমার হিতাকাক্সক্ষী ছিলাম এখনও আছি। যদি কোনো প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে বলো। আমি তোমার পাশে থাকব।
থ্যাঙ্ক ইউ। প্রয়োজন হলে বলব। এখন আসি জাহিদ।

নাদিম এখন প্রতিদিন সন্ধ্যায় একবার করে আসিফকে দেখতে আসে। তাকে সঙ্গ দেয়। তাদের সংসারের সাথে সুখ-দুঃখের অংশীদার হয় নাদিম। আসিফ অস্থির হয়ে উঠে জীবনের প্রতি। দৃষ্টিহীনতাকে বরণ করে নিয়েও যেন কাজের জন্য সে সারাক্ষণ অস্থির থাকে। নাদিম একদিন বলল, বিভিন্ন অফিসে আমি চাকরির জন্য চেষ্টা করছি। এখনো কোনো ভালো খবর পাইনি।

নাদিম একটা অন্ধ কল্যাণ সংস্থায় বেশ কিছুদিন চেষ্টা করেছে আসিফের একটা চাকরির জন্য। চাকরির আশা দিয়েও ভদ্রলোক অনেক দিন ঘুরিয়েছেন। নাদিম এখন হতাশ হয়ে পড়েছে। সংস্থার পরিচালক বলেছিলেন, বর্তমানে কাজের ক্রাইসিস। কোনো ভ্যাকেন্সি নেই। এ অবস্থায় কাউকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও জানান, যে প্রজেক্টটা নেওয়া হয়েছিল সেটা এখন শেষের দিকে। ডোনারও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি অপেক্ষা করতে বলেছিলেন নতুন ডোনার পেলে তাকে জানাবে। নাদিমের ঠিকানাও পরিচালক নিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এখনো কোনো খোঁজ দেননি।

অন্য একটি সংস্থার পরিচালককে নাদিম দস্তুর মতো মার দিতেই চেয়েছিল। সে ভদ্রলোক বলেছিল ত্রিশাল থানায় তাদের একটা চকের ফ্যাক্টরি আছে সেখানে কাজ করতে পারব। বেতন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবলে চাকরি করার ইচ্ছে উবে যায়। পাঁচশ টাকা বেতন। এ টাকা দিয়ে একজন মানুষ কোনোক্রমে বেঁচে থাকা ছাড়া বাড়তি কিছুই করার কোনো উপায় নেই। তারপর কথা থেকে যায়, নাদিম কেন তাকে ত্রিশাল যেতে দেবে?

নাদিম যখন ঢাকায় কিছু করার জন্য ভদ্রলোককে অনুরোধ করল তখন মন্তব্যটি তার ছিল অসহ্য। অন্ধদের আবার ‘ফুটানি’। এক কথায় দুকথায় নাদিম ভদ্রলোকের সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিল যথারীতি। শুধু থাপ্পড় দেওয়ার বাকি ছিল।

একদিন আসিফ বলল, একটা কোচিং সেন্টার খোলা যায় কিনা? কোচিং সেন্টারে তো আর কোনো অসুবিধা নেই। কোচিং সেন্টারের আইডিয়াটা নাদিমের পছন্দ হয়। ওরা দুজন মিলে একটা কোচিং সেন্টারের নামও ঠিক করে। ‘চ্যালেঞ্জিং কোচিং সেন্টার।’ কথা হয় চুক্তিতে পড়ানো হবে। যদি কেউ আশির নিচে নাম্বার পায় তাহলে তার টাকা ফেরত দেওয়া হবে। ওরা বাজেট করে, টেবিল চেয়ার ইত্যাদি কেনা, রুমের ভাড়া, রুম সাজানো, রুমের মেঝেতে কার্পেট দেওয়াÑসব মিলিয়ে হিসাব-নিকাশ করে দেখা গেল ইনভেস্ট করার মত টাকা ওদের নেই।

আসিফ আবার বলল, কোনোভাবে না-হয় কোচিং সেন্টার খুললাম, কিন্তু ছাত্রছাত্রী যদি না আসে তাহলে তো ইনভেস্টমেন্টের টাকাটাই জলে যাবে। তখন কী হবে? আসিফের কথাটা যুক্তিসঙ্গত। অনেক ভেবেচিন্তে কোচিং সেন্টারের ভূতটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেওয়া হলো এক সময়। আসিফ চাকরির আশাও ছেড়ে দিল এক সময়। নাদিমের পরীক্ষার পর কিছু একটা হবে এ আশা বুকে ঝুলিয়ে নাদিম অপেক্ষার খেয়াঘাটে বসে আছে।

কিছুদিন পর আসিফের একটি চিঠি এসেছে। সে নিজেই চিঠিটি রিসিভ করেছে পিয়নের কাছ থেকে। মনে মনে ভাবছে এই চিঠিটি নিশ্চয়ই ভাবি না হয় রোজীর চিঠি। নিশা বাসায় নেই। আসিফ মায়ের কাছে নিয়ে যায় চিঠিটি। সে খুব আগ্রহের সঙ্গে বলল, মা দেখো তো প্রেরকের নাম আছে কিনা? তার মা চিঠিটি ভালো করে দেখে বললেন, না, নাম নেই।

আসিফ জিগ্যেস করল, কোত্থেকে এসেছে সেটা লেখা আছে?
না, তাও নেই। চিঠিটি খুলে আমি পড়ে দেব?

আসিফ ভাবে, না, তা কী করে হয়? রোজী ছাড়া আমাকে আর কেউ লিখতে পারে না। লেখার কথাও নয়। কি না কি লিখেছে, থাক নাদিম বা নিশা পড়ে দেবে। আসিফ বলল, মা, কে কী লিখেছে বলা যাচ্ছে না। নিশা পড়ে দিবেনে।

শুকনো মুখে মা একটু হাসেন। আসিফের ঠোঁটের ওপর পড়ল একটা অজানা লজ্জার ছায়া।

বিকেলে নিশাকে ডেকে কাছে বসায় আসিফ। নিশা দেখতে পায় একটা অপূর্ব হাসি তার ভাইয়ের মুখের ওপর ছড়িয়ে আছেÑকার্তিকের শেষে পাকা ধান যেন মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে। বুকের ভেতরে গভীর সুখ আহ্লাদের একটা প্রভা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। আসিফ খাটের ওপর বসা। মনে হচ্ছে একটা অমূল্য সম্পদের মানিক সে। পকেট থেকে চিঠিটি বের করে বলল, নিশা দেখ তো চিঠিটা। খামটি খোলার আগেই জিগ্যেস করল, হাতের লেখাটা মেয়েদের হাতের মনে হয়?

নিশা হেসে হেসে বলল, মেয়েদের হাতের লেখার কি কোনো মার্কা আছে?

আসিফ ভীষণ লজ্জা পায়। সে মনে মনে ভাবে এটা কোনো কথা হলো? মেয়েদের হাতের লেখার কি কোনো মার্কা আছে? কীভাবে বুঝবে? তখন নিজের উপর রাগ হয়। তবুও চিঠির পেটে কী আছে তা না জানা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছে না। কিছুটা অস্থিরতা নিয়েই সে বলল, যা যা লেখা আছে সবই পড়বি। খারাপ কথা লেখা থাকলেও পড়বি। বল, মিথ্যা বলবি ।

নিশা বলল, বলছি, মিথ্যা বলব না। নিশা চিঠিটি পড়ে চোখ মুছে খুব নীরবে যাতে আসিফ বুঝতে না পারে।
আসিফ জোরে হাসে। ও ভাবি লিখেছে তাহলে? নিশা আসিফের দিকে তাকায়। আসিফ বলল, রোজীর কথা কিছু লিখেছে?
নিশা বলল, বিশেষ দ্রষ্টবে লিখেছে। রোজী মীরেরসরাই থেকে চলে গেছে। তার সঙ্গে কিছু দিন যাবৎ যোগাযোগ নেই।

নিশা আসিফের দিকে তাকায়। লজ্জায় কেমন যেন ফ্যাকাশে দেখায় আসিফের মুখ। একটু আগেও মুখের আদলে ছিল প্রাপ্তির সুখময় প্রভার বিচ্ছুরণ আর এখন সেখানে উঁকি দিয়েছে না পাওয়া কষ্টের কালো মেঘের ছায়া।

আসিফ জিজ্ঞেস করল, নিশা।
কী?
রোজীর কথা আর কিছুই লিখেনি?
নিশা জবাব দেয়, না, আর কিছু তো লিখেনি।
আমার মনে হচ্ছে অন্ধ না হয়ে যদি মরে যেতাম তাহলেই ভালো ছিল।
থামো তো। এক কথা আর কত শুনবো? অন্ধ মানুষ পৃথিবীতে নেই? তুমি আর কক্ষনো এই কথা মুখে আনবে না। কক্ষনো না।
তুই যা। আসিফ উঠে গিয়ে জানালাটার পাশে দাঁড়ায়। তার মুখ খুব ভার ভার। আসিফের এই অবস্থা দেখে নিশার বুকও ভারি হয়ে ওঠে। নিশা মুখ ভার করে মেঝের দিকে তাকিয়ে বসে রইল।

কিছুক্ষণ পর নিশা উঠে আসিফের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। খুব আস্তে আস্তে নিশা জিগ্যেস করল, তুমি রোজীকে খুব ফিল করো, তাই না?

আসিফ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। আস্তে আস্তে বলল, হ্যাঁ রে। আমি খুব ফিল করি। বুঝতে পারি না কেন এই ফিলিংস? যত বেশি ভুলে যেতে চাই ততই আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে থাকে। মেয়েটির সাথে ভালোভাবে কথাও হয়নি তেমন অথচ…। থাক এসব ভাবতে গেলে আরও বেশি খারাপ লাগে। আরও কিছুক্ষণ কেটে যায় নীরবতায়। আসিফ এবার মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ায়। নিশাকে জিগ্যেস করল, তুই কাউকে ফিল করিস? মানে কাউকে ভালোবাসিস?

নিশা জবাব দিল, করি একজনকে। আমার যা চেহারা… সে কি আমার দিকে ফিরে তাকাবে?
কাকে ফিল করিস? বলিসনি তো কোনদিন?
তার কাছ থেকে রেসপনজ পেলেই বলব।

আসিফ বলল, তাহলে বুঝতে পারবি কাউকে ভালোবাসা কেমন যন্ত্রণার। আসিফ আবার জানালার দিকে তাকাল। নিশা আস্তে আস্তে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। মনে মনে বলল, কাউকে ভালোবাসা আর তার বিরহ সত্যি খুব কষ্টের।

এক সন্ধ্যায় আসিফ একটা নোট বুক চেয়ে নিল নিশার কাছ থেকে। একটা কবিতা লিখেছে। ছোট্ট একটা কবিতা মাত্র কয়েকটি লাইনে। অনেক দিন পরে তার লেখার ইচ্ছে হল। একটা লাইনের উপর অন্যটা লেপটে গেছে। দুর্ঘটনার পর আসিফ আর কিছু লেখেনি কোনো দিন।

অন্ধকার আর শূন্যতা–কালের পরে মহাকাল
ক্লান্ত আমি ডুবে যাচ্ছি ক্রমাগত চোরাবালি-গহবর
মাথার ওপরে যেন কারা ফেলেছে আক্রোশের জাল
পুষ্পিত পথে ভাঙা কাচ সাজানো এখন থরে থরে
স্বপ্নের উড়ন্ত বলাকারা আকাশ থেকে ঝরে পড়ে।
আমার আকাশ কেবল বেড়ে যায় বৃহৎ থেকে বৃহত্তর
সীমাহীন, স্থানান্তর, লোকান্তর, হাহাকারে নিমজ্জিত প্রান্তর
যখনি হেঁটে যেতে যাই কিছুটা পথ তখনই থেমে যাই
দেখি, দশদিক ভেঙেচুরে বেগমান মাতাল তুষার ঝড়
আর ভেঙে ভেঙে পড়ে আমার স্বপ্নের ইজিয়ান বাতিঘর।

কবিতাটি শেষ করেছে কিনা বোঝা যায়নি। কিংবা এটি কবিতাই হলো কি না তা-ই-বা কে জানে? এরপর আরও কয়েকটি লাইন হিবিজিবি করে লিখা।

সূর্য ডুবে গেছে এখন অন্ধকার নেমেছে পৃথিবীতে
একটু আলোও নেই আমার তোমাকে দেব বলে লুকিয়ে হীরায়
অন্ধকার পথ ধরে হাঁটি অনন্ত রাতভর স্বপ্নের দেশে
যেখানে থেমেছি সেখানেই ধূলিঝড় হেনেছে আঘাত
আমি যত দূর যাই তুমি তত কাছে এসে বলো
এনেছি সোনালি প্রভাত।
আমি দেখি আমার স্বপ্নের রুপালি চাঁদ শকুনের ঠোঁটে
জোছনা খায় গিলে – ওরা দুর্দম্য ডাকাত
যখন অন্ধকার আর শ্মশান এক হয়ে যায় পৃথিবীর বুকে
তুমি তখন হেসে হেসে বলো
এনেছি জোনাকি-আলোর রাত।

এই লাইনগুলো লিখে আসিফ বিছানায় শুয়ে শুয়ে কি যেন চিন্তা করছে।
দরজাটা খোলাই ছিল। নাদিম এসে চুপচাপ ঢুকে পড়ল। খাতাটা খোলা দেখে চুপচাপ পড়ে নাদিম। লাইনগুলো ঠিক মতো সাজানো নেই। খাতার এক প্রান্ত থেকে লেখা শুরু হলো আর শেষ হলো উপরের দিকে গিয়েছে। হাত আন্দাজ এখনো ঠিক হয়নি আসিফের।

নাদিম কিছু বলার আগেই আসিফ বলল, কেমন লিখেছি? নাদিম আসিফের দিকে তাকিয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেল। একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো মনে হয় চোখে দেখে সে বলেছে।

আসিফ আবার জিগ্যেস করল, সারা দিন রোদে ঘুরেছিস মনে হয়। নাদিম আরও আশ্চর্য হল− আসিফ এসব কী বলছে? বুঝল কেমনে?

আসিফ আবার বলল, আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আমি তোকে বলেছিলাম না অন্ধদের সেনসেটিভ পাওয়ার খুব বেশি। আমি তোর গন্ধ পেয়েছি। আমার ঘ্রাণশক্তিও খুব প্রবল হয়ে উঠেছে। তাছাড়া তোর পায়ের শব্দও আমি টের পেয়ে গেছি। আর আশ্চর্য হওয়ার কথা বললাম এ কারণেই যে, আমি তোর সাথে কথা বলছি যেভাবে সেটা আশ্চর্য হওয়ার মতোই ব্যাপার। বিষয়টা সাধারণ সমীকরণের মতোই খুব সহজ। সিম্পল ইকুয়েশন।

এবার নাদিম আসিফের খুব কাছে এসে বসে। কবিতাটা শেষ করলি না?
না পারছি না। রোজীকে কীভাবে সাজাব বুঝতে পারছি না।

রোজীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। তার সীমা ছাড়িয়ে অনেক দূর চিন্তা করতে হবে। যে সীমানার ধারে কাছেও কোনো মানুষের পদচিহ্ন নেই। তাহলেই পারবি তাকে সাজাত। আর তুই একজনের হতে যাবি কেন? তুই হবি সারা পৃথিবীর মানুষের।

নাদিম।

কী, বল? আমি অনেক দিন কিছু পড়তে পারছি না। বুক সেলফের উপরের তাকে একেবারে ডান দিকটার এই শতাব্দির প্রেমের কবিতার বইটি থেকে কয়েকটি কবিতা পড়ে শোনাবি।

নাদিম বইটা নিয়ে আবৃত্তি শুরু করল। একের পর এক তারপর অনেক কবিতা আবৃত্তি করে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। আসিফ যেন অমৃতের সরোবরে অবগাহন করে। মনে মনে ভাবে এমন সুন্দর কবিতার মতো যদি একটা কবিতা লিখে যেতে পারতাম! আমি কি পারব? সে মেধা কি আমার আছে?

আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করেই দেখ না। আগেই এমন হীনম্মন্যতা কেন?

না হয়ে উপায় আছে কী? সৃষ্টি মানেই কঠিন। সাহিত্য কঠিন। শেষে দেখা গেলো সাহিত্য রচনা করতে গিয়ে ফাজলামি করতে শুরু করলাম। মানুষ হাসবে। নিজের দুর্বলতা প্রকাশ না করাই ভালো না? কী বলিস?

নিষ্ঠা আর ত্যাগ থাকলে অনেক কিছু করা যায়। নিউরো সিস্টেমে ইনপুট দিলে আমার মনে হয় আউটপুট হিসেবে অবশ্যই ভালো কিছু হবে। শুরু কর।
আসিফ ভাবনার সাগরে ডুবে গেল। নিজের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাসের বীজ অংকুরিত হতে শুরু করল। এই অংকুরটি কি কোনো দিন পাতা, ডালপালা ছড়াবে, ছড়াবে? হবে কি কোনো দিন একটা মহীরুহ?

বাইরে প্রবল বাতাস বইছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে যেতে পারে। একটা ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।
নিশা চা বানিয়ে নিয়ে এল। তুমি এসেছো অনেকক্ষণ বুঝতে পেরেছি। রান্না করছিলাম। চা বানাতে দেরি হলো।
না, ঠিক আছে। আমিও আবৃত্তি করতে করতে চায়ের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।

অবশ্যই এখন তেষ্টাটা আরও বেড়ে গেছে।
আবৃত্তি তো ভালোই করো। রান্নার ফাঁকে ফাঁকে শুনেছি।
তোমার আবার রান্না! কী রান্না করছো?
কাঁচকি মাছের চচ্চরি আর ডাল।

আসিফ বলল আজ আমাদের সাথে খেয়ে যা। আমরা এক সাথে অনেক দিন খাই না। প্রকৃতিও যেন পাশে দাঁড়িয়েছিল। সহসাই ঝড়বৃষ্টিতে একাকার। এখন যেতে চাইলেই নাদিম যেতে পারবে না। বাসাটি যেন উড়িয়ে নিয়ে যাবে এমন ঝড়বৃষ্টি। সাথে সাথে লোডশেডিং শুরু হলো।

এখন নিশাও এ ঘরে এসে বসেছে। আসিফের মা পাশের রুম থেকে জোরে জোরে পড়ছেন ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সোবহানাকা ইন্নি কুনতুম মিনায জোয়ালিমিন।’ আসিফের মনে কোনো ভয় নেই। মৃত্যুকে আবার ভয় কীসের? মরে গিয়েও তো বেঁচে গেছে। তাহলে সহসা মরবে না। ঝড়ের তালে সে উচ্চৈঃস্বরে গান গাওয়া শুরু করল।

বাদল ধারা ঝরে বহে প্রমত্ত বাতাস এ ধরায়
কেন আজ এ বেলায় প্রকৃতি বিষম বিরাগ
নিগূঢ় গহীনে কেন আঁধারের আবেশে জড়ায়?

নাদিমও আসিফের সঙ্গে কণ্ঠ মেলায়। নিশা গানের মাঝখানে চিৎকার দিয়ে ওঠে ভাইয়া তোমার কি এতটুকু ভয় নেই? এমন ঝড়ের সময় কেউ গান গায়?
আসিফ যেন আরও শক্তি ফিরে পায়। সে বলল, ভয়ের সময় গান গাইলে ভয় কেটে যায়। তুইও শুরু কর। আবার বেসুরো গলা ফাটিয়ে চিৎকার শুরু করে, বাদল ধারা ঝরে বহে প্রমত্ত বাতাস এ ধরায় …

নাদিম গান থামায়নি। আসিফের মা যখন ধমক দিলেন তখন নাদিমের গান থেমে গেল কিন্তু আসিফ যেন আজ থামতে রাজি নয়। সে বলল, মা তুমিও আসো। এক সঙ্গে গান গাইলে ভয় কেটে যাবে। তার মা আবার ধমক দিলেন, থামবি কি না বল? নিশা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে কখন যে খাটের এক কোণে গিয়ে বসে তা সেই জানে। মা জোরে জোরে বলতে লাগলেন, লা ইলাহা…।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পদধ্বনি পৃথিবীর প্রতিটি দেশে দেশে। বাংলাদেশে ঘরে ঘরে, পথে ঘাটে, অফিসে আদালতে ক্রিকেটের আলোচনা ছাড়া আর কোনো আলোচনা নেই। কে কীভাবে আউট হলো, কীভাবে ক্যাচ হলো, কীভাবে রান আউট হলো, কেন রান আউট হলো, রানটা নিতে গিয়েই ভুল হলো, কেন গেল রান নিতে, এভাবে ক্যাচ ধরে… ইত্যাদি ক্রিকেট বিজ্ঞ-মহাবিজ্ঞের বিশ্লেষণ নিয়ে আলোচনা চলছে তো চলছেই। এদের খেলতে দিলে কী যে হতো আর বলার প্রয়োজন নেই। বিশ্বকাপ খেলা শুরু হলে এদেশের মানুষের যে প্রস্তুতি শুরু হয় তা ইতিহাস লেখার মতো বিষয়। কাজকর্ম, খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে মানুষ এভাবে মেতে থাকতে পারে তা ভাবতে বিস্ময় জাগে। এটা বাঙালির বৈশিষ্ট্য। কোনো একটা ছুতা পেলেই হলো–তা নিয়ে মেতে থাকে নিরলস। হুজুগে বাঙালি কি আর সাধে বলা হয়?

বিটিভি খেলাগুলো সরাসরি স¤প্রচার করেছে। এর আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশের আনাচে-কানাচে। ঈদ কিংবা পূজার উৎসবের চেয়ে অনেক বেশি মুখর হয়ে উঠেছে শহর গ্রাম গ্রামান্তর।

আসিফদের বাসায় ক্রিকেট খেলা দেখতে নাদিম এসেছে। বলতে গেলে নাদিমের মায়ের ব্যবহার নাদিমের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে আসিফকে সঙ্গ দেওয়া  দুইজন মিলে আসিফদের ভাঙা সাদাকালো টিভিতে খেলা দেখে সময় কাটানোই বড় কথা। আসিফ শুয়ে আছে। নাদিম নিশাকে বলল, এক ফ্লাস্ক চা বানিয়ে নিয়ে এসো। আমি চানাচুরের প্যাকেট নিয়ে এসেছি।

নিশার মন ভালো নেই। আসিফের ফেবারিট খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেটই বলো আর ফুটবলই বলো বিশ্বকাপ খেলাগুলোর মধ্যে এ বাসাটি উৎসব মুখর হয়ে উঠত। অথচ আজ মনে হচ্ছে ঘুণে ধরা বাড়িটিতে প্রাণহীন কয়েকটি মানুষ। আগে দুভাই বোন দুটি দলের সমর্থক হয়ে ঝগড়া বাধাত। আজ সে রকম কিছু হবে না।

নাদিম ডাকল, আসিফ আয়।

আসিফ বলল, আমি কি আর চোখে দেখতে পাই যে খেলা দেখব। আসিফের মায়ের দীর্ঘশ্বাস শোনা গেলো এতক্ষণ পর। এ যেন সুস্থ শরীরে এনেসথিয়া ছাড়া অস্ত্রোপাচার।

তবুও নাদিম আসিফকে ডেকে আনল। ধারাভাষ্য শুনতে তো পারবি। তাতেই চলবে। আসিফ বেতের পুরনো সোফাটায় বসেছে। নাদিম আর নিশা মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে সোফায় মাথা ঠেকিয়ে। পাকিস্তান ভারতের খেলাটিই জমে সবচেয়ে বেশি। যেন চিরকালের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সাতচল্লিশের পর থেকে দুই প্রতিদ্ব›দ্বী দেশ দুটি যেকোনো বিষয়েই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জড়িয়ে যায়। এই খেলা ছাড়া ক্রিকেটের মজাটা যেন জমে না, মেজাজটাও যেন পূর্ণতা পায় না─অন্তত এ দেশে। তবে আজকে অস্ট্রেলিয়া আর শ্রীলঙ্কার খেলা। নিশা অস্ট্রেলিয়ার সমর্থক। নাদিম আর আসিফ শ্রীলঙ্কার। নিশার ভাবসাবে অস্ট্রেলিয়ার হলেও মনে প্রাণে শ্রীলঙ্কা জিতুক সেটা সে চায় যা অন্যকে বুঝতে দিচ্ছে না। সে এমন একটা ভাব চোখে মুখে ফুটিয়ে তুলেছে যে অস্ট্রেলিয়া তার জীবন। আজকে না জিততে পারলে একেবারে মরেই যাবে।

আসিফ মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে জেনে নেয় কার অবস্থান কোথায় আছে। এতেই সে তৃপ্ত। শ্রীলঙ্কার জয়ের সম্ভাবনা বুঝতে পারে আসিফ। হৃদয় বিগলিত আনন্দের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে আসিফের মুখমন্ডল।

এত দীর্ঘ সময় ধরে খেলা দেখা যায়? বিশ ওভারের খেলা হলে মেনে নেওয়া যেত। নিশা এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সোফা ছেড়ে মেঝেতে চোখ বন্ধ করে শোয়। মনে হচ্ছে এখনই ঘুমিয়ে পড়বে কিংবা ঘুমিয়ে গেছে। নাদিমের চোখ পড়ে নিশার দিকে। ফ্যানের বাতাসে মাথার মোলায়েম চুলগুলো উড়ছে। নাদিম লক্ষ করে নিশার উত্তীর্ণ যৌবনের পুষ্পিতমাধুরীস্পন্দন, শরীর বাঙ্ময়।

আজ কেন এমন মনে হচ্ছে? নাদিমের টিভির পর্দা থেকে চোখ নেমে আসে নিশার শরীরে।
আসিফ মাঝে মাঝে জানতে চায় কত রান হয়েছে। এই নিশা ঘুমিয়ে পড়েছিস? গর্দভ।
নাদিম বলল, ওটা ঘুমিয়ে গেছে।

নিশার ঠোঁটে এক চিলতে ম্লান হাসি নাচানাচি করে তখন। নাদিমের চোখের চামড়া খসে পড়তে থাকে ক্রমাগত। মনে পড়ে তার এক কবির কবিতার একটা লাইন.. ‘একটু হয়েছে শ্লথ বন্দিনীর বন্ধন নীবির’।

নাদিম এক সময় নিজে থেকেই লজ্জিত হয়। বুকের ভেতর থেকে প্রশ্ন উতরে আসে এ কেমন নষ্টময়তায় আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলছে? কিছুক্ষণ আগের আবেগাশ্রিত মনকে এখন সে আবার শুচিশুদ্ধ করতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এক প্রকার মিশ্র অস্থিরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। নিজেকে প্রশ্ন করে আমি কি কোনো অন্যায় করেছি। না, কেন, অন্যায় হবে কেন? আমি তো নিশাকে নিয়েই নীড় বাঁধতে চাই, ঘর বাঁধব।

আসিফদের চরম বিপদের সময় নাদিম তার সব কিছু দিয়ে ওদের সঙ্গে থাকতে চায়। নাদিমকে সপে দিতে চায় আসিফদের পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু নাদিম চাইলেই কি নিশা তা মেনে নিবে কিনা তাই বা কে জানে? আজ নিশাকে তার এত ভালো লাগছে কেন? নাদিম হঠাৎ দেখে নিশা তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ

Series Navigation<< উপন্যাস।। ছায়াপথ।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। ছয় পর্বউপন্যাস।। ছায়াপথ।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। ৮ম পর্ব >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *