উপন্যাস।। ছায়াপথ।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব চার

আসিফ হাত নেড়ে জানায় হ্যাঁ আমি খুব তাড়াতাড়িই আসছি। আসিফ দ্রুত হেঁটে যায়।
আসিফ বিকেল পাঁচটায় একটা লোকাল বাসে উঠে। এখান থেকে এই সময় কোনো ভালো গাড়ি পাওয়া সম্ভব নয়। বাসের গতি ও ড্রাইভারদের আচরণে তার মনটা বারবার বিষিয়ে উঠছে। মনে মনে বারবার বলছে, আল্লাহ্ মাকে কোনো কঠিন অসুখ দিয়ো না। আসিফের চোখ দুটি ভিজে যায়। মায়ের মুখটা তার চোখের সামনে বারবার ভেসে ওঠে। শুধু প্রশ্ন─

কী হয়েছে মার?

বিকেল যেন দ্রুত গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কতক্ষণে পৌঁছা যাবে এমন একটা চিন্তা যেন মাথা কামড়াচ্ছে। নিশ্চয়ই মায়ের বেশি অসুখ, না-হলে নিশা টেলিফোন করত না। তাহলে কী হয়েছে? নাকি স্ট্রোক করেছে? নাকি হার্ট অ্যাটাক? নাকি অন্য কিছু? না, এত বড় রোগের কথা ভাবা ঠিক না। না, কোনো কঠিন অসুখ না। আবার ভাবে, না, মার কিছু হয়নি। মার কিছু হয়নি। মাকে ছাড়া তো আমার জীবন অচল হয়ে যাবে। এমন এলোমেলো ভাবনার মধ্য দিয়েই আসিফের সময় যাচ্ছিল। মানুষে গাদাগাগি বাসটি। মাঝে মাঝে ঝিমুনিও আসছিল। শুধু মনে হচ্ছিল বাসটি যদি আরও দ্রুত যেতে পারত।

পিছনের সীটে বসে দুইজন শ্রমিক শ্রেণির মানুষ হয়ত বিড়ি জ্বালিয়েছে। আসিফের পিছনের সীটে একজন সিগারেট জ্বালিয়ে বিশ্রি ধোঁয়া ছাড়ছে। বাসটিতে ধোঁয়া উড়ছে। কেউ কেউ গরমে জামার বুকের বোতাম খুলে দিয়ে বাতাস লাগানোর চেষ্টা করছে।

আসিফ মনে মনে ভাবছে, বাসে সিগারেট না খাওয়ার একটা আইন করা খুব জরুরি। এত স্বেচ্ছাচারিতা যদি একটা দেশে চলে তাহলে এদেশের উন্নতি হবে কীভাবে? যে যার মতো যা ইচ্ছে তাই করছে। এটা সামরিক শাসনের ফলাফল নাকি আমাদের পুরনো অভ্যাস ও ঐতিহ্য। তবে যাই হোক এর সংস্কার করা প্রয়োজন।

আসিফের চোখে ঘুম ঘুম লাগে। ভালো ভালো কোচ সার্ভিসের গাড়িগুলো দ্রুত গতিতে চলে যাচ্ছে। ওর ঈর্ষা হচ্ছে—ওদের মতো তাড়াতাড়ি যেতে পারছে না কেন এই গাড়িটা?

পিছন দিক থেকে একটা ট্রাক বারবার ওভারটেক করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই গাড়ির ড্রাইভারও সাইড দিতে পারছে না। একটু ফাঁক পায় তো আরেকটা গাড়ি এসে সামনে পড়ে যায়। এ রকমভাবে অনেকক্ষণ চলছে। আসিফ এর মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে।

হাইওয়ে গাড়িগুলো কেমন যেন বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। হঠাৎ সামনের দিকে দুটি গাড়ি ওভারটেক করার প্রতিযোগিতায় মালকাচু দিয়ে নেমে পড়ল মনে হয়। দেখতে না দেখতেই আসিফদের গাড়িটি চট্টগ্রামগামী একটা ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ। আসিফদের বাসটি গড়িয়ে পড়ল পাশের খাদে। ভাগ্য অনেকটা সহায় যে, খাদে পানি ছিল না।

পরদিন খবরের কাগজে ছাপা হল ঢাকাগামী একটি লোকাল বাসের সঙ্গে চট্টগ্রামগামী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ। মারাত্মক আহতদের নামের তালিকায় আসিফ হাসান নামটিও রয়েছে। কুমিল্লা হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছে। স্পট-ডেথের তালিকায় রয়েছে কয়েকজনের নাম।

নাদিম দুপুরের দিকে খবরটি পড়ে আসিফদের বাসায় ছুটে গেল। নিশা, এই নিশা… বলে ডাকতে ডাকতে একটা উত্তপ্ত উত্তেজনা নিয়ে দরজাটা প্রায় ভেঙে ফেলে অবস্থা। কলিং বেলটার দিকেও নাদিমের কোনো খেয়াল ছিল না।
নিশা দরজা খুলে ধমকের স্বরে বলে উঠল এভাবে চেচাচ্ছো কেন? মনে হয় কেউ মরে গেছে।
চুপ কর, চুপ কর, নাদিম ধমকের স্বরে বলে।
নিশা এবার কিছুটা নমনীয় হয়। ভয়ার্ত স্বরে জানতে চাইল, কী হয়েছে নাদিম ভাই?
অ্যাই দেখ পত্রিকাটা নিশার চোখের কাছে তুলে ধরে।
নিশা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। মাগো এ কী হলো?
নিশার মা দৌড়ে এসে নিশাকে জাপটে ধরে জিগ্যেস করলেন, কী হয়েছে নিশা? কী হয়েছে নাদিম? নাদিম কোনো কথা বলতে পারল না। মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রইল দরজার পাশে।

নিশা ভেজা কণ্ঠে বলল, মাগো এ কী হলো?

তার মা জিগ্যেস করলেন, কী হয়েছে নিশা? কী হয়েছে আগে বলবি তো? নাদিমের চোখ ভিজে উঠল। পত্রিকাটার খবরটা দেখে আসিফের মার মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা। তাকে বিছানায় শোয়ানো হলো।
নাদিম বলল, আমি এখনই কুমিল্লায় যাচ্ছি।
নিশা বলল, আমিও যাব। আসিফের মা-ও বললেন, আমিও যাব।

নাদিম বলল, আমি আগে গিয়ে দেখে আসি তার অবস্থা কেমন। সেখানে ভালো চিকিৎসা হবে না। আমি ঢাকায় নিয়ে আসতে পারি কিনা দেখি। আসিফের মাকে কিছুটা সুস্থ করে নিশার ওপর দায়িত্ব দিয়ে নাদিম কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

আসিফের কোনো চেতনা নেই। কথা বলতে পারছে না। অক্সিজেন দিয়ে ইনটেনসিভ কেয়ারে রাখা হয়েছে। রাতে নাদিমের এক বন্ধুর মাধ্যমে টেলিফোনে আসিফের খবরটা নিশাদের জানানো হল। আসিফ আশঙ্কামুক্ত সে খবরটাও জানানো হল। আসিফ মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। ডান পায়েও কিছুটা আঘাত পেয়েছে। প্রাণে রক্ষা পেল হয়তো কোনো আশীর্বাদের কারণে।

জীবনও পত্রিকা দেখে কুমিল্লায় ছুটে এল। হতবাক হয়ে গেল আসিফের অ্যাকসিডেন্টের অবস্থা দেখে। নাদিমকে বলল, মানুষের জীবন। এমন জীবন্ত একটা মানুষ দুদিনের ব্যবধানে কী হয়ে গেল?

নাদিমের বুকের ভেতরে মনে হয় ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আসিফের এই অবস্থা দেখে সে পাগলের মত হয়ে গেছে। ডাক্তারকে বারবার জিগ্যেস করছে, আসিফ ভালো হবে তো? ডাক্তার কিছু বলছেন না। শুধু বলেন বেঁচে যাবে। দেখেন কী হয়? চিকিৎসা তো দেওয়া হচ্ছে।

দুদিন পর আসিফের জ্ঞান ফিরল। চোখে ব্যান্ডেজ, পায়ে ব্যান্ডেজ। ডাক্তার বললেন, কিছুটা সুস্থ হলে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। তবে চোখের ক্ষতি হয়েছে। চোখ যদি ফিরে পায় তাহলে তার নতুন জন্ম বলতে হবে।

নাদিম খুব হতাশ হয়ে পড়ল। এ কী হলো খোদা? এ কী হলো?
আসিফের শিয়রের কাছে নাদিম বসে। আসিফ দু-একটা কথা বলতে পারে মাত্র।
স্মৃতিশক্তিতে তেমন আঘাত লাগেনি। নাদিমের মধ্যে অস্বাভাবিক অস্থিরতা ভর করেছে। আর্দ্র কণ্ঠে বলল, আসিফ তুই চিন্তা করিস না। তোর চিকিৎসার ব্যাপারে যা করা দরকার তাই করা হবে। তুই নিশ্চয়ই ভালো হয়ে যাবি।

আসিফ বলল, আমার মা কেমন আছে? নিশার টেলিফোন পেয়েই পাগলের মতো ছুটে আসছিলাম। এখন আমিই …।

থাম আসিফ। তোর মা ভালো আছে। তোর মার কিছু হয়নি।
মার কী হয়েছিল তুই কি জানিস? নিশা এভাবে জরুরি ফোন করেছিল কেন?
নাদিম কথা বলতে পারেনি। উড্ডয়নের শেষ প্রান্তে ফানুস যেমন চুপসে গিয়ে ধীর স্থিরভাবে মাটিতে পড়তে থাকে নাদিমও তেমন যেন ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান থেকে পতিত হতে থাকে। আসিফের গায়ে হাত রেখে বলল, তুই থাম। তোর মাকে তো ভালোই দেখে এলাম।

কোনো অসুখ হলে তো শুনতাম।

সেদিন বিকেলেই নিশা মাকে নিয়ে কুমিল্লায় চলে এল। নাদিম আর আসিফ দুজন কথা বলছে। নিশা, মা চোখ মুছতে মুছতে আসিফের কাছে দাঁড়াল। মা-বোনের উপস্থিতি অনুভব করতে পারল আসিফ। হাত বাড়িয়ে ডেকে বলল, মা তোমার কী হয়েছিল? মা বুঝতে পারছে না আসিফ কী বলছে?

মা নিরুত্তর থাকাতে আসিফ বলল, নিশার ফোন রিসিভ করল আমাদের অফিস ম্যানেজার।
আমাকে বলল, তোমার নাকি অসুখ। আমি তোমাকে দেখার জন্যই তো ঢাকায় আসতেছিলাম।
না-হয় তো আমার ঢাকায় আসার কথা ছিল না।

আসিফের কথা শুনে মা হতবাক। আমার আবার কবে অসুখ হলো? নিশা তুই ফোন করেছিলি? আসিফ কী বলছে এসব? তিনি আঁচলে চোখ ঢাকেন। তার চোখ দিয়ে পানি ঝরঝর করে গড়িয়ে পড়ছে।

নিশাও যেন আকাশ থেকে পড়েছে। আমি…আমি…ফোন করেছিলাম! না তো মা। আমি ফোন করিনি। এসব মিথ্যে কথা। কে এমন কাজ করেছিল? কেন এমন মিথ্যা ফোন করে ভাইয়াকে ঢাকায় আসতে বলেছিল?

হাসপাতালে দেখা গেল এক করুণ আর্তনাদের ঝড়। তাহলে কে করেছিল টেলিফোন? কেন ফোন করেছিল?

এই নিদারুণ কষ্টের মুহূর্তে নাদিম নিজেকে সামলে নিতে না পেরে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে তাকিয়ে থাকে নীল আকাশের দিকে। আকাশ যেন শুধুই শূন্য। এত শূন্যতার গর্ভে কী আছে? গ্রহ-নক্ষত্র-তারকারাজি? তার শরীর ঘামতে লাগল। এক সময় পাশের দোকান থেকে সিগ্রেট কিনে জ্বালায়। অন্তহীন শূন্য বিস্তীর্ণ আকাশের ধোঁয়ার কুন্ডলি উড়িয়ে দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে নাদিম। নাদিম ধূমপায়ী নয়। আজ কেন ধূমপান করতে ইচ্ছে করছে।

কুমিল্লায় হোটেল ছাড়া নিশা আর মায়ের থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই যে থাকা যায়। নাদিম কয়েকদিন ধরে বারান্দার একটা বেঞ্চিতে শুয়ে রাত কাটিয়েছে। এই অবস্থায় নিশাদের কুমিল্লায় থাকার ইচ্ছে থাকলেও থাকতে পারছে না।

নাদিম বলল, খালাম্মা আপনারা ঢাকাতেই চলে যান। এখানকার হোটেলে থাকার ব্যবস্থা খুব ভালো না। টাকা-পয়সারও একটা হিসাব আছে ভেবেচিন্তে মা বললেন, ঠিক আছে। আমরা চলেই যাই। বাবা তুমি যে কত কষ্ট করছো তার ঋণ পরিশোধ করার মত নয়।

নাদিম কোনো কথা বলেনি।

ভাইয়ের হাতটি ছেড়ে নিশার আসতে কষ্ট হচ্ছিল। বামহাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে এলো।
নাদিম বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এসে ওদেরকে উইনার গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে সে একটা রিকশা নিয়ে শহরের বাইরে চলে এলো।

শহরের বাইরে বলতে ময়নামতি নদীর পাশে এসে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। তার কিছুই ভালো লাগছে না। সবকিছু এমন স্তবির হয়ে গেল কেন, কেন সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল?
অনেক রাতে ফিরে এলো হাসপাতালে। তার পাস আছে তাই যখন তখন হাসপাতালে ঢুকতে পারে। আসিফ ঘুমুচ্ছে।

নাদিম আর আসিফকে ডাক দিল না। বাইরের একটা রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খেয়ে হাসপাতালের বারান্দার একটা বেঞ্চিতে শুয়ে পড়ল। সারাদিনের ক্লান্তি আর অবসাদে সে কাদার তাল হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমে ডুবে গেল। এখানে এত মশা যে, সজাগ থাকলে টিকা কঠিন। একমাত্র বেহুঁশ ঘুম ছাড়া এখানে থাকা অসম্ভব।

সপ্তাহখানেক পরে আসিফকে ঢাকায় আনা হল। সেদিন নিশাও গিয়েছিল। একটা অ্যাম্বুলেন্সে ওরা কুমিল্লা হাসপাতাল থেকে বের হয় বিকালের দিকে। রাতেই আসিফকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হলো।

আসিফের মা ছেলের শোকে এমনভবে ভেঙে পড়েছেন যে তাকে বাঁচানোই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুর্ঘটনার একটা নির্মম কঠিন প্লাবনে ভেসে যাচ্ছে যেন একটা পরিবার। এই পরিণতির ওপর কারও হাত নেই। সবচেয়ে দুর্ভাবনার বিষয় হলো আসিফ সারা জীবন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর অভিশাপ নিয়েই বেঁচে থাকবে কি না?

কুমিল্লা হাসপাতাল থেকে রিলিজ হয়ে আসার সময় আসিফের শার্টসহ আরও কিছু জিনিসপত্র ডাক্তার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নিশার হাতে। নিশা এতদিন এগুলোর প্যাকেট খুলে দেখেনি। আজ দেখতে গিয়ে রোজীর ছবিটা পেল। অনেকক্ষণ দেখার পর ঝরঝর করে কয়েক ফোঁটা পানি নিশার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল। নিশা ভাবল ভাইয়া হয়তো তার ভালো লাগা মেয়েটিকে আর পাবে না। যদি অন্ধ হয়েই যায় তাহলে হয়তো কোনো দিন দেখতেও পাবে না। এই মেয়েটিকে দেখার সাধ কি ভাইয়ার মিটেছিল? ছবিটা আবার যথাস্থানে রেখে দিল নিশা। বড্ডা ক্লান্ত সে। বিছানার ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। পা দুটি মেঝেতে ঝুলে আছে।

বেড সুইচে বার বার টিপছে। বাতিটি একবার জ্বলছে আর একবার নিভছে। নিশা সেদিকে তাকিয়ে থেকেই তার কষ্ট কিছুটা লাঘব করতে চাইছে। বড়ো বেশি উদাসীন আর উদভ্রান্ত তার দৃষ্টি।

নাদিম ভাবতে পারেনি আসিফের জীবনের এমন একটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। এ ক্ষতি ফিরিয়ে আনার মতো নয়। দিনরাত খেয়ে না খেয়ে সঙ্গ দিচ্ছে আসিফকে যেন সে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে। আসিফ নাদিমকে একদিন বলল, তুই আমার জন্য যা করছিস তার প্রতিদান আমি কীভাবে দেব?

নাদিম খুব শান্তভাবে বলল, আমাকে ছোটো করবি না। তুই আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। তোর জন্য এটুকু করতে পারছি বলেই আমার ভালো লাগছে।

আসিফের সঙ্গে নাদিমের বন্ধুত্বের বন্ধন ছাড়া আর অন্য কোনো সম্পর্ক নেই। এই বন্ধন এখন আরও দৃঢতর হচ্ছে। স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত একসঙ্গে লেখাপড়া করেছে ওরা।

আসিফ রাজশাহী বিআইটিতে ভর্তি হয়েছিল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ। নাদিম ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। গলায় গলায় বেড়ে ওঠা দুজনের বন্ধুত্বের কারণে তাদের পারিবারিকভাবেও একটা সেতুবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে।

আসিফ একদিন নাদিমকে জিজ্ঞেস করল, নাদিম তোর অনার্সের রেজাল্ট হয়নি? এত দেরি হচ্ছে কেন?

হ্যাঁ হয়েছে। নাদিম যন্ত্রণায় ফেটে পড়ে। আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না।

আমাকে জানালি না তো?

আসিফ! নাদিমের চোখ দুটি ভিজে ওঠে।

কী?

না। বলছিলাম রেজাল্টের কথা। আমি তো ফার্স্ট হয়েছি। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট।
আসিফ উষ্ণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমি এমনই হতভাগা যে সেলিব্রেট করতে পারছি না।
কবে হলো রেজাল্ট? আগে জানালি না কেন?

এখন থাক না এসব কথা। তুই সুস্থ হলে তো সব কিছুই জানতে পারবি। তোকে রেজাল্ট জানাতে পারিনি তাই বরং বল আমিই হতভাগা।

নাবিলার সাথে তোর যোগাযোগ আছে তো? একদিন তো এল না। আর থাক, না আসাই ভালো। মেয়েটি খুব ভালো। তাই রে নাদিম?
তোর অ্যাকসিডেন্টের পর থেকে যোগাযোগ নেই। শুনেছি বাসায় এসেছিল।

এতদিন হয়ে গেল− তুই অন্যায় করছিস বেচারির সঙ্গে। আমার এখানে এভাবে পড়ে থাকলে তোর চলবে? ওর সঙ্গে যোগাযোগটা তো রাখবি।

নিঃশব্দতায় কেটে যায় কিছুক্ষণ।

আসিফ আবার বলল, নাদিম আমার শার্টের পকেটে কারও ছবি পেয়েছিলি?
না তো? কার ছবি?

রোজীর। মেয়েটির সাথে আলাপ পরিচয় হলো। নিশার কাছে ছবিটা আছে কিনা জেনে দেখিস তো? অদ্ভুত রকমের ভালো মেয়ে। জানিস নাদিম, আমার অন্ধ দৃষ্টিতে রোজীকে বেশি দেখছি। এই তো রোজী দুষ্টু হাসি ছড়িয়ে রেখেছে রাতুল ঠোঁটে। খোঁপা ছেড়ে দুষ্ট চুলগুলো কপালে পড়ে আছে। মনে হচ্ছে হাত দিয়ে সরিয়ে দিই। টোল পড়া গাল দুটি শরমে লাল হয়ে উঠেছে। নাদিম, আমি কি আর চোখে দেখতে পাব না?

নাদিম আসিফের কথার উত্তর দেয়নি। অন্য প্রসঙ্গ টেনে আনল। এই যে ভুলে গেলাম। তোর একটা ওষুধ আনতে ভুলে গেলাম। আমার যা ভোলো মন। আমি এক্ষুনি আসছি তোর ওষুধটা নিয়ে। তুই থাক।

নাদিম শোন। তুই একটু বাসায় যাবি?

কেন বল তো?

নিশার কাছে জেনে দেখবি ছবিটা ও পেয়েছে কিনা। পেয়ে থাকলে নিয়ে আসবি।
দেখিস কী অদ্ভুত রকমের সুন্দর। সারা দিন দেখতে ইচ্ছে করবে।
ঠিক আছে নিয়ে আসব, বলেই নাদিম হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেল।

নাদিম আসিফকে ফাঁকি দিতেই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেল। ওষুধপত্র সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। আসিফের দুর্ঘটনায় নাদিম খুব বেশি ভেঙে পড়েছে। নিজে নিজে দগ্ধ হচ্ছে আসিফের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে। এমন নিষ্পাপ যুবকের জীবনে এত কঠিন শাস্তি কেন নেমে এল? মাঝে মাঝে যন্ত্রণায় দেয়ালে মাথা ঠোকে।

নাদিম চলে যাওয়ার পর নার্সের সঙ্গে আসিফের কথা হয়।

আসিফ বলল, সিস্টার আমি কি আর ভালো হব না? নাদিম তো সত্যি কথা বলে না। আপনি বলেন। আমি মানসিকভাবে তৈরি হই। জীবনকে কীভাবে অন্ধকার পৃথিবীতে সাজাব তার তো একটা প্রিপারেশন নিতে হবে। তাই না সিস্টার?

সিস্টার কী কথা বলবে ভেবে পায়নি। একটু ভাবল। তার কাছে সঠিক জবাব নেই। সে জানে আসিফের চোখ ভালো হবে না। অন্তত এদেশের চিকিৎসায় ভালো হওয়ার আশা করা যায় না। এরপরও মিথ্যা কথা বলতে হয়। আপনি এত অধৈর্য হবেন না। অবশ্যই ভালো হবেন, নার্স বলল। সিস্টার আপনি আমাকে সান্তনা দিচ্ছেন জানি। আমাকে সান্তনা নিয়েই চির দিন থাকতে হবে। সিস্টার অন্ধদের জন্য কি দিন রাত একই?

সিস্টার এর উত্তর খুঁজে পায় না। সেটা তো তার জানার কথা নয়। এখন দিন না রাত্রি ?

সিস্টার প্রশ্ন করে।

আসিফ উত্তর দেয়, এখন মনে হচ্ছে বিকেল পাঁচটা টাচটা বাজে।
সিস্টার ঘড়ি দেখে উত্তর দেয়, হ্যাঁ প্রায় ঠিক বলেছেন। সাড়ে পাঁচটা বাজে।
জানেন সিস্টার অন্ধদের সেনশেসন পাওয়ার বেশি। এ থেকে তারা সময় ঠিক করে নিতে
পারে। এই পাওয়ারটুকু না থাকলে অন্ধ আর মৃতদের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকত না। সিস্টার ওষুধ খাইয়ে, থার্মোমিটারে রিডিং নেয়। আসিফের প্রতি সে দয়ার্দ্র হয়ে ওঠে। আসিফকে গভীর চোখে দেখে। থার্মোমিটারের রিডিং সিটের পাশে রাখা ফাইলে লিখে আস্তে আস্তে চলে গেল।

আসিফের নতুন পৃথিবী সৃষ্টি হলো। যে পৃথিবী হতে আস্তে আস্তে অচেনা হতে থাকে রোজী। মনের সেলোলয়েড থেকে মুছে যাবে অতীত। সেখানে সৃষ্টি হবে জীবনের নতুন ধারা, নতুন স্রোত। বেঁচে থাকার জন্য এ জীবনের মধ্যে কি-ই-বা আছে তারই অপেক্ষায় রয়েছে আসিফ।

বেশ কিছুদিন যাবৎ নাদিম বাসায় যায়নি। আজ আসিফদের বাসায় যাওয়ার আগে নাদিম নিজের বাসায় গেল। উসকোখুসকো চেহারা। এলোমেলো চুল। অনেক রাতজাগার ছাপ তার সমস্ত চেহারায় উৎকীর্ণ হয়ে উঠেছে। বাসার কলিং বেলের শব্দে মা দরজা খুলে দিলেন।

তার মা খুব গম্ভীর মুখে পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। নাদিমের বাবা ড্রয়িং রুমে পত্রিকা পড়ছেন। নাদিমের বাবার অফিস থেকে ফিরে আর কোনো কাজ করেন না। চার-পাঁচটা পত্রিকা পড়েন।

মনে হয় পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতি। এ নিয়ে নাদিমের মা কোনো দিন ঝগড়া না বাধায়? কিন্তু নাদিমের বাবা স্ত্রীর কথা কান দেন না। সংসার কোন দিকে যাচ্ছে না যাচ্ছে এ নিয়ে তাঁর কোনো মাথাব্যথাও নেই। চাকরি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছেন। তিনি অবসর জীবনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এলপিআর। লিভ ফর প্রিপারেশন ফর রিটায়ারমেন্ট। যতদিন চোখে দেখবেন ততদিন খবরের কাগজ পড়ে পড়ে দিন কাটাবেন। শুধু খবরের কাগজ বললে ভুল হবে।

অন্য বইও পড়েন। পড়ার ব্যাপারে বলা যায় তিনি সর্বভুক। সামনে যা পান তাই পড়েন। নাদিম রুমের ভেতরে যাওয়ার প্রাক্কালে দরজার কাছ থেকে মা ওর পিছনে পিছনে ঢুকলেন। কোনো ভণিতা ছাড়াই তিনি কড়া ভাষায় বললেন, তুই কোথায় থাকিস সেটা বলে ঘরে ঢুকবি।

আজ তোর একদিন কী আমার একদিন। তুই আর কত দিন হাসপাতালে কাটাবি? একদিন দুদিন সহ্য করা যায়। মেনে নেওয়া যায়। নিজের লেখাপড়া নিয়ে তো এভাবে মেতে থাকতে দেখিনি কোনো দিন। আসিফকে সারা জীবন তুই দেখতে পারবি?

মায়ের কথাগুলো মনে হলো টর্নেডোর মতো খুব দ্রুত এবং বিরামহীনভাবে বলে গেলেন। নাদিম কেবল শুনে গেল। সে জানে মায়ের কথার উপর কথা বললে আরও নানা রকম বিপত্তি ঘটতে পারে। এই বাড়িতে মায়ের কথার জবাব দেওয়ার মতো কোনো মানুষ নেই। সে জানে মায়ের সঙ্গে কথা বলে কোনো লাভ নেই। যে উগ্র মেজাজ তার─ সে মেজাজের কাছে টেকা কঠিন। এক কথার মানুষ তিনি। কারও সঙ্গে আপস করার মতো নারী তিনি নন।

মার পাশ দিয়ে নাদিম রুমে ঢোকে। রুমে ঢোকার পর মা দ্রুত পায়ে নিজের রুমে ঢুকে খটাস করে দরজা বন্ধ করলেন। মনে হলো গায়ের রাগটা দরজার ওপর ঝাড়লেন।

নাদিমের মা চলে যাওয়ার পরই দীপালী নাদিমের রুমের দরজার পাশে এসে দাঁড়াল। নাদিমের চেহারা দেখে দীপালী কিছু জিগ্যেস করবে কিনা দ্বিধায় পড়ে গেল। সাহস করে সে জিগ্যেস করল, আসিফ ভাইয়ার চোখ কি ভালো হবে না?

যা এখান থেকে। ভালো হবে কিনা আমি কী জানি? আহ্লাদ। নাদিম কড়া জবাব দিল।

দীপালী মুখভার করে দাঁড়িয়ে রইল। সে এমন ব্যবহার আগে কখনো নাদিমের কাছ থেকে পায়নি। আজকের ব্যবহারটা সত্যি অবাঞ্ছিত। অপমানজনক। বিস্ময়কর।

দীপালী নাদিমের খালাত বোন। ওদের বাড়ি চাঁদপুরে। দীপালী এখানে থেকে লেখাপড়া ইডেনে পড়ে। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।
নাদিমরা দুভাই। নাদিম ছোটো। বড় ভাই শাকিব লন্ডনে চলে গেছে।

নাদিমকে কিছুদিন যাবৎ কাছে না পাওয়াতে মায়ের মেজাজ তিরিক্ষি হয়েছে। দীপালীর ধমকটা তিনি রুম থেকে শুনে এবার মনে হলো গলায় শান দিয়ে নাদিমের কাছে এসে দাঁড়ালেন। রাগে কটমট করে বললেন, মেয়েটা একটা ভালো কথা জিগ্যেস করল আর তুই ওকে ধমক দিলি কেন? এইসব কী? এটা কি বন্ধুপ্রীতির জন্য? দেখি কদিন চলে তোর বন্ধুপ্রীতিতে? বন্ধুকে নিয়ে… কী বলতে গিয়েও তিনি থেমে গেলেন। আরও কয়েকটা কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে কীভাবে রাগ সামলাবেন তা তিনিই জানেন। সাধারণত মায়ের রাগ হলে হুঁস থাকে না।

মায়ের অবস্থা দেখে দীপালী কেটে পড়ল। নাদিমের মা রান্নাঘরের দিকে ঢুকতেই নাদিম রুম থেকে বের হয়ে গেল। রাস্তায় নেমে সে এমনভাবে হাঁটতে লাগল তাতে মনে হচ্ছে তার শরীরে কোনো শক্তি নেই। হাঁটতে হাঁটতে নিশাদের বাসায় গিয়ে সোফাতে ধপাস করে বসে পড়ল নাদিম। নিশাকে ডেকে বলল, নিশা পারো তো এক কাপ চা খাওয়াও।

তুমি বসো আমি চা নিয়ে আসছি।

নিশা রান্না ঘরে চলে গেলে নাদিম চুলে আঙুল সঞ্চালন করল। মনে হচ্ছে চুলে হাফ কেজি ধুলোবালি জমেছে। কত দিন ধরে চুলে শ্যাম্পু পড়ে না সে বলতে পারছে না। ঢাকার রাস্তায় একদিন ঘুরলেই চুলের গোড়ায় যে ধুলোবালি পড়ে তাতে অন্তত পেঁপে গাছের রোপনের কাজ চলে। নাদিম পাশের রুমটার ভিতরের দিকে তাকাল। সেখানে আসিফের মা বসে আছেন চুপচাপ। মনে হচ্ছে তসবিহ্ধসঢ়; জপছেন।

অকাল বৈধব্যের পর মানবেতর জীবনযাপনের কষ্ট সন্তানদের ভালোবেসে মানুষ করার ব্যস্ততায় ভুলে থাকলেও আসিফের অকস্মাৎ দুর্ঘটনার কষ্টটা মা সামলে নিতে পারেননি। তিনি মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত যে কোনো কাজেই সান্ত¡না না পেয়ে দিনরাত নামাজবন্দেগি আর তসবিহ নিয়েই বসে থাকেন। কদিনেই নাওয়া-খাওয়ার অনিয়ম হওয়াতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বিছানা থেকে শুধু নামাজের সময়টাতে ওঠেন। ছেলের কষ্টে শরীর অর্ধেক হয়ে গেছে এই কয়েক দিনে। নিশা আর নাদিম অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু তাতে কাজ হলো না। নামাজ পড়ে ছেলের জন্য প্রার্থনা করেন। শুয়ে শুয়ে তসবিহ্ জপেন।

মাঝে মাঝে তার শরীরটা একটু বেশিই খারাপ হয়ে পড়ে। শরীর কেমন করে তিনি বোঝাতে পারেন না। একটু কাঁপুনির ভাব হয়, শরীর ঝিমঝিম করে, তারপর কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে আবার আস্তে আস্তে ঠিক হয়। নিশা ডাক্তার দেখাতে বললেও নাদিমের মা গা করেন না। নিশা বড়জোর একটু লেবুর শরবত করে খাওয়ায়─ এতেই যা হয়।

মাগরিবের আজান হলো। নিশার মা নামাজ পড়তে বসলেন। নিশা চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে নাদিমকে জিগ্যেস করল, ভাইয়া আজ ক্যামন আছে? আচ্ছা নাদিম ভাই, তুমি সত্যি করে বলো তো ভাইয়ার চোখ ভালো হবে না?

নাদিম সরাসরি উত্তর দিল না। সে অন্য প্রসঙ্গ এনে কথা বলল। আসিফের জামার পকেটে কোনো ছবি পেয়েছো?
হ্যাঁ। একটা ছবি দেখেছি। ছবিটা নষ্ট হয়ে গেছে। রক্তের দাগ লেগে আছে। কার ছবি এটা?
আসিফের ভালো লাগা এক মেয়ের ছবি। রোজী নাম।
মেয়েটি খুব সুন্দর দেখতে। এই মেয়েটিকে কি ভাইয়া ভালোবাসে?

মনে হয় ওরা প্রেম করতে শুরু করেছিল। কারণ, আগে কোনো দিন শুনিনি তাই এমনই মনে হচ্ছে।
তুমি বসো আমি ছবিটি নিয়ে আসি।
নিশা দৌড়ে গিয়ে ছবিটি নিয়ে এলো।

নিশা ছবিটি নাদিমের হাতে দেওয়ার আগে একটুক্ষণ দেখল। চোখ দুটি অদৃশ্য পানিতে ঝাপসা হয়ে উঠল ওর। নাদিমের হাতে ছবিটি দিল। ছবিটি হাতে নিয়ে নাদিম অনেকক্ষণ দেখল।

সত্যি সুন্দর, অপূর্ব সুন্দর। ছবি থেকে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া সত্যি কঠিন। ডাগর ডাগর চোখ, থুতনির নিচে একটা তিল তার অনন্য এক মাত্রা। ছবিটি হতে হঠাৎ চোখ তুলে নাদিম দেখে নিশা ওর দিকে তাকিয়ে আছে খুব অসহায় চোখ মেলে। এই অসহায়ত্বের চোখ নাদিমকে কাতর করে তোলে।

নাদিম বলল, আমি এখন যাই। যা হবার তো হয়েই গেছে। পুরনো কথা ভেবে কেন দুঃখ পাওয়া? আমরা যে কত বড় দুঃখ পেয়েছি তার তুলনায় অন্য সব দুঃখ বড়ই তুচ্ছ, বড়ই নগণ্য। নাদিম রুম থেকে বের হয়ে গেল। নিশা অন্যমনস্কভাবে বাইরে তাকিয়ে রইল।

রাস্তায় নেমে নাদিম রিকশা ডাকল। একটা রিকশা এসে সামনে দাঁড়ালে ওর হঠাৎ মনে হলো পকেটে টাকা নেই। তবু সে পকেটটা আবার পরখ করে দেখল, হ্যাঁ সত্যিই কোনো টাকা নেই।

নাদিম রিকশাওয়লাকে বলল, যান ভাই পকেটে টাকা নেই। রিকশাওয়ালা নাদিমের দিকে তাকিয়ে কী যেন বলতে গিয়েও থেমে গেল। নাদিম হাঁটতে শুরু করল। মনে মনে বলল, বাবার কাছ থেকে টাকা নিতে হবে।

আসিফ শুয়ে আছে আগের মতোই। তবে এখন একটু সতেজ লাগছে। মনে হচ্ছে তার দুশ্চিন্তার ভাবটা আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে। মানুষের শান্ত সৌম্য হাসিখুশি মুখ দেখলে সবারই ভালো লাগে। এমন কি ফাঁসির আসামিও যদি হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়িতে ঝোলে সেই হাসিটিই মানুষের মনে চিরস্থায়ী দাগ কাটে। প্রথামতই নাদিম আসিফকে জিগ্যেস করল, কী করছিস? এর বাইরে আর কী জিগ্যেস করারই বা আছে?

আসিফ উত্তর দিল, আমি আর কী করব? শুয়ে থাকা ছাড়া আমার আর কী করার আছে?
নাদিম বলল, ছবিটা পেয়েছি।

Series Navigation<< উপন্যাস।। ছায়াপথ।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব তিনউপন্যাস।। ছায়াপথ।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পঞ্চম পর্ব >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *