উপন্যাস।। ছায়াপথ।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। ছয় পর্ব

নাবিলা দাঁড়িয়ে থেকে নিচের ঠোঁট কামড়াতে লাগল। নাদিম আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।

আসিফের দুর্ঘটনার পর নাদিম এত বদলে গেল কেন? যে মানুষটি নাবিলার সঙ্গে একদিন দেখা না হলে ক্লাস করত না, খাতাপত্র রাগে ছিঁড়ে ফেলত সে মানুষটির সঙ্গে তিন মাস পর দেখা হলো তাও আবার তাকে রেখে একা একা চলে গেল—কী করে সম্ভব হয়? নাবিলা কীভাবে এই সত্যটাকে বিশ্বাস করবে? কেন-ই-বা করবে? এই সাতকাহনের মরতবা কী? কেন নাদিমের এত পরিবর্তন? নাকি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়ার জন্যই তার এই পরিবর্তন? এমন অনেক প্রশ্নের জালে নাবিলা আস্তে আস্তে আটকাতে থাকে। এক সময় এমনভাবে আটকে গেল যে সে স্থবির হয়ে পড়ল। জালে আটকা পড়া মাছের মত তার অন্তরাত্মার মধ্যে বিষম অস্থিরতার সৃষ্টি হল। এই জালটাকে সে ছিঁড়ে বের হয়ে আসতে পারছে না। বরং জ্যামিতিক হারে তার মনের ভেতর প্রশ্নই তৈরি করতে লাগল।

আসিফকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করা হলো আজ।হাসপাতাল থেকে বের হয়ে এলো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আসিফ। ডাক্তার বলে দিয়েছেন তার দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে উন্নত চিকিৎসা করালে হয়তো দৃষ্টি ফিরে পেতে পারে।বাংলাদেশের চিকিৎসায় তার দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার আশা না করাই ভালো।

আসিফ হাসপাতাল থেকে বের হলো নাদিমের কাঁধে ভর করে।বারান্দাটা পার হয়ে আসিফ বলল, নাদিম আমি এই জীবনের ভার কী করে সহ্য করব? আমার মৃত্যু যে কেন হলো না? কী দরকার ছিল এমন দেহে প্রাণায়ু থাকার? আসিফের চোখ ভিজে ওঠে। হাসপাতালের লোকজন চেয়ে আছে ওদের দুজনের দিকে।সবার চোখেই করুণার ভাব।কেউ কেউ একটু এগিয়ে এসে ওদেরকে দেখেও গেল, বিশেষ করে, যারা এই হাসপাতালে দীর্ঘ দিন ধরে আছে।এই হাসপাতালে দীর্ঘ দিন পড়ে থাকা একটা বিশেষ নিয়ম।পঙ্গু হাসপাতালে কেউ ভর্তি হতে পারলে দিনের হিসেব ছেড়ে দিয়ে মাসের হিসেব শুরু করে।

নাদিম একটা সানগ্লাস কিনে এনেছিল। আসিফকে বলল, গ্লাসটা পর।

আসিফ আপত্তির স্বরে একটু হেসে বলল, যার চোখ নেই তার আবার গ্লাস। আমার শ্রীহীন চোখ দুটি ঢেকে মানুষকে ফাঁকি দিয়ে কী লাভ? তারচেয়ে বরং মানুষ দেখুক আমি অন্ধ, আমার অন্ধত্বকে কাল চশমা দিয়ে ঢাকব কেন?

নাদিম কী বলবে ভেবে পায় না। সে তো ঠিকই বলেছে শ্রীহীন চোখ দুটি ঢেকে মানুষকে ফাঁকি দিয়ে বুঝানো কি উচিত যে সে শ্রীহীন কিংবা দৃষ্টিহীন নয়।

নাদিম বলল, তুই ফাঁকি দিতে যাবি কেন? এমন ভাবছিস কেন? মানুষ তো তোকে দেখে করুণাও দেখাতে পারে। তোকে দেখে মুখ ফেরাতে পারে। অন্তত সে দিকটা বিবেচনা করে দ্যাখ।

আসিফ আর কথা বলল না। সে ভাবল হয়তো তার মুখশ্রী বদলে গেছে যা দেখলে মানুষ ভয় পাবে। কোনো মানুষকে ভয় পাইয়ে দেয়ার অধিকার তার নেই। নিজেকে সমীচীন দূরত্বে রাখাই ভালো। হাত বাড়িয়ে কালো গ্লাসটাকে নাকের ডগায় সেঁটে দিয়ে মনে মনে বলল, আসিফ তোমার এই অন্ধকার পৃথিবীকে কালো গ্লাস দিয়ে ঢেকে রাখো যেন অন্ধত্বের অন্ধকার আর কোথাও না ছড়ায় আর সাথে সাথে মেনে নাও জীবনকে বাঁচিয়ে রাখাও প্রয়োজন। ইচ্ছে করলেও অনেক কিছু করা যায় না। মা ও বোনের জন্য হলেও তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে। নিয়তির খেলা বলতে একটা কিছু আছে তা বিশ্বাস করে নাও।

হাসপাতালের গেটেই ওরা রিকশায় ওঠে। নাদিমের হাতে আসিফের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। নিশার আসার কথা থাকলেও আসেনি। তার মাও আসেননি। নাদিম সকালেই বলে এসেছিল তাদের কারও আসার প্রয়োজন নেই।

রিকশায় যেতে যেতে আসিফ জিগ্যেস করল, নাদিম আমাদের পাশ ঘেঁষে রিকশা দিয়ে সুন্দরী তরুণীরা যাচ্ছে না?

উহু, যাচ্ছে।

তুই তাকিয়ে দেখছিস?

দেখছি।

আগের মতো তুই আমাকে দেখতে বলছিস না যে?

নাদিম কোনো কথা বলে না। স্তবির হয়ে ভাবতে লাগল, আসিফের দিন কীভাবে চলবে।

নাদিম কোনো মেয়ে কি আমাদের দিকে তাকায়?

না, তাকায় না।

কেন ওরা কি বুঝে ফেলেছে আমি অন্ধ?

এত কথা বলছিস কেন? বাস্তবতাকে সহজভাবে নিতে পারছিস না কেন?

নিতে তো হবেই। কিন্তু এ যে খুব বেশি নিকটের অতীত। ভুলতে পারছি না। বিভ্রম হচ্ছে। এই কয় দিনে ঢাকার সৌন্দর্য কি বেড়েছে না কমেছে?

কমেছে। ঢাকা দিন দিন শ্রীহীন হচ্ছে।

রোজী তো ঢাকায় কোনো দিন আসবে না। আর আসলেই বা কি? আমি তো আর আমি নই। বিধ্বস্ত। ভেঙে পড়া খণ্ডিত ব্রিজ। তবে জানিস আমি রোজীকে খুব ফিল করছি। ওকে একটি মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারছি না।

ওকে একটা চিঠি দিলে হয় না?

না। না। এমনটা করবি না। তাহলে তো ও আমার কাছ থেকে হারিয়ে যাবে। নাদিম তোকে বোঝাতে পারব না আমি যে কতটা ফিল করি। আমি যত দিন বেঁচে থাকব আমার অনুভূতির স্পর্শে ওকে আমার স্পন্দনে জাগিয়ে রাখব। আমি মনে করব ও আমার-ই আছে। আর তুই চিঠি দিলে নিশ্চিতভাবে জেনে নিচ্ছি ও আমার কাছে নেই।

কিন্তু ওর অপেক্ষা যে দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। তাকে অপেক্ষার সুতোয় বেঁধে রাখা কি তোর ঠিক হবে?

না, সেটা ঠিক হবে না। কিছুদিন হয়তো বা মনে রেখে আবার সে ভুলে যাবে। পাতবে নতুন জীবন। গড়বে নতুন সংসার। আমার কাছে মনে হবে ও আছে, ও থাকবে। আমি ওর জন্য অপেক্ষা করছি।

হাসপাতাল থেকে আসিফদের বাসা আর কত দূর? এই তো কাছেই। কতক্ষণ আর লাগবে? একটু পরেই পৌঁছে যাবে। বাসায় গিয়ে হয়তো সে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করবে। না কি হয়— তাই বা কে জানে?

আসিফ একবার বলল, জানিস নাদিম আমার ত্বক এখন আগের চেয়ে বেশি সেনসেটিভ হয়ে উঠেছে। আলোর প্রকৃতি, রৌদ্রের তাপ এসবই কিন্তু আমাকে ম্যাসেজ দিচ্ছে বারবার। এখন কটা বাজে আমি বলতে পারব। সূর্যের তাপ থেকে রিড করতে পারছি। এই ধরনের অনুভূতিকে কী মেটা ফিলিং বলা যায়? কিংবা মেটা কমিউনিকেশন?

হয়তো বলা যায়, নাদিম বলল। তারপর আসিফের কথার যথার্থতা যাচাই করার জন্য জিগ্যেস করল, এখন কটা বাজে বল তো।

আসিফ বলল, সাড়ে পাঁচটার কাছাকাছি। এই দু-এক মিনিট এদিক সেদিক হতে পারে।

নাদিম রিষ্ট ওয়াচের দিকে তাকিয়ে দেখে বাজে পাঁচটা চৌত্রিশ। আসিফকে উৎসাহিত করার জন্য বলল, ঠিক বলেছিস। এত ঠিক করে বলতে পারলি!

রিকশাওয়ালা ওদের আলাপগুলো শুনছিল। মাঝে মাঝে পিছনে ফিরে দু-একটা কথার উত্তর দিতেও চেষ্টা করছিল। এবার সময়ের আলোচনাটি হওয়াতে সে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল। নাদিমের কাছে জানতে চাইল, স্যার ঠিক বলেছে?

নাদিম কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে। বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। হ্যাঁ একেবারে ঠিক। তুমি সামনের দিকে চেয়ে চালাও মামা। এদিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। নাদিম রিকশাওয়ালাকে বিরক্তির সঙ্গেই বলল।

আসিফের দুঃখটা পুরনো। শব্দহীন যন্ত্রণা আছে এতে কিন্তু প্রকাশের উচ্ছলতা নেই। মর্মে মর্মে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিদ্ধ হয়ে আছে কষ্টের বর্ণমালা। আসিফ বাসায় যাওয়ার পর মনে হলো সবকিছু মেনে নেওয়ার মতো একটা স্বাভাবিক শান্ত পরিবেশ।

বাসায় আসার পর আসিফের মা আসিফকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলেন। নাদিম তখন সে কান্না সহ্য করতে পারেনি। সে বাইরে বের হয়ে গেল।

নিজেকে সামলে নিল আসিফ। সে মাকে বলল, মা তুমি শান্ত হও তো। দেখবে আমি একদিন ভালো হয়ে যাব। আর না হলে নেই। আমি কি কাজ করতে পারব না? দেখো তোমার ইঞ্জিনিয়ার ছেলে হেরে যায়নি। কিছুক্ষণ নীরবতায় কেটে গেল। তারপর আসিফ আবার বলল, মা তুমি এত শুকিয়ে গেলে কী করে?

নিশা বলল, তোমার অ্যাকসিডেন্টের পর থেকে মার এই অবস্থা। একটা অস্বাভাবিক বেদনাময় স্তব্ধতা নেমে এল এই বাড়িটিতে। এবার আসিফের সান্ত্বনা দেওয়ার পালা। মা আমার কপালে দুঘর্টনা আছে। তুমি কী করে ফেরাবে? তুমিই যদি ভেঙে পড় তবে আমার বেঁচে থাকার উপায় কী মা? তুমি যে আমার অবলম্বন।

মা শাড়ির আঁচলটি আরও শক্তভাবে তার চোখে চেপে ধরেন।

আসিফের মা ভিতরের রুমে চলে যান। তিনি আবার জায়নামাজে গিয়ে বসেন। তাঁর জায়নামাজ আর তসবিহ ছাড়া আর সব কিছুই যেন অর্থহীন।

আসিফ নিজেকে তৈরি করে কীভাবে বাকি জীবনের পথ পাড়ি দেবে। তাকে তৈরি হতেই হবে। সে নিশাকে ডেকে বলল, তুই দেখ তো নিশা। আমাকে ফলো কর। আমি একটা করে ডিরেকশন খুঁজে নিচ্ছি। সামনের দিকটার দরজাটা ধরে বলল, এটা উত্তর দিক। মা পাশের রুমে। ডান দিকটা পূর্ব দিক। বাথরুম এটা। এখানে জানালা।

এভাবে আস্তে আস্তে তার সমস্ত বাড়িটা একটা মানচিত্র অংকন করে মনের ভেতরে। আসিফ বলল, নে এখন আমাকে আর হাত ধরে টেনে টেনে নিতে হবে না, কী বলিস নিশা? নিজেই এখন পথ চলতে পারব।

যে বাড়িতে দুরন্ত আসিফের বিশটি বছর কেটেছে সে বাড়িতে নেমে এসেছে স্তব্ধতা। এত পরিচিত এত জানাশোনা প্রতিটি বিষয়কে আজ নতুনভাবে পরিচয় করে নিতে হচ্ছে তাকে। মনে হচ্ছে কোনো অপরিচিত বাড়িতে কোনো নতুন অতিথি এসেছে আজ। নিশা আসিফকে সব কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে। আর আসিফ অন্ধকার পৃথিবী থেকে বুঝে নিচ্ছে তার প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করার জিনিসপত্র। পরিচিত পথে অজানা পথিকের পথ চেনা।

ওদের অবস্থা দেখে নাদিমকে খুব অসহায় লাগছিল, খুব অস্বস্তিও বোধ করছিল। তার মনোজগতে সৃষ্টি হয়েছে ভিন্ন রকমের প্রতিক্রিয়া। এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করছে না। নাদিম বলল, আসিফ আমি পরে আসব। এখন যাই।

আসিফ ওর খাটের ওপর বসে। তার চোখে ভেসে আসছে কীভাবে বাসটি ট্রাকটির মুখোমুখি হলো। আসিফ তখন কিছুটা ঝিমুচ্ছিল। মাঝে মাঝে চোখ খুলে বাহিরটা দেখছিল। মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। হঠাৎ দেখতে পেল একটা ট্রাক একটু এলোমেলো হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। এই বাসের মানুষগুলো চিৎকার করছে গাড়ি সাইড করার জন্য। ড্রাইভার গাড়িটিকে প্রায় সড়কের বাম পাশে নিয়ে গেছে। কিন্তু ট্রাক ড্রাইভার ট্রাকটির নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। হঠাৎ একটা বিকট শব্দ হলো। এ পর্যন্তই আসিফের মনে আছে। মুহূর্তের মধ্যেই কী হতে কী হয়ে গেল আসিফ আর বুঝতে পারে না। কয়জন মারা গেল? আমিই কেন বেঁচে রইলাম? কেন-ই-বা অন্ধ হলাম? এখন খাটের ওপর বসে বসে আসিফ এই কথাগুলো ভাবছে। এই রকম বেঁচে থাকার মধ্যে কী আছে? এই সংসার, এই জীবন কীভাবে চলবে? আমাদের কে খাওয়াবে? নিশা তো একা একা সামাল দিতে পারবে না। ও এখনো ছাত্রী। তাও খুব ভালো ছাত্রী নয়। খুব সাহসীও নয়। তাহলে কী হবে তিনটি জীবনের? আসিফের মা বলতে গেলে সংসারের হাল ছেড়ে দিয়েছেন। এখন প্রধান অবলম্বন নিশা। এখন পর্যন্ত সে সাহসের সঙ্গে সব কিছু মোকাবিলা করছে।  আর কত দিন পারবে?

নাদিমের মায়ের ব্যবহারের মধ্যে রুষ্টতা বদ্ধমূল হতে শুরু করেছে। বাসায় এখন নাদিমের সঙ্গে মা ভালো করে কথাই বলতে চান না। নাদিমও মাকে এড়িয়ে চলে। আজকে যখন নাদিম বাসায় ঢুকল তখন মা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনো কথা বলেননি। তার চোয়াল শক্ত করে একবার মাত্র নাদিমকে দেখেছেন। নাদিমের মায়ের পর তো দীপালীর অনুশাসন আছেই। বলতে গেলে এই বাড়িতে মায়ের পরেই দীপালী নাদিমের পিছনে লেগেই আছে। নাদিম রুমে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পড়ল। বালিশটা অনেকটা দূরে পড়ে আছে। একটা পায়ের স্যান্ডেল খোলা। অন্য পায়ে স্যান্ডেল রয়েই গেছে। চোখ বন্ধ করে সে কী যেন ভাবছে। এই সময় দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দীপালী জিগ্যেস করল, কত দিন গোসল করো না ভাইয়া?

নাদিমের দৃষ্টি উদাস। ছাদের দিকে সে চেয়ে আছে। নাদিম বিছানায় শুয়ে কী যেন ভাবছিল। মুখে খোঁচাখোঁচা দাড়ি। দীপালীর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। খুব শান্তভাবে জবাব দিল, পাঁচ দিন।

পাঁচ দিন গোসল না করে একজন মানুষ থাকতে পারে?

আমি কি থাকছি না? নাকি আমি মানুষ না?

থাকছো তো। এ জন্যই তো এত ভালো। শরীর মন জুড়িয়ে যায়। দীপালী ঠোঁট বাঁকিয়ে কথাগুলো বলল। নাদিমের গা যেন জ্বলে যায় দীপালীর কথা শুনে। নাদিম বলল, যা এখান থেকে। দরদ রে আমার। আমাকে আমার মত থাকতে দে।

যাও গোসল করে এসো। আমি চা দিচ্ছি। গোসলের পানি গরম করে দেব, দীপালী জানতে চায়। নাদিম কোনো কথা বলেনি। সে নিজের ভাবনায় ডুবে আছে। একটু নড়ছেও না। দীপালীর কথায় কোনো সাড়া না দেওয়াতে সে চলে গেল। দরজার কাছে গিয়ে বলল, মানুষ একটা, কাঠকুট্টার এক শেষ।

রাতের খাবারের সময় মা নাদিমকে ডাকেন। তিনি একটু কড়া ভাষায় বললেন, ভাত খাবি তো শুয়ে আছিস কেন? এত দিনে শেষ হলো এটেনডেন্টের ডিউটি? খেতে আয়।

দীপালী, মা আর বাবা খেতে বসেছে। নাদিম সুবোধ বালকের মতো মাথা নিচু করে ওদের পাশে গিয়ে বসল।

দীপালী বারবার নাদিমের দিকে তাকায় কিন্তু নাদিম একবারও মুখ ফেরায়নি। নাদিমের মা বললেন, নিজেই তো একটা রোগী হয়েছিস সেদিকে খেয়াল আছে?

নাদিম কথা বলল না। চুপচাপ। খেতেও অরুচি। কোনো কিছুই যেন গলা দিয়ে নামছে না। তার মাথাটাও যেন নষ্ট হয়ে গেছে। মাথায় কি যেন একটা চিন্তা ঢুকেছে তা বোঝা কঠিন। মাঝে মাঝে ভাবে কোনো নিউরোলজিস্টের কাছে যাবে কি না? পরক্ষণেই ভাবে তার সমস্যাটা তো সে নিজেই বোঝে। নিউরোলজিস্ট কী করবে? নিজেকেই রিকভার করতে হবে।

নাদিমের মা আবার বললেন, হয়েছিস তো বাবার মতো। কথার জবাব দিবি না। তা দিবি কেন? আমি তোদের কে?

নাদিমের মায়ের কথা শুনে বাবা অসহায়ভাবে তাকালেন। কী যেন বলতে চাইলেন কিন্তু থেমে গেলেন নাদিমের মায়ের দ্বিতীয় অগ্নিঝরা কথায়। তিনি বললেন, এভাবে তাকাতে হবে না। ঠিক কথাই বলেছি। চুপ করে ভাত খাও। নাদিমের বাবা খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন। স্ত্রীর সঙ্গে বাড়াবাড়ি তিনি করেন না। স্ত্রীর প্রতি তার বিরূপ মনোভাব আছে, কথা বলতে গেলেই ঝগড়া হবে, বদরাগী মহিলার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন কী? নিজের মতোই তিনি থাকেন। সম্পর্কটা অনেকটা রাজা-প্রজার মতো।

নাদিম খুব জেদি। নিজে যা ভালো মনে করে তাই করে। শুধু নাবিলার ভালোবাসার কাছে সে মাথা নত করতে পেরেছিল। জোর করে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে কিছু করানো সম্ভব হয়েছিল কেবল নাবিলার পক্ষেই। মার কাছে এজন্যই হয়তো নাদিমের চেয়ে তার বড়ো ভাই বেশি আদর পায়।

এই একগুঁয়ে বদমেজাজি নাদিমকে দীপালীর ভালো লাগে। সে বিশ্বাস করে এগুলো পুরুষালি বৈশিষ্ট্যকে সমৃদ্ধ করে। মিনমিনে স্বভাবের ছেলেদের দীপালীর অসহ্য। পুরুষের যদি তেজ না থাকে, যদি সংগ্রামী না হয়, আত্মপ্রত্যয়ী না হয় তাহলে কীসের পুরুষ। সে মনে করে নাদিম একবার যদি দীপালীর প্রেমে পড়ে তাহলে তাকে বিচ্ছিন্ন করা খুব কঠিন। এমন একটি আত্মবিশ্বাস ওর মনে শিকড় গেড়েছে।

নাদিমের মা দীপালীকে বাসায় আনার পিছনে একটা গোপন উদ্দেশ্যও আছে—দীপালীকে নাদিমের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া। নাদিম যদিও এ বিষয়টা জানে না কিন্তু স্মার্ট সুদর্শনা দীপালীর অজানা নয়। নাদিমের মা দীপালীর মাকে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, দীপালীকে শুধু কি লেখাপড়ার জন্যই নিচ্ছি, আমার কাছেই রেখে দেব। দীপালীর মা তখন হেসে বলেছিল, বুবু আমি কি তোমার অবাধ্য হয়েছি কখনো? সেই থেকে দীপালী নাদিমের মায়ের কাছেই থাকে। লেখাপড়া করে, নাদিমকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে ঘর বাঁধার।

আসিফ নিজের মতো করে তৈরি হতে থাকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু কী করবে সে ঠিক বুঝতে পারছে না। নিশার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। আসিফের পরিবারের সবাই মনে করে আসিফ একদিন চোখের আলো ফিরে পাবে। উন্নত চিকিৎসার করাতে পারলে ভালো হবে কিন্তু টাকা কোথায় পাবে? আসিফের কোম্পানিকে একবার বলে দেখলে হয় না? তার মায়ের মনে নানান চিন্তা এসে ভিড় করে। কখনো ভাবেন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেবে মানুষের সাহায্যের জন্য। কখনো ভাবেন গ্রামের বাড়িতে যত জমি আছে সব বিক্রি করে দেবেন, ঢাকার বাসাটি বিক্রি করেন দেবেন তবু ছেলের চিকিৎসা করাবেন। আবার ভাবেন বাড়িতে আর ক’বিঘা জমিই বা আছে? ঢাকার এই বাড়িটা বিক্রি করেই বা কয় টাকা পাওয়া যাবে? এরপর যদি ভালো না-হয় তাহলে কী হবে? তখন তো ছেলে ও মেয়ে দুজনই থাকার মতো আশ্রয়ও হারাবে। এমন নানান চিন্তায় আসিফের মা সারাক্ষণই অস্থির থাকেন। তার অস্থিরতা দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছে। এক জায়গায় তিনি একটু সময় স্থির হয়ে বসতে পারেন না। মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে বিড়বিড় করে বলেন, কে টেলিফোন করে আসিফকে ঢাকা আসতে বলেছিল? তার কী স্বার্থ ছিল? আমার আসিফকে ঢাকায় ডেকে আনার কী প্রয়োজন ছিল? আবার কখনো লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদেন।

আসিফের বাবা ব্যাংকের লোন আর গ্রামের বাড়ির জমি বিক্রি করে ঢাকায় থাকার জন্য এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। এখন এটিই ওদের বড় নির্ভরতা। আসিফের বাবা মারা যাওয়ার পর গ্রামের বাড়ি থেকে ধান চাল বিক্রি করে কিছু পেতেন। এখন এইসব জমিও আসিফের চাচাদের দখলে।

ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে মা নিজে টিউশনি করতেন। মাঝে মাঝে কাপড় সেলাই করতেন। দীর্ঘদিন পাড়ি দিলেন অভাবের সংসার। এতগুলো বছর তো কেটেই গিয়েছিল। ভেবেছিলেন আসিফ বড় হলে তাদের দুঃখ দুর্দশা দূর হবে। তেমন একটি সূর্যের আলো চোখেও পড়েছিল তাদের। কিন্তু সে সূর্যটি হঠাৎ নিভে গেল। আসিফদের পরিবারটি নিমজ্জিত হলো কৃষ্ণগহবরে—যেন অসীম সময়ের জন্য। আসিফ মাধ্যমিক পাস করে নিজেও কিছু উপার্জন করত। টিউশনি করে নিজে চলতো আর সংসারের কিছুটা সাহায্য করতে পারত। নিশার স্কুলের খরচ জোগাড় করত আসিফই।

বিকেলে নাদিম এসে আসিফকে বাইরে নিয়ে গেল। চন্দ্রিমা উদ্যানে এসে বসল দুজন।

নিজের দুঃখকে আর বাইরে প্রকাশ করতে চায় না আসিফ। বাস্তবতার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছে।

আসিফ বলল, তোর কি মনে আছে আমাদের পাড়ার সেই অন্ধ ভিখেরিটির কথা? ওই যে সাহেব আলী!

নাদিম হেসে বলল, হুঁ মনে আছে। ওর কথা মনে থাকবে না আবার? আমাদের কত ভাব ছিল তার সঙ্গে।

সাহেব আলী ছিল একজন অন্ধ ভিখেরি। বোকাও ছিল। তার একটা মেয়ে আসিফদের পাড়ায় রাস্তার মোড়ে সকালে বসিয়ে দিয়ে যেত। আর সন্ধ্যায় এসে নিয়ে যেত। কিছুদিন পর দেখা গেল আরও একজন অন্ধ ভিখেরি পাশে এসে বসেছে। নতুন অন্ধ লোকটি পাশে বসাতে সাহেব আলী ঝগড়া করত তার সঙ্গে। কেন সে এখানে বসবে? দুনিয়াতে কি আর জায়গা নেই তার? এখানে আসবে কেন? এই ছিল তার ঝগড়ার কারণ।

আসিফ আর নাদিম সাহেব আলীর পক্ষ নিত। সাহেব আলী ছিল অসম্ভব ত্যারা স্বভাবের। এটা একটা রাস্তার মোড়− অন্যজন বসলে অসুবিধা কোথায়? রাস্তাটি কী তার বাপের? সাহেব আলীর হয়তো ভিক্ষা কম উঠত তাই ঐ ভিক্ষুককে সে সহ্য করতে পারত না।

নাদিম ঐ দুজনের মধ্যে ঝগড়া লাগানোর জন্য সাহেব আলীকে ইন্ধন যোগাতো। মারামারি বাঁধিয়ে দিতে চাইতো। কীভাবে তারা মারামারি করে এটা দেখার খুব আগ্রহ ছিল নাদিমের। শেষে যখন পারত না তখন সাহেব আলীকে গালি দিতে বলতো নাদিম। আর শুরু হয়ে যেতো দুজনের মধ্যে গালাগালি। গালাগালি হতো অকথ্য ভাষায়।

কখনো কখনো লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠত তাদের গালাগালি শুনে। মাঝে মাঝে নাদিমকেও লোকজন গালি দিত। এই ত্যাঁদর পোলাটাই নাটের গুরু। এই নাটের গুরুটাকে শায়েস্তা করা উচিত। লোকজনের এমন কথা শুনে ওরা হাসত।

একদিন আসিফ একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দিল সাহেব আলীকে।

সাহেব আলীর পাশে যখন ঐ ভিক্ষুকটা আসবে তখন সাহেব আলীর নিজের থালায় থেকে একটু পর পর পয়সা ওপর থেকে শব্দ করে ফেলবে আর জোরে জোরে বলবে বিছমিল্লাহহির রাহমানির রাহিম। আল্লাহ্ তার সব গোনা মাফ করে দাও। রহম করো আল্লাহ্ রহম করো। আসিফের এই বুদ্ধিটাতে ভালো কাজ হয়েছে। সাহেব আলী একটু পর পর নিজের থালা থেকে একটা পয়সা নিয়ে ওপর থেকে জোরে ফেলে আর চিৎকার করে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। এতে পাশের ভিক্ষুক কিছুক্ষণ পরে রাগে উঠে চলে গেল। সে মনে করেছিল একই জায়গায় দুজন বসে আছি আর একজন ভিক্ষা পায় অন্য জন পায় না। মনের ক্ষোভে সে বিড়বিড় করে বকে, মাইনসের এই কিমুন বিওচনা? আল্লাহর দুন্নিয়াত মানুষ বড় মুনফেক। হে কি এহ্লা কানা? আমি কানা না?

সে চলে যায় আর এই মোড়ে কোনো দিন আসেনি।

সাহেব আলী সেদিন সে কি খুশিটাই না হয়েছিল।

সাহেব আলীর কথা মনে করে আসিফ বিমর্ষ হয়ে পড়ল। সে নাদিমকে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা নাদিম অন্ধদের ভিক্ষে ছাড়া কি কোনো অবলম্বন নেই? নাদিম বুঝতে পারে আসিফের দুঃখটা কোথায়? কেন জিজ্ঞেস করেছে এই কথা? এসব ছোট ছোট হতাশাব্যঞ্জক কথার মধ্য থেকেই জন্মগ্রহণ করে আত্মবিশ্বাস ধ্বংসের বিষফোড়া। নাদিম বলল, কেন হেলেন কেলার কি ভিক্ষা করতেন? বিজ্ঞানী মঁয়সা কি ভিক্ষাকে গ্রহণ করতেন? তুই নিজেকে এমন ছোট ভাবছিস কেন? বাংলাদেশে অনেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আছেন যারা অনেক সম্মানজনক কাজ করছেন।

আসিফ এবার প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাইল। সে বলল, উদ্যানে অনেক মানুষ তাই না?

হ্যাঁ।

আমার মত অন্ধ তো আর কেউ নেই, নাকি আছে?

আমার তো মনে হয় অনেকেই অন্ধ।

আসিফ হাসে। নাদিমের এই কথার মধ্যে হালকা দর্শন আছে যে দর্শনের কোনো মূল্য মানুষের কাছে নেই।

আমার খুব হৈ হল্লা করতে ইচ্ছে করে অতীতের দিনগুলোর মতো কিন্তু পারি না। পাছে কোথাও হোঁচট খেয়ে পড়ি।

না, হোঁচট খাবি কেন? হৈ হল্লা করবি। আনন্দ করবি। তুই তো আর দশজন মানুষের মতো নস্। ইচ্ছে করলে অনেক কিছু করার মতো তোর যোগ্যতা আছে। শুধু সাহসী হওয়াটা তোর জরুরি প্রয়োজন। আত্মবিশ্বাস বাড়ানো। তুই ভুলে যাসনি তুই একজন ইঞ্জিনিয়ার।

আমি ভাবছি কোন প্রফেশন নিয়ে বেঁচে থাকব? আমি কারও ওপর নির্ভরশীল হতে চাই না। নিশার জন্য কষ্ট হয়। সে এখন টিউশনি করে। লেখাপড়ার হবে কি না কে জানে?

অন্যের ওপর নির্ভরশীল হবি কেন? কিছুদিন যাক না। এত বড় একটা ধকল কাটিয়ে উঠতেও তোর কিছুদিন সময় লাগবে। অন্য কিছু করার মতো না থাকলে সারাদিন লিখবি। তোর তো লেখার অভ্যাস আছে।

আমার অতীতগুলোর কথা মনে হলে আমি পাগল হয়ে যাই। এমন সোনালি দিনের সূর্যটা দিনের মধ্যভাগেই নিভে গেল। আমি ভাবতে পারি না কিছুতেই।

অতীত নিয়ে আর কোনো দিন ভাববি না। The past is past সময়ের সার বর্তমান।

The past is the foundation of the present and the future is an invisible artitectural view only. অতীতকে বাদ দিলে জীবনের কিছুই থাকে না। অতীত হলো জীবনের হিসাব-নিকাশের গ্রন্থ। বর্তমান অতীতের ফলাফল। আর ভবিষ্যৎ? মহাকালের বকেয়া খাতা।

নাদিম বিশ্বাস করে আসিফের কথা। পরিবেশটা কেমন যেন ভাবগম্ভীর হয়ে যায়। এখানে আর ভালো লাগছে না। নাদিম বলল, চল্ একটু হাঁটি। অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ মহাকালের গর্ভে পড়ে থাক। হাঁটলে ভালো লাগবে। The discussion of time should be thrown in to the space of eternity.

ঝিরঝির বাতাস বইছে। এই উদ্যানে এলে শরীর মন অন্যরকম হয়ে যায়। মনে হয় শরীর-মনের ক্লান্তি ধুয়ে দেওয়ার জন্য রয়েছে উপাদেয় স্নিগ্ধতা। নির্মল শ্বাস-প্রশ্বাসের বিপুল আয়োজন। গাছে গাছে ভরা এই বিস্তৃত আঙিনা। মানুষ আছে কিন্তু চেঁচামেচি নেই। সরল ভালোবাসার পরিমল সবুজের সমুদ্র। ঘাসের চাতাল যেন রেশম কার্পেট। হাজারো প্রজাতির তরু-বৃক্ষে ছাওয়া শীতল পরিপাটি একেবারে হৃদয় স্পর্শ করে। এই সজীব-সবুজের অতলতায় ওরা ডুবে যায় কিছুক্ষণের মধ্যে।

লেকের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে শত শত কৃষ্ণচূড়ার গাছ। সবুজ পাতা উপচে পড়া রক্তের মতো লাল পুষ্পপুঞ্জ। সবুজ পটে রক্তিম আলপনা আঁকা। এ যেন স্মরণ করিয়ে দেয় বাংলার ইতিহাস। কখনো মনে হয় বাংলাদেশের পতাকা মৃদুমন্দ বাতাসে কাঁপছে কৃষ্ণচূড়ার ডালে।

এরপরও এই অসম্ভব সুন্দর আঙিনার কিছু দুঃখ আছে। সমস্ত সুন্দরের ভিতর কিছু কুৎসিত পদচারণা লক্ষণীয়। এখানে বিক্রি হয় মেয়ে মানুষের শরীর। কিছু কিছু তরুণও আসে যারা শরীর বিক্রি করে। সুন্দর পোশাকধারী মানুষগুলোর ভিতর থেকে জাগ্রত হয় হিংস্র বন্য প্রাণী। আদিম বন্যতা খেলা করে দারিদ্র্য-নিপীড়িত মানুষীদের রক্তমাংস নিয়ে। সন্ধ্যার পর উদ্যানের উত্তর পাশটায় শুরু হয় আদিম খেলা।

আসিফ ও নাদিম কিছুদিন আগেও তো এখানে এসে কত ছোটাছুটি করেছে। উদ্যানের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটে বেরিয়েছে কিন্তু আজকে তাদের মধ্যে সে গতি নেই। গতি হারিয়ে তারা হাঁটছে শামুকের মতো। আসিফকে ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে নাদিম। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা হেঁটেছে চন্দ্রিমা উদ্যানে। এক সময় আসিফ বলল, না রে আর পারছি না। চল এবার বাসায় যাই।

ওরা রিকশায় করে বাসায় ফিরে। নাদিম গুনগুন করে গান গায়। গানের সুর শেষ হতে না হতেই দেখে ওরা বাসার সামনে। কলিং বেল টিপতেই আসিফের মা দরজা খুলে দিলেন।

আসিফ জিজ্ঞেস করল, মা নিশা আসেনি?

না, এখনো আসেনি। এখনই এসে যাবে।

মা একটু চা খাওয়াতে পারবে?

Series Navigation<< উপন্যাস।। ছায়াপথ।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পঞ্চম পর্বউপন্যাস।। ছায়াপথ।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। সাত পর্ব >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *