রম্যগল্প।। বৌ ভাঁড়ুয়া।।গোলাম মোর্তুজা


মুঠো মুঠো ভুলে অলসতা আসে ঠেলে। বেআক্কেল গ্রামের ভুলন আলি, ভুল করে হালি হালি। বাবা সিরাত। ভালোই চেহারা সুরত। স্ত্রী রেবেকা, কথা বলে আঁকাবাঁকা। একদিন বলেন যেন মুখে বিষ ঢালেন। ‘ছেলে হলো বড়। ভাওতাবাজি ছাড়ো। ঘর কর আলাদা, তাতে ফায়দা। একই ঘরে মাঝে দেয়াল তুলে,
এভাবে কী চলে?’ স্ত্রীর কোনো কথায় পাতে না মাথা। ছেলেও ঘুরফির করে হেথা ওথা। একদিন ভুলনের বন্ধু কুচয়ন। দুজনে যায় না ঘাবড়ে। খায় পরের গাছের আম পেড়ে। ভুলন দুদিন ফেরে না বাড়ি, বাবা-মায়েরও নেই কানো বাড়াবাড়ি। ভুলন পেল আসকারা। গান গায় সুরহারা। একদিন বলেন বাবা,
‘এভাবে চললে আর কতদিন খাবা? হয়েছ বড় আমার লগে কাজে যাইবার পারো।’
বাবার কথা শুনে, ঘাড় কাত করে ভুলনে। সেদিন রাতে বন্ধুদের সাথে খায় গুলি। বাবা-মা করে কথা চালাচালি। স্ত্রী রেবেকা, কথা বলে একা, ছেলের একি হাল, এখন বিয়ে দেবার কাল। করল বিয়ের ঘটকালি, প্রেম আলি। খুঁজতে খুঁজতে মেয়ে, পেল চিকীষপুরে গিয়ে। ঘটক খলে, ছক এঁকে বলে। ‘এমন ছেলে দশ গ্রামে একটাই মেলে। প্রশংসায় বেলুন ফাটে, ঘটক ফন্দি আঁটে। ‘তাড়াতাড়ি দিতে হবে বিয়ে, টাকাকড়ি ভাগাতে হবে দুপক্ষে গিয়ে। বিয়ের দিন হলো পাকাপাকি। ভুলনও বলে কই আমার সাকি?’ বিয়ে হলো বেশ ধুমধামে, এ খবর ছড়াল গ্রামে গ্রামে।
ভুলন হয়ে গেল বৌ ভাঁড়ুয়া সকাল রাতে বৌ বানায় রুটি আর হালুয়া। ভুলন খায় আচ্ছা করে।
এ রকম স্বাদ পায়নি এ জনমের তরে।
কাজ-কর্ম শুরুও করেনি। বাবার হোটেলের খাবার ছাড়েনি। পাখি ডাকে গাছের ডালে। বায়ু বয় পলে পলে। পরিবারে বেড়ে যায় হাই হাই। মুখ বেড়েছে টাকা বাড়েনি তাই তাই। বাবা সুরত বলেন, ‘এভাবে কী চলবে হেসে খেলে। এর চেয়ে ভালো, কাজে চল। মুখ বেড়েছে একটি খুঁজতে হবে কাজের পথটি।
ছেলেমি ভাব আর নয়। সংসার চালাতে টাকা চাই।’ বাবার কথার জবাবে, দেখায় জমিদারী আবভাবে। বলে, ‘না আব্বা, ও সব তুমি করবা। আমি থাকমু বাড়িতে। সকাল দুপুর রাতে।’ এ কথার পরে, ও ঢুকে ঘরে। ঘরের বৌমা । নাম তার ছালিমা। বলে আর চলে, ‘এহুনি বাবার লগে কাজে যাও আগে। ইনকাম করবার লাগবো। আমাগো সন্তান হইবো। তহুন সন্তানের ভবিষ্যৎ কী হইবো?’ বৌয়ের কথা ফেলতে পারে না। বলে দু’মিনিট একটানা।
‘হ তাই তো।


যামুনি কাজে তাড়াহুড়ার কী আছে গো। জলদি সিদ্ধান্তের কাজ হই না ভালা। পরে খাওন লাগে ডলা। কইলাম যামুনি কাজে। এহুন তুমার লগে থাহি একটু মজে।’ স্বামীর কথা শুনে মনোযোগে। শ্বশুর আবার সাথে কথা বলে আবেগে। হ্যাঁ, আব্বা। আপনার পুলার লগে কতা হইল। চারদিন সময় চাইল। কাজে যাওনের জন্য রাজি। আর হবে না পাজি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *