উপন্যাস ।। মরুঝড় ।। মোহিত কামাল ।। পর্ব তিন
- উপন্যাস// মরুঝড়// মোহিত কামাল// এক
- উপন্যাস// মরুঝড়// মোহিত কামাল// পর্ব দুই
- উপন্যাস ।। মরুঝড় ।। মোহিত কামাল ।। পর্ব তিন
- উপন্যাস ।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল ।। পর্ব চার॥
- উপন্যাস ।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল ।। পর্ব পাঁচ
- উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল ।। পর্ব ছয়
- উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল ।। পর্ব সাত
- উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব আট
- উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব নয়
- উপন্যাস ।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব দশ
- উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব এগারো
- উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব বারো
- উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব তেরো
- উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব চৌদ্দ
- উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব পনেরো
- উপন্যাস।। মরুঝর।। মোহিত কামাল।। পর্ব ষোল
- উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব সতেরো
- উপন্যাস।। মরুঝড়।। মোহিত কামাল।। পর্ব আঠারো
‘তোমাকে ধন্যবাদ আলি হায়দার। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হয়। ভুলে যেয়ো না কখনো, রুস্তমও তোমার মতো ‘আলি’ পদবি ধারণ করে।
ভুলে যেয়ো না তোমাদের সেনাবাহিনী এক সময় বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপর অনেক নির্যাতন করেছিল,
লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল। বেশুমার মা-বোনের ইজ্জত লুট করেছিল।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে এই অসভ্যতা, নিষ্ঠুরতা চলতেই থাকবে। মানসিকতা উন্নত হবে না।
’আল শামসের কথা শুনে বুক ফুলে উঠল রুস্তমের। উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে প্রশ্ন করল, ‘আপনি এত খবর রাখেন স্যার?
’প্রশ্নের জবাব দিলেন না আল শামস। রুস্তমের উদ্দেশে শুধু বললেন, ‘আজ কাজ শেষ হওয়ার পর এখানে তোমার ডিউটি শেষ।
আগামীকাল থেকে নতুন ঠিকানায় উঠবে। ঠিক আছে?’আগ্রার তাজমহলের কথা শুনেছে রুস্তম।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছেন, পৃথিবীর মানুষকে দুভাগে ভাগ করা যায়- একভাগ তাজমহল দেখেছে, একভাগ দেখেনি।
রুস্তমও সেই তাজমহল না-দেখাদের দলে। ক্লিনটনের কথায় তাজমহলের সৌন্দর্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করলেও তাজমহল দেখার আগ্রহ চলে গেছে।
মরুর বুকে প্রয়াত সুলতান শেখ জায়েদ মসজিদ দেখার পর মনে হয়েছে তাজমহল দেখার প্রয়োজন নেই।
পৃথিবীর বর্তমান স্থাপত্যকলার উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে বিরাট মসজিদ গড়ে উঠেছে, তার পাশে যে সৌধ গড়ে তোলা হয়েছে,
তার সঙ্গে তুলনা করলে তাজমহলকে হয়তো মনে হবে পুরোনো ঢাকার একটু উন্নত ধরনের কোনো স্থাপত্যকর্ম।
এতবড়ো মসজিদ, এত বিস্তৃত প্রাঙ্গণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য এত সুশৃঙ্খল আয়োজন,
দৃষ্টিনন্দন এত বিশাল বাগান—পৃথিবীর আর কোথাও থাকতে পারে বলে রুস্তমের কল্পনাতেও আসে না।
প্রতিটি পিলারে খেজুরগাছের মতো ঢেউখেলানো অঙ্গসৌষ্ঠব, সোনার পাতে মোড়ানো।
অজস্র পিলার শুরু হয়েছে মসজিদে ঢোকার মূল ফটক থেকে এবং বিস্তৃত মসজিদের মূল ভবন পর্যন্ত তা প্রসারিত।
একপাশে রয়েছে মেয়েদের নামাজ চত্বর। মসজিদের মূল অংশে সেন্ট্রাল এসির ব্যবস্থা।
এমন একটি স্থাপত্যকলার শেষ দিকের কাজের সঙ্গে জড়িত হতে পেরে রুস্তম নিজেকে আর শ্রমিক বলে মনে করছে না।
ভাবছে মসজিদটিকে দেখভাল করার এক নিরলস যোদ্ধা। আসলেই সে মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ার আমির হামজা আল শামস বলেছেন, এখানে বাছাই করা প্রায় দুশো কর্মচারী আছে।
তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের। নৈতিকভাবে যারা সৎ, সাহসী, দুর্নীতিমুক্ত, কেবল তারাই এখানে চাকরি করার যোগ্যতা রাখে।
কাজ করতে করতে ব্যাপারটা উপলব্ধি করেছে রুস্তম। বেতনভাতা বেড়েছে। এখানে আসার পর মাসে পনেরোশো দিরহাম পাচ্ছে।
বাংলাদেশি প্রায় ছত্রিশ হাজার টাকা। থাকার জন্য একটা হাউজিং কমপ্লেক্সে পেয়েছে উন্নত মানের বাসা।
পাশেই বিশাল জায়গাজোড়া ধনাঢ্য এক শেখের বিলাসী কমপ্লেক্স। উন্নত জীবনযাপনের সব সুবিধা আছে তাতে।
শেখের বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষ ডাক পড়লে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পায় রুস্তম।
ইতোমধ্যে ইলেকট্রিসিটি মেরামতের কাজ শিখে নিয়েছে।
মরুর বুকে ঘাম-ঝরানো শ্রমিক থেকে ভালো অবস্থানে চলে আসায় নিজেকে এখন সে রাজকর্মচারী ভাবতে শুরু করেছে।
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় শেখের প্রাসাদ থেকে মাইক্রোতে চড়ে নামাজ পড়তে আসে মেয়েদের চার-পাঁচজনের একটি দল।
কালো বোরকা বা আবায়া পরনে থাকায় তাদের শরীরের কোনো অংশই দেখা যায় না। মুখ ও চোখ কালো পর্দায় ঢাকা থাকে।
চোখ বরাবর নেটের গোলাকার পর্দা। তার ফোকর দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে পায়। হাত ও পায়ে কালো মোজা।
বিশ্বসেরা দুবাই শপিং মলেও ঘুরে বেড়ায় তারা। যায় দুবাইয়ের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জে খলিফার চূড়ায়।
সেখানে দাঁড়িয়ে দেখে দুবাইয়ের সৌন্দর্য। সপরিবারে মাঝেমধ্যে বেড়াতে যায় সাগরের বুকে গড়ে ওঠা বিশ্বের ব্যয়বহুল হোটেল বুর্জে আরবে।
বাইরের জগতে এভাবে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ায় মেয়েদের দল। ঘুরে ঘুরে দেখে তারা গোলাকার, মোচড়ানো,
হেলানো ও আলম্ব ভবনের পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন নানা স্থাপত্য নিদর্শন, দুবাই নগরীর সৌন্দর্য।
সেদিন ওই দলের এক মেয়ে, কণ্ঠ শুনে রুস্তম বুঝতে পারল, অল্পবয়সি, মসজিদের লবি থেকে এগিয়ে এসে রুস্তমের সামনে দাঁড়িয়ে আরবিতে বলে,
‘আপনি রোজ এই পথে দাঁড়িয়ে থাকেন কেন?’এমন প্রশ্নে হতচকিত রুস্তম।
সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত মসজিদের প্রতিটি আঁকবাঁকের দৃশ্য কন্ট্রোল রুমের বিরাট স্ক্রিনে ভেসে উঠছে।
সিকিউরিটি সিস্টেম নিশ্চয়ই এই মুহূর্তে সজাগ হয়ে উঠেছে। মেয়েটির প্রশ্নে নার্ভাস হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে রুস্তম বলে,
‘এখানে আমার ডিউটি থাকে। সেজন্য দাঁড়িয়ে থাকি।
’‘দাঁড়িয়ে থাকাই ডিউটি? এ কেমন ডিউটি আপনার?
’‘এই মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমার ওপর।’‘
রক্ষণাবেক্ষণ করবেন ভালোকথা, নামাজ শুরুর আগে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন কেন? এ পথে মেয়েরা চলাফেরা করে।
মেয়েদের পথে এভাবে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকা কি শোভন? মেয়েরা ভাববে আপনি অসৎ কোনো মতলবে রোজ এখানে এসে দাঁড়ান।
বলুন ভাববে কি না? ’প্রশ্ন শুনে গলা শুকিয়ে গেল। মনে হলো মরুঝড়ের চেয়েও ভয়ংকর কোনো বালিঝড়ের ঢেউয়ের মধ্যে ডেবে যাচ্ছে রুস্তম।
শেখ পরিবারের কোনো মেয়ে অভিযোগ করলে নিশ্চিতই গর্দান যাবে তার।
এতদিন তবে কি সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আপাদমস্তক কালো বোরকায় ঢাকা মেয়েদের দেহসৌষ্ঠব দেখেছে?
অন্যায় কোনো আচরণ করে ফেলেছে নিজের অজান্তে? আল শামস বলেছিলেন, ‘মানুষ যে কখন অন্যায় করে ফেলে, নিজেও বুঝতে পারে না।
যখন বুঝবে শোধরানোর সময় পাবে না। শোধরানোর আগেই সব শেষ হয়ে যাবে।’
ইঞ্জিনিয়ারের কথাগুলো মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাবনার আরও গভীরে ডুবে যেতে থাকে রুস্তম। মনে হলো জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।
থরথর করে কেঁপে উঠল তার সারাশরীর।মেয়েটি আবার বলল,
‘ভয় পাচ্ছেন কেন? ভয়ের কিছু কি বলেছি? নিজেকে কি অপরাধী ভাবছেন? নিজের অপরাধ কি ধরতে পেরেছেন আমার প্রশ্ন শুনে?’
আচমকা বুকের ভেতর থেকে কে যেন কথা বলে উঠল। রুস্তম নিশ্চিত শুনতে পেল কলির কণ্ঠস্বর।
বাংলাদেশ থেকে উড়াল দিয়ে কলি কীভাবে ঢুকল বুকের গহনে! কাঁপুনি থেমে গেল। কলির কণ্ঠস্বর যেন শুনতে পেল তার নিজেরই কণ্ঠে।
রুস্তম বলল, ‘ভয় পাচ্ছি, কারণ এই প্রথম প্রবাসজীবনে দুবাইয়ের কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বলছি। কথা বলা যদি অপরাধ হয়, তাহলে অপরাধী।
আর অন্য কোনো অপরাধ নেই আমার।’উত্তর শুনে খিলখিল করে হেসে উঠল মেয়েটি। বলল, ‘আপনি কথা বলেননি। কথা বলেছি আমি।
অপরাধ হলে হয়েছে আমার, আপনার না। আর শুনুন, আমি দুবাইয়ের কোনো মহিলা না, এখানকার একজন কিশোরী। আমার বয়স তেরো।
বুঝেছেন?’ আবার খিলখিল করে হেসে উঠল কিশোরীটি। শরীর বাঁকিয়ে কালো বোরকার মধ্যে দেহের ঢেউ তুলে,
একবার একটু ঘুরে আবার রুস্তমের সামনে মাথা তুলে বলল, ‘আমার নাম কলি। আপনার নাম? কোন দেশে আপনার বাড়ি?’
‘আমার নাম কলি’—শোনামাত্রই রুস্তমের মনে হলো মরু মসজিদে এইমাত্র বিস্ফোরিত হয়েছে আত্মঘাতী কোনো বোমা।
এই বোমায় যেন উড়ে যেতে লাগল রুস্তম।
দেহের ছিন্নভিন্ন টুকরোগুলো কি আর কখনো জোড়া লাগাবার সুযোগ পাওয়া যাবে না!
রুস্তমের হঠাৎ পরিবর্তনের কোনো কারণ খুঁজে পেল না কিশোরীটি। বাক্-রুদ্ধ রুস্তমকে লক্ষ করে তাই সে আবারও প্রশ্ন করল,
‘আপনার নাম? কোন দেশ থেকে এসেছেন? ’দুবাই-কিশোরী দুবার প্রশ্ন করেছে, উত্তর না পেলে অপমানবোধ করবে।
ওদের অপমান করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কথাটা মনে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবে ফিরে এলো রুস্তম। স্পষ্ট স্বরে বলল, ‘আমার নাম রুস্তম।
বাংলাদেশ থেকে এসেছি।’‘ওঃ! বাংলাদেশ!’ শুনেই হাহা করে হাসতে লাগল দুবাইয়ের কিশোরী।
সাহসী হয়ে রুস্তম বলল, ‘হাসছেন কেন?’ হাসতে হাসতে দুবাই-কিশোরী জবাব দিলো,
‘আমার এক কাজিন বাংলাদেশের এক ছেলেকে বিয়ে করেছে জোর করে। ছেলেটির নামও রুস্তম। বিয়ে করে বাংলাদেশে চলে গেছে ওরা।
এখন আর ফিরে আসছে না।’ কথা শেষ করে আবারও খিলখিল করে হাসতে লাগল দুবাই-কিশোরী। কেমন ভূতুড়ে লাগে সবকিছু।
মেয়েটির কথা শুনে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল। এই মেয়ে দুবাই-কিশোরী, নাকি দুবাইয়ের ভূত? ওর কাজিনের বরের নামও রুস্তম!
বাংলাদেশের ছেলে! ভাবতে গিয়ে সবকিছু গুলিয়ে যায়। স্থাপত্যকলার অপূর্ব নিদর্শন মসজিদের সব পিলার যেন কাঁপছে। কাঁপছে নিজের শরীর।
অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই শরীরের কাঁপুনিটা থেমে যায়। সামনে থেকে ততক্ষণে সরে গেছে মেয়েটি।
অপেক্ষমাণ মহিলাদের দলটির সঙ্গে মিশে বেরিয়ে যাচ্ছে সে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে।
এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েদের জন্য নির্ধারিত গাড়ি পার্কিঙের দিকে।প্যান্টের পকেটে থাকা মোবাইল সেট হঠাৎ করেই ভাইব্রেট করতে শুরু করে।
মসজিদে এলে সাইলেন্ট করে ভাইব্রেশন মোডে দিয়ে রাখে। বের করে মনিটর দেখে।
‘বউ’ ভেসে উঠেছে মনিটরে। বাংলাদেশ থেকে কল করেছে কলি। মূল মসজিদ প্রাঙ্গণে মোবাইলে কথা বলা নিষেধ।
তাই সেখান থেকে বেরিয়ে এলো রুস্তম। কল ব্যাক করল কলিকে। ফোন রিসিভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুনতে পেল খিলখিল হাসি।
হাসতে হাসতেই কলির স্বর, ‘আমি দুবাইয়ের কিশোরী কলি। ইচ্ছা করছে বাংলাদেশের রুস্তমের সঙ্গে ভেগে যাই!
যাবেন আমার সঙ্গে?
নেবেন আমাকে? আপনার ঘরে, নেবেন?’
হাতেই যেন ঘটল ইলেকট্রিক বোমার বিস্ফোরণ। অনেকটা শূন্যে উড়ে গেল যেন মোবাইল সেট। উড়ন্ত সেট আবার লুফে নিল।
কানের কাছে সেট ধরার পর শুনল কলির কণ্ঠস্বর, ‘কলি বলছি। কথা বলছেন না কেন? কবে দেশে আসবেন?
’উত্তর না দিয়ে রুস্তম প্রশ্ন করল, ‘কলিই বলছ তো?’
‘হ্যাঁ, কলিই বলছি। গলার স্বর চিনতে পারছেন না?’ একই কলে একবার কথা বলছে দুবাইয়ের কলি, আবার বলছে আসল কলি!
একি মস্তিষ্কের গোলযোগ! ভাবতে গিয়ে ঘেমে-নেয়ে বলল রুস্তম, ‘চিনতে পারছি।’ ‘চিনতে পারলে এমন স্বরে কথা বলছেন কেন?’
প্রশ্নের জবাব না দিয়ে রুস্তম বলল, ‘কেমন আছো তুমি, কলি?’ ‘ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। ঘুম হচ্ছে না কিছুদিন ধরে।’
এবার সত্যি সত্যিই বেরোল প্রিয় কলির স্বর। নিজেকে সামলে জিজ্ঞেস করল, ‘ডাক্তার কী বলেছেন?’ ‘আপনাকে তাড়াতাড়ি দেশে ফিরতে বলেছেন।
দেরি হলে আমি আরো অসুস্থ হয়ে যাব। বলেছেন ডাক্তার।’‘তোমার জন্য তো টাকা পাঠাচ্ছি প্রতিমাসে।’ ‘আমার নামে নয়,
আম্মাজানের নামে পাঠাচ্ছেন। হ্যাঁ, টাকা পাচ্ছি। মায়ের চিকিৎসাও করিয়েছি। মা সুস্থ এখন। সংসার চলছে ভালোই।
কেবল টাকা দিয়ে কি সব হয়? আর কিছু লাগে না?’‘আর কী লাগবে?’‘আপনাকে। আপনাকে লাগবে। আপনিই বড়ো ওষুধ।
ওই ওষুধ ছাড়া থাকলে কলি আর কলি থাকবে না। সবুজ কলি হলুদ পাপড়ি খুলে খুলে ঝরে যাবে। ঝরা কলি দেখে কি মন জুড়াবে আপনার?’
কথাগুলো শোনার পর আর কোনো কথা আসছে না মুখে। লাইনও কেটে যাচ্ছে না! হঠাৎ খিলখিল হাসির শব্দ ভেসে এলো কানে।
সেই হাসি শুনে রুস্তম আবারও যেন ইলেকট্রিক শক খেলো। দুবাই-কলি হাসছে! হেসে হেসে বলছে, বাংলাদেশের রুস্তম! এসো!
তোমাকে নিয়ে ভেগে যাই! তোমার দেশে যাই! নেবে আমাকে? সবুজ গাছগাছালি,
নদী ও পাহাড়ঘেরা সবুজ ঢেউয়ের মধ্যে থাকতে ইচ্ছা করে আমার!রুস্তমের মস্তিষ্কে শুরু হয়েছে নতুন ঝড়।
সেই ঝড় মরুঝড়কেও হার মানায়। মনে হলো মাটি কামড়ে আসছে বালির পর বালির ঢেউ। সেই ঢেউয়ের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে রুস্তম।
কলিকে কি আর দেখার সুযোগ পাবে না? দুবাই-কলির সাম্রাজ্যে কি সমাধি হবে তার?