কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। অষ্টম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। প্রথম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। দ্বিতীয় পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। তৃতীয় পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। চতুর্থ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। পঞ্চম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। ষষ্ঠ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। সপ্তম পর্ব ।।
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। অষ্টম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। নবম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। দশ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। এগারো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। বারো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। তেরো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। চৌদ্দ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। পনেরো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। শেষ পর্ব
অষ্টম পর্ব
রাতটা নানা চিন্তায় কাটল অয়নের। সামির ব্যাপারটা সরাতেই পারল না মাথা থেকে। বাবাকে বুঝতে দিল না তার মাথায় লুকিয়ে আছে অতগুলো চিন্তা। বাবা জানতে চেয়েছিলেন, বিকেলে কোথায় ছিলি অয়ন?
নয়-ছয় চুয়ান্ন বুঝিয়ে বাবার কাছ থেকে আসল কথা এড়িয়ে গেল অয়ন। তবু সতর্ক করলেন বাবা। দূরে কোথাও যাস না।
মাথা কাত করল অয়ন। না দূরে যাবে না। একদমই যাবে না। বাবার প্রতিটা কথা পালন করবে অক্ষরে অক্ষরে। তার মতো অনুগত ছেলে আর নেই।
পরদিন স্কুলে এসে নিলয়কে নিয়ে রেজা স্যারের কাছে গেল অয়ন। স্যার বসেছিলেন শিক্ষকদের কক্ষে। তার সামনে দাঁড়াল। মাথা তুললেন স্যার। কিছু বলবে অয়ন?
হ্যাঁ স্যার, অনেক কিছু বলার আছে। কাল বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম আমরা।
আচ্ছা, একটু ব্যস্ত আছি। ক্লাস শেষে বসব আমরা। তখন শুনব। আলোচনা করব। এখন যাও।
মাথা নেড়ে বেরিয়ে এলো অয়ন। বারান্দার দক্ষিণ মাথায় দাঁড়াল। কথা বলছে নিলয়ের সাথে। সামির ঘটনাটা কী মনে হচ্ছে তোর? আমাদের সাথে মজা করছে ও? না সত্যি এরকম কিছু ঘটেছে?
মজা করতে পারে! ওকে আমি বিশ্বাস করি না। তবে এমন সিরিয়াস একটা বিষয় নিয়ে মজা করা একদমই ঠিক হয়নি।
আমার মনে হয় মজা করেনি। নিশ্চয়ই কিছু ঘটেছিল। দেখিসনি ওর চোখে মুখে কেমন ভয় জড়ো হয়েছিল। স্কুলেও আসেনি আজ। ভয়ে বাড়িতে বসে রইল নাকি!
তুই আসলেই বোকা রয়ে গেলি অয়ন। ঘটনা সত্যি হলে ফিক করে হেসে উঠত না সামি। কান্না জুড়ে দিত। ভয়ে আমাদের জড়িয়ে ধরত। ওর হাসি দেখেই বুঝতে পারছি আমাদের বোকা বানিয়েছে। যখন দেখল বিষয়টা জটিল হয়ে যাচ্ছে। রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে আছি আমরা। বাঁচতে পারবে না। তখন একটা গল্প সাজিয়ে দিল। আমাদের শান্ত করার প্ল্যান। বুঝতে পারছিস। মাথাটা একটু এদিক সেদিকও খাটাইস।
অয়ন ভাবল সেটাও হতে পারে। পথের দিকে তাকিয়ে বলল, ওই তো সামি আসছে। আমরা যতটা ভীতু ভাবছিলাম ততটা নয়। সাহস আছে। বুদ্ধিও আছে।
চল, ক্লাসের দিকে যাই। বলে হাঁটা শুরু করল নিলয়। পেছন ধরল অয়ন। ক্লাসে গিয়ে বসল। ডানা জানতে চাইল কী ব্যাপার অয়ন, তোদের মুখ গম্ভীর। সেই উচ্ছ্বাস হারাল কোথায়?
ক্লাস শেষে শুনিস। স্যার এসে পড়বেন। সামনে পরীক্ষা। লেখাপড়ায় মন দে। সারা দিন গল্প করিস। কী লিখবি?
আমাকে জ্ঞান দিতে হবে না। তোরা মন দে। লেখাপড়া তো করিস না। গোয়েন্দাগিরি নিয়ে পড়ে আছিস। ভাবছি তোরা কী লিখবি। ভুলে গোয়েন্দাকাহিনি লিখে দিস না।
তবু একটা কিছু লিখতে পারব। সাদা খাতা দিতে হবে না। তুইও তো গোয়েন্দাগিরি করিস। আমাদের দলের সদস্য। তোর প্রস্তুতি থাকলে আমরা কেন পারব না? চেষ্টায় তো কম করলি না ফার্স্ট হওয়ার জন্য। পারলি না তো একের ঘরটা দখল করতে। শুধু চাপা দিচ্ছিস।
আয়নের পক্ষ নিয়ে আবির বলল, অত বকিস না। অয়নের কাছ দিয়েও হাঁটতে পারবি না। আরও চারজনের পরে তোর অবস্থান। কোন মুখ নিয়ে বড় কথা বলিস। অঙ্কে কত জানি পেয়েছিলি? মাথা চলুকে মৃদু হেসে বলল, ভুলে গেছিস? ও মনে পড়ছে। চুয়াল্লিস। এরপর হেসে উঠল হা হা করে।
হাতে তুড়ি মেরে নিলয় বলল, আরে ডানা রাখ! তোদের দৌড় জানা আছে। খালি বকতেই পারিস। আর পাঁচ ঘুটি খেলিস। কাজের সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। নাম ডানা, আসলে তুই উট পাখি। ডানা নেই। উড়তে পারিস না। নামে আছে কাজে নেই। পুরোটাই সেরকম।
ডানার খুব রাগ হলো। চেহারা লাল হয়ে গেছে। তীরের মতো নিক্ষেপ করে কিছু একটা বলতে চাইল নিলয়কে। তখনই ক্লাসে পা রাখলেন ইংরেজি স্যার। নিজেকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করল। কিন্তু ভেতরে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। ওদের দিকে একবারও মুখ ফেরায়নি। অনেকটা নিচু মুখেই বসে রইল। ওরা এতটা ক্ষিপ্ত সুরে প্রতিবাদ করবে ভাবতেও পারেনি। সবগুলো কেমন বাজখাঁই হয়ে পড়ল। মজা করার জন্য বলেছিল সে। ওরা সেটাকে সিরিয়াস নিয়ে যুদ্ধ শুরু করে দিল।
ক্লাস শেষে স্যার চলে গেলেন। আবার শুরু হলো হইচই। আরিয়া আর অহনা দাঁড়াল অয়নের সামনে। ডানার পক্ষ নিয়ে শুরু করল জেরা। তোরা ওসব বললি কেন? নিজেদের কী মনে করিস? এবার দেখব কেমন পরীক্ষা দিস। প্রথম স্থান পারলে রাখিস ধরে। ওটা আমি দখল করব। দেখিয়ে দেব এবার। কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ছে প্রতিবাদের বোমা। যার বিস্ফোরণ ঘটছে অয়নের সামনে। কিছু বলছে না সে। হাসছে।
অয়নের পাশে এসে দাঁড়াল বন্ধুরা। হো হো করে হেসে উঠল। ভুয়া… ভুয়া… বলে অহনার কানের কাছে স্লোগান দিতে শুরু করল সামি। অহনা দাঁড়াতে পারছে না। ডানা ডাকল, ফিরে আয়। ওদের সাথে কথা বলা ঠিক হবে না। ওরা পাগল বানিয়ে ছাড়বে। নিজেরাও পাগল হয়ে গেছে।
অহনা ফিরে গেল। হইচই থামল না। সবার মুখেই কথা। হাসি। কে কাকে থামায়। হঠাৎ সব থেমে গেল। বিকট শব্দ থামিয়ে দিল। কিসের শব্দ বুঝতে পারল না। তবে ভয় পেয়ে গেল। এই সময় সামি বলল, অয়ন, গাড়ি।
সবাই ফিরে তাকাল রাস্তার দিকে। দেখল একটা কালো গাড়ি স্কুলের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। কে এলো গাড়ি নিয়ে? কৌতূহল নিলয়ের। গাড়ি থেকে কেউ নামছে না। অয়ন ভাবছে অন্যকথা। সেই গাড়িটা নাকি? কালো গাড়ি দেখলেই ভয় জাগে। মনে হয় সেই গাড়িটা। স্কুলের অন্যরাও বেরিয়ে এলো বারান্দায়। দেখছে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। স্কুলের সামনের রাস্তায়।
আবার শুরু হলো হইচই। ছাত্ররা বেরিয়ে এলো বারান্দায়। ইংরেজি স্যার বের হলেন বেত নিয়ে। স্কুলের উত্তর মাথার বারান্দায় হাঁটছেন তিনি। সবাইকে ক্লাসে যেতে বলছেন। একজনের পিঠে শপাং করে মারলেন একটা। ভয়ে অন্যরা দৌড়। তখন আর একটা শব্দ। কেঁপে উঠল স্কুল। কেঁপে উঠল সবার বুক। কোথায় হচ্ছে শব্দ, কিসের শব্দ কিছু বুঝতে পারছে না। বারান্দায় নেই কেউ। সবাই লুকিয়ে পড়েছে। ইংরেজি স্যার চলে গেলেন শিক্ষকদের কক্ষে। তার চোখে মুখে আতঙ্ক। আর একটা শব্দ হলো তখন। অয়ন ভয় পেয়ে গেল। নিশ্চয়ই খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে। সেটা তাদের সাথে হতে পারে। নিলয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, কিছু বুঝতে পারছিস? আমার মনে হচ্ছে খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। এখানে থাকা ঠিক হবে না। নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে পড়তে হবে। চল।