কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। তেরো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। প্রথম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। দ্বিতীয় পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। তৃতীয় পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। চতুর্থ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। পঞ্চম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। ষষ্ঠ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। সপ্তম পর্ব ।।
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। অষ্টম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। নবম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। দশ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। এগারো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। বারো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। তেরো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। চৌদ্দ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। পনেরো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। শেষ পর্ব
১৩
মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন রেজা স্যার। সারা পথে একটা কথাও বলেননি। মাথাও তুলতে পারেননি। বারবার কানে বাজছিল অয়নের বাবার কণ্ঠ। জেরিন কিছু বুঝতে পারছেন না। কী হলো, মুখ গম্ভীর কেন। অসময়ে ফিরেছেন স্কুল থেকে। কোনো ঝমেলা হয়নি তো। না শরীর খারাপ। দরজায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলেন মুখের দিকে। খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে। কাছে আসতেই বিষাদের কণ্ঠে জানতে চাইলেন, এই সময় যে ফিরলেন, সব ঠিক আছে? শরীর ভালো?
রেজা স্যার কিছু বললেন না। ভেতর ঘরে উঠে বসলেন।
পানি চাইলেন। পানি নিয়ে এলেন জেরিন। রেজা স্যারের হাতে দিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। উত্তর চান তার প্রশ্নের। কেন রেজা স্যারকে ক্লান্ত লাগছে। মুখের উজ্জ্বলতা হারিয়েছেন।
জেরিনের মুখের দিকে তাকালেন রেজা স্যার। বুঝতে পারলেন উত্তর না নিয়ে নড়বে না। আমি ঠিক আছি। তবে স্কুলে একটা ঝামেলা হয়েছে। বললেন ক্লান্ত স্বরে।
ভ্রু কুঁচকে গেল জেরিনের। স্কুলে ঝামেলা হয়েছে। শীতল একটা ভয় নাড়িয়ে গেল তার মন। আবার ঝামেলা। একবার কত ঝামেলা থেকে রক্ষা করেছেন আল্লাহ। সেই ভয়টা না কাটতেই আবার ঝামেলা এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়। তাদের পিছু ছাড়ছে না। শরীরটা জমে গেল। মুখে চিন্তার ভাঁজ।
কিছুক্ষণ সময় নিয়ে রেজা স্যার বললেন, ওরা চারজন কিডন্যাপ হয়েছে।
কারা? বিচলিত কণ্ঠে জানতে চাইলেন জেরিন।
অয়ন, সামি, নিলয়, আবির।
কারা করল? মোতালেবের লোকেরা?
না।
তাহলে কারা কিডন্যাপ করল?
সন্ত্রাসীরা। যারা কঙ্কাল ব্যবসা করে।
জেরিন কিছু বললেন না। তার মুখ নীল হয়ে গেল। মনে পড়ল সেই দৃশ্য। রেজা স্যারকে কীভাবে মুক্ত করে এনেছে ওরা। ফিরিয়ে নিয়েছে স্কুলে। সেই ছেলেগুলো আজ বিপদে পড়েছে। কেন ওদের কিডন্যাপ করল? কত ভালো ছেলে ওরা। নিশ্চয়ই এর পেছনে মোতালেবের হাত আছে। তা এখন কী হবে!
জানি না। ওদের খুঁজে বের করতে হবে। পুলিশকে জানিয়েছি। ওসি সাহেব এসেছিলেন। দেখি কী হয়। আমার বিশ্বাস ওদের কিছু করতে পারবে না। ওরা যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে।
ঠিকই ছুটে আসবে। সব সময় বুদ্ধি দিয়ে কাজ হয় না। যদি মেরে ফেলে?
চমকে উঠলেন রেজা স্যার। নিচু হয়ে পড়ল মাথা। এবার শুরু হলো বুকে ব্যথা। এই কথাটা ভাবতে চাচ্ছিলেন না। মনে করিয়ে দিল জেরিন।
অনেকক্ষণ পরে চোখ খুললেন অয়নের বাবা। চেষ্টা করলেন উঠে বসতে। কিছুটা মনবল ফিরাতে। শক্ত হলেন। ভেঙে পড়লে ফিরবে না অয়ন। খুঁজতে হবে। ফোন করলেন অয়নের মামাকে।
জানালেন অয়ন কিডন্যাপ হয়েছে।
থমকে গেলেন মামা। তারপর দীর্ঘক্ষণ আলাপ করলেন।
শুনলেন কীভাবে কিডন্যাপ হয়েছে। কারা করতে পারে। সে রাতের কথাও বললেন বাবা। কারা করেছে সে সন্দেহের কথাও জানালেন।
মামা সাহস দিলেন। আমি দেখছি। ফোন করব থানায়।
তবে চিন্তায় পড়ে গেলেন। পুলিশের পক্ষে খুঁজে পাওয়া সহজ হবে না। তবু ব্যবস্থা নিতে হবে।
স্থির হতে পারছেন না বাবা। কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন। গেলেন সেই কঙ্কাল বাড়িতে। অয়নকে খুঁজে বের করবেন।
একরাশ চিন্তা মাথা নিয়ে জেরিন তার কাজে গেলেন।
চুপচাপ বসে আছেন রেজা স্যার। বেজে উঠল তাঁর ফোন।
ফোন করেছেন ওসি সাহেব। রেজা স্যারের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
আশা জাগল মনে। ওদের পেয়েছে হয়তো। ফোন ধরলেন। ওসি সাহেব বললেন, মাস্টার।
হ্যাঁ, পেলেন ওদের খোঁজ?
একটা কালো গাড়ি ধরেছিলাম। সেই গাড়িতে কাউকে পাইনি। আমাদের চেষ্টা অব্যহত আছে। চিন্তা করবেন না।
আশাহত হলেন রেজা স্যার। খুব স্বপ্ন দেখছিলেন।স্বপ্নটা ভেঙে গেল। গাড়িটা কোন দিক থেকে এসেছিল অফিসার?
শ্রীমঙ্গলের দিক থেকে এসেছিল। চলে গেছে বাহুবলের দিকে।
অফিসার আমার মনে হচ্ছে বাহুবলে নেই ওরা। অন্য কোথাও নিয়ে গেছে। ওদের খুঁজে বের করতে হবে দ্রুত। দেরি করলে সমস্যা হতে পারে। ভয় হচ্ছে আমার। ফোন রাখলেন ওসি সাহেব। তবু উঠতে পারলেন না রেজা স্যার। ডুবে গেলেন অন্য ভাবনায়। গাড়িটা শ্রীমঙ্গলের রাস্তা দিয়ে ফিরেছে। হতে পারে ওদের কৌশল। কোথাও আটকে রেখে গাড়িটা পাঠিয়ে দিয়েছে। নাহয় অন্য গাড়িতে তুলে দিয়েছে। তাই হবে। তার সামনে সম্ভাবনার একটা সূত্র ধরা দিল। এই সূত্র ধরে একটা পথ বের করতে পারবেন। যে পথে হাঁটলে খুঁজে পাবেন তার গোয়েন্দা বাহিনী। এরপর উঠে দাঁড়ালেন। ভেঙে পড়া শরীরে শক্তি ফিরল। বের হবেন তার প্রিয় ছাত্রদেও খোঁজে। জেরিনের সামনে গেলেন। মুখে মৃদু হাসি। অবাক চোখে তাকালেন জেরিন। যেই মানুষটার মুখে লেপটে ছিল দুশ্চিন্তার কালি, সেই মানুষের মুখে হাসি। ওদের কোনো খবর পেলেন?
মাথা নাড়লেন রেজা স্যার। না, খবর পাইনি। ভাবছি ওদের খুঁজতে বের হব। এবার গোয়েন্দাগিরি করব। ওদের নিয়ে বাড়িতে ফিরব।
মন খারাপ হলো জেরিনের। কী বলে, গোয়েন্দা হবে! যদি কোনো বিপদ হয়। খানিক পরে বললেন, আপনি যাবেন?
হুম, আমি যাব।
ভয় হচ্ছে আমার। আপনার যদি বিপদ হয়!
বিপদে আছে আমার সিংহ ছাত্ররা। ওদের উদ্ধার করাই আমার কাজ। ওদের বিপদের মুখে ছেড়ে দিতে পারি না।
সামনে এসে দাঁড়ালেন জেরিন। না, আপনার যেতে হবে না। এসব পুলিশের কাজ। তারা খুঁজে বের করবে। আপনি কোথায় খুঁজবেন?
সেদিনের কথা ভুলে গেছ তুমি? আজ কোথায় থাকতাম জানো? ফাঁসির রশিতে না ঝুললেও কারাগারের চার
দেয়ালে আটকে থাকতে হতো। ওরাই তো মুক্ত করেছে আমায়।
আজ ওরা বিপদে পড়েছে। সেটাও আমার জন্য। ঘরে বসে থাকব আমি? যাব না ওদের খুঁজে বের করতে? এ কথা বলছ তুমি! কিছু বললেন না জেরিন। মাথা নিচু করে খানিক দাঁড়িয়ে রইলেন। এরপর নিজের কাজে গেলেন। রেজা স্যার এলেন সামনের ঘরে। তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নানা চিন্তা। কাগজ কলম নিলেন। তৈরি করলেন প্ল্যান। কীভাবে খুঁজে বের করবেন চার গোয়েন্দা। কোন পথে যাবেন। কী কৌশল করবেন। সেসব করার পরে কিছু নির্ভার হলেন। মনে হচ্ছে খুঁজে বের করতে পারবেন।
প্রবল এই বিশ্বাস তার মনে সাহস জোগাচ্ছে।