কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। চৌদ্দ পর্ব

১৪

চা বাগানের ভেতরে পাহাড়ের আড়ালে নিরিবিলি একটা জায়গায় থামল চার গোয়েন্দাকে বহন করা সেই গাড়িটা। গাট্টামতো লোকটা বলল, সিগারেট আর পানি নিয়ে আয়। সামনে দোকান পাবি না। শুধু বন আর বন। লম্বামতো লোকটা বসা ছিল পেছনে। অয়নদের পাশে। সে নেমে গেল। ভুলে ফেলে গেল মোবাইল। অয়ন বুঝতে পারল কাছে দোকান নেই। আসতে সময় লাগবে ওর। এই ফাঁকে চোখের বাঁধনটা একটু সরাল। চা বাগান দেখতে পাচ্ছে। মেঘের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। চা বাগানের পরেই বন। ওই বনে নিয়ে যাবে তাদের। সামি নড়ে উঠল এই সময়। মুখ ঘুরাতেই অয়ন দেখল সিটের ওপর একটা মোবাইল। বাটন সেট। ওই লোকটারই হবে। হয়তো টাচ ফোন নিয়ে গেছে। ভুলে এটা ফেলে গেছে। হঠাৎ একটা বুদ্ধি চাপল মাথায়। রেজা স্যারকে একটা মেসেজ পাঠাবে। জানাবে স্যার লাউয়াছড়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের। মোবাইলটা হাতে নিল। দ্রুত মেসেজ অপশনে গেল। লিখে ফেলল সেই কথাটা। সেন্ট করে দিল স্যারের নম্বরে। এরপর মেসেজটা ডিলেট করে দিল সেন্ট অপশন থেকে। ওরা যেন বুঝতে না পারে। হাসল শব্দ না করে। এতক্ষণে তাদের খবর পৌছে গেছে জায়গা মতো। স্যার বেরিয়ে পড়বেন এবার। ভুল পথে হাঁটতে হবে না আর।

চিন্তিত মনে সামনের ঘরে বসে অয়নদের কথা ভাবছিলেন রেজা স্যার। তখনই মোবাইলটা টিন টিন করে উঠল। অন্য সময় মেসেজ খুব একটা দেখেন না। ফোন কোম্পানির মেসেজে অতিষ্ঠ। উদ্ভিগ্ন হয়ে আজ হাতে নিলেন মোবাইল। চার গোয়েন্দার খবর আসতে পারে। মেসেজ ওপেন করতেই চোখ তার চড়কগাছ। গম্ভীর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এটাই ভাবছিলেন তিনি। আরও সহজ হয়ে গেল পথটা। ভুল পথে হেঁটে সময় নষ্ট করতে হবে না।

মোবাইলটা সেখানে রেখে দিল অয়ন। চোখটা আলগা করে বেঁধে রাখল। যেন সব দেখতে পায়। ওরা বুঝতে পারবে না। পানি আর সিগারেট নিয়ে ফিরে এসেছে লম্বামতো লোকটা। রেজা স্যার ফিরতি মেসেজ পাঠিয়েছেন। চিন্তা করো না অয়ন। আমি আসছি। তোমাদের মুক্ত করব। ওরা কিছু করতে পারবে না। মনোবল হারাবে না। লড়তে হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তার জন্য চাই মনের জোর। গাড়ির গেট খুলে লম্বা লোকটা ভেতরে মাথা দিল।

তখনই মোবাইলটা টিন টিন করে উঠল। হাতে নিয়ে মেসেজ বক্স খুলে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠল। গাড়ির ভেতর ঢুকেই শুরু করল থাপ্পড়। সামনে ছিল অয়ন। তার মুখেই পড়ল কয়েকটা। অন্যরা একটু দূরে থাকায় অল্পতে বেঁচেছে। ভয়ে কাঁচমাচু হয়ে এক পাশে চেপে বসেছে সামি। সামনে থেকে ছুটে এলো গাট্টামতো লোকটা। এমন করছিস কেন? পাগল হয়ে গেছিস তুই! এখন মারার সময় না। কেন মারছিস? টেনে বাইরে বের করল।

লম্বা লোকটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে বলল, আমার মোবাইল ধরেছিল ওরা। নিশ্চয়ই কাউকে মেসেজ পাঠিয়েছে। সে কী লিখেছে দেখেন। গাট্টামতো লোকটা মাথা নুইয়ে মেসেজ পড়ল। এরপর চিৎকার করে উঠল। মোবাইল বন্ধ কর। সিম খুলে ফেল। ওরা নেটওয়ার্ক ট্রাক করে আমাদের পথ বের করে ফেলবে। ধরা পড়ে যাব। জাঙ্গু বাঁচিয়ে রাখবে না, খুন করে ফেলবে। অস্থির হয়ে লম্বা লোকটা মোবাইল বন্ধ করল। সিমটা বের করে ফেলে দিল দূরে… যা। রাগে ক্ষোভে গড় গড় করছে। তেড়ে আসতে চাইল গাড়ির কাছে। আর এক দফা রাগ বিসর্জন দেবে ওদের ওপর। গাট্টামতো লোকটা থামাল। রাখ। এখন মারপিট করার সময় না। শান্ত হ। ওরা খুব চালাক। যত সহজ ভাবছিস তত সহজ না। এখানে দাঁড়ানো ঠিক হবে না। ওসি কুতুবউদ্দিন পাগল হয়ে ছুটছেন। শ্রীমঙ্গল থানায় মেসেজ চলে এসেছে।

শ্রীমঙ্গল থানা ও ফরেস্ট পুলিশ পাগল করে ছাড়বে আমাদের। তবে এক দিকে ভালো হয়েছে। ওসি কুতুবউদ্দিন দৌড়ের ওপর থাকবে।
হা হা করে হাসল তারপর। এরপর গাড়িতে উঠল।

গাড়িটা আবার চলতে শুরু করল। সবুজের পর সবুজ পেছনে ফেলে ছুটে যাচ্ছে তীব্র গতিতে। লম্বা লোকটার রাগ তখনো কমেনি। আড়চোখে তাকিয়ে আছে। থাপ্পড় কয়েকটা খেলেও কষ্ট নেই অয়নের। মেসেজ পেয়েছে স্যার। এটা আনন্দের। অন্যরা জানে না কেন ওরা হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠল। তাদের মারপিট করল।

Series Navigation<< কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। তেরো পর্বকিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। পনেরো পর্ব >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *