উপন্যাস।।‘চরের মাস্টার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’ ।। রাহিতুল ইসলাম।। পর্ব তেরো

১৩.

অনেকটা সময় শফিক আলিমুল স্যারের সঙ্গে রইল। স্যারও সব বললেন। পেনশনের সবগুলো টাকা দিয়ে তিলে তিলে তিনি এই স্কুল গড়ে তুলেছেন। অনেক মানুষ তখন এর বিরোধিতা করেছে। এমনকি পরিবারের লোকজনও এটাকে পাগলামি বলেছে একসময়। তারপর তারা যখন তাকে নিরস্ত করতে পারেনি তখন হাল ছেড়ে দিয়েছে। এখন তাকে আর কেউ এ নিয়ে কিছু বলে না। তবে এই চরে আলিমুল স্যারকে মানুষ দেবতার মতো শ্রদ্ধা করে। হতদরিদ্র এই মানুষগুলো আলিমুল স্যারের কারণেই আশার আলো দেখতে পায়। এই লোকগুলো বুঝতে পারে স্বার্থহীন মানুষও হয়। মানুষ কেবল নিজে বাঁচার জন্যই জন্মায় না। বৃহৎ হৃদয় বলে একটা ব্যাপার আছে, আর সেটা যে হাতছোঁয়া দূরত্বেও থাকতে পারে, সেটা এখন তারা জানে।

স্যারের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কখন যে দুপুরের খাওয়ার সময় হয়ে গেছে, শফিক সেটা টেরই পায়নি। প্রাইমারি স্কুলে থাকতেও স্যার এমনই ছিলেন। স্যার যখন ক্লাস নিতেন, মনে হতো খুব তাড়াতাড়ি ক্লাসটা শেষ হয়ে গেল। স্যার কাউকে ধমক পর্যন্ত দিতেন না, তবু স্যারের ক্লাসে কেউ কথা বলত না। মন দিয়ে শুধু শুনত। স্যার শফিককে বললেন, ‘আমার সঙ্গে দুটো ডালভাত খেয়ে যাও।’

স্যারের সঙ্গে থাকারও লোভ হচ্ছে শফিকের। কিন্তু থাকতে হলে খেতে হবে। স্যারের খাবার শর্ট পড়ে যেতে পারে। স্যার নিশ্চয়ই দুজনের খাবার আনেননি। এই চরের মধ্যে খাবার কিনে খাওয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই নিশ্চয়। শফিক বলল, ‘না স্যার। আপনি খান। আমি বসে থাকি। বাড়িতে গিয়ে গোসল করে একবারে খাব।’

‘ধুর পাগল। তাই হয় নাকি! যেটুকু আছে কষ্ট করে দুজনে খেয়ে নিতে পারব।’

শফিক খাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে, স্যারের সঙ্গে সে কেন যোগ দেয় না? স্যার তার সর্বশেষ সম্পদ দিয়ে যেখানে এই দুর্গম চরের ভেতর স্কুল বানিয়ে মানুষ তৈরি করার কাজে নেমেছেন এই বয়সে, সেখানে তার জীবন তো সবে শুরু। সে কেন পারবে না? একটা মহৎ আদর্শ ধারণ করে একটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া কি খুব কঠিন? সবার কেন পড়ালেখা শিখে ঢাকায় থাকতে হবে? সবার কেন বড় বড় চাকরি করতে হবে। এই প্রকৃতির মধ্যে, শান্ত সবুজ শ্যামলিমার মধ্যে সে কি থাকতে পারবে না? নিশ্চয়ই পারবে। সম্ভাব্য সব বাধা সম্পর্কে সে ভাবল। মা-বাবা রাজি হবেন না। বলবেন এত পড়ালেখা শিখিয়ে শেষে কিনা এই অজপাড়াগাঁয়ে পড়ে থাকা! সামান্য স্কুলমাস্টারের কাজ! কিন্তু সবার কাছে যেটা সামান্য, আজ আলিমুল স্যারকে দেখে তার কাছে সেটা সামান্য মনে হচ্ছে না। তার সামনে ত্যাগের, আদর্শের এক জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ রয়েছে। তার আদর্শ তার সামনে বসে আছে। স্যার এই বয়সে এসে নতুন করে যদি শুরু করার মতো সাহস করতে পারেন, তবে সে কেন পারবে না। সে তো এই স্যারেরই ছাত্র। বাবার যে স্বপ্ন ছিল তা তো পূরণ হয়েছেই।

বাবা সবাইকে এখন বলতে পারবেন তার ছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ফিরেছে। তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় ডিগ্রি নিয়ে এসেছে। বাবার যে জমি, সম্পত্তি আছে তাতে তার চাকরি না করলেও চলবে। এমন না যে সে চাকরি না করলে বাড়ির লোক খুব একটা অসুবিধায় পড়ে যাবে। আর যদি অসুবিধায় পড়েও যেত তবু সে এটা বেছে নিত। স্যারের বাড়ির লোকেরা নিশ্চয় প্রাচুর্যের মধ্যে বসবাস করেন না। তবু স্যার তো সব সাধ-আহ্লাদ ত্যাগ করে এক মহান ব্রত নিয়েছেন। আর তার এত প্রাচুর্য থাকার পরও সে কেন পিছিয়ে যাবে?

শফিককে আনমনা দেখে স্যার বললেন, ‘কী ভাবছ শফিক?’

‘স্যার, আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।’

‘কী সিদ্ধান্ত?’

‘স্যার, আজ থেকে আমি আপনার সঙ্গে থাকব। আপনি যে স্বপ্ন দেখেন এখন থেকে সেটা আমারও স্বপ্ন।’

ততক্ষণে তাদের খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। শফিক স্যারের হাত জড়িয়ে ধরে বলল, ‘স্যার, আপনি আপনার সঙ্গে নেবেন না আমাকে? আমি এখন থেকে এই স্কুল গড়ে তোলার কাজ করতে চাই।’

স্যার খুব চমকে গেলেন শফিকের কথা শুনে। ‘কী বলছ শফিক?’

‘হ্যাঁ স্যার। সবাই তো পড়ালেখা শিখে গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়ে চাকরি করে। আমি না হয় গ্রামেই ফিরে এলাম। এখানকার মানুষের জন্য যদি কিছু করতে পারি তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করব।’

‘তা হয় না শফিক। সামনে তোমার কত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। বড় চাকরি পেয়েছ, এরপর আরও বড় বড় কাজ করবে, সেটা বাদ দিয়ে তুমি এখানে এসে থাকতে পারবে না। এখানকার জীবন অনেক কঠিন। তুমি মানিয়ে নিতে পারবে না।’

‘স্যার, ভরসা রাখেন আমার ওপর। আমি পারব। আমি তো এখানকারই ছেলে। জীবনের কতগুলো বছর এখানেই তো ছিলাম।’

‘না না, শফিক। তোমার মা-বাবার তোমার ওপর অনেক আশা। তোমাকে নিয়ে তাদের অনেক স্বপ্ন। তাদের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হওয়াটা ভালো দেখায় না।’

‘স্যার, আপনারও তো একটা মহৎ স্বপ্ন আছে। সেই স্বপ্নে আমাকে শরিক হতে দিন। আমরা এখানকার মানুষকে আলোর পথ দেখাব।’

‘এই স্কুলে আমি তোমাকে ঠিকমতো বেতনও দিতে পারব না। তোমার চলতে কষ্ট হবে।’

‘আমার কোনো বেতন লাগবে না স্যার। আজ থেকে এটা আমারও স্কুল। নিজের স্কুল থেকে বেতন নেব কেন? আপনি যেভাবে চলেন আমিও সেভাবেই চলব। কোনো সমস্য হবে না।’

‘শফিক, তুমি ভালো করে ভেবে দেখো। এই স্কুল সবে শুরু হয়েছে। এটা প্রতিষ্ঠা করতে অনেক ঝড়ঝাপটা পাড়ি দিতে হবে। অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে। অনেক ত্যাগ করতে হবে। একসময় তোমার মনে হবে তুমি ভুলপথে পা বাড়িয়েছ। শিক্ষক হিসেবে আমার তোমাকে সাবধান করা উচিত।’

‘স্যার, আপনি যদি আমাকে সঙ্গে রাখেন, আমি সব কষ্ট সহ্য করে নেব। মানুষ তো একটা আদর্শ নিয়ে বাঁচে। আজ থেকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়াই আমার আদর্শ হবে। স্যার আপনি আমাকে আশীর্বাদ করেন, আমি যেন এই আদর্শের পথে সারা জীবন চলতে পারি। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে থেকে যেন তাদের সেবা করতে পারি আমাকে সেই দোয়া করেন।’

‘আমি আবারও বলছি শফিক, তুমি কয়েকটা দিন ভেবে দেখো। বাড়িতে যাও, সবার সঙ্গে কথা বলো। মা-বাবার পরামর্শ নাও। সব দিক বিবেচনা করে তারপর তুমি সিদ্ধান্ত নাও। আমি আমার জন্য তোমাকে এখানে থাকতে বলতে পারি না। আমি তো শিক্ষক, তোমার ভালোমন্দ দেখার দায়িত্বও আমার।’

‘আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি স্যার। বাড়ি থেকে ফিরে আমি আপনার সঙ্গে কাজ শুরু করব।’

‘খেয়ালের বশে কাজ করা ঠিক না শফিক। আমি যেটা পারি, সেটা তুমি পারবে না। আমার সমস্ত জীবন গেল ছাত্র পড়িয়ে। আর তুমি মাত্র শুরু করতে যাচ্ছ। এই পেশার যেসব প্রতিকূলতা আছে, সেগুলোও তোমাকে ভাবতে হবে।’

‘স্যার, আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমি আপনার সঙ্গেই কাজ করব। আপনি কি আমাকে নেবেন না স্যার?’

আলিমুল স্যার শফিকের আন্তরিকতা বুঝতে পারলেন। তিনি সম্মতি দিলেন শেষ পর্যন্ত। তবু বারবার তিনি কয়েক দিন ভেবে দেখার কথাও বললেন।

শফিক স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই তার অ্যাপয়েনমেন্ট লেটারটি ছিঁড়ে যমুনার জলে ভাসিয়ে দিল। কোনো পিছুটান সে রাখতে চায় না।

১৪.

শফিক বাসায় ঢুকতেই সবাই দৌড়ে এল। এতক্ষণ খুব উদ্বিগ্ন ছিল ওরা। শফিক ফিরে আসাতে স্বস্তি মিলেছে। মা বললেন, ‘এতক্ষণ কই ছিলি বাবা? তোর তো সকালেই চলে আসার কথা। পথে কোনো ঝামেলা হয়েছিল?’

শফিক বলল, ‘না মা। পথে আলিমুল স্যারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ওনার সঙ্গে ছিলাম এতক্ষণ।’

‘একটা ফোন তো করতে পারতি, আমরা কত টেনশন করছি এদিকে। তোকে ফোনেও পাই না।’

‘ফোনে চার্জ ছিল না মা।’

‘তাই বল। তোর বাবা বাস কাউন্টারে ফোন করে করে হয়রান।’

আদর বলল, ‘বাবা বোধ হয় তোমাকে খুঁজতে গেছে।’

শফিক বলল, ‘কোথায় খুঁজতে গেছে?’

রওশন আরা বললেন, ‘বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেছে মনে হয়।’

আদর বলল, ‘দাঁড়াও আমি বাবাকে ফোন করে চলে আসতে বলছি।’

ওদের পেছনে মতিন দাঁড়িয়ে ছিল। সে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না। শফিক বলল, ‘মতিন, তুই এত দূরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কাছে আয়।’

মতিন বলল, ‘ভাইজান, আমরা কত চিন্তায় ছিলাম আপনেরে নিয়া।’

শফিক বলল, ‘ধুর গাধা, এত চিন্তা করার কী আছে? আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি! এইবার বক ধরবি না? বিকেলবেলা রেডি থাকিস, ঘুরতে বের হব।’

মতিন তো আগেই ভেবে রেখেছে ভাইজান এলে সে কোথায় কোথায় যাবে। আজই যে সুযোগ জুটে যাবে, সে সেটা বুঝতে পারেনি।

রাতে সবাই খাবার টেবিলে বসেছে। শফিকের এক পাশে আদর অন্য পাশে রওশন আরা। মতিন তাদের খাবার সার্ভ করছে। শফিক বাড়িতে এলে সবাই মিলে খেতে বসে ওরা। শফিকের পছন্দের কই মাছ রান্না করেছেন রওশন আরা। বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ‘চাকরিতে কবে জয়েন করবে?’

শফিক মাথা নিচু করে বলল, ‘এই চাকরিটা আমি করব না বাবা।’

শফিকের কথায় সবাই তার মুখের দিকে তাকাল। সে মুখ নিচু করে খেতে লাগল। বাবা বললেন, ‘মানে? জয়েন করবে না কেন? পাস করে বের না হতে এত ভালো একটা চাকরি পেলে আর এখন বলছ জয়েন করবে না!’

‘আমি ঢাকায় থাকব না।’

এবার যেন আকাশ থেকে পড়ল সবাই। মা বললেন, ‘কী বলছিস তুই শফিক? কোথায় থাকবি?’

‘মা, আমি এখানেই থাকব। আলিমুল স্যারের স্কুলে পড়াব।’

বাবা এবার যেন কিছুটা বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন, ‘কোন আলিমুল স্যার? তোমাদের প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার?’

‘হ্যাঁ।’

‘সে তো চরের মধ্যে একটা টিনের ঘর করে চার-পাঁচটা বাচ্চা পড়ায়। ওটা কোনো স্কুল হলো নাকি?’

‘হ্যাঁ, বাবা। ওই স্কুলেই আমি পড়াব।’

‘শফিক, তোমার মাথা ঠিক আছে তো? আসার আগে ফোন করে বললে ভালো একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছ। বাড়ি থেকে ঘুরেই জয়েন করে ফেলবে। আর এখন তুমি কী সব কথা বলছ?’

‘আমি ঠিকই বলছি বাবা। লেখাপড়া শিখে সবাই যদি ঢাকায় গিয়ে থাকে তাহলে গ্রামের উন্নয়ন হবে কী করে? আমি আলিমুল স্যারের সঙ্গে ওই স্কুলটা গড়ে তুলব। ওখানকার বাচ্চাদের লেখাপড়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমি ওদের পড়াব।’

‘ওদের পড়ানোর জন্য আমি তোমাকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বানাইনি। ওদের পড়ানোর জন্য অন্য মানুষ আসবে। আলিমুল স্যার আছে, সে পড়াবে। তোমাকেই কেন ওদের দায়িত্ব নিতে হবে? দেশে কি অন্য আর কোনো মানুষ নেই?’

‘বাবা, সবাই যদি এভাবে নিজের সুবিধা দেখে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়, ক্যারিয়ার নিয়ে ভেবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কথা ভুলে যায় তাহলে এই মানুষগুলোর কী হবে?’

‘রাখো তোমার বড় বড় কথা। এসবের কোনো দরকার নেই। তুমি ঢাকায় গিয়ে চাকরিতে জয়েন করো।’

‘না বাবা, আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। আমি এখানেই পড়াব।’

‘শফিক, আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। সামনে তোমার বড় বড় সুযোগ আসবে। ঢাকায় না থাকলে তুমি কিছুই করতে পারবে না। গ্রামের অনেকেই জেনে গেছে তুমি ঢাকায় বড় চাকরি পেয়েছ। অনেক টাকা বেতন। এখন তুমি যদি এই কাজ করো তাহলে আমি লোকের কাছে মুখ দেখাতে পারব না।’

‘বাবা, মানুষের কটু কথার জন্য আমি আমার লক্ষ্য থেকে সরে আসব না।’

শফিকের মা বলল, ‘কী হয়েছে বাবা তোর? ফারিয়ার সঙ্গে গণ্ডগোল করে এসেছিস?’

শফিক বলল, ‘না মা। গণ্ডগোল করে আসব কেন? কিছুই হয়নি।’

‘তাহলে তুই উল্টাপাল্টা কথা বলছিস কেন?’

‘আমি উল্টাপাল্টা কথা বলছি না মা। আলিমুল স্যার একটা মহৎ কাজ হাতে নিয়েছেন। আমি ওনার সঙ্গে কাজটা করতে চাই। আর এখন এমন যুগ এসেছে, এখানে বসেই ঢাকার সুবিধা পাওয়া সম্ভব। গ্রামে বসেই শহরের কাজ করা যায়। দেশে বসে অন্য দেশে কাজ করা যায়। আমি চরের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা শেখাতে চাই। আমার ওপর তোমরা ভরসা রাখো।’

শফিকের বাবা আর সহ্য করতে পারলেন না। তিনি খাবার রেখে উঠে যেতে যেতে বললেন, ‘শফিকের মা, তুমি তোমার ছেলেকে বোঝাও। সে আমার মানসম্মান নিয়ে খেলতে পারে না।’

রওশন আরা তাকে থামাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু তিনি ভাতের প্লে­ট জোরে ঠেলে দিয়ে উঠে চলে গেলেন। শফিকও রাগ করে উঠে চলে গেল। বাড়ির পরিবেশ খুব থমথমে। রহিম মিয়া রেগে আগুন হয়ে আছেন। ছেলে বড় চাকরি করলে এলাকায় তার মানসম্মান বাড়বে। আর সেটা না করে যদি ওই স্কুলে গিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ায় তাহলে পাড়াপড়শীর টিটকারিতেই তার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যাবে। লোকে বলবে, ছেলে পাসই করেনি। শহরে কয়েক বছর ঘুরেফিরে চলে এসেছে। আর এ জন্যই চাকরিবাকরি পায়নি। নাহ, এ কিছুতেই হতে দেওয়া যায় না। আর এভাবে তো ছেলেটার জীবনও নষ্ট হয়ে যাবে। এখানে এসব ফালতু কাজে সময় নষ্ট করলে সে পরে ঢাকায় গিয়ে আর ভালো চাকরি পাবে না? ফারিয়ার বাবার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলা দরকার। মাঝে মাঝে তার সঙ্গে রহিম মিয়ার টুকটাক কথা হয়। আনুষ্ঠানিক কোনো কথা হয়ে না থাকলেও আকার-ইঙ্গিতে দুজনের মনোভাবই যে ইতিবাচক সেটা তারা দুজন দুজনকে বুঝিয়েছে। এ রকম একটা সময়ে ফারিয়ার বাবা হয়তো কোনো সমাধান দিতে পারবে। তিনি না পারলে তার মেয়েকে দিয়ে বলাবেন। কিন্তু ছেলের এত বড় সর্বনাশ রহিম মিয়া কিছুতেই মেনে নেবেন না। আর ছেলে যদি ওই স্কুলে গিয়ে ছাত্র পড়ানোর কাজ করে তাহলে ফারিয়ার বাবাও তো তার মেয়েকে এখানে বিয়ে দিতে রাজি হবে না। রহিম মিয়াদের সমবয়সী সার্কেলে ওদের যে বিয়ে হতে যাচ্ছে এ বিষয়টা প্রায় সবাই জানে। মেয়ের বাবা নিশ্চয়ই জেনেশুনে মেয়েকে জলে ফেলে দিতে পারে না। রহিম মিয়া মাথা ঠান্ডা করে প্রথমে ফারিয়ার বাবাকে ফোন করে বিসত্মারিত বললেন। ছেলেকে তার প্রতিজ্ঞা থেকে নড়ানো যে কঠিন, এ কথাও তাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বললেন। তারপর রওশন আরাকে বুঝিয়ে বললেন ছেলেকে যেন তিনি ঢাকায় চাকরি করার ব্যাপারে রাজি করান। রহিম মিয়া এটাও বললেন, তার যদি এই চাকরিটা ভালো না লাগে তাহলে সে ইচ্ছে করলে না করতে পারে। কিন্তু তাকে ঢাকায় থেকে চাকরি খুঁজতে হবে। সে যেটা করবে বলে পণ করেছে, কিছুতেই ওই কাজ করা যাবে না।

Series Navigation<< <strong>উপন্যাস।।‘চরের মাস্টার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’ ।। রাহিতুল ইসলাম।। পর্ব বারো</strong><strong>উপন্যাস।।‘চরের মাস্টার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’ ।। রাহিতুল ইসলাম।। পর্ব পনেরো</strong> >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *