কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব চার
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব দুই
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব তিন
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব চার
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পাঁচ পর্ব
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব ছয়
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব সাত
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব আট
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব নয়
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। দশ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব এগারো
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। বারো
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব তেরো
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব চৌদ্দ
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। শেষ পর্ব
কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।।
ট্র্যাফিক সার্জেন্ট একটা ঘাড়ালি দিয়া কান্টিবান্টিকে গাড়ি থেকে নামাল। যখন আরও মারার জন্য উদ্যত হলো তখন পিছনের গাড়ি থেকে অন্য কর্মকর্তারা নেমে এসে সার্জেন্টকে সমস্ত ঘটনা বলল। তারা কান্টিবান্টির ভাষার সমস্যার কথাও বলল।
এই সময় রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম পড়ে গেল। ট্র্যাফিক সার্জেন্ট ঘটনা বুঝতে পেরে তাকে ছাড়ল। তবে একজন ট্র্যাফিক পুলিশকে গাড়িতে উঠিয়ে দিল যাতে পথে গাড়িটি কোনো সমস্যায় না পড়ে।
মহাখালি রেলক্রসিং পর্যন্ত ভালোভাবেই এসেছিল। গাড়িটি প্রায় মহানগর গোধূলি এক্সপ্রেসের সঙ্গে দুর্ঘটনা করেই ফেলত যদি ট্রাফিক পুলিশ সঙ্গে না থাকত। কান্টিবান্টির হঠাৎই মনে পড়ে রেলগেট ক্রসিংয়ের সিগন্যালটি গাড়ির প্রোগ্রামে নেই। বাদ পড়েছে। কারণ, এই বিষয়টি তখন মাথায় ছিল না। যাক, একটি ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে বাঁচা গেল।
উত্তরায় চার নম্বর সেক্টরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই শত শত সাংবাদিকের আগমন ঘটে গেল। কোনো কোনো সাংবাদিক আগেই চলে এসেছে। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা ভেবে পায় না কান্টিবান্টি। সঙ্গের ট্রাফিক পুলিশকে জিজ্ঞেস করল, এতো মানুষ কেন আসিয়াছিল তুই জানেন?
কান্টিবান্টির কথা শুনে ট্র্যাফিক পুলিশ হাসে। বলল, আমাদের সার্জেন্ট স্যার জানিয়ে দিয়েছেন। রাস্তার সব ট্র্যাফিককেও বলে দিয়েছেন আপনার গাড়ির খবর। তাই আপনি ভালোভাবেই চালিয়ে আসতে পারলেন।
আপনি কী বললি? ট্র্যাফিক না থাকলেও আমি যেকোনো রাস্তাতেই চালাতে পারতেন। আমাকে সাহায্য করব কেন? দরকার থাকিবে না, যান।
ট্র্যাফিক পুলিশ হাসতে হাসতে গাড়ি থেকে নামে। সাংবাদিকরা কান্টিবান্টিকে ঘিরে ধরেছে। তাদের নানা প্রশ্ন শুনে কান্টিবান্টি হতভম্ব। শেষ পর্যন্ত আপনেরা দাঁড়া। জয়িতা আসিলে সব বলবা।
কান্টিবান্টি চোখের বাঁধন খুলে কাপড়টি সরিয়ে দৌড়ে জয়িতাদের বাসার সামনের লডে গিয়ে ঢোকে। লনে ওরা তিনজন অপেক্ষা করছিল। কান্টিবান্টিকে দেখে তারা আবেগে-উচ্ছ্বাসে স্প্রিয়ের পুতুলের মতো লাফিয়ে ওঠে। কাশেম পাটোয়ারি কান্টিবান্টিকে বুকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানালেন।
জয়িতা, কাশেম পাটোয়ারি ও আতিকন কান্টিবান্টি আর অন্য ছয়জন কর্মকর্তাকে নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের গাড়ির কাহিনি বলল। তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিল।
উচ্ছ্বাসিত সাংবাদিক মহল। এমন তরতাজা আর চমক লাগানোর মতো খবরে সারাদেশ কেন সারা পৃথিবীই হয়তো বিস্মিত হয়ে পড়বে। আর এই ধারণার সমস্ত কৃতিত্ব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জয়িতার।
একজন সিনিয়ার সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী? দৃষ্টি প্রতিবন্দীদের জন্য আর কী কী ধারণা আপনার মাথায় আছে?
জয়িতা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, আমি এই গাড়িটি চালিয়ে কক্সবাজার যাব। এটি হবে আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ। তারপর আরেকটা ধারণা আছে আমি সেটাও কান্টিবান্টিকে বলব, কিন্তু এখন প্রকাশ করব না। কারণ, যদি শেষ পর্যন্ত সফল না হতে পারি তাহলে আপনারা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবেন। বিদ্রোপ করে নিউজ করবেন।
একজন সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, আপনি বলুন। সফল না হতে পারলে আমরা কথা দিচ্ছি, আপনাকে নিয়ে বিদ্রপাত্মক কোনো নিউজ করব না।
সেটা হয় না। কারণ, আপনি আপনার কথা দিতে পারেন, অন্যরা যদি করে তখন কী করবেন? সবার তো প্রোপেশনাল অনেস্টি নেই।
কোনো কোনো সাংবাদিক উত্তেজিত হয়ে গেল। কেউ কেউ বলল, রেগে গেল। এতো পুচকে এক মেয়ে বলে, সাংবাদিকদের অনেস্টি নেই। এটা কেমন কথা। একজন বলল, আপনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে যে, সাংবাদিকদের প্রোফেশনাল অনেস্টি নেই।
দেখেন, আপনি এখনই ডিজঅনেস্টির পরিচয় দিয়েছেন। আমি সব সাংবাদিককে বলিনি। বলেছি সবার তো অনেস্টি নেই। তার মানে কোরো কারো নেই। কারো কারো যে, তা আমার বলতে হয় কেন? আপনি বুকে হাত দিয়ে বলুন, সবার প্রোফেশনাল অনেস্টি আছে কিনা?
এরপর আর কেউ প্রশ্ন করে না। তবে ছোট মেয়েটি এতো গুছিয়ে কথা বলাতে অনেক সিনিয়র সাংবাদিক মুগ্ধ হলেন। তারা বুকের ভিতরে এই মেয়ের জন্য গর্বের আর সুখের জোয়ার বয়ে গেল।
কথা শেষ করে কান্টিবান্টির সহায়তা নিয়ে জয়িতা গাড়িতে চড়ে বসে। আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল ধরে। বাবা পিছনের সীটে বসেন। আতিকন লনে দাঁড়িয়ে থাকে। তার চোখও আনন্দে ছলছল করছে। জয়িতার গাড়িটি আস্তে আস্তে উত্তরার রাস্তায় চলতে শুরু করে।
জয়িতা উত্তরার কয়েকটি সড়কে তার গাড়িটি চালিয়েছে রাত ন’টা অব্দি। সীমাহীন আনন্দে ভরা তার মন। গাড়ি চালাতে তার এতোটুকু সমস্যা হয়নি। নতুন ধরনের গাড়ি দেখে ট্র্যাফিক পুুলিশও তাদের সহায়তা করেছে। একবার পাঁচনম্বর সড়কে একটা ট্যাক্সি ড্রাইভার জয়িতার গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা প্রায় করেই বসেছিল। ড্রাইভারটি বদের হাড্ডি। সে রাস্তার দিকে না তাকিয়ে দেখছিল জয়িতা কীভাবে গাড়ি চালায় তা দেখছিল। আর হাসছিল বেয়াক্কলের মতো। হঠাৎ ট্যাক্সিটি জয়িতার গাড়ির সামনে চলে আসে, আরেক সেকেন্ড এদিক-সেদিক হলেই ট্যাক্সি গুঁড়ো হয়ে যেত। ভাগ্যিস যে, ব্র্যাক সিগন্যালটা খুব তাড়াতাড়িই পাওয়া গিয়েছিল এবং জয়িতা সঠিক সময়ে ব্র্যাক কষে গাড়িটি থামাতে পেরেছিল। না-হয় আজ হয়তো অন্যরকম কিছু ঘটে যেত।
ট্র্যাফিক পুলিশও পাশে ছিল। তাড়াতাড়ি এসে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে আটকাল। ড্রাইভারকে ট্যাক্সিসহ আটক করে থানায় ধরে নিয়ে গেল।
পরদিন জয়িতার গাড়ি নিয়ে দেশের সেরা সেরা পত্রিকায় বিরাট বিরাট প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। নতুন গাড়ি উদ্ভাবনের খবর পেয়ে গেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট। উভয়ই জয়িতাকে অভিনন্দন জানালেন এবং দেশের সকল ট্র্যাফিক পুলিশকে বলে দিয়েছেন এই গাড়ি যখন রাস্তায় চলাচল করে তখন যেন সহায়তা করা হয়।
রাতে খাবার টেবিলে জয়িতা ও বাবা ভাত খাচ্ছেন। বাবার মনও খুশিতে ভরা। বাবা বললেন, কান্টিবান্টিকে নিয়ে খেতে বসলে ভালো হতো।
জয়িতা বলল, ও লোকটা খুব লাজুক। কথা বলতে গিয়ে এলোমেলো করে ফেলে বলে কারো কাছে যেতে চায় না। কারো সঙ্গে কথা বলতে চায় না। একা একা থাকতেই পছন্দ করে। এখানে ডাকলেও আসত না।
হ্যাঁ, ওর বাংলা ভাষা জঘন্য। কিন্তু ইংরেজিতে খুব ভালো। বিদেশে থেকেছে ছোটবেলা থেকে তাই বাংলাভাষাটা শেখা হয়নি। তুমি ওকে ভাষা শেখাতে পারো।
আমি কেন শেখাব? কেউ কি কাউকে শেখাতে পারে? নিজে নিজে শিখতে হয়।
তবু ওস্তাদ হলে ভালো শেখা হয় আর তাড়াতাড়ি শেখা যায়। আর তুমি শেখাবে কারণ, তোমার এতো বড় একটা কাজ করে দিয়েছে সেজন্য।
এই কাজ যে কেউ করতে পারত। আমি যে আইডিয়াটি দিয়েছি সেটা যেকেউ করতে পারত।
না, যে কেউ পারত না। যেমন আমি পারতাম না। তুমিও পারতে না। কেবল ওর মতো নিষ্ঠাবান বিজ্ঞানীর পক্ষেই সম্ভব।
তুমি আমার পক্ষা না নিয়ে ওর পক্ষ নিলে কেন বাবা? আমি আজ রাতে ভাতই খাব না। হা…।
আরে আরে করো কি? বসো মা। ওর পক্ষ নিলাম কোথায়? একটা কথা শোনো, যার যেখানে যতটুকু কৃতিত্ব তার পাওনা ততটুকু দিতে হয়। ছেলেটা তোমার আইডিয়া নিয়েই গাড়ি বানিয়েছে সে কৃতিত্ব তাকে দেবে না?
কিন্তু আমি আইডিয়া না দিলে বানাতে পারত?
তোমার আইডিয়ার জন্য তোমার কৃতিত্ব আর গাড়িটি বানানোর জন্য তার কৃতিত্ব। তুমি যদি তাকে ভাষা শেখাতে না চাও তাহলে শেখাবে না। তবে আতিকন ভাষা শিখাতে পারে। ও তো সব সময় সাধু ভাষায় কথা বলে।
জয়িতা হাসতে হাসতে খুন। বাবা, তোমার বুদ্ধিসুদ্ধি বলতে কিছু নেই। আতিকনের সাধুভাষা, কান্টিবান্টির বাংলা ইংরেজির মিকচার, আমার তার সহকর্মীদের প্রচলিত চলিত ভাষার মিশ্রণ এমন একটা খিচুরি হবে না যা নিয়ে মানুষের হাসাহাসির বড় খোরাক হয়ে যাবে।
কাশেম পাটোয়ারীও জয়িতার কথা শুনে হাসেন। বললেন, ঠিক বলেছ।
বাবার কথায় জয়িতা বড় অভিমানী হয়ে পড়ে। মুখ ভার করে খাবার টেবিলে বসে থাকে। কথা বলছে না। মেয়েটা মাঝে মাঝে এতো বুদ্ধিমতীর মতো কাজ করে আর মাঝে মাঝে ছিঁচকাঁদুনে। অভিমানীও বটে। যখন কারো সঙ্গে অভিমান করে তখন তার রাগ ভাঙানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আজকে কি জয়িতার মান ভাঙানো যাবে? বাবা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন।
অনেকক্ষণ বাবাও খাবার মুখে দেননি, জয়িতাও না। তারা দুজনই চুপচাপ বসে। কাজের বুয়া আতিকন রান্নাঘর থেকে এমন বসা অবস্থা দেখে রেগে আগুন হয়ে যায়। হঠাৎ করেই যেন আগুনের ফুলকির মতো জ্বলে উঠল। বলল, বসিয়া আছেন কেন? বাপকন্যার জন্য আমি কি সারা রাত বসিয়া থাকিব? পাঁচ মিনিটের মধ্যে খাওয়া-দাওযা শেষ করিবেন। তাহা না হইলে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ।
কাশেম পাটোয়ারী হকচকিয়ে গেলেন। জয়িতাকে বললেন, চলো মা, তাড়াতাড়ি চলো।
জয়িতাকে এই বাসায় হাত ধরে ধরে নিতে হয় না। বাসার ভিতরে সে নিজে নিজেই চলাফেরা করতে পারে।
The Tissot watch is too brassy looking. I like a lighter gold tone.