কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব এগারো
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব দুই
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব তিন
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব চার
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পাঁচ পর্ব
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব ছয়
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব সাত
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব আট
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব নয়
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। দশ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব এগারো
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। বারো
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব তেরো
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব চৌদ্দ
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। শেষ পর্ব
কিন্তু তার আগে আমার ফোরসাইট বলছে আপনাকে সাবধান থাকতে হবে।
আপনাকে যেকোনো সময় ওরা আবার অপহরণ করতে পারে।
কারণ, তাদের প্রতিশোধের পালা এখনও শেষ হয়নি। তুমি কার কথা বলছ?
ওই যে যারা টেকনাফ যাওয়ার পথে আমাদের অপহরণ করেছিল তাদের কথা বলছি।
ওহ। তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিলে। সত্যি অপহরণ করতে পারে?অবশ্যই।
গাড়ির টেকনোলজি বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে অপহরণ করতে পারে।
তাহলে এখন কী করা?আপনি যখন আমাদের বাসায় থাকবেন তখন আপনি নিরাপদ।
আর বের হলেই সর্বনাশ হতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের বাসায় চলে আসুন।
আর আজকে আপনি একটা কাজ করুন।
কী কাজ?
আপনার ল্যাবটপ ও মাবাইলের সঙ্গে আমার মোবাইলের কানেক্ট করে একটা ডিভাইস লাগাবেন
যাতে আপনি কোথায় থাকেন তা আমার মোবাইল থেকে রিড করা যায়।
সেরকম ডিভাইস কোথায় পাওয়া যায়?
এখন আমাদের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোই সেরকম ডিভাইস দিচ্ছে। আপনি একটা কিনে নিন।
এখন সরাসরি আপনার মেসে না গিয়ে মোবাইল ফোন কোম্পানির কাস্টমরা কেয়ারে যান।
সেখানে থেকে ডিভাইস কিনে আমাকে একটা দিয়ে যান আর আপনার মোবাইলে ও ল্যাপটপে কানেন্ট করেন।
তাহলে অপহরণ হলেও আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব। কান্টিবান্টি উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে।
এই মেয়েটার মাথায় এতো বুদ্ধি! সে ভাবতে অবাক হয়ে যায়। আরও কত ধারণা আছে কে জানে?
হয়তো অনেক ধারণাই আছে। একদিন কক্সবাজারে বলেছিল, অনেক ধারণা আছে আমার মাথায়। আস্তে আস্তে বলবে।
এখন একটা কাজের পর আরেকটা কাজের ধারণা পেলে মন্দ হয় না। পৃথিবীতে নতুন নতুন অনেক কিছুই করা সম্ভব হবে।
প্রতিবন্ধী মানুষেরাও সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিকভাবে কাজ করবে। দুনিয়াটা ধীরে ধীরে বদলে যাবে।
সে রুম থেকে বের হয়ে যায়। জয়িতা আস্তে আস্তে হেঁটে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। ঝিরঝিরে সুন্দর বাতাস বইছে।
বাইরে হয়ত চমৎকার আলো। জয়িতা তা দেখতে পায় না বটে, তবে সে মনের চোখ দিয়ে দেখতে পায় নতুন দুনিয়া।
নতুন দিনের স্বপ্নে তার চোখ ভরে ওঠে।
জয়িতার কথানুসারে কান্টিবান্টি টেলিটক মোবাইল ফোন কোম্পানির কাস্টমার সার্ভিসে গিয়ে খোঁজ-খবর নেয়।
এটি কোনো কঠিন বিষয় নয়। কেবল ট্র্যাকিংয়ের মধ্যে থাকলেই চলবে। হতে পারে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) মাধ্যমে।
এখন গাড়ি চুরি প্রতিরোধ করার জন্য যে ইথার প্রযুক্তি বা জিপিএস বা এনট্র্যাক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে
সেরূপ একটা কিছু ডিভাইস মোবাইলে ও ল্যাপটপে সেট করে দিলেই অন্তত জয়িতা বা কাশেম পাটোয়ারী বুঝতে পারবে কান্টিবান্টি কোথায় আছে।
তবে এজন্য ডিভাইসটির প্রোগ্রামিং কাস্টমাইজ করতে হবে। আর প্রোগ্রামিংয়ের জন্য কান্টিবান্টি বড় ওস্তাদ।
ঘণ্টা দুয়েক পরেই কান্টিবান্টি জয়িতাদের বাসায় ফিরে আসে। মা আতিকনই দরজা খোলে। কী রে নওশাদ আবার যে?একটু কাজ আছে মা।
আবার চলে যাব। জয়িতাকে ডাকো। কান্টিবান্টি ড্রয়িংরুমে বসে। আতিকন জয়িতাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে ফিরে আসে।
জয়িতা আর কান্টিবান্টি জিপিএস নিয়ে কথা বলার সময় আতিকন বলল, আমাকেও তোদের বিদ্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত করিতে পারিস।
আমিও কিন্তু ফিজিক্সের অধ্যাপক। কান্টিবান্টি বলল, মা তোমার সাধু ভাষা শুনতে ভালো লাগে না। তুমি সাধারণ ভাষায় কথা বলো তো।
আতিকন হেসে বলল, আসলে আমাদের পরিবারে সাধু ভাষায় কথা বলার রীতি প্রচলিত ছিল।
তোর নানা মানে আমার বাবা ছিলেন একটি কলেজের প্রিন্সিপাল। মাও লেখাপড়া জানতেন। বাবা বলতেন,
যেভাষা লেখাপড়া হয় সে ভাষাতে কথা বলাও প্রয়োজন। তখন তো সব বই সাধু ভাষায় লেখা হতো। তাহলে উচ্চারণ, লেখা, ভাষার সংগঠন ভালো হয়।
জয়িতা তো অনেক বদলে দিয়েছে। এখন মাঝে মাঝে অভ্যাসবশত হয়ে যায়। যাক, ঠিক হয়ে যাবে।
জয়িতা আর কান্টিবান্টির জিপিএস নিয়ে আলোচনার সময় মায়ের মন আঁতকে ওঠে। মা বলল, তোরা কি সামনে কোনো বিপদের আশঙ্কা করছিস।
জয়িতা আগে থেকেই সতর্ক ছিল। মায়ের মন বলে কথা। জয়িতা বলল, না খালা, সাবধান থাকা ভালো।
টেকনাফে আমরা কীভাবে আটকা পড়েছিলাম মনে নেই। তারা তো আবার প্রতিশোধও নিতে পারে।
তাই আমরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য এই কাজ করছি।
যদি কান্টিবান্টিকে অপহরণ করে তাহলে যেন আমরা সঙ্গে সঙ্গে ম্যাসেজ পেয়ে যাই আর উদ্ধারের জন্য কাজ করতে পারি।
আতিকনের বুকের ভিতরটা কীসে যেন কামড়ে ধরে। দুটি ছেলেমেয়েই জীবনের শুরুতেই নানা রকম বাধা বিপত্তিতে পড়ছে।
এতো মেধাবী ছেলেমেয়েরা আবার কোনো ঝুঁকিতে পড়ে– তা কি কোনো মা চায়? তাই আতিকন বলল, নওশাদ তুই এখানেই থাক।
কোথায় যাওয়ার দরকার নেই। কান্টিবান্টি হাসে। আমি এই কাজটি করেই চলে আসব মা।
তাছাড়া এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় এলে এর প্রস্তুতি আছে না?ঠিক আছে বাবা। সাবধানে থাকিস কিন্তু।
খালা আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। আমাদের নিরাপত্তার সব ব্যবস্থাই আমরা পাকা করে ফেলছি। বিজ্ঞানী কান্টিবান্টি চলে যায়।
আজ থেকে সে রাতদিন কাজ করতে হবে। কাজ করতে ওর ক্লান্তি নেই। না-ঘুমিয়ে থাকার এক সপ্তাহেরও রেকর্ড আছে তার।
অনেকেই কান্টিবান্টিকে ভূত ডাকে। খুব পরিচিত বন্ধু-বান্ধবের অনেকের ধারণা, কান্টিবান্টি সঙ্গে জিন আছে।
না-হয় একটা মানুষ কী করে এক সপ্তাহ না-ঘুমিয়ে থাকতে পারে! কাশেম পাটোয়ারী বড় শিল্পপতি।
তার বাড়টিও দশ কাঠা জমির ওপর। ছয়তলা ফ্লাট। নিজে থাকেন একতলা আর দোতলায় মিলে একটা ডুপ্লেক্স বাড়িতে।
বাড়ির সামনে বেশ ফাঁকা জায়গা। বাড়ির লন। আর তেতলা থেকে বাকি ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
তেতলা থেকে উপরের ফ্ল্যাটগুলো চার ইউনিটের। কাশেম সাহেব ভাবলেন,
তেতলার একটা ইউনিট আতিকন আর কান্টিবান্টিকে দিয়ে দিবেন। তবে সিদ্ধন্তটি তিনি মনে মনেই রাখলেন।