কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব তেরো

কান্টিবান্টি ভাবে, এদের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করে লাভ হবে না। সব কিছুতেই রাজি হয়ে যেতে হবে। তারপর যা হয় হবে। জয়িতা তো অবশ্যই উদ্ধার করতে পারবে। তখন এদের সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে।

কী ভাবছ বিজ্ঞানী?

কিছু ভাবছি না।

তুমি তাহলে রাজি আছো তো?

রাজি না থাকলে কী করবেন?

রাজি না থাকলে তুমি যাবে কবরে।

আমরা হয়তো চলে আসব খবরে।

ভালো কথা বললেন।

এখন কি তুমি কবরে যেতে চাও?

না। এখনই যেতে চাই না। কিছুদিন পর হলে ভালো হয়।

তাহলে তোমার থাকা-খাওয়ার সব সুব্যবস্থা করা হবে। তুমি এখানেই থাকবা। শুধু ঘর থেকে বের হতে পারবা না। আগামীকাল থেকে তুমি কাজ শুরু করবা। আর তোমার যখন যা লাগবে শুধু আমার দারোয়ানকে বলবে। সবকিছুই পাবে। মদটদ খাওয়ার অভ্যাস আছে?না, আমি মদ খাই না। সিগারেট খাও? না, তাও খাই না। তাহলে ভালো ছেলে। আমি তাহলে এখন যাচ্ছি। দারোয়ান তোমার হাতের আর চোখের বাঁধন খুলে দেবে। তুমি শান্ত সুবোধ ছেলের মতো থাকবা। আর পালানোর চেষ্টা করবা না। অবশ্যই চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হবে না। এখান থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই। চেষ্টা করলে এই ঘর থেকে তোমার লাশই বের হবে। পালানোর চেষ্টা করব না। আমি আপনার কথা মতোই কাজ করব। গভীর রাতে কান্টিবান্টির হাত ও চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। রুমে এসি চলছে। বেশ ঠান্ডা লাগছে। বাইরের আলো-বাতাস রুমের ভিতরে ঢোকার কোনো সম্ভাবনা নেই। ঘরটিতে কোনো জানালা নেই। এটি কোন জায়গা তা অনুমান করতে পারছে না সে। মাটির নিচে কোনো ঘর কিনা। একটি ছোট্ট লাইট জ্বলছে। কান্টিবান্টিকে যে বাড়িতে নিয়ে আটক করা হয়েছে সে বাড়িটি গাজীপুরের এক গভীর জঙ্গলের মাটির নিচে একটি বাড়ি। এই বাড়িটির উপরে রেড ওয়ার্ল্ডের মালিকের বাগানবাড়ি। অবসর যাপনের জন্য সে এখানে মাঝে মাঝে এসে থাকে। কখনও পরিবার নিয়ে আসে। বাগানবাড়িটি চমৎকার। কয়েকটি ছোট ছোট কটেজ। অনেক বড় একটি বাগান। কৃত্রিম পাহাড়, নদী, ঝর্না তৈরি করা হয়েছে। চারটি হরিণ, দুটি সজারু, কয়েকটি বানর, কিছু পোষা পাখি দিয়ে বাগানটি সাজানো। হাজারো রকমের গাছ। উপর থেকে বোঝার উপায় নেই যে, ভিতরে কোনো বাড়ি বা ঘর আছে। মাটির নিচে থাকায় নেটওয়ার্কেরও সমস্যা আছে। মাঝে মাঝে আসে, আবার মাঝে মাঝে কেটে যায়। গভীর রাতে একবার নেট পায় কান্টিবান্টি। সঙ্গে সঙ্গে জয়িতাকে মেসেজ দিয়ে দেয়। জয়িতার ফোনে মেসেজ আসার সাউন্ড পায়, কিন্তু মেসেজটা পড়তে পারে না? সঙ্গে সঙ্গে বাবার রুমে নক করে। বাবা তখন ঘুমে। দরজার শব্দ পেয়ে বাবা ওঠে। জিজ্ঞেস করে মা, কোনো সমস্যা?বাবা আমার মোবাইলের মেসেজটা পড়ো তো?বাবা চশমা লাগিয়ে মেসেজটা পড়ে চমকে ওঠেন। সর্বনাশ হয়ে গেছে জয়িতা। কী হয়েছে বাবা?কান্টিবান্টিকে অপহরণ করা হয়েছে। এখন উপায়?জয়িতা হাসে। তুমি হাসছো? ওরা যদি ছেলেটাকে মেরে ফেলে। মারবে না। আমি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলাম এমন একটা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। তাই সব ব্যবস্থাই পাকা করে রেখেছি। তুমি কম্পিউটারটা অন করে দেখো বাবা। তাহলে ওর অবস্থানটা বুঝতে পারবে। কাশেম পাটোয়ারী জয়িতার কথা শুনে থ মেরে যান। এসব কী বলে? তবু জয়িতার কথায় কাজ করে। এবং রাতেই কান্টিবান্টির অবস্থান শনাক্ত করতে পারে। গাজিপুরের কোনো এক গভীর জঙ্গলে কান্টিবান্টি আছে। রাতেই কাশেম পাটোয়ারী আতিকনকে ডেকে তোলেন। তারা দু’জন র‌্যাবের অফিসে যোগাযোগ করে সেখানে চলে যান। র‌্যাবের একজন ক্যাপ্টেন যিনি সেনাবাহিনী থেকে এসে এই ইউনিটের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি সব কিছু জেনে বললেন, একটু সবুর করুন। আমার অনুমান এই কাজ রেড ওয়ার্ল্ডের মালিকের বা তার লোকজনের। এমন চরম শিক্ষা দেব না, যে নিজের নাম ভুলে যাবে। তারা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। সঠিক জায়গাটি শনাক্ত করে জিপিএস-এর মাধ্যমে। তারপর রাতেই প্রয়োজনীয় লোক ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বের হয়ে যায়। আতিকন বাসায় ফিরে যায়। কাশেম পাটোয়ারী র‌্যাবের সঙ্গে। রাত গভীর। একটু একটু শীত। হেমন্তের শেষের দিক। হালকা কুয়াশায় ঢাকা পথ। তারপর গাজীপুর সড়কের পাশে জঙ্গলের ভিতর কুয়াশারা কারণে কিছুই দেখা যায় না। এই গভীর জঙ্গলে গাড়ি নিয়ে ঢোকার একটি মাত্রই সরু রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে গাড়িটি ঢুকলে অপহরণকারীরা টের পেয়ে আগেই বিজ্ঞানী কান্টিবান্টিকে সরিয়ে ফেলতে পারে বা মেরে ফেলতে পারে। এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। র‌্যাবের দলের নেতৃত্বে দিচ্ছেন মেজর আতিক নামের এক সাহসী যুবক। তিনি বললেন, গাড়ি জঙ্গলের ভিতরে নেয়া যাবে না এবং এই সড়ক দিয়েও গাড়ি ঢোকানো যাবে না। কাশেম পাটোয়ারী বললেন কেন?হিসাবটা খুব সহজ। এই বাগান বাড়িতে যাওয়ার একটি মাত্র সড়ক। সড়কের বিভিন্ন জায়গাতেই অপহরণকারীদের লোকেরা পাহারা দিবে। আমাদের গাড়ি দেখেই তারা বিজ্ঞানীকে সরিয়ে ফেলবে। তারা আমাদেরও আক্রমণ করতে পারে। আক্রমণ করলে আমাদের জীবনও বিপন্ন হতে পারে। এবং আমাদের সমস্ত পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যাবে। তাই অন্যপথ দিয়ে যেতে হবে। যদিও অন্যপথ আমরা চিনি না বা বিপদসংকুল তবু এছাড়া উপায় নেই। বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে। চ্যালেঞ্জিং তো বটেই। এটি দুঃসাহসিক কাজ। ওদের কাছে আধুনিক অস্ত্রও থাকতে পারে। আমাদের জীবন যেকোনো সময় বিপন্ন হতে পারে। কী পাটোয়ারী সাহেব ভয় পাচ্ছেন?কাশেম পাটোয়ারী যদিও ভয়ে কাঁপছিলেন। কাশেম পাটোয়ারী বললেন, দিনের বেলায় অপারেশন চালানো যায় না?মেজার আতিক হাসেন। তিনি বললেন, বুঝেছি, আপনি ভয় পাচ্ছেন। তবে আপনার কিছু হবে না। আসলে আমার মেয়েটার জন্যই ভয় হয়। মেয়েটা ছাড়া আমি আর কিছুই ভাবতে পারি না। যদি মরে যাই মেয়েটার কী হবে, সেরকম ভাবনা থেকেই আমার ভয় হয়।ভয় পাবেন না পাটোয়ারী সাহেব। আমাদের সঙ্গে অপহরণকারীদের পার্থক্য হলো, আমরা প্রশিক্ষিত আর ওরা অশিক্ষিত। মানে আমাদের মোকাবেলা করতে ওরা অশিক্ষিত, মূর্খ। ডোন্ট ওরি। মাত্র দুঘণ্টার মধ্যে দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে। মেজর আতিক ড্রাইভারকে বললেন, গাড়িটি জঙ্গলের প্রবেশের পথ থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে রাখো। আমরা সেখান থেকে হেঁটে জঙ্গলে প্রবেশ করব।

Series Navigation<< কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। বারোকিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব চৌদ্দ >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *