কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। আট
- কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। এক
- কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। দুই
- কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। তিন
- কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। চার
- কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। ৫ম
- কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। ছয়
- কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। সাত
- কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। আট
- কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব নয়
- কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। শেষ পর্ব ।।
আট:
-কই গো তানজিলের মা। শিগ্গির আসো। দেইখা যাও। তুমার ছেলেরে দেখো। ছেলে আজ রাজ্য জয় কইরা ফালাইছে। আমাগো প্রধানমন্ত্রী নিজে ডাইকা তুমার ছেলেরে মঞ্চে তুলছে। তার মাথায় হাত বুলায়ে দিছে। ওরে নিয়া মাইকে কথা কইছে। সরকার ওর পড়ালেখার সব দায়িত্ব নিছে। কই শিগ্গির আসো।
-কী হইছে? এতো চিৎকার করতেছো কেন? আজ যে দেখি মনে খুব ফুর্তি। পদ্মা সেতু নাকি তুমার মুখের হাসি কাইড়া নিছে। এখন হাসি আহে কই থেইকা?
-আমি ভুল বুঝছিলাম তানজিলের মা। আমি এজন্য খুব লজ্জা পাইছি। তুমাদের গালমন্দ করছি। সরকাররে গালমন্দ করছি। না বুইঝা এটা করা আমার মোটেও ঠিক হয় নাই। আমাগো প্রধানমন্ত্রী আজ আমার চোখ খুইলা দিছে। কান খুইলা দিছে। এখন থেকে আমি ভালোভাবে কাজ করমু। বড়ো বড়ো ফ্যাক্টরিতে কাজ করমু। আমাগো বইসা থাকার দিন শ্যাস।
-তোমাগো গল্প শুনতে শুনতে খাওয়ার টাইমই শ্যাস হইয়া যাইতেছে। আগে খাইয়া লও। তারপর গল্প করবা।
-না, আগে ব্যাগটা দেখুম। বাবা ব্যাগটা খোল তো দেহি আমাগো প্রধানমন্ত্রী কী দিছে।
তানজিল ব্যাগ খুলে তো অবাক। এত্তো এত্তো জিনিস দিয়েছে ব্যাগে? ব্যাগের ভিতর থেকে একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে পদ্মা সেতুর ছবি সংবলিত টাই, মাস্ক। চাবির রিং। পেপার ওয়েট। ওয়ালেট। কোট পিন। সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রকাশিত বই। খাবার প্যাকেট। পানির বোতল প্রভৃতি। তারা জিনিসগুলো হাতে নিয়ে অবাক চোখে দেখতে থাকে।
-মা খাবারের প্যাকেটটা নাও। সবাইরে ভাগ কইরা দাও। আমি মুখ হাত ধুইয়া আসতেছি।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তানজিল শুয়ে পড়ে। চোখে ভাসছে সকালের অনুষ্ঠানের ছবি। প্রধানমন্ত্রী তাকে মঞ্চে ডেকে নেওয়ার ছবি। তার দিকে মানুষের বিস্ময় চোখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকার ছবি। মনে মনে বলে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সত্যিই একজন মাটির মানুষ। মানুষটি খুব সাধারণ। কিন্তু কী অসাধারণ তাঁর প্রাণশক্তি। কী মায়াময় তাঁর আচরণ। কী সরল তাঁর কথা বলার ভঙ্গি। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সে পদ্মা সেতুর বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রকাশিত বইটির পাতা উল্টাতে থাকে। এই সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পড়ে তানজিল অবাক হয়। অজানা অনেক কিছু জানতে পারে। টাইয়ের বক্সটি হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে থাকে। বক্স থেকে টাইটি বের করে গলায় ধরে। পড়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে ছোট্ট আয়নাটি বের করে। দেখে টাই পরলে তাকে কেমন দেখায়। টাইয়ে পদ্মা সেতুর ছবি দেখে সে স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে যায়। যে রাজ্য অসম্ভব সুন্দর। স্বর্গের মতো। আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নরওয়েতে এস্কিমোদের বরফ বাড়ির মতো। সুইজারল্যান্ডের ঝকঝকে তকতকে রাস্তার মতো। আমাদের দেশও হয়তো একটি সুইজারল্যান্ডের মতো হবে। পদ্মা সেতুর মতো আরও বড়ো বড়ো সেতু হবে। পাঁচ ছয় মিনিটেই পেরিয়ে যাবে পদ্মার মতো বড়ো বড়ো অন্যান্য নদী। দুই তিন ঘণ্টার মধ্যেই চলে যাবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। একদিন এই টাই পরে সে অফিসে যাবে। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবে। ভাবতে ভাবতে তানজিল ঘুমিয়ে পড়ে।
পরের দিন সকাল বেলা। তানজিলের স্কুলে যাওয়ার সময় হয়েছে। সে স্কুল ব্যাগে বই, খাতা, কলমের সঙ্গে গতকাল পাওয়া চাবির রিং এবং কোটপিনটি নিয়ে নেয়। মনে মনে ঠিক করে কোটপিনটি হেড স্যারকে এবং চাবির রিংটি জাকির স্যারকে দিবে। দ্রুত পা চালিয়ে সে স্কুলে পৌঁছায়। ক্লাস রুমে ঢুকেই তানজিল অবাক হয়। দেখে স্যারের টেবিলে ফুলের তোড়া ও মিষ্টির প্যাকেট রাখা। দেখতে দেখতে সকল শিক্ষক ওই ক্লাস রুমে ঢুকলেন। হেড স্যার বললেন,
-শ্রেণি শিক্ষকের কাছ থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় চেয়ে নিচ্ছি। তারপর ক্লাস শুরু হবে। আমরা সবাই জানি তানজিল আমাদের সেতুবালক। সে আমাদের স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমাদের আনন্দ দিয়েছে। তাই এই সামান্য আয়োজন। আমরা আজ তাকে ফুল দিয়ে বরণের পাশাপাশি সবাইকে মিষ্টিমুখ করাবো। এই স্কুলের প্রতিটি ছাত্রছাত্রী যেনো তানজিলের মতো লেখাপড়ার পাশাপাশি সব ব্যাপারে সিরিয়াস হয়। এটাই আমাদের কামনা।
এই কথা বলো হেড স্যার তানজিলের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিলেন। তার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন। কৃতজ্ঞতায় তানজিলের চোখে জল এলো। মনে মনে পণ করলো এই ভালোবাস, সম্মান এবং মর্যাদার মূল্য সে আজীবন দিয়ে যাবে।
স্কুল ছুটি হয়েছে। বাড়ি ফিরতে হবে। দুই স্যারের জন্য আনা গিফটি তানজিল দিয়ে তারপর বাড়ি ফিরতে চায়। হেড স্যারের রুমে গিয়ে দেখে জাকির স্যারও আছেন। সে প্রথমে হেড স্যারের হাতে কোটপিনটি দেয়। তারপর চাবির রিংটি দেয় জাকির স্যারকে। গিফট পেয়ে তাঁরা ভীষণ খুশি হন। জাকির স্যার বললেন,
-তানজিল, তুমি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া গিফট আমাদের দিয়ে এই আনন্দক্ষণের অংশীদার করে রাখলে। আমরা চাই যদি কোনো দিন দেশে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু তৈরি হয়, তাহলে ওই সময় যেনো সেখানে তোমার কাজ করার সুযোগ হয়। আরও মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো। এখন থেকে টার্গেট করো এইচএসসির পর বুয়েটে তোমাকে ভর্তি হতেই হবে। দেশের নামকরা একজন ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। সেতুবালক নামটির মান মর্যাদা যেনো থাকে সেভাবেই এগিয়ে যাও।