কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। শেষ পর্ব ।।

দশ

সামনেই এইচএসসি পরীক্ষা। ফিজিক্স, ক্যামেস্ট্রি, বায়োলজি, ম্যাথ প্রতিটি সাবজেকটই তানজিলের ভালো লাগে। তবে সবচেয়ে ভালো লাগে ক্যামেস্ট্রি। কারণ সে জানে বিশ্বের যাবতীয় জিনিস পরমাণু দিয়ে গঠিত। এজন্য ক্যামেস্ট্রিকে বলা হয় পদার্থের উপাদান, কাঠামো, ধর্ম ও পারস্পরিক ক্রিয়-বিক্রিয়া সংক্রান্ত বিজ্ঞান। ফিজিক্স পড়তেও তার খারাপ লাগে না। কারণ সে জানে ফিজিক্স বিজ্ঞানের সবচেয়ে মৌলিক শাখাগুলোর মধ্যে একটি। ফিজিক্সের মূল লক্ষ্য মহাবিশ্বের আচরণ সম্পর্কে অনুধাবন করা। তানজিল অনুধাবন করে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পৃথিবী আজ হাতের মুঠোয়। বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি মোবাইল, ইন্টারনেট পৃথিবীকে করেছে আধুনিক এবং গতিশীল। পৃথিবীর যে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো সে দেশ ততো উন্নত এবং সমৃদ্ধ।

তানাজিল মনে মনে বলে- এ দেশ আরও উন্নত হতো যদি যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও ভালো হতো। যদিও পদ্মা সেতু এখন দেশের একুশটি জেলার সঙ্গে যোগাযোগে বড়ো ভূমিকা পালন করছে। তানজিল ভাবে- সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কিংবা প্রশাসনের বড়ো কর্মকর্তা হতে পারলেই যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কাজ করা যাবে। এজন্য সে পাঠ্যবই পড়ার পাশাপাশি তার সমস্ত ধ্যান-জ্ঞান বিভিন্ন ধরনের নকশা নিয়ে। বিশেষ করে সেতু, সুড়ঙ্গ, রাস্তাঘাট ইত্যাদি নিয়েই তার যত আগ্রহ। সে জানে কোনো জিনিস নির্মাণের আগে নকশা করতে হয়। তারপর নকশা অনুযায়ী জিনিসটি তৈরি করতে হয়। এরপর মানুষ তার সুফল ভোগ করতে শুরু করে। স্বপ্ন যাদের দেশ গড়ার তাদের জন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য তানজিল ভেবে রেখেছে এইচএসসি পরীক্ষার পরপরই বুয়েটে ভর্তির জন্য ঢাকায় গিয়ে কোচিং করবে। বুয়েটে ভর্তি হয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা করবে। ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশের সেবা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাগুলো এখনো কানে বাজছে- এই ছেলে হয়তো একদিন দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে। দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবে।

এসএসসির মতো এইচএসসিতেও তানজিল গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে পাশ করলো। এখন ঢাকায় যাওয়ার পালা। কিন্তু কার সঙ্গে যাবে? কোথায় থাকবে? কী খাবে? কোন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হবে? স্কুলের হেড স্যারের সঙ্গে কথা বলল তানজিল। স্যার বললেন,

                -তুই কোনো চিন্তা করিস না। সব দায়িত্ব আমার। আমার এক কাজিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। থাকে মোহসীন হলে।আমি তার সঙ্গে কথা বলে সব ব্যবস্থা করব। দরকার হয় আমি তোর সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় রেখে আসব। তোর মতো ছাত্রের জন্য কাজ করতে পারলে শিক্ষকদেরও ভালো লাগে। তুই বাড়ি গিয়ে গোজগাজ করে ফেল। টাকা পয়সার জোগাড় কর।      আমি তোর আব্বার সঙ্গে কথা বলব। দেখি কবে তোকে নিয়ে ঢাকায় যাওয়া যায়। মনে রাখিস তোর পড়ালেখার জন্য কোনো কিছু আটকে থাকবে না।

ঝকঝকে, চকচকে, মসৃণ রাস্তা। মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে শরীয়তপুর থেকে হাসান স্যার তানজিলকে নিয়ে চলে এলেন ঢাকায়। তার মতো কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু পেরিয়ে এই প্রথম ঢাকায় এলো তানজিল। গাড়িতে আসতে আসতে তার বার বার মনে পড়ছিল মা-বাবার কথা। বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষকদের কথা। ছোটোবেলায় গুটি গুটি পায়ে পদ্মা সেতু এলাকায় যাওয়ার কথা। সেতু এলাকায় কর্মরত লোকজনদের সঙ্গে গল্পের কথা। চোখের সামনে তাদের এলাকা বদলে যাওয়ার কথা। যেখানে আগে ছিল ডোবা, নালা। সেখানে আজ পাকা রাস্তা। রাস্তার আশপাশজুড়ে বিভিন্ন ধরনের কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, হসপিটাল। আরও কতো কী!

-কী মন খারাপ লাগছে?

-জি স্যার।

-একটু তো খারাপ লাগবে। পড়ালেখার জন্য ত্যাগ করলে প্রাপ্তি আসবেই।

এগারো

খবরটি মুহূর্তেই সবখানে ছড়িয়ে গেল। তানজিলদের মেসে খুশির জোয়ার বইছে। তাকে নিয়ে সবাই নাচানাচি করছে। মোবাইলে খবর পেয়ে তার মা-বাবা আনন্দে আত্মহারা। শিক্ষকরা আবেগে আপ্লুত। গ্রামাঞ্চলে তানজিলকে যারা চেনে তাদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। সবার মুখে একটাই কথা- সেতুবালক সত্যিই বিস্ময়কর একটি ছেলে। পড়াশোনার বিষয়ে পরিবার থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা না পেলেও সব ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করতে উপরে উঠেছে। বুয়েটের মতো দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। ছেলেটি তার লালিত স্বপ্নের আরও একধাপ ছুঁয়েছে। এমন ভাগ্য কজনের হয়! ছেলেটির মা-বাবাও ভাগ্যবান। ছেলের সাফল্যের কারণে আগে থেকেই এলাকার সবাই তাদের চেনে। তাদের সমীহ করে। সম্মান করে। শুকুর আলীকে হঠাৎ স্কুলে দেখে শিক্ষকরা তো অবাক। বিশেষ করে হাসান স্যার। তার জানা মতে তিনি আজই প্রথম এই স্কুলে এলেন। তানজিল যতদিন যশলদিয়া পদ্মা সেতু স্কুলে পড়েছে কোনো দিন শুকুর আলী আসেনি। তানজিলের পড়াশোনার বিষয়ে কোনো খোঁজখবর নেননি। আজ কেন তিনি স্কুলে এলেন হাসান স্যার ঠিক বুঝতে পারলেন না। স্যার বললেন,

                -চাচাজি বসুন। আপনার ছেলের রেজাল্ট নিশ্চয় শুনেছেন। তার রেজাল্ট শুনে আমরাও খুশি হয়েছি। ও আমাদের গর্ব। স্কুলের গর্ব। কারণ এই প্রথম যশলদিয়া স্কুলের কোনো ছাত্র বুয়েটে চান্স পেয়েছে। আমরা সত্যিই আনন্দিত।

                -হ, বাবা। তাই তো হুনলাম। খবরটি শুনে আমরাও খুব খুশি হইছি। আমার ছেলে পড়ালেকা কইরা ইঞ্জিনিয়র হইব এডা ভবতে কার না ভালো লাগে। তয় এ সব আপনেগো অবদান। আমি কিছুই করতি পরি নাই। ছেলেডার লগে ঠিকমতো কোনো দিন কতা বলি নাই। কোনো দিন তার পড়ালেকার খোজ নেই নাই। এটা এখন ভাবলে আমার শরম পায়। বাবা   আমি একটা কতা কইতে তুমার স্কুলে আইছি। ঠিক করছি ছেলে বড়ো জায়গায় চান্স পাওয়ার খুশিতে আমাগো বাড়িতে তোমাগো একসাজ ডাল-ভাত খাওয়ামু। এই স্কুলের সব স্যাররা যাবেন। আপনি স্কুলের প্রধান মানুষ। আপনার কাছে দাওয়াত দিলাম। আপনি তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছে দিবেন। আগামী শুক্রবার বাদ জুম্মা আমাগো বাড়িত আপনারা আইবেন। আমাগো সঙ্গে চারটা খাইবেন। স্কুলের কোনো স্যার যেন বাদ না যায়। আমি তো হগল স্যার রে চিনি না।

                -দাওয়াত কবুল করলাম চাচা। কিন্তু এ বিষয়ে আমার একটু কথা আছে।

                -বলো বাবা কী কথা?

                -আমার মনে হয় তানজিলকে বাদ দিয়ে এ ধরনের একটি অনুষ্ঠান করা ঠিক হবে না। ও আগে ভর্তি-টর্তি হয়ে বাড়িতে আসুক। তারপর দেখা যাবে।

                -আইচ্ছা স্যার। আমি অশিক্ষিত মানুষ। আপনে যা ভালো মনে করেন তাই হইবে। তাইলে ছেলেডা বাড়িত আসুক। আমার কতা ভুলে যাবে না তো বাবা?

                -মোটেই ভুলব না।

                -আইচ্ছা।

এই কথা বলে শুকুর আলী চলে যায়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে খুব সকালে বুয়েট ক্যাম্পাসে চলে যায় তানজিল। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। সবুজ ঘাস আর গাছগাছালিতে ঘেরা ক্যাম্পাসটি তার খুব ভালো লাগে। ক্যাম্পাসের রাস্তা এবং বড়ো বড়ো বিল্ডিংগুলোও ভালো লাগে। ভাবতে ভালো লাগে আজ তার দীর্ঘদিন ধরে লালিত একটি স্বপ্নের প্রথম ধাপ পূরণ হলো। এখনো পার হতে হবে অনেকটা পথ।

তানজিলের পথ যেনো আর কিছুতেই শেষ হচ্ছে না। টানা প্রায় ছয় মাস পর বড়ো প্রাপ্তি নিয়ে সে বাড়ি ফিরছে। মা-বাবা প্রিয় শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা হবে। কথা হবে। এজন্য মনে অনেক আনন্দ। বাড়িতে সবাই তানজিলের জন্য অপেক্ষা করছেন। ক্লাস শুরু হবে আরও কয়েকদিন পর। এই ফাঁকে সে বাড়ি ফিরছে। পদ্মা সেতু হওয়ায় এখন খুব দ্রুত বাড়িতে যাওয়া-আসা করা যায়। দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাজ সারা যায়।

গাড়ি থেকে নেমে বাড়ি পৌঁছাতেই অনেকটা সময় লেগে গেল তানজিলের। পথে যার সঙ্গে দেখা হয় কুশল জানতে চায়। জানতে চায় পড়ালেখার খবর। ঢাকার খবর। বাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে মা দৌড়ে এসে তানজিলকে জড়িয়ে ধরলো। শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখের ঘাম মুছে দিলো। শুকুর আলী কাছে এসে বললো,

                -ছেলে কি শুধু তোমার একার? আমাকেও একটু আদর করতে দাও।

এই কথা বলে শুকুর আলী তানজিলকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। আবেগ আর ভালোবাসার ছোঁয়ায় তানজিলের চোখে পানি এলো। মনে মনে বলল, বাবা আমাকে এতো ভালোবাসে আগে জানতাম না। এই প্রথম বাবা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। আদর করলো। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি। অদ্ভুত ভালোলাগা। মায়াজড়ানো ক্ষণ। এমন মুহূর্ত জীবনে বারবার আসে না। তানজিল দেখলো তার বাবার চোখেও জল টলটল করছে। এ কান্না আনন্দের। এ কান্না প্রাপ্তির। এ কান্না উপলব্ধির।

পরের দিন স্কুলের স্যারদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও একই অবস্থা। স্যারেরা তানজিলকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। মাথায় হাত দিয়ে আদর করলেন। হেড স্যার বললেন,

                -আমরা খুব খুশি হয়েছি তানজিল। তুমি আমাদের গর্ব। আমাদের স্কুলের অহংকার। এই গ্রামের অলংকার। ভাবছি তোমাকে নিয়ে স্কুলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবো। তুমি তোমার সাফল্যের গল্প শোনাবে। বড়ো কিছু পেতে গেলে যে কষ্ট করতে হয়, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে তা বলবে। যাতে তোমাকে দেখে ছাত্রছাত্রীদের মনে নতুন নতুন স্বপ্ন তৈরি                 হয়। ওরাও ভাবতে পারে তানজিল ভাইয়া পারলে আমরাও কিছু করতে পারবো। ভালো জায়গায় পড়ে বড়ো মানুষ হতে পারবো।

                -না স্যার। স্কুলে অনুষ্ঠান করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি বরং সব ক্লাসে গিয়ে ছোটো ভাইবোনদের সঙ্গে দেখা করে আসি। কথা বলে আসি। আমি যে কয়দিন বাড়িতে আছি চেষ্টা করবো প্রতিদিন স্কুলে আসতে। আপনার যদি অনুমতি দেন তাহলে বিজ্ঞানের ক্লাসগুলোও নিতে পারি।

                -কেন নয়। তাহলে তো খুব ভালো হয়। তুমি এসো। ও আরেকটি কথা। তুমি কি জানো ফরিদপুরের ভাঙ্গাতে নতুন একটি জাদুঘর হয়েছে?

                -জি স্যার পত্রিকায় পড়েছি। পদ্মা সেতুর সরঞ্জাম দিয়ে সেখানে নাকি নতুন একটি জাদুঘর হয়েছে। সেখানে পদ্মা সেতু  নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত অনেক জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। অনেক ছবি, ভিডিও রাখা হয়েছে। বিভিন্ন প্রাণীর নমুনা রাখা হয়েছে। জাদুঘরটি নাকি দেখার মতো করেছে। 

                -আমি কয়েকদিন থেকে ভাবছি জাদুঘরটি দেখে আসব। কিন্তু যাই করে আর যাওয়া হয়নি। বলতে পারো ইচ্ছে করেই যাইনি। বার বার মনে হচ্ছিল তুমি আগে আসো। তারপর যাব। তোমাকে ছাড়া জাদুঘর দেখতে আমার ভালো লাগবে না।

                -আমারও ভালো লাগবে না স্যার। চলেন একদিন যাই। জাকির স্যারসহ অন্যান্য স্যারও যেতে পারেন। আপনার দেখে আসার পর একদিন ছাত্রছাত্রীদেরও সেখান থেকে ঘুরিয়ে আনতে পারেন।

                -ভাবছি সেটাই করবো। কারণ আমরা জানি জাদুঘর হচ্ছে সমাজের দর্পণ। একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতির সংগ্রহভা-ার। পদ্মা সেতুও আমাদের ঐতিহ্যের স্মারক। অহংকারের প্রতীক।

                -এ জন্যই তো সরকার এই জাদুঘর তৈরি করেছে। যাতে সবাই সহজে জানতে পারে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু কীভাবে তৈরি হলো।

স্কুল ছুটির দিনে হাসান স্যার, জাকির স্যার ও তানজিল বেরিয়ে পড়লো জাদুঘর দেখতে। তারা যখন ভাঙ্গায় জাদুঘর এলাকায় পৌঁছালো তখন সকাল প্রায় এগারোটা। কাউন্টার থেকে টিকেট কেটে তারা ভিতরে ঢুকলো। অসম্ভব সুন্দর আর নান্দনিক করে সাজানো হয়েছে জাদুঘরটি। সবকিছু ঝকঝকে তকতকে। বড়ো ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। পদ্মা সেতুর প্রধান রূপকার স্বপ্নদ্রষ্টা আমার প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। শেখ রেহানাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সেতু এলাকা ভ্রমণের ছবি। বিভিন্ন উপাদানে তৈরি পদ্মা সেতুর মডেলের ছবি। ছবির উপরে বড়ো করে লেখা ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ মডেল। কথাটি পড়ে তাঁদের বুকটা গর্বে ভরে ওঠে। ভাবে- সত্যিই তো আমাদের টাকায়। আমাদের সেতু। একটু সামনে এগিয়ে দেখে সেতুতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। কয়েকটি ঘর সাজানো হয়েছে হাজার হাজার প্রাণির ছবির নমুনা দিয়ে। গাইড জানালেন, সেখানে প্রায় তিন হাজার প্রাণীর নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কয়েকটি প্রাণী এবং জীববৈচিত্রের মৃত শরীর ক্যামিকেল দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ছবির গ্যালারিটি সাজানো হয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিভিন্ন পর্বের ছবি এবং এই সেতুতে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের ছবি দিয়ে। আরও আছে পদ্মা সেতুর নির্মাণসামগ্রী যেমন- যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও কাঁচামালের ছবি। দেশ বিদেশের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের ছবি। পরামর্শকদের ছবি। নির্মাণ শ্রমিকদের ছবি। পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ছবি। এসব ছবি দেখতে দেখতে হঠাৎ একটি ছবির দিকে তানজিলের চোখ আটকে যায়। দেখে সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানের দিন প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানো তার একটি ছবিটিও বোর্ডে লাগানো আছে। তানজিল প্রথমে নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করাতে পারছিল না। চোখ কচলে আবারও দেখে। সত্যিই তো। তার ছবি। সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলল, স্যার স্যার শিগ্গির আসেন। স্যার আমার ছবি। আমার ছবি। দেখে যান। তার প্রিয় দুই স্যার দ্রুত এলেন। ছবিটি দেখে হাসান স্যার ‘সত্যিই তো’ এই কথা বলে তানজিলকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, আমাদের তানজিলও গর্বের পদ্মা সেতুর একজন উজ্জ্বল সাক্ষী হয়ে থাকলো। জাদুঘরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পাশে তানজিল। ছবির নিচে ক্যাপশনে লেখা- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেতুবালক তানজিল হুদা। আহ্ ভাবতেই ভালো লাগছে। আবেগ আর ভালোবাসায় জাকির স্যারও তানজিলকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, তুমি সত্যিই আমাদের জাদু দেখালে তানজিল। আমাদের মাত করে দিলে। তানজিলের চোখে টলটলে জল। এই কান্না কি আনন্দের, নাকি প্রাপ্তির? তানজিল জানে না। 

Series Navigation<< কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব নয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *