কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। তিন

তিন

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে মানুষের কাটা মাথা লাগবে। গুজবটি তানজিলদের যশলদিয়া পদ্মা সেতু স্কুল-সহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও তানজিল এই গুজবে মোটেও কান দেয়নি। কারণ সে এখন আর ছোট্টটি নেই। পড়ে দশম শ্রেণিতে। ভালো মন্দের অনেকখানি সে বুঝতে পারে। কম্পিউটারে তানজিল এখন অনেকটাই দক্ষ হয়ে উঠেছে। স্কুলের জাকির স্যার তাকে কম্পিউটারের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো শিখিয়ে দিয়েছেন। এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, ফটোশপ প্রভৃতি প্রোগ্রামের পাশাপাশি শিখিয়েছেন ইন্টারনেট ব্রাউজিং। তানজিল যে বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠলো সেই বছর স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব খোলা হলো। আলাদা বিষয় হিসেবে পড়ানো শুরু হলো। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ যতো এগিয়েছে, জাজিরা পয়েন্ট এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার ততোই উন্নতি হয়েছে। বিদ্যুৎ যায় না বললেই চলে। স্যারেরা শ্রেণি কক্ষে প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠ্য বিষয় অডিও-ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন। মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে পাঠ্য বইয়ের হুবহু কপি প্রজেক্টরে দেখান। সপ্তাহে একদিন শিক্ষনীয় সিনেমা কিংবা ডকুমেন্টারি দেখান। দেশ বিদেশে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনার ভিপিও ক্লিপ দেখান। স্যারেরা দেখালেন- পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে মানুষের কাটা মাথা লাগবে। এই গুজবকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে মানুষকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছে। গুজব প্রতিরোধে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এ ধরনের গুজবে কাউকে বিভ্রান্ত না হতে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ সদর দফতর অনুরোধ জানিয়েছে। গুজব প্রতিরোধ ও রটনাকারীদের গ্রেফতার করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাজ করছেন পুলিশের সাইবার গোয়েন্দারা।

যশলদিয়া পদ্মা সেতু স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাসান স্যার। তিনি একদিন স্কুলের সকল শিক্ষক ও ছাত্রদের মাঠে ডাকলেন। পদ্মা সেতু তৈরির কাজে মানুষের কাটা মাথা লাগবে এ বিষয়টি যে সম্পূর্ণ গুজব সেটি জানালেন। সবার উদ্দেশ্যে বললেন- এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য। স্যার জনালেন, ২০১৫ সালের শুরুর দিকে নদীতে প্রাণীর রক্ত ঢেলে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কাজের উদ্বোধন করে চীনা ঠিকাদারি একটি প্রতিষ্ঠান। মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় মূল সেতুর ভিত্তি স্থাপনের সময় স্থানীয় অনেকেই নদীতে গোরু ও খাসির রক্ত ঢালতে দেখেছেন চাইনিজ ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের। কয়েকটি মুরগিও তখন নাকি ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। চীনাদের বিশ্বাস- বড়ো কাজের শুরুতে পশু উৎসর্গের মাধ্যমে নাকি স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এড়ানো যায় বড়ো বড়ো দুর্ঘটনা। তখন রেডিও, টেলিভিশন, পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে খবর প্রচারিত হয়েছিল। সেই সময়ের রক্তের ছবি এখন কোনো একজন ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে। আর এতেই ঝামেলা বেধেছে। স্যার আরও বলেন, এ ধরনের গুজব মানুষ হত্যার হাতিয়ার। কোনো বিষয়ে ভুল তথ্য দেওয়া বড়ো অপরাধ। সুতরাং কাউকে কোনো বিষয়ে ভুল তথ্য দেওয়া যাবে না। গুজব রটানো যাবে না। অভিভাবকদের মনে রাখতে হবে, এ ধরনের ভীতি যেন শিশুদের মনে না দেওয়া হয়। তাহলে শিশুদের মানসিক ক্ষতি হতে পারে। তোমরা কিন্তু এ সব গুজবে মোটেও বিভ্রান্ত হবে না। কান দেবে না। ভয় পাবে না। বরং যারাই বলতে আসবে তাদের বুঝিয়ে বলবে খবরটি মিথ্যা। সম্পূর্ণ গুজব, কেমন? সবাই একসঙ্গে বলে উঠলো, জি স্যার।

স্যার আরও বললেন, এখন সেতু নিয়ে মজার একটি ঘটনা বলে তোমাদের আজ ছুটি দিব। কেউ কথা বলবে না কিন্তু? তোমরা কি জানো ইলিশ মাছ উৎপাদনে পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম? শুধু তাই নয়। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীর মধ্যে তৃতীয়? বিশ্বে ইলিশ মাছ উৎপাদনের শতকরা ৭৫ ভাগই হয় বাংলাদেশে। তোমরা জানো- আমাদের পদ্মার ইলিশ খুবই সুস্বাদু। বছরে হাজার হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয় আমাদের পদ্মা নদীতে। এজন্য সেতু তৈরির সময় ইঞ্জিনিয়ারদের পাশাপাশি নদী বিশেষজ্ঞদের খুবই সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। যাতে মা ইলিশ কিংবা ইলিশ মাছের পোনার কোনো ক্ষতি না হয়। পদ্মা সেতু তৈরির সময় নদীর তলদেশে ইলিশ মাছের চলাচলে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেদিকেও তাদের নজর রেখতে হয়েছে। আমি টেলিভিশনে একজন নদী বিশেষজ্ঞর সাক্ষাৎকার শুনেছি। তিনি বলেছেন ২০০ ডেসিমেলের ওপরে শব্দ হলে ইলিশ মাছ নাকি উল্টো দিকে চলতে শুরু করে। এজন্য পাইল করার সময় মোটা মোটা পাইপে মাফলার জাতীয় মোটা কাপড় পেঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে বড়ো বড়ো হ্যামারের আঘাতে নদীর তলদেশে কম শব্দ হয়। বেশি শব্দে যাতে ইলিশের কোনো ক্ষতি না হয়। সবদিক মিলিয়ে এতোটা সতর্কতার সঙ্গে কাজটি করা হচ্ছে। অথচ কিছু মানুষ গুজব ছড়িয়ে সেতুর কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করছে। সুতরাং সাবধান। গুজবে কান দেবে না।

Series Navigation<< কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। দুই কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। চার >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *