কিশোর উপন্যাস

কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। চার

চার:

খবরটি শোনার পর থেকে পদ্মা সেতু সম্পর্কে তানজিলের জানার আগ্রহ যেনো আরও বেড়ে যায়। পদ্মা সেতু নির্মাণ বিষয়ে পত্রপত্রিকা, ইন্টারনেট থেকে আরও বেশি বেশি তথ্য জানার চেষ্টা করতে থাকে। এ বিষয়ে ইউটিউবে, গোগলে ভিডিওচিত্র দেখতে থাকে। ভাবতে থাকে কীভাবে সাধারণ মানুষকে বোঝানো যায় যে, পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে মানুষের কাটা মাথা লাগে না। লাগে অর্থ, শ্রম, সময়, ডিজাইন, ইট, বালু, সিমেন্ট, পাথর, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, নির্মাণশৈলী এবং প্রকৌশলগত আধুনিক প্রযুক্তি। তানজিল খুব ভালো করেই জানে গুজবে কান দিতে হয় না। কারণ সে ক্লাসের বইয়ে কবি শামসুর রাহমানের ‘পন্ডশ্রম’ কবিতায় পড়েছে-

এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে,

চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।

… নেইকো খালে, নেইকো বিলে, নেইকো মাঠে গাছে;

কান যেখানে ছিল আগে সেখানটাতেই আছে।

সুতরাং সে জানে কোনো বিষয় বা তথ্য প্রচারের আগে তার সত্যতা যাচাই করতে হয়। তানজিল এই ভেবে পদ্মা সেতু নির্মাণ এলাকায় চলে যায়। সে যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে তখন থেকেই সেতু এলাকায় তার নিয়মিত যাতায়াত। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে প্রায় ছয় বছর। এখনও সময় পেলেই সে পদ্মার পাড়ে যায়। সেখানে কর্মরত শ্রমিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে গল্প করে। সেতু এলাকার সবাই জেনে গেছে তানজিল অন্য ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে একটু আলাদা। সে বিকাল বেলা মাঠে না খেলে দৌড়ে চলে যায় পদ্মার পাড়ে। ক্রেনের ওঠানামা দেখে। পাথর ভাঙা, লোহা কাটা দেখে। বিশাল বিশাল মিকচার মেশিনে সিমেন্ট বালু আর পাথরের মিশ্রণ মেশানো দেখে। বড়ো বড়ো ক্রেনের সাহায্যে পিলারের ওপর স্প্যান বসানো দেখে। মাঝে মধ্যে চলে যায় সেতুর সাইট অফিসে। সাইট অফিসের অনেকেই আগে থেকে তানজিলকে চেনে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিঙের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তানজিলের জানার আগ্রহ দেখে তারা অবাক হয়। স্কুলের স্যারেরাও অবাক হন। বিশেষ করে জাকির স্যার।

একটু আগে স্কুল ছুটি হয়েছে। তানজিল বাড়িতে না গিয়ে সোজা চলে যায় তাদের কম্পিউটার ল্যাবে। দেখে জাকির স্যার কম্পিউটারে কাজ করছেন।

                -স্যার আপনার সঙ্গে একটি বিষয় শেয়ার করতে চাই। যদি আপনি অনুমতি দেন।

                -বলো, কী বলতে চাও।

                -স্যার, আমি পদ্মা সেতু তৈরির বিভিন্ন বিষয় এবং সেতু নিয়ে ছড়ানো গুজব বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দিতে চাই। ওই অনুষ্ঠানে স্কুলের সবাই যাতে উপস্থিত থাকে আপনাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে স্যার।

                -তাই! খুবই ভালো খবর। কাজটি করতে পারলে তো ভালোই হবে। তুমি আগে প্রেজেন্টেশনটি রেডি করো। আমাকে দেখাও। তারপর আমি হেড স্যারের সঙ্গে কথা বলে একটি ডেট ঠিক করবো।

                -অবশ্যই স্যার। আপনাকে না দেখিয়ে বা না জানিয়ে কিছুই করবো না। আপনি শুধু আমাকে সহযোগিতা করবেন।

                -শোনো তানজিল, তুমি যে এই বয়সে এমন একটি বিষয় ভেবেছো এটাই তো অনেক। তুমি সময় নাও। আমরা সবাই আছি তোমার পাশে। আগামী মাসের ষোলো তারিখে আমাদের স্কুলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ওই দিনের অনুষ্ঠানে তোমার প্রেজেন্টেশনটা দিলে ভালো হবে। হাতে প্রায় মাসখানেক সময় আছে। তোমার যখন এবং যতোক্ষণ খুশি ল্যাব ব্যবহার করতে পারো। আমার দিক থেকে কোনো আপত্তি থাকবে না।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তানজিলের প্রেজেন্টেশনের বিষয়ে হেড স্যারেরও কোনো আপত্তি নেই। কারণ হেড স্যার জানেন, তানজিল এই স্কুলের সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র। পড়ালেখার পাশাপাশি উপস্থিত বক্তৃতা, আবৃত্তি, গান প্রভৃতি বিষয়েও সে সেরা। সে নিশ্চয় আমাদের ভালো কিছু করে দেখাবে। এজন্য জাকির স্যারের কাছে তানজিলের প্রেজেন্টেশনের কথা শুনে বরং খুশিই হলেন। জানালেন, শুধু আমাদের স্কুলের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী কেন। আমি চাই ওই দিন টিএনও সাহেব এবং থানা শিক্ষা অফিসার সাহেব প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। তাঁরা জানবেন আমাদের স্কুল একটি ডিজিটালাইজ স্কুল। আমাদের স্কুলের ছাত্ররা অনেক সচেতন। আমাদের এখানে তানজিলের মতো চৌকস ছাত্রও আছে।

তানজিলের চোখে ঘুম নেই। প্রেজেন্টেশনের বিভিন্ন বিষয়-আশয় নিয়ে ভাবছে আর নোট করছে। ল্যাবে যেয়ে কাজ করছে। এই মুহূর্তে তার মনে পড়ছে এ পি জে আবুল কালামের সেই উক্তি- স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যাও। স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন হলো সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না। সত্যিই তানজিল ঘুমোতে পারছে না। হাতে আছে মাত্র ছাব্বিশ দিন। এর মধ্যেই কাজটি শেষ করতে হবে। কারণ সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা। পরীক্ষার কারণেও কাজটি করা সম্ভব হবে না। এজন্য সে প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ এগিয়ে নিতে থাকে।

Series Navigation<< কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। তিনকিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। ৫ম >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *