ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। আঠারো পর্ব
- সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা// প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস //এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা//পর্ব দুই
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব তিন
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট // নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব চার
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট // নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব পাঁচ
- ধারাবাহিক// উপন্যাস // এক্সপেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব ছয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব সাত
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব আট
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব নয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব দশ
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব একাদশ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব বারো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব তেরো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব চৌদ্দ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব পনেরো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব ষোল
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব সতেরো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। আঠারো পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। শেষ পর্ব
প্রেম-ই অবশেষে শেষ কথা!
সাবওয়ের বার্গার খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়া আশফাককে অবশেষে পাওয়া গেল ঘিঞ্জি শহরতলীর এক ড্রেনের পাশে। কেন ও ঘুমিয়ে ছিল, মেট্রো স্টেশন থেকে ওখানে গেলই বা কি করে, আশফাক তো কিছুই জানে না। হাসপাতালে নেওয়ার পরও ওর ঘুম ভাঙ্গে না, ভাঙ্গবে বলে অপেক্ষা করেছিল পুলিশ। পাঁচ দিন পর চোখ মেলার পর পুলিশের সাথে কি কথা হ’ল আশফাকের, তা ও নিজেও বুঝতে পারেনি। পত্রিকার পাতায় খবর এল, অবশেষে বাংলাদেশি গবেষককে খুঁজে পাওয়া গেছে। সম্ভবত অসুস্থ হয়ে কোথাও ছিলেন, কোথায় ছিলেন মনে করতে পারছেন না, তবে তাকে পাওয়া গেছে এ নিশ্চয়ই স্বস্তির খবর।
আশফাকের মাথা পুরোপুরি ফাঁকা। ওর স্মৃতিতে কেউ নেই। লরা নেই। এমনকি আরিয়ানাও নেই।
ও যে প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছিল, অফিসিয়ালি কর্তৃপক্ষ ওর জন্য সবকিছুই করল। গম্ভীর মুখে ড. করিম নায়েরনিয়াও দেখতে এসেছিলেন ওকে। আশফাক চিনতে পারেনি। হ্যারি মুর প্রিয় বন্ধুর মত ছুটে এসেছে বারবার। আশফাকের ফাঁকা মাথার ভেতর একটা একটা করে স্মৃতি রোপন করে দেওয়ার জন্য অনর্গল কথা বলে যায়। কখন কোথায় কিরকম আড্ডা দিয়েছিল, কোন্ মজাটা দারুন মজা হয়েছিল, এসব কথা বলতে বলতে আস্তে আস্তে আশফাক সোজাসুজি হ্যারির চোখের দিকে তাকানোর তাগাদা ফিরে পায়। মুচকিও হাসে মাঝে মাঝে।
হ্যারি মুর নিজেদের কাজ নিয়ে কথা বলতে চেয়ে আশফাকের মুখ সাদা হয়ে যেতে দেখেছিল বলে থমকে যায়। বলেনা ওসব। তবে বেশ কিছু দিন কেটে যাওয়ার পর আশফাক নিজেই একদিন অদ্ভুত এক প্রশ্ন করে বসে, জেনেটিক্যালি মডিফাইড কতখানি হতে পারবে মানুষ?
হ্যারি মুরের কোন আন্দাজ নেই। তবে মানুষকে কেন মডিফাইড হতে হবে, এ প্রশ্ন করতে গিয়ে হ্যারির মুখ শক্ত হয়ে গেল।
মানুষকে মডিফাইড হতে হবে, কেননা মানুষ বড্ড আনমডিফাইড!
আশফাকের কথা শুনে হা হয়ে যায় হ্যারি। মানুষ আনমডিফাইড! হ্যাঁ, মানুষের নানান কান্ড দেখলে সেরকম মনে হয় বটে। তবে এই আনমডিফাইড মানুষ নিয়েই তো চলছে পৃথিবী।
এই পৃথিবী বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
মানে?
নিউ মডিফাইড হিউম্যান বিইং ফর দ্য নিউ ওয়ার্ল্ড।
সেই নিউ ওয়ার্ল্ডের একটা নামও তো আছে। আশফাকের মাথার ভেতর ঘুর্ণিঝড় বয়ে গেল, কিন্তু কিছুতেই নামটা মনে আসল না। যদি আসত, তবে ও বলতে পারত, নিউ ওয়ার্ল্ডের নাম হচ্ছে জোসেফ মেঙ্গেলেজ ওয়ার্ল্ড। সেখানে কি কেবলি জোসেফ মেঙ্গেলের তৈরি করা ক্লোন জোসেফ মেঙ্গেলেজ থাকবে? আর কেউ নয়?
বাস্কেটবল থ্রো করতে থাকা জোসেফ মেঙ্গেলে যে আর কাকে রাখতে চায় এই পৃথিবীতে, তার হিসাব তার কাছেই আছে। তবে আরিয়ানা রাস্তে আন্দাজ করেছিল। আশফাককে একদিন ফিসফিস করে প্রশ্ন করেছিল, জেনেটিক্যালি মডিফাইড কতখানি হতে পারবে মানুষ?
আশফাকের কোন আন্দাজ ছিল না।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা আশফাকের মাথার ভেতরে একটু একটু করে যখন নানান কথারা ভিড় করছিল স্মৃতিগুলোকে সাথে নিয়ে, তখন ওর মনে পড়েছিল আরিয়ানার কথা। আরিয়ানার চোখে ভয় ছিল, উদ্বেগ ছিল। আরিয়ানা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলেছিল, নতুন প্রজাতির মানুষ হবে সে। কেমন হবে সে, আন্দাজ করতে পার?
আশফাকের আসলেই কোন আন্দাজ ছিল না।
একটি আদিম কোষ। এই কোষ থেকেই পাওয়া ডিম আর স্পার্ম নিষিক্ত হয়ে হ’ল ভ্রুন।
একই কোষ থেকে? মানব ভ্রুন?
মানব বলব কি না জানি না, শারীরিক বা মানসিক গঠন মানবের মতো হবে কি না তা-ও জানি না।
মডিফাইড বলে মানব শরীরের যত অসঙ্গতি আছে, তা দূর করে ফেলা হবে। ফলে এর কোন শারীরিক দুর্বলতা বা অক্ষমতা থাকবে না। চিতার মতো ছুটতে পারবে, অক্টোপাসের মতো আট হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরতে পারবে, বেড়ালের মতো রাতে দেখবে জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে, এরকম সব কিছু সে পারবে। মানসিক শক্তির কথা যদি বলি, সেখানেও থাকবে না কোন খাদ। ইঁদুরের মতো জাহাজ ডুবে যাওয়ার সংকেত ধরতে পারবে মস্তিষ্ক, পরিযায়ী পাখির মতো প্রাকৃতিক কম্পাস হবে নিজেই—মডিফাইড মানুষের এরকম অনেক শক্তির কথা বলেছিল আরিয়ানা। বলেছিল, হয়তো লিঙ্গ থাকবে না। নারী নয়, পুরুষও নয়। কোন পিতামাতা নেই। কোন সন্তানও নেই। একা একজন। একা কেবল নিজেই থাকবে।
কেন থাকবে? এভাবে থেকে কি লাভ?
জানি না!
আরিয়ানা বিষণ্ন শ্বাস ফেলে বারবার বলছিল, জানি না। জানি না।
আশফাক খুব মনে করতে চায় আরিয়ানাকে। কোথায় আরিয়ানা? কোথায় সেই জোসেফ মেঙ্গেলে-র দল? কোথায় ছিল সেই খাঁচাগুলো, যেখানে কাঁদত না মানুষ না পশুরা। কোথায় সেই সন্ধ্যাগুলো, যেখানে নারীকণ্ঠের কান্না কাঁদিয়ে দিত ওদেরকে? আশফাক কিছুতেই মনে করতে পারে না। সমস্যা হচ্ছে, হ্যারি মুরকে বলেছিল ওর অভিজ্ঞতার কথা। হ্যারি মুর বিশ্বাস করেনি। ওর দিকে চিন্তিত চোখ নিয়ে তাকিয়ে ছিল। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল, টাইম উইল হিল য়্যু, মাই ফ্রেন্ড।
এক সকালে আশফাক ফিরে এল ওর ঠিকানায়। ভোরের আলো তখনো ভালভাবে ফোটেনি। নিজের ফ্ল্যাটে কলিং বেল বাজিয়ে ও ডাকছিল সাবিনাকে। মনে হচ্ছিল, মা এসে বুঝি দরজা খুলবেন। সাবিনার মৃত্যুর পর মা-কে ও আর ক’বছর পেয়েছিল? তিন বছরের একটু বেশি। ছেলেকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাওয়া মা ঘুমের ভেতর চলে গেলেন। আশফাকের ডাক্তার হওয়া বা মানুষ হওয়াটা দেখে যেতে পারলেন না।
দরজা খুলেছিল সোহা। সাবিনার মতো মুখের আদল বলে আশফাক সাবিনাকে পেয়েছিল বলে খুশিতে কেঁদে ফেলেছিল। সোহাকে জড়িয়ে ধরে ওর কান্নার স্রোত নায়াগ্রা জলপ্রপাতের পানির তোড় হয়ে ভাসিয়ে নিল ওর দুঃখগুলোকে। হাউমাউ কান্না আর সাবিনাকে ডেকে শান্তি খুঁজতে চাওয়া মানুষটার এরকম রূপ সোহা তো চেনে না। সাবিনার কোন কথাও ওর জানা নেই। ও কেবলি বিমূঢ় হয়ে আশফাকের কান্না ঝরিয়ে দেওয়ার বিশাল আকাশ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
অনেক অনেকক্ষণ পর আশফাক হাঁপাতে হাঁপাতে মাথা রাখল সাবিনা ওরফে সোহার কাঁধে। ও তখন বলছিল, মা-কে বল্ না আলু ভর্তা আর ডাল করতে। শুকনো মরিচ পোড়া দিয়ে ভর্তাটা খুব ঝাল ঝাল না হলে হবে না। তুই তো আবার ঝাল খেতে পারিস্ না। খালি মিষ্টি আর মিষ্টি। এ্যাতো বড় হলি, তা-ও চিনি খাস্ কড়মড়িয়ে।
ক্লান্ত আশফাকের খুকখুক কাশি থেমে গেল এক সময়। মনে হ’ল, ও বোধহয় ঘুমিয়েই পড়েছে। সোহা আশফাককে টানতে টানতে নিয়ে এল বিছানায়। শুইয়ে দিতেই আশফাক আসলে তলিয়ে গেল। আশফাকের শুকিয়ে যাওয়া শরীর আর মুখটা দেখে সোহার বুকের ভেতরটা আর্দ্র হয়ে উঠল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, মানুষটা ভাল ছিল না।
লরাকে ফোন দিতে ছুটল সোহা। আর সোহার ফোন পেয়ে লরাও ছুটল। লরা পৌঁছানোর পরও আশফাক ঘুমাচ্ছিল। গভীর ঘুম। সোহার কাছ থেকে সব শুনে লরার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছিল এমনি এমনি। সোহা ওর হাত চেপে ধরে যখন জানতে চাইল, সাবিনা কে? তখন লরার কান্না আরো বেড়ে গেল। সোহা বলল, কলিং বেল বেজে ওঠার পর দরজা খুলে ও আশফাককে কিভাবে পেয়েছে। আশফাক কিভাবে সাবিনার সাথে কথা বলছিল।
লরার কাছ থেকেই জানা গেল, সাবিনা আশফাকের কে ছিল। সোহা চোখের পানি নিজের আঁচলে মুছে ফিসফিস করে বলে, আমি আজ থেকে সত্যিই সাবিনা।
আশফাককে দেখে লরা খুব অবাক হয়। শুকিয়ে ছোটখাট হয়ে গেছে, মাথার চুল পেকে কীরকম বুড়ো বানিয়ে ফেলেছে আশফাককে। লরার মনের ভেতরেও কে যেন বলে দিল, ভাল ছিল না এ্যাশ। ও অনেক কষ্টে ছিল।
যে আশফাকের জন্য লরা মরতে বসেছিল, সেই আশফাক যখন ওর সামনে এসেছিল সেই বহু দিন আগে, তখনো আশফাক ছিল এলোমেলো। সাবিনার মৃত্যুতে বিধ্বস্ত আশফাকের এলোমেলো চুল, মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি অসুস্থ লরাকে অস্থির করেছিল। ওর তখনো খুব ইচ্ছে হয়েছিল আশফাকের শরীরটাকে জড়িয়ে ধরতে। সেদিনের সেই আশফাক সেরকম পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ ওকে দেয়নি বলে লরা বাধ্য হয়েছিল তথাকথিত বাস্তবে ফিরে আসতে। কিন্তু এতকাল পর আবারো আশফাকের বিধ্বস্ততা লরাকে বুঝিয়ে দিল, ও আসলে বাস্তবে কখনোই ছিল না। সেই আশফাকের সেই লরা হয়েই তৃষ্ণার্ত লরা অপেক্ষায় ছিল আশপাকেরই। বিছানায় পড়ে থাকা আশফাককে দেখে লরা নিজেকে আর সামলাতে পারল না। লরা আশফাককে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে।
সোহা বুঝতে পারে, এই দুই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এভাবেই একে অন্যের হয়ে ওঠার অপেক্ষায় ছিল। ও তাই আলু ভর্তা আর ডাল রান্নার জন্য ব্যস্ত হয়।
বহু দিন আশফাকের কোথাও লরার ছিল না। ও যে সময়টা পার করেছে, সেখানে লরার ¯িœগ্ধতা ঠাঁই পায়নি। ও আতঙ্ক আর ব্যর্থ প্রতিরোধের আকাঙ্খা নিয়ে দিন কাটাত। বেঁচে থাকবে না, এমনি ভেবেছিল। কেন বেঁচে আছে, তা নিজেও জানে না আসলে। জোসেফ মেঙ্গেলে ওয়ার্ল্ড থেকে ও কেন বেঁচে ফিরল? নাকি হ্যারি যেমন বলেছিল, কোথাও কিচ্ছু নেই, কোথাও কিচ্ছু ঘটছে না, জোসেফ মেঙ্গেলে আর জোসেফ মেঙ্গেলেরা আর আরিয়ানা আর অন্য আর সব আসলে ওর নিজেরই কল্পনা। নিজের বিভ্রান্তির অতলে ডুবে থাকা আশফাক লরাকে পায়নি। তাই সত্যিই যখন লরা ওকে জড়িয়ে ধরে, চেতনার গভীরে আশফাক খুঁজে পায় লরাকেই, যার হাত জড়িয়ে ধরার আকাঙ্খা ও টের পেয়েছিল নিজের ভেতরে, যদিও লরা ফিরিয়ে দিয়েছে বারবার। চেতনার গভীরেই চোখ খোলে আশফাক, লরাকে দেখে। ঠিক যেভাবে দেখতে চেয়েছিল, ঠিক সেভাবেই।
এরপর সোহাকে আনন্দিত করে লরা আর আশফাকের হিসেব মিলে যায়। ওরা বিয়ে করে। প্রচলিত পথে গিয়েই ওরা স্বামী-স্ত্রী হয়। ওদের সন্তান প্রচলিত নিয়মেই আসছে, বড় হচ্ছে লরার গর্ভে। মডিফিকেশনের কোন প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়ে কক্ষনো ভাবেনি, আসলে তেমন ভাবনা আসেইনি ওদের মাথায়। গভীর আনন্দে ওরা বরং অপেক্ষা করছিল, ওদের জন্য কোন্ উপহার নেমে আসছে স্বর্গ থেকে। সেই উপহারটির স্বরূপ যেমনি হোক্, তেমনটিই চায় ওরা। উপহারটির লিঙ্গ পরিচয়, গায়ের রং, শারীরিক খুত, মানসিক অপূর্ণতা নিয়ে ভাবেনি ওরা। কেনই বা ভাববে? যেমন খুশি তেমন সেজে আসুক না একবার, লরা আর আশফাক ওর সমস্ত অপূর্ণতা পূরণ করে দেবে নিজেদের সব কিছু দিয়ে। কেননা, ওরা যে মা আর বাবা, ওরা যে এই পৃথিবীকে আরেকটু আগে থেকে দেখেছে আর তাই নতুন মানুষটির পৃথিবীতে বাস আনন্দময় করে তোলার জন্য যা কিছু করার দরকার তা-ই তো করবে।
ওরা নিজেরা এত আবোল তাবোল বকছে আজকাল! একজন হয়তো বলে বসল, শোন, ও যদি স্কুলে না যেতে চায়, যাবে না।
মুর্খ থাকবে?
কি হয় মুর্খ থাকলে? ও যদি মুর্খ থাকতে চায়, তোমার আমার কি? মুর্খ বাবুকে নিয়ে আমি তো খুশি। তুমি খুশি না?
খুব খুশি।
আবার হয়তো একজন বলে উঠল, ও যা চাবে, তা কিন্তু সাথে সাথে দেওয়া যাবে না।
উহু। কেন দেওয়া যাবে না, তা ওকে বলতে হবে। কোন লুকোচুরি চলবে না।
ওর সাথে খোলাখুলি আলাপ তো হবেই।
হতেই হবে। ওর আকারটা ছোট, কিন্তু ও কিন্তু তোমার আমার সমান অধিকার নিয়ে আসছে।
ঠিক। ওর আকারটা ছোট। কিন্তু ও পুরোপুরি মানুষ।
এই মানুষটা কেন আসছে? পৃথিবীর আকাশে বাতাসে কানাকানি কি হচ্ছে ওর আগমন নিয়ে? বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে লরা আর আশফাকের ডিএনএ-র লাখ বছরের তথ্য সঞ্চয় করে ভ্রুনটা যাত্রা শুরু করেছিল। যাত্রার শুরুতে ও ছিল কেবলি মেয়ে, কেবলি এক্স। দিন গড়িয়ে গেলে এই এক্স সঙ্গি হিসেবে হয়তো ওয়াই ক্রমোজোমকে পেয়েছে, পুরুষের যৌন অঙ্গ তৈরি হতে শুরু করেছে, পুরুষ হতে হবে বলে। হয়তো ওয়াইকে বেছে না নিয়ে ও কেবলি এক্সএক্স থেকেছে, ও নারী হবে বলে। প্রথমের সেই এক্স কি সম্ভাবনা তৈরির আগ্রহে যাত্রা শুরু করেছিল, সেই সম্ভাবনা বিফলে যাবে কি ওয়াই বা আরেকটা এক্স-এর কারণে, এর হিসেব-নিকেশ বড় জটিল। লরা আর আশফাক ওসব হিসেবে না গিয়ে কেবলি দিন গোনে। মানুষ আসছে, মানুষের আগমনের আনন্দ ওকে ঘিরে রাখে সারাক্ষণ।
আকাঙ্খা ফার্টিলিটি সেন্টারের দায়িত্বে আবারো ব্যস্ত হয় আশফাক। রোগী দেখে, তবে বাড়ি ফেরার জন্য মুখিয়ে থাকে সব সময়। বাড়িতে লরা আছে, লরার গর্ভে নতুন মানুষটি আছে, আর আছে সাবিনা। সোহা তো আশফাকের সাবিনা-ই। সাবিনার মতো কড়মড়িয়ে চিনি খায় না বটে, তবে মুখের একই আদল দিয়ে মন ভরিয়ে রাখে মেয়েটা। এই জীবন আশফাকের কত যে ভাল লাগছে, তা বলে বোঝাতে পারবে না। কেবল মাঝে মাঝে হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো আরিয়ানা এসে পড়ে ওর চোখের তারায়। তখন অস্থির লাগতে থাকে। আরিয়ানা সত্যিই কি ছিল? যদি ছিল তো, গেল কোথায়? কি করছে আরিয়ানা এখন? বেঁচে আছে কি?
আরিয়ানার ভাবনা শেষ হলে ভয় লাগতে থাকে আশফাকের। জেনেটিক্যালি মডিফাইড মানুষ কি তৈরি হয়ে গেছে? নারী নয়, পুরুষও নয়। কোন পিতামাতা নেই। কোন সন্তানও নেই। একা একজন। গভীর ঘুমের ভেতর কখনো কখনো আশফাকের দুঃস্বপ্নে হানা দেয় ভয়ংকর দেখতে সেই একজন। তীব্র চোখে আগুন ঝরিয়ে আশফাককে কি যেন করতে বলে, যা করতে বলে তা যে কেবলি ধ্বংসের খেলা, তা খুব টের পায় ও। আশফাকের গোঙানি জাগিয়ে তোলে লরাকে। লরা শান্ত হাতে আশফাককে সুস্থির করে। আশফাক তখন কাঁতে কাঁদতে বলে, জোসেফ মেঙ্গেলেজ ওয়ার্ল্ড প্লেগ রোগের মতো সারা পৃথিবীটা দখল করে নিতে শুরু করেছে। দেখ, আমরা কেউ বাঁচব না।
লরা আশ্চর্য শান্ত স্বরে বলে, ওটা কিচ্ছু করতে পারবে না। ওকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে আসছে সে।
লরা আর সব মায়ের মতো ভাবতে আনন্দ পায়, তার সন্তান পাল্টে দেবে পৃথিবীকে। মহা বিপর্যয়ে কাঁপতে থাকা পৃথিবীকে বাঁচিয়ে দেবে আগত শিশুটি। এই ভাবনা ওকে আশ্বস্ত করে, আর তাই এখনকার লরা খুব শান্ত, গভীর বিশ্বাসে অটল। লরার দিকে তাকালে শান্তির আবহ টের পায় যে কেউ। আশফাকও পায়। ও শান্ত হয়। ঘুমিয়ে পড়ে আগামী কালের জন্য।
এরকম এক আগামী কালে আশফাক ডেকেছিল আরিফকে। দীর্ঘক্ষণ আরিফের সাথে আলাপ করে। আরিফ কি করছে জানতে চায়। কথায় কথায় ওর নিজের কাজের ক্ষেত্র নিয়েও কথা চলে আসে। এত কিছু ঘটে যাচ্ছে পৃথিবীতে! চিকিৎসাবিজ্ঞানে নিত্য নতুন ওষুধ আবিষ্কারের তাড়না মানুষের অমরত্ব লাভের সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলছে, এও যেমন বলল, তেমনি বলল নারী সর্বাধিনায়ক হয়ে ওঠার বিষয়টি। হা হয়ে যায় আরিফ। প্রশ্ন করে আশফাককে, ব্যাপারটা সত্যি?
দ্য পসিবিলিটি সিমস রিয়েল। লরার মত করে হাসতে পারেন না ডাক্তার আশফাক। গম্ভীর কণ্ঠে বলেন, ব্যাপারটা সত্যিই সত্যি। নারী ফেভার না করলে পুরুষের কম্ম কাবার। নারী যদি না চায়, তাহলে আগামী পৃথিবীতে পুরুষের আর কোন ভূমিকা হয়তো থাকছে না। তাই…
তাই?
পুরুষ হয়ে পড়বে অপ্রয়োজনীয়। ভয়ের বিষয় হচ্ছে, প্রকৃতি অপ্রয়োজনীয় কোন সত্তার অস্তিত্ব সহ্য করে না।
তার মানে?
পুরুষ হয়ে পড়বে বিলুপ্ত এক প্রজাতি। ক্লান্ত কণ্ঠে বলেন ডাক্তার আশফাক, ডায়নোসরের মত বিলুপ্ত। পাথর খুঁড়ে কংকাল বের করে অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
শিউরে ওঠে আরিফ। ওর গা কাঁপছে, একশ’ ছয়-সাত ডিগ্রি জ্বর চলে এলে যেভাবে শরীর কাঁপে, সেভাবে কাঁপছে। হাই ছাড়তে ছাড়তে বলেন ডাক্তার, বুঝলেন ? এ হচ্ছে প্রকৃতির প্রতিশোধ।
পুরুষের উপর কেন প্রতিশোধ নিতে যাবে প্রকৃতি? কি দোষ করেছে পুরুষ?
দোষ করেনি?
কি দোষ করেছে? পাল্টা প্রশ্ন করে আরিফ।
যুগ যুগ ধরে নারীর চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকিয়েছে। আমরা পুরুষরা অকারণে নিজের শ্রেষ্টত্ব দাবী করে নারীর প্রভু সেজে বসেছি। নারীকে বাধ্য করেছি অন্ধকারে থাকতে, নিজের শ্রেষ্টত্বের বিষয়টি টের না পেতে এবং পুরুষকে অকারণেই প্রভু ভাবতে। শুধুমাত্র নারীর গর্ভে বীজ বুনে দিতে পারার ক্রেডিট আমরা যে কত ভাবে নিয়েছে। অথচ দেখুন, নারী মা হিসেবে, নারী হিসেবে, বোন হিসেবে, কর্মী হিসেবে, ডিসিশান মেকার হিসেবে সফল হয়েছে। অবশেষে গর্ভে বীজ বোনার ক্রেডিটটাও তারা বোগলদাবা করে ফেলল। নারী সব পেয়ে গেছে, সব।
বললেই হল। ওসব পারাপারি-ই কি সব? পুরুষ না থাকলে নারীর স্তব করবে কে?
স্তবক্ষম রোবট বানিয়ে নেবে ওরা।
কাঁদ কাঁদ স্বরে বলে আরিফ, নারীকে ভালবাসবে কে?
ডাক্তার আশফাক অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। পুরুষ ভালবাসে নারীকে?
বাসেই তো।
আপনি বেসেছেন?
অবশ্যই। আমি সোহাকে ভালবাসি।
আপনি তো দোলাকেও ভালবাসতেন। বাসতেন না?
চুপ করে যায় আরিফ। ডাক্তার তাচ্ছিল্যের স্বরে বলেন, আমরা গর্ব করে বলি, পুরুষ হচ্ছে ভ্রমরের মত। উড়ে উড়ে মধু খাওয়াটাই পুরুষের কাজ। পুরুষ বহুগামী হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা ভালবাসা ফেরি করে বেড়াই। এখন কি হবে আমাদের? বহুগামী-একগামী…হায় হায় আমাদের গমনের যে কোন উপায়ই থাকছে না। আরিফ, বলুন তো আমাদের, আই মিন পুরুষদের কি হবে?
ডাক্তার আশফাক ভদ্র ভাষায় না বলে বলতে পারতেন, বউরা কি স্বামীদের ঘাড় ধরে তাড়িয়ে দেবে? পুরুষদের তখন উপায় কি হবে? গায়ের জোরে নারীকে দখল করতে চাইবে? চরম স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে যাওয়া নারীকে কেন যেন রক্তের স্বাদ পেয়ে যাওয়া বাঘিনীর মতো মনে হচ্ছে। আরিফের ভয় করতে থাকে নারীর হিংস্র রূপ মনে করে। নখগুলো নখরে পরিণত হয়ে গেলে উপায় থাকবে কি?
বউ কথা না শুনলে চুলের মুঠি ধরে বের করে দাও, এরকম উপদেশ আব্বাজানের মুখে শুনেছিল আরিফ। মেজ ভাইটার বউ খুব মুখরা ছিল, স্বামীকে মানত-টানত না। আব্বাজান ছেলেকে সত্যিকারের পুরুষের কি কাজ, তার বিস্তারিত শেখাতেন। আরিফ একবার ওদের ঝগড়ার সময় বন্ধ দরজার এপাশে আব্বাজানকে কান পেতে ঝগড়া শুনতেও দেখেছে। দরজা খুলে গেলে রেগে আগুন হয়ে যাওয়া মেজ ভাইয়ের হাতে নিজের বেতের লাঠিটা তুলে দিয়েছিলেন তিনি। জরু আর গরু, দুটোর জন্যই মাইর উপকারী, আব্বাজানের কাছ থেকেই শিখেছে ও।
সোহার গায়ে হাত তুলতে হয়নি। শান্তশিষ্ট সোহা ওকে ভালবেসেছিল। ওর সন্তানের মা হতে চেয়েছিল। আরিফ নিজেকে নিজেই ব্যঙ্গ করতে থাকে মনে মনে, শান্তশিষ্ট সোহা আফতাব নামের ঐ লাফাঙ্গাটাকেও ভালবেসেছিল। আফতাবের সন্তানের মা হতে চেয়েছিল। আরিফের মতই লাফাঙ্গাটাও এখন সোহার বাতিলের খাতায়। সোহা ওদের কারোর সন্তানের মা হবে না। সোহা আরিফকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সোহা সোহার সন্তানের মা হবে।
বিকেলের রোদ সোহার মুখে-ঘাড়ে সোনালী রং মাখাচ্ছিল। অন্য সময় মোমের মত গলে পড়ে ওর মুখ, ওর শরীর। অথচ তখন লোহার মত শক্ত হয়ে সোহা দাঁড়িয়েছিল। বরফের মত ঠান্ডা স্বরে শোনাল, আমি কেবল মাত্র আমার সন্তানের মা হবো।
আরিফ তখনো পুরো ব্যাপারটা বোঝেনি। কণ্ঠস্বরে আবেগ এনে ও বলেছিল, তুমি হবে মা, আর আমি ওর বাবা।
সোহা মাথা নেড়ে না বোঝায়। উহু, আমার সন্তানের বাবা আমিই।
যা !
ওর বাবা হিসেবে তোমাকে কেন লাগবে?
কী যে বলছ না? সন্তানের মা থাকে, বাবা থাকে। মা আর বাবা ছাড়া কোন সন্তান পৃথিবীতে আসে? এসেছে কখনো?
কখনো আসেনি। কিন্তু এখন আসবে। বাবা ছাড়াই, মানে পুরুষের বীর্য ছাড়াই নারীর গর্ভে সন্তান আসবে। নিজের তলপেটে পরম মমতায় হাত বোলাতে থাকে সোহা।
বিস্ময়ে পাথর না বরফ কি যে হয়ে গেল আরিফ, নিজেই বুঝল না। অফিসে যা শুনেছিল, যা স্রেফ এডাল্ট জোক হিসেবে ভেবেছিল, ভেবে হেসেছিল হা হা করে, তা যে সত্যি হতে পারে ও ভাবেনি। নিজের হাসিই এখন ওর চারপাশে প্রেতাত্মার দীর্ঘশ্বাস বলে মনে হচ্ছে।
আরিফের কুঁকড়ে যাওয়া শরীর দেখে মুচকি হাসেন ডাক্তার আশফাক। ওর কাঁধে হাত রেখে বলেন, এখনো অত ভয়ের কিছু নেই।
নেই?
এখনো সেক্সের চাহিদা কমেনি। পুরুষের সাথে সেক্স নারীর কাছে এখনো রোমাঞ্চকর। এবং সেক্স এখনো খুব বেশি এক্সপেনসিভ হয়ে ওঠেনি।
আরিফের গলা শুকিয়ে কাঠ। ফ্যাসফেসে হয়ে গেছে। কোন মতে ঢোঁক গিলে বলল, স্তবক্ষম রোবট যদি বানানো যায়, সেক্স করতে পারে এমন রোবট কি বানানো যাবে না?
রোবট কি পুরুষের মত স্পার্ম দিতে পারবে?
পারতেও তো পারে। যা সব পারাপারি হচ্ছে, ভরসা পাচ্ছি না।
ও এক্সপেনসিভ হবে, আমি শিওর। অথচ সস্তায়, খুব সস্তায়, বলতে গেলে বিনে পয়সায় পুরুষের স্পার্ম পাওয়া যায়। যে নারীর হাতটান আছে, সে মনে হয় পুরুষের কাছেই আসবে সন্তানের জন্য। এতেই আপাতত চলবে। কি বলেন আরিফ?
আরিফের কেন যে মনে পড়ে, স্টুডেন্ট লাইফে কার কাছ থেকে শোনা জোক্স টাইপের গ্রামাটিক্যাল এই জ্ঞানটি- সেইন্টেন্সের কোথায় কমা-টমা বসবে, তা নিয়ে। একটু এদিক সেদিক হলেই অর্থ কেমন পাল্টে যায়। উদাহরণ ছিল এরকম- আ ওইমান উইদাউট হার মান ইজ নাথিং। আ ওইমান, উইদাউট হার ম্যান, ইজ নাথিং। আ ওইমান: উইদাউট হার, ম্যান ইজ নাথিং।
সোহাকে ছাড়া আরিফ কেমন নাথিং হয়ে গেল!
জোকসটা কে শুনিয়েছিল?
সারা দিন ধরে কেবল ভাবছে আর ভাবছে। কিছুতেই মনে পড়ল না, এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ জোক্সটি কোন্ জ্ঞানী ওকে শুনিয়েছিল। মনে যদি পড়ে, যেভাবেই হোক্, আরিফ তাকে খুঁজে বের করবে। তার পা ধুয়ে পানি না খাওয়া পর্যন্ত ওর শান্তি নেই।
কিন্তু ঝামেলাটা এরকম। যতবার কে শুনিয়েছিল, ভাবতে চায়, ততবারই ওর কানে ভেসে ওঠে দোলার কণ্ঠ। দোলা এক ভর দুপুরে হাসতে হাসতে বলেছিল, শোন, তোমাকে একটা জোক্স শোনাই।
আরিফ আগেই হাসতে শুরু করে দোলাকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য।
দোলা ওর মাথার চুল টেনে ধরে বলে, বদমাশ! আগে শুনবে, তারপর হাসবে। বুঝেছ?
আরিফ আরো জোরে হাসে।
দোলা খুব জোরে চুল টানতেই আরিফ অহেতুক (মোটেও অহেতুক নয়) টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় দোলাকে নিয়ে একেবারে রমনা পার্কের ঘাসের উপর। নির্জন সেই দুপুরে কেবল একটি কাক তারস্বরে কা কা বলে চিৎকার করতে করতে পালিয়েছিল।
আরিফের কানে কানে দোলা বলেছিল, পুুরষ ঈশ্বরকে প্রশ্ন করল—
আরিফ দোলার কানে কানে বলেছিল, নারী, তুমি এত সুন্দর কেন?
ঈশ্বরের জবাবটা দোলা দিয়ে দেয়, পুরুষ, তুমি ভালবাসবে বলে।
দোলা এরপর বলে, পুুরুষ জানতে চায়, হে ঈশ্বর! নারী এত বোকা কেন?
আরিফ ঈশ্বরের জবাবটা জানিয়ে দেয়, আমাকে ভালবাসবে বলে।
দোলা, বোকা নারীদের প্রতিভূ হয়ে ভালবেসেছিল আরিফকে। সেই আরিফ এখন বুঝতে পারছে না, ঈশ্বর সোহাকে অন্যরকম করে তৈরি করল কেন? সোহা বোকা নয় কেন? না কি দোলাদের দিন শেষ? সোহাদের দিন শুরু হ’ল তবে!