ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব দশ

এক্সপেরিমেন্ট  ১০ পর্ব
চলছে খেলা চলছে হরদম হরদমএরকম গরম খবর হ্যারি মুর ছাড়া আর কে দেবে?পত্রিকায় সব কিছু আসে না। কানাঘুষা থেকে জেনে নিতে হয় আরো বেশি কিছু।গম্ভীর মুখে হ্যারি বলল, এ্যাশফাক, দিস ইজ নট গুড। আয়ান উইলমুট যে মরীয়া হয়ে উঠেছে!আয়ান উইলমুট, ব্রিটিশ বিজ্ঞানী, যাকে ক্লোনিং পাইওনিয়র জ্ঞানে সম্মান দেওয়া হয়, তিনি এবং তার আরো তিন সমর্থক বিজ্ঞানী ব্রিটিশ সরকারের কাছে আর্জি পেশ করেছেন, যাতে ক্লোনিং গবেষণার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। একই সাথে নারীদের প্রতি উদাত্তকণ্ঠে অনুরোধ করেছেন উর্বরতা বৃদ্ধির ওষুধ সেবন করে নিজেদের ডিম্ব বিজ্ঞানের স্বার্থে বিজ্ঞানীদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য।জোসে সিবেল্লি নামের আমেরিকার এক পাগলা বিজ্ঞানী নিজের ডিএনএ গরুর ডিম্বের সাথে মিলিয়ে ‘মহান’ ক্লোনিং প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন, যার মহত্ত্ব বুঝতে না পেরে তখনকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন পুরো ব্যাপারটাকে ‘অনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলেন। এর আগেই অবশ্য সিবেল্লি এই আন্তপ্রজাতিক ক্লোনিং কৌশলকে প্যাটেন্ট করে নিয়েছিলেন। তবে গবেষণা আর এগুতে পারেনি। আয়ান উইলমুট কি শুরু করবেন? নারী উদার হয়ে আয়ান উইলমুটকে ডিম্ব দেবে, যার সাথে উনি ইচ্ছেমত গরু-ঘোড়ার ডিএনএ মেলাবেন। নারী কি ওরকম উদার হবে?  আশফাক বাঙালি নারীর সন্তান। নারীর মন চিনতে ওর কষ্ট হয় না, যখন নারী মায়ের ভূমিকায় থাকে। নিজের সম্ভাব্য সন্তানের শরীরে যা তা পরীক্ষা চালাতে দিতে এগিয়ে আসার মতো হাজারো নারী মিলবে না, এ ব্যাপারে আশফাক নিশ্চিত। মানুষের ক্লোনিং গবেষণা কিন্তু নারীর ডিম্বের অপ্রাপ্যতার জন্যই এগুতে পারেনি, গবেষণার জন্য তো চাই হাজারে হাজার।আশফাক আর হ্যারি যে যার মতো খোঁজখবর নিতে শুরু করেছিল। আগ্রহী নারী না পেয়ে এর বিকল্প উপায় পেয়ে গেল আয়ন উইলমুটের দল। নারীর ডিম্বানু না পাওয়া যাক্, প্রাণীর ডিম্বানু তো আছে, কেননা প্রাণীরা তো আর আপত্তি করতে পারছে না। আলঝেমার রোগীর শরীর থেকে ডিএনএ নিয়ে গরুর ডিম্বানুর সাথে মিলিয়ে দেওয়া হ’ল। মানুষের ডিএনএ ডিমগুলোকে ভাবতে বাধ্য করল, যে তারা গর্ভবতী হতে পেরেছে! ডিমগুলো বেড়ে উঠতে শুরু করল। পাঁচ দিন বৃদ্ধি চলল, ক্লোনকরা ভ্রুন ধ্বংস করে স্টেম সেল বের করে নেওয়া হ’ল। স্টেম সেলগুলো ল্যাবটেরিতে বেড়ে উঠতে লাগল, আর গবেষকরা আলঝেমার রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এদের উপর চালাতে থাকলেন যাতে কার্যকর ওষুধ তৈরি করা সম্ভব হয়। লন্ডনের কিংস কলেজের স্টেম সেল ল্যাবরেটরির পরিচালক স্টিফেন মিঙ্গার এসব নিয়ে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন, নারীর ডিম্বানু দরকার নেই, এর পরিবর্তে গরুর ডিম্বানু ব্যবহারের অনুমতি অন্তত দেওয়া হোক। এরকম অনুরোধ আরো কয়েকজন বিজ্ঞানী করেছেন, এদের সাথে আয়ান উইলমুটও আছেন। স্যানফ্রান্সিসকো-তে এক সাথে হয়েছেন এই বিজ্ঞানীরা।

Series Navigation<< ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব নয়ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব একাদশ >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *