ছোটগল্প।। নিষ্পত্তি।। পিয়ারা বেগম

মাইনুদ্দিন তিনসন্ধ্যেবেলার বাতি জ্বালাতে কুপিতে আগুন ধরাল। এ রুমে কারেন্টের লাইন আছে কিন্তু ভাল্ব নেই। হেমন্তের শেষ সন্ধ্যা। অন্ধকার আর কুয়াশা মাখামাখি হয়ে বায়ুমন্ডল যেন ধূসরতায় ছেয়ে গেছে। দিকচিহ্নহীন পৃথিবীর এই একরূপ। মনে হয় পৃথিবীর এখন কোন রং নেই। কে যেন সমস্ত রং শুষে নিয়ে কেবল ছাইটুকু রেখে গেছে।

সন্ধ্যা গাঢ় হতে না হতেই শুরু হয় ঝিঁঝির একটানা আওয়াজ। সে সুরেলা আওয়াজ এখন বেসুরা হয়ে কানের পর্দা ফুঁড়ে মাথার মগজ দপদপিয়ে ওঠে। একদম অসহ্য লাগে মাইনুদ্দিনের। সাবজান তার জীবনের সবকিছু কেড়ে নিয়ে গেছে যেন। সবকিছুতেই বেসুরো লাগে।

মাইনুদ্দিনের উঠোনে আজ সালিস বসবে। তার ছেলেরা বাপের বিরুদ্ধে সালিসি ডেকেছে। তার অপরাধ এই বুড়ো বয়সে সে বিয়ে করতে চায়।

মাইনুদ্দিন বিপত্নীক। মাস ছয়েক আগে ওর স্ত্রী সাবজান বিবি মারা গেছেন। স্ত্রী বিয়োগের তিন মাসের মাথায় ছটরবটর করে তিন ছেলে আলাদা হয়ে গেল। ঘরের যাবতীয় তামা-কাঁসা, হাঁড়ি-পাতিল, খুন্তি-কড়াই, লোটা-বদনা ঠোলা-ঠুলি সবকিছু সমান তিন ভাগ করে দিলেন পাড়ার মুরুব্বিরা। ধান-চালসহ নানাবিধ ফসলাদি ভাগ করা হলো। সাথে সাথে ভাগ হলো মাইনুদ্দিনকেও। এক মাস অন্তর অন্তর তিন ছেলের ঘরেই খাবার খাবে।

মাইনুদ্দিনের তিন ছেলে তিন মেয়ে। তাই বিচারকরা বলেছেন, তিন ভাই বোনদেরকে উৎসব আয়োজনে তত্ত্বতালাশ করবে। বাবার বর্তমান কোন বোনই জমির অংশ নিতে পারবে না। বাবার মৃত্যুর পর বোন অংশ নিতে চাইলে ভাইয়েরা দিতে বাধ্য থাকবে। তবে আপোষ সমঝোতায় ভিত্তিতে করার জন্য মুরব্বিরা পরামর্শ প্রদান করেছেন। কেউ নিতে না চাইলে সেটাও ভাই-বোন মিলে সিদ্ধান্ত নিবে। একথাগুলো ভাগভাটোয়ারা করার সময়ই বিচারকরা খোলাসা করে বলে গেছেন।

এরেই মধ্যে একজন মুরুব্বি বলেছিলেন মাইনুদ্দিন চাজুর মাইয়ারা সবাই স্বচ্ছল। ওরা অংশ নিব না। তারা মাঝেমধ্যে বাপের বাড়িতে আইব-যাইব এইটুকুই। ভাইয়েরা সাধ্যমতো বছরে ঈদ উপলক্ষে কাপড়চোপর দিব। বেড়াতে আইলে ভালোমন্দ বোনদেরকে খাওয়াইবো। কথায় আচরণ সন্তুষ্ট রাখব এই তো।

আরেকজন ফাঁক তালে ফোড়ন কেটে বলল– হেইদিন আর নাই। আগে শুনতাম- “অংশ নিলে ধ্বংস হয়।” এখন ডিজিটাল যুগ। মান্দাতা আমলের ধ্যানধারণা পাল্টাইছে। কারণ, জমিজিরাতের দাম বাড়ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে রাস্তাঘাটেরও উন্নতি হইছে। সেই সাথে লোকসংখ্যাও বাড়ছে। মানুষ গ্রামমুখী হইছে। যে বোনেরা আগে অংশ নেয় নি, এখন ভাগিনারা নিতেছে। যে বোন বা ভাগিনারা নেয় নাই এখন তাদের নাতিরাপুতিরা নিতাছে। গ্রামীণ প্রবাদ – “ভাগের ডাইল হইচ্ছা ফালাই।”

প্রথম প্রথম সব মাইয়ারাই আবেগে কয় অংশ নিমুনা। বাপ-মা মরলে ভাইয়েরাও বইনে গো তত্ত্বতালাশ আর আগের মতো করে না। তখনই অংশ লইয়া টান দেয়। এখন বরং “অংশ না দিলে ধ্বংস হয়।” এই প্রবাদই প্রচলিত ধ্যানধারণায় এখন যোগ হইছে।

এদিকে ঘরও বন্টন করা হয়েছে। বড় ছেলে সাইদুল্লাহ আর মেজো আসাদুল্লাহ যে যে ঘরে আছে এটা তার ভাগে পড়েছে। তবে ছোট ছেলে নসুরুল্লাহ পাচ্ছে বড় ঘর। এই ঘরে তিনটি কক্ষ। দুই কক্ষে থাকবে নসুরুল্লাহ। বাকী কক্ষে থাকবে তার বাবা মাইনুদ্দিন। মাইনুদ্দিন মৃত্যুর পর পুরো ঘর নসুরুল্লাহর হবে।

মাইনুদ্দিন গতরখাটা শ্রমিক ছিল। সাবজানও ছিল পরিশ্রমী বউ। তাই বিশ বছরে মাইনুদ্দিন ছয় বিঘা জমি কিনেছে। পৈতৃক তিন বিঘা জমি ছিল মাইনুদ্দিনের। তার কোন ভাইবোন ছিলনা। আজ তিন ছেলে তিন বিঘা করে জমি ভাগবাটোয়ারা করে পেয়েছে। ভিটে বাড়ি দুই শতক করে।

মাইনুদ্দিনে দাম্পত্যজীবনে কোন জটিলতা ছিলনা। সাবজানকে নিয়ে সে সুখেই ছিল। মেয়েদের ভরভরন্ত সংসার হয়েছে। তিন ছেলেই রোজগারপাতি ভালোই করছে।

সাবজানের মৃত্যুতে মাইনুদ্দিনের জীবনে নেমে এসেছে ঘোর অমানিশা। তার ভেতরে নীরবে বয়ে চলেছে কান্নার স্রোত। কেউ তার এই চাপা কষ্টটুকু বুঝতে চায় নি। এই দুঃসহ যন্ত্রণায় মাইনুদ্দিন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। আগের মতোই সে এখনো সকালের হাটে অল্প পুঁজিতে কাঁচামালের ব্যবসা করে। গাট্টাগোট্টা শরীর। শক্তপোক্ত আছে এখনো। বসে থেকে লাভ কি? যতক্ষণ কাজে ব্যস্ত থাকে ততক্ষণ দুশ্চিন্তা আসে না। এতে যা-ই রোজগাপাতি হয় তা দিয়ে দুইআড়াই লিটার দুধ আনে। যে ঘরে খাওযা সে ঘরে রাখে এ লিটার। বাকী দুধ দুই ছেলের ঘরে সমান ভাগ করে দেয়। নাত-নাতনিদের জন্য মজাগজা আনে। উদ্বৃত্ত তরকারি তিন ঘরে ভাগবন্টক করে দেয়। যে ঘরে খাওয়া সেই ঘরে নিজেও এক ভাগ রেখে দেয়। নিজের পকেট খরচাও চলে যায় লাভের টাকায়। ছেলেদের কাছে হাত পাততে হয় না।

কাকডাকা ভোর না হতে হতেই যাত্রাবাড়ী কাঁচামালের আড়তে যায়। আড়ত থেকে কাঁচামাল কিনে সাড়ে সাতটায় দোকানে ফিরে আসে। দশটার মধ্যে বাজারে লোকজনের কেনাকাটা শেষ। তখন বাড়িতে গিয়ে বউয়েরা যা-ই দেয় তাই খায়। খাওয়ায় কোন বাছবিচার নাই।

আজ মাইনুদ্দিনের মন খারাপ। সে মসজিদ গিয়ে নামাজ পড়ে সেখানেই শুয়ে পড়েছে। আড়তে যায় নি মালামাল আনতে। রাস্তায় বের হলেই একেকজনে একেক কথা বলে। লোক মুখে শুনেছে ছেলেরা আজ সালিশ বসাবে বাপের বিরুদ্ধে। তখন থেকে তার হাঁটুতে হাঁটার শক্তি পাচ্ছে না। বুক ফেটে তার কান্না আসছে। কি কারণে তাও লোকমুখে শোনা কথা।

মাইনুদ্দিন মোল্লা। বয়স প্রায় ষাটবাষট্টি হবে হয় তো। মাথার চুল বুরুজের মতো কাটাকাটা। নিবিড় সাদা নয়, কাঁচাপাকা। খরগোশের মতো খাড়া কান। কানের লতির উপরিভাগের কাঁচাপাকা পশম ঝুলে আছে। চোখের ব্রুও কাঁচাপাকা মিশেল। চোখা নাকের বাসি ভেতর পর্যন্ত দেখা যায়। গাঁয়ের রং ফর্সা, বেশ লম্বাটেও। এখনো শির দাড়া সোজা। কুঁজো হয় নি এতটুকু। যৌবনে যে সুঠাম দেহের অধিকারী ও সুপুরুষ ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আগে নাতিরা রাতে থাকছে সাথে। এখন আসে না। দুজোড়া নির্ঘুম চোখ সাবজানকে এখনো যেন খুঁজে ফেরে। রাতবিরেত ভয়ে বুকটা ঢিপঢিপ করে। আরশোলা ওড়াওড়ি করলেও ভয়ে বুকটা কেঁপে ওঠে। নিজের অক্ষমতা আর অসহায়ত্ব অনুভব করে সে নিথর হয়ে পড়ে থাকে বিছানায়। বিক্ষিপ্ত চিন্তায় মাথাটা টনটন করে। ভেতরটা বেদনায় ভারী হয়ে ওঠে। এতটা অসহায়বোধ কখনো সে অনুভব করে নি। স্ত্রী বিহনে পুরুষের বার্ধক্য জীবনটা আসলেই কষ্টের। সার্বক্ষণিক স্ত্রীর অভাব তাকে পীড়া দিচ্ছে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়হয়। সকালে নাস্তা করেছে দোকানে। দুপুরেও বাড়িতে আসে নাই মাইনুদ্দিন। রাস্তায় চা স্টলে বসে গল্পসল্প করে সমবয়সীদের সাথে। সমবয়সীরা অনেকেই বলে– প্রায়ই দেহি সকালের হোটেলে আইসা নাস্তা খাও? পোলার বউয়েরা নাস্তাপানি দেয় না।

মাইনুদ্দিন বলে– বিহানে নাস্তা খাইয়াই বাজারে আসি। আমার কেন জানি বারে বারে ক্ষুধা লাগে। বাড়িতে খাইয়া আইলেও দশডার দিকে একটা রুটি দিয়া এক কাপ চা না খাইলে চলে না। কিন্তু কারো কাছে আসল কথা বলে না।

মাইনুদ্দিনের আজ খাবারের তাড়া নাই। মসজিদ থেকে চা স্টলে এসে সে যে বসছে, এখনো বসেই আছে।

এরেই মধ্যে একজন বলেই ফেলল– চাচাজী, হুনলাম আফনের পোলারা বলে সালিসি ডাকছে। সারাডা জীবন পোলাগো লাইগ্যা শইলডারে তামা তামা করলেন। এহন হেই পোলারা বাপের বিরুদ্ধে সালিসি বসায়!

মাইনুদ্দিন নিরুত্তর। আরেকজনে বলে– হুনলাম তুমি নাকি বিয়া করতে পাগল অইছ? হাছাইনি। মুন চাইলে কইরা ফালাও। সালিসি বসাইলে সাফ সাফ কইয়া দিবা। দরকার পড়ছে তাই বিয়া করমু।

মাইনুদ্দিন এখন আলোচিত মানুষ। আসলে সমাজের বার রকম মানুষের বার রকম মন। তার ছেলেদেরকে বলে– কী রে বেটা? এইডা আবার কি হুনতাছি, তোর বাপে বলে বিয়া করতে পাগল অইছে? তিনকাল গিয়া এককাল আছে। এখন বিয়া করার হাউস অইছে? পোলার বউদের বলে– কি গো বউ, তোমার শ্বশুররে কি ভীমরতি ধরছে, এ শেষ বয়সে আইয়া বিয়া করতে চায়। তোমাদের জ্বালা ঘটাইতে চায়।এই হচ্ছে সমাজের হালচাল।

মাইনুদ্দিন ঠিক তিনটায় বাড়িতে আসে। কোন ছেলেই আজ খোঁজ নেয় নি বাপে দুপুরের খাবার খেয়েছে কি না। তিনটায় সালিসি শুরু হলো। ছমু হাজী প্রধান বিচারক। আরও আসছে নেমুদ্দি মুন্সি, আকবর বেপারী এবং পরান শিকদার এবং কালু মন্ডল। এ ছাড়াও পাড়ার অন্যান্য মুরুব্বিরা আসছেন। পাছ দুয়ারে বউঝিদের গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর শোনা যাচ্ছে।

মাইনুদ্দিন মাথা নিচু করে বসে আছে।

ছমু হাজী বড় ছেলেকে বলে- কী রে সাইদুল্লাহ, এমন কি ঘটল তড়িঘড়ি কইরা বাপের বিরুদ্ধে সালিসি ডাকতে অইল?

সাইদুল্লাহ প্যাঁচার মতো থুম ধইরা বসে রইল। মনে মনে ভাবছে, ঝোঁকের মাথায় পাড়াপড়শি এবং বউয়ের কথা শুইন্যা সালিসি ডাকাটা উচিত হয় নাই। এখন তো পিছানোর সুযোগও নেই। তাই আমতাআমতা করে বলে –কি কমু চাচাজী, বাবার বয়স অইছে। মনে হয় বাবার তত্ত্বতালাশ আমরা ঠিকমতো করতে পারি না। তাই হুনতাছি বাবা নাকি বিয়া করতে চায়।

-ও এই কথা! তুই হুনতাছস? তয়, এমন দুইচার জনের নাম ক হুনি?

সাইদুল্লাহ থতমত হয়ে মাথা নিচু করে চুপ হয়ে গেল।

-কি অইল উত্তর দে।

-সব্বাইর মুখে মুখে হুনতাছি। রাস্তায় বাইর অইলেই বউবেটি গো জিগায়- ” কি গো বউ, তোমার শ্বশুরে বলে বিয়া করতে চায়?

মেজো ছেলে আসাদুল্লা বলে-বড় ভাই ঠিকই কইছে।

নেমুদ্দি মুন্সি বলে– তোর যেমন তর সয় না। তোর বাপে মনে হয় তোর কাছে বিয়া করার কথা কইছে?

-আসাদুল্লাহ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। কোনরকমে অস্ফুট স্বরে বলে– না ,তা কয় নাই।

-তাইলে, তুই কে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো লাফাইয়া ওঠছস। চুপ থাক, বেটা ফাজিল। যারে জিগ্যেস করছে তারে কইতে দে।

এবার পরান শিকদার সাইদুল্লাহকে বলে– চুপ থাকলে অইব না সাদু। তোমাকে কেউ জিজ্ঞাসা করছে কি না হেইডা কও?

-না, আমার লগে কেউ কয় নাই। কইলাম তো, ঘরের বউয়েরা নাকি মাইনষের মুখে হুনছে।

ছমু হাজী এবার বলে– মাইনষের মুখে বউয়েরা হুনছে, এই কথা হুইন্না তোর বাপের বিরুদ্ধে সালিসি ডাকসছ।

ছমু হাজী এবার বলে– এইবার

আসাদুল্লা ক হুনি, তোর বয়ান।

-বাবা মাইনষের কাছে আমগো বউবেটির নামে বদনাম রটাইয়া বিয়া করার ফন্দিফিকির করার তালে আছে।

আকবর বেপারি বলে– তোর কাছে কেউ কইছে?

-না।

-কার কাছে শুনছস?

-মাইনষে রাস্তাঘাটে কানাঘুষা করে।

নেমুদ্দি মুন্সি বলে, কানাঘুষাই হুনছস, মানুষগুলো দেহছ নাই। বুঝলাম, তোর কান সরস, খরগোশের মতো খাড়া। তাই একটু বেশিই হুনছস। তয়, তোর চোখ আন্ধা।

এই কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে ওঠল।

কালু মন্ডল বলে, তোমার বউগো নামে কি বদনাম রটাইছে কও শুনি?

-বউয়েরা নাকি সময় মতো খাওন দেয় না। খারাপ ব্যবহার করে বাবার লগে। বাবার তত্ত্বতালাশ করে না। এই আর কি।

-তুমি কি এই কথাগুলান বদনাম না সত্য ঘটনা যাচাইবাছাই করছ?

-তা করি নাই।

-হাজী সাব খেয়াল কইরেন ।

-করছি।

এইবার ছোট ছেলে নসুরুল্লাহকে ছমু হাজী বলল- তোর ভাইদের বয়ান শুনলাম। এইবার তুই বল, তোর বাপের বিয়া করার মতলব কেমনে বুঝলি?

নসু মাথা নিচু করে একটা কাঠি দিয়ে উঠোনে আঁচড় কাটছে। কোনরকমে মাথা উঁচু করে বলল, আমি কারো কাছে কিছুই শুনি নাই।

তখনই তার বউ দাঁত কিড়মিড় করে ভেংচী দিয়ে বলল– না, তুমি কিছুই শুননা, কিছুই জাননা। বাপের দোষ ঢাকতে যেন ভাজা মাছও ওল্টে খেতে জান না। তোমার বাপে বিয়া করনের লইগ্যা তালবাহানা করতাছে। এইগুলান তোমার চোহে পড়ে না। তাইলে তুমি তোমার বাপেরে লইয়াই খাইও। আমিও এখনি বাপের বাইত যামুগা।

বিচক্ষণ বিচারক ছমু হাজী নসুরুল্লাহকে বলল- বাবা নসু, আজ তোমার বাপের বিচার করতে বসছি। তোমার বউয়ের ঝগড়া শুনতে আসি নাই। বউ মাকে চুপ করতে বল।

নসুরুল্লাহ ভাইবোনদের মধ্যে সবার ছোট। মা-বাবা এমন কি ভাই-বোনদেরও খুব আদরের। মা মারা যাওয়ার পর নসু বাপের প্রতি আরও দুর্বল, বলা যায় বাপঘেঁষা। এতে তার বউ নাখোশ। শ্বশুর বিয়া করব এটা প্রমাণিত হলে নসুর বাপঘেঁষা আর থাকব না। ঘরে অহরহ এই নিয়া কথা কাটাকাটি হচ্ছে। তাই

নসুরুল্লাহ ভেতরে ভেতরে বউয়ের প্রতি এমনিতেই খেপে আছে। বউয়ের গলার আওয়াজ শোনা মাত্র সে লাফ দিয়ে ওঠে। চারদিকে লাঠি খোঁজতেছে। লাঠি না পেয়ে বউকে থাপ্পড় দিতে যে হাত ওঠিয়েছে তখনই তার বড় ভাই সাদু ছোট ভাইয়ের হাতটা ধরে ফেলে। সাথে সাথে ছোট ভাইয়ের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল।

ছমু হাজী তখনই বলল– সব্বাস বেটা সাদু! বাপের বড় পোলা বটে, উচিত কাজটাই করছ।

পরান শিকদার বলল– এখন আসল সালিসি থুইয়া নসুরুল্লাহর বিচারডাই আগে করা লাগব হাজী সাব।

আকবর বেপারি একটু রাগতস্বরে বলল- নসুর বউয়ের কথার নমুনাও ভালা না। এমন ঠেস মাইরা শ্বশুরকে আক্রমণের ভাষা আমার কাছে রহস্যের গন্ধ পাইতাছি।

ছমু হাজী মনে মনে বলে – যা বুঝার আমিও বুঝছি। বিচার করতে গেলে সব কথা ফাঁস করলে অয় না।

ছমু হাজী গড়পড়তা মানুষের চাইতে একটু আলাদা। তীক্ষ্ণ অনুভূতিশীল এবং সংবেদনশীলও। বিচারে আসার আগেই মোটামুটি মূল ঘটনার আদ্যোপান্ত জেনেই আসছে।

তাই তিনি নীরবতা ভেঙ্গে বললেন-শোন নসু, শুনেছি তুমি আই এ পাশ করেছে। একটা জব করছ। তোমার বাবাকে ভক্তি শ্রদ্ধা কর। এটা একটা ভালো গুণ। তাই বলে – পিতৃভক্তির প্রমাণ দিতে গিয়ে ভরা মজলিসে বউ পেটাতে লাঠি খোঁজা চরম অপরাধ। এটা কোন পিতারও কাম্য হতে পারে না। কাজটা তুমি ভালো কর নি।

নেমুদ্দি মুন্সি একটু সমঝোতার স্বরে বলে- এটার বিচার সাদু সাথে সাথেই কইরা ফালাইছে। কিন্তু নসুর বউয়ের বেয়াদবির বিচারডা করা জরুরি।

ছমু হাজী তখন বলল – বউয়ের বেয়াদবির বিচারও নসু কইরা ফালাইয়াছে। মারার চেয়ে মারতে যাওয়া একই কথা। বউয়ের পারিবারিক শিক্ষার ঘাটতি আছে। এর ফলে অনেক মেয়েরাই অনুন্নত মনা হয়ে থাকে।

অনুন্নত মনা মানুষ অর্থ, ক্ষমতা আর স্বাধীনতা পেলে স্বভাবে একটু উগ্রতা ভাব থাকে। অল্প বয়স তো, এতটা গভীরে চিন্তা করে না। এই নিয়ে আমরা আর বাড়াবাড়ি না করে মূল ঘটনায় আসি। আশা করি বউ মা নিজের ভুল বুঝতে পারব।

এইবার সমু হাজী মাইনুদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে বলল- আপনি আমগো সমবয়সী হলেও বয়োজ্যেষ্ঠ হিসাবে সম্মান করি। আমরা জানি, আপনি নির্বিবাদী এবং কোলাহলবিমুখ মানুষ। তবে আপনার মুখ থেকে এর সত্যতা কতটুকু তা শুনতে চাই।

মাইনুদ্দিন গামছা চোখেরজল মুছতে মুছতে বলে –কইতে গেলে তো একটু সময় লাগব।

-সময় হাতে লইয়াই বইছি। শুরু করেন। -পৈতৃক তিন কানি জমি লইয়া শুরু করছি সংসার। সাবজান আছিল শক্তিশালী আর পরিশ্রমী। ঘর সামলাইয়া আমারে খেতকোলায়ও সাহায্য করছে। দুজনে দিনরাত খাটাখাটুনি কইরা ছয় কানি জমি কিনছি।

মাইনষের জীবনে দারিদ্র্যের মতো এমন বড় কষ্টের জীবন আর নাই। বাবার অসুস্থতা আর মায়ের মৃত্যু দুইডাই আমার জীবনডারে বরবাদ কইরা দিছিল। সাবজান আমার সংসারে আইসা পোলাপান লইয়া সুখের মুখ দেহাইছিল। পোলার বউদের নিয়া, নাতিনাতনি গো লইয়াও সুখশান্তিতে ছিলাম।

হঠাৎ সাদুর মায় মরার কয়দিন যাইতে না যাইতেই শুরু অইল সংসারে বাদবিসংবাদ। বাধ্য অইয়া দিলাম বউদের খুশি কইরা। তোমরাই ভাগবাটোয়ারা কইরা দিয়া গেলা। এখন সব ঠান্ডা।

আলাদা অওনে পোলার শ্বশুর বাড়ির মানুষের আনন্দ আর ধরে না। নতুন হাঁড়ি পাতিলা লইয়া আইয়া সে কী মহোৎসব! এই অভাগারে আর কেউ জিগায় না। বড় ঘরে পশ্চিম দিকের কোঠায় আমি থাহি ছোড পোলার নাতিরে লইয়া। হঠাৎ নাতি আর আমার লগে থাহে না। বউ না কি আইতে দেয় না। ঘরের ভাল্ব জ্বালাইতে দেয় না। কারেন্টর বিল বেশি ওঠব। আমি কেরোসিন তেল আনছি, কুপি আনছি। ঘরের ভেতরের দরজা বন্ধ কইরা দিছে। ঘরের ভেতর জোরে কাশি দিতে পারতাম না। রাতবিরাতে দরজা খট করে খুলতে পারতাম না। এইডা কেমনতর ব্যাপার! তাই মনের দুঃখে কইছি,

আমার নাও, আমারই ছইয়া,

আমি থাহি বাইরে বইয়া।

তিন বউই খারাপ ব্যবহার করে। তবে নসুর বউ বেশি বাড়াবাড়ি করতাছে।

বিয়ার কথা আমারে অনেকেই কয়। কন চাই দেহি, আমার কি বিয়া করনের সময় এখন। সকালে রাস্তার দোকানে বইয়া এখন আমার নাস্তা খাইতে অয়। কারণ, সাদুর মায় ডিব্বা ভইরা মুড়ি রাখত। আখের গুড় রাখত। যখন মন চাইছে আইয়া মুড়ি খাইছি। নয়ডা-দশডার দিকে পান্তা ভাত, খুদের মলখা, খুদের ভাপা, কাঞ্জির জাও বা কাঞ্জির চাপটি খাইতাম। এখন এক মুঠো মুড়িও জোটে না। তাইলে আমি দোকানে খাইতে গেলে অনেকেই জিগায় – বউয়েরা নাস্তাপানি দেয় না। তোমারে তো কোন দিন দেহি নাই দোকানে খাইতে। আমি কখনো কই নাই, বউয়েরা আমারে নাস্তা দেয় না। আমি কই, আরে খাইয়া তো আইলাম তারপরও আমার কেন যে এত ক্ষিধা লাগে বুঝি না। গড়পড়তায় দুই বেলা খাওন ঘরে খাই। আমি রোজ রোজ তরকারি, দুধ তিন ঘরে দিই। মাঝেমধ্যে মাছও কিনে পাঠাই। ভাবছি, আমি এহনও রোজগারপাতি টুকটাক করতে পারছি। এখনই আমি বউদের কাছে বোঝা। যখন বিছানায় পইড়া থাহি, তহন বউয়েরা আমারে কতটুকু করব এইডাও চিন্তা করি।

নাতি সম্পর্কের পোলাপানরা ঠাট্টা তামাসা কইরা বিয়ার কথা কয়। সমবয়সীরাও কয়। আমি এ পর্যন্ত কারো কাছে কই নাই বিয়া করমু। তয় মাইনষে কইলে আমি কি করমু? এখন সালিসি যখন ডাকছেই পোলারা তখন কইয়া রাখতাছি, আমার স্বাভাবিক তত্ত্বতালাশে অনিয়ম হলে বিয়া করা লাগব। আমি কয়দিন বউদের লগে ঝামেলা করমু। পোলারা বউদের কথাডাই বিশ্বাস করব। নইলে এতডা দিন তিনডা বউই আমারে শ্বশুর বইলা কোন গণ্যই করে না। এইডা কেমনতর কথা?

আইজ সারাদিন ঘরে খাইতে আসি নাই। একটা পোলাও আমার খোঁজ নেয় নাই। আমি পোলাগো নগদ টাকাটা পর্যন্ত ভাগ কইরা দিয়া দিছি। এখন পোলারা আফনেগো ডাকছে যখন বিচার কইরা দিয়া যাও।

আমারই পোড়া কপাল! সাদুর মায় আমারে সাগরে ভাসাইয়া চইলা গেল। নইলে এই দিনডা আমার দেখতে অইত না। যে পোলাগো লাইগ্যা আমার জোয়ানকি শেষ করলাম। জানডারে কাবিজ কইরা বড় করলাম। সংসারী কইরা দিলাম। আইজকা হেগ লাইগ্যা আমি আসামী। এমন সৌভাগ্য কয়জনের অয়! এত লোক আইছে আমার বিচারের রায় হুননের লাইগ্যা খাড়াইয়া রইছে। বিচার করো তাড়াতাড়ি! জেল ফাঁস যা দেন আমি মাইন্যা নিমু। ভাবছি, আমি না মইরা কেন যে সাদুর মায় মইরা গেল? এই বলে মাইনুদ্দিন ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে।

বিচারকরা বাকরূদ্ধ! উপস্থিত মানুষরাও স্তম্ভিত! মাইনুদ্দিন মেয়েদের মতো করে কেঁদেই চলেছে।

অমনি বড় পোলা সাইদুল্লাহ বাপের গলায় ধইরা কান্না শুরু করল। সাথে সাথে মেঝো পোলা, ছোট পোলাও বাপেরে জড়াইয়া ধইরা কান্না শুরু করছে। সে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য! তা দেখে নাতিনাতনিরাও দাদারে ধইরা সে কি কান্না! বউয়েরা হতভম্ব! বড় বউ, মেঝে বউও শেষমেশ কান্না শুরু করছে। ছোট বউ ঘর থেকে আর বের হয়নি।

বিচারকরাও আবেগাপ্লুত। উপস্থিত মানুষগুলো ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেল।

কাঁদাকাটির একপর্যায়ে তিন ছেলে বাপের পা ধরেই রইল। বাপে মাফ না করলে পা ছাড়ব না।

তখন ছমু হাজিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সবাই মাইনুদ্দিনকে মাফ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে। গামছা দিয়া চোখের পানি মুছতে মুছতে মাইনুদ্দিন ছেলেদেরকে মাফ করে দিল। নাতি-নাতনীদের বুকে টেনে নিল মাইনুদ্দিন। এক ফাঁকে শ্বশুরকে হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেল বড় বউ। ভাত, লালশাক আর মুরগীর গোশতের ছালন দিয়ে খেতে দিল। মেজো বউ এক গ্লাস দুধ নিয়ে এলো।

আকবর বেপারি তখন ছেলেদেরকে বলল- ওরে বোকারা, শিশুকালে যে পিতা তোদেরকে চুমো খাইছে কপালে-ঠোটে। যে পিতা চোখের কেতুর, নাকের শ্লেষ্মা পরনের কাপড় দিয়া মুছছে। যে পিতা এতো পরিশ্রম কইরা তোদেরকে বড় করছে। সে পিতা কি সন্তানদের ক্ষমা না কইরা থাকতে পারে? পিতার ভেতরে যে আরেকটা সত্য পিতা আছে, এটা তো তোরা বুঝস নাই রে!

বাপ-বেটাদের গলাগলি, জড়াজড়ি আর কান্নার অশ্রুপাত দেখে ছমু হাজীসহ সবাই মনে মনে খুশি হলো বিষয়টা খুব সুন্দরভাবে নিষ্পত্তি হওয়াতে।

তবে কালু মন্ডল বললেন– হাজীসাব ছেলে ও বউদেরকে সবাই দুচার কথা কইয়া শেষ কইরা দেন।

-ঠিক আছে শুরু কর তোমরা।

তখনি ডেঙ্গু হাজী বললেন– এই যে ঘটনা ঘটল, এতদূর পর্যন্ত গড়াল। তার মূল কারণ খুঁজতে গেলে এর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আসলে এর কোন ভিত্তি নাই। সুতরাং ভবিষ্যতে শোনা কথা নিয়ে কেউ যেন নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য না করে।

পরান শিকদার বললেন– কি গো বউ মা, শুনলাম তোমাগো বাপের বাড়ি থাইকা গাইগরু, শোকেশ, আলমারি, ডেকচি-পাতিল, কতকিছু নাকি দিছে। কিন্তু তোমাদের মা-বাবা, কেউ তো নাতি-নাতনীদের জন্য পড়ার চেয়ারটেবিল দিল না? মনে রাইখ, খুন্তিকড়াই পর্যন্ত ভাগবাটোয়ারা অইব। কিন্তু লেখাপড়ার সার্টিফিকেট ভাগাভাগি করা যাইব না। তাই বলছি, সন্তানদের লেখাপড়া করাও, মানুষ কর। বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানে শুধু সঞ্চয় কইরোনা। সন্তানদের লেখাপড়ার পেছনে ব্যয় কর। সন্তান মানুষ অইলে তোমাদেরকে সুখ-শান্তি ও সম্মান সবকিছুই আইনা দিতে পারব।

নেমুদ্দি মুন্সি বউমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন– এই যে তোমরা শ্বশুরের প্রতি অবিচার করলা। ঘর সাজানি নিয়া মাতামাতি করছ। শ্বশুরের তত্ত্বতালাশ নেওয়ার প্রয়োজনই মনে করনি। এখন যদি তোমার শ্বশুর বিয়া কইরা ফালায়। তাইলে কি তোমরা আইনত ঠেকাইতে পারবা? এতে কইরা যুদি দুএকটা পোলাপান অইয়াই যায়? এতে কি তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত অইবানা। কথায় কয় না– খোদার হুকুম থাকলে মরা নদীতেও জোয়ার আইয়ে। পাথরেও ফুল ফোডে।

কেন কইলাম এই কথাগুলান? এতে কি অয় জান? এতে কইরা সংসারে অশান্তির তুলকালাম সৃষ্টি অয়। বৈমাত্রেয় ভাই ব্রাদারদের মধ্যে সয়-সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা লইয়া মনোমালিন্য বাড়ে। কখনোসখনো দাঙ্গাহাঙ্গামা, এমন কি বিচার সালিসও থাইকা মামলামোকদ্দমা পর্যন্ত গড়ায়।

এইটুকুন জায়গায় তোমরা বেশ ভালা আছ? যখন ওয়ারিশ বাড়ব, তখন কী করবা? ভাইব্বা দেখ? এখন থাইকা সাবধান অইয়া যাও। শ্বশুররে বাপের মতো কইরা যত্নআত্তি কইরো। ডাকাখুঁজি কইরা খাওন একসাথে বইয়া খাইবা। দেখবা, এই বয়সে তিনি বিয়া করনের কতা মুখে আনব না।

ছমু হাজী বউমা’দের উদ্দেশ্যে করে বললেন– এই যে তোমাদের শ্বশুরের বিরুদ্ধে সালিসি ডাকলা তা নিন্দনীয়। এই বয়সে তানিরে যে কষ্ট দেওয়া শুরু করছিলে তাও নিন্দনীয়। তিন ছেলে মূলত বউদের থেকে বেশী অপরাধী। তারা কেন বাবার প্রতি এতটা উদাসীন ছিল? এখন থেকে সাবধানে থেকো। বাবার সহায় সম্পত্তির মালিক কিন্তু এখনো তোমরা হওনি।

প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছেন। পিতামাতার প্রতি ভরণপোষণে অবহেলা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন প্রশাসন। সুতরাং তোমরা সবাই উনার প্রতি মানবিক আচরণ করবে। হাসিমুখে ডাকাখুঁজি করবে। অসুখ-বিসুখে কোন রকম অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসার সুব্যবস্থা করবে।

ইতিমধ্যে বিচারকগণ অনেকেই চলে গেছেন। যারা উভয় পক্ষকে উসকানি দিয়ে বিষয়টাকে ঘোলাটে করে মজা লুফে নিচ্ছিল তারা পিতাপুত্রদের মিলন দৃশ্য দেখে নাখোশ হয়ে সটকে পড়ছে। আর নিরপেক্ষ সাধারন নির্বিবাদী মানুষরা সুষ্ঠু নিষ্পত্তিতে খুশি। এমনতর দৃশ্য দেখে আনন্দে তারা চোখের পানি ফেলছে। বিচারকদের ভূয়সী প্রশংসা করে তারাও এ স্থান ত্যাগ করছে।

পূব আকাশে শুক্লপক্ষের আজই প্রথমা। সরু বাঁকা চাঁদের দিকে মাইনুদ্দিন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আকাশে হাজার তারকা মিটমিট করে জ্বলা শুরু করছে। মাইনুদ্দিন ভাবছে, মানুষ মইরা গেলে আসলেই কি আকাশের তারা হইয়া যায়? সাবজানের স্মৃতিভারাক্রান্ত মাইনুদ্দিনের বুক থেকে বেড়িয়ে আসছে একটা আতপ্ত নিঃস্বাস।

All reactions:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *