কিশোর উপন্যাস

কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। দুই 

দুই :

শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্ট। পদ্মাতীরে চলছে সেতু নির্মাণ কাজ। দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের কাজ। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সংযোগ সড়ক, ব্রিজ, আন্ডারপাস, নদীশাসন, কনস্ট্রাকশন ইয়াড প্রভৃতি তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। স্কুল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে চলেছে তানজিল। একটু আগে স্কুল ছুটি হয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার আগেই স্কুল ছুটি হয়। ওই দিন সে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ হেঁটে চলে যায় পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ এলাকায়। সেখানে নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে গল্প করে। সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয় জানার চেষ্টা করে। এতো বড়ো নদীর ওপর কীভাবে ব্রিজ তৈরি হবে জানতে চায়। ব্রিজের বিষয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়–য়া তানজিলের জানার আগ্রহ সবাইকে অবাক করে দেয়। সে শ্রমিকদের প্রশ্নের পরে প্রশ্ন করে। সব প্রশ্নের জবাবতো শ্রমিকের জানা নেই। এজন্য নির্মাণ শ্রমিক কাওসার সাইট ইঞ্জিনিয়ার অজিহার স্যারের সঙ্গে তানজিলকে পরিচয় করিয়ে দেয়। সেতু তৈরির বিষয়ে তানজিলের জানার আগ্রহ দেখে অজিহার সাহেবও অবাক হন। তার নাম, স্কুল, পরিবার-পরিজন, ভালোলাগা-মন্দলাগা সম্পর্কে জানতে চান।

                -তুমি এখানে যেদিনই আসবে আমার সঙ্গে দেখা করবে কেমন? তোমার কিছু জানার থাকলে আমাকে প্রশ্ন করবে। আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।

                -তানজিল হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।

এরপর থেকে পদ্মা পাড়ে এলে তানজিল প্রথমেই অজিহার রহমানকে খোঁজে। দেখা হলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে। গল্প করে। একদিন খুঁজতে খুঁজতে চলে যায় অজিহার সাহেবের অফিস কক্ষে। তিনি তখন কম্পিউটারে জরুরি কাজ করছেন। তানজিল অজিহার সাহেবের পিছনে দাঁড়িয়ে কাজ দেখতে থাকে। তানজিলের সেই প্রথম খুব কাছ থেকে কম্পিউটার দেখা। হরেক রকম রঙিন রেখায় ভরে আছে কম্পিউটারের মনিটর। রেখাগুলো বারবার সরে সরে যাচ্ছে। একটির সঙ্গে আরেকটি রেখা যুক্ত হয়ে ব্রিজের ডিজাইনের মতো কীসব তৈরি হচ্ছে। আবার রেখাগুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। রেখার খেলা দেখতে দেখতে তানজিলের ভীষণ ইচ্ছে করে কম্পিউটার ধরে দেখতে।    

অজিহার সাহেব ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেন তানজিল চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। অফিস কক্ষে হঠাৎ তানজিলকে দেখে একটু অবাক হন তিনি।

                -কী খবর তানজিল? কখন এলে? এখানে কীভাবে এলে তুমি? কেউ কিছু বলেনি?

                -জি না। কারণ অনেকেই আমাকে চেনে। আপনার নাম বলতেই অফিস দেখিয়ে দিলো। স্যার আমি এই প্রথম খুব কাছ    থেকে কম্পিউটার দেখলাম। আমার খুব ইচ্ছে কম্পিউটার শিখব। কিন্তু শেখার সুযোগ নেই। জায়গাও নেই। স্কুলে কম্পিউটার থাকলে অবশ্যই শিখে নিতাম। আমি প্রায়ই আপনাদের এখানে আসি। ব্রিজ তৈরির কাজ দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু আপনাদের ওপর আমার আব্বার ভীষণ রাগ। এই ব্রিজ হচ্ছে বলে তার নাকি অনেক ক্ষতি হয়েছে।  উনি তো রাগ করে এদিকেই আসে না। গ্রামের দিকে টুকটাক কাজকর্ম করে। সারাক্ষণ মন খারাপ করে থাকে। বলে, এই সেতু নাকি তাদের ভাত মারছে। আমি আব্বার কথা কিচ্ছু বুঝতে পারি না স্যার। আমাদের স্কুলের স্যারেরাও ক্লাসে পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক গল্প করেন। তাঁরা বলেন, দেশের হাজার হাজার কোটি টাকায় এই সেতু তৈরি হচ্ছে। ছয় কিলোমিটারের বেশি লম্বা এই সেতু তৈরি হলে দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। এলাকায় কাজের অভাব হবে না। এলাকার কোনো মানুষ গরিব থাকবে না। মানুষ বড়ো লোক হয়ে যাবে। দেশের টাকা দেশে থাকার কারণে দেশও ধনী হয়ে যাবে। -স্যারেরা তো ঠিকই বলেছেন। তোমার কী মনে হয় বলোতো?

                -আমার শুধু মনে হয় এই ব্রিজ পার হয়ে কবে ওই পারে যাব। ঢাকায় যাব। ঢাকায় নাকি ইয়া বড়ো একটি চিড়িয়াখানা আছে। জাদুঘর আছে। শিশুপার্ক আছে। কম্পিউটারের বড়ো বড়ো দোকান আছে। আমি সেখানে বেড়াতে যেতে চাই।

তানজিলের কথা শুনে অজিহার সাহেবের খুব খারাপ লাগে। মনে মনে বলেন, ছেলেটির সব বিষয়ে জানার ও শেখার এতো আগ্রহ! সত্যিই অবাক হতে হয়। স্কুলে কম্পিউটার দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে থানা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলা যায়। যাতে তানজিলদের স্কুলে কম্পিউটারের ব্যবস্থা হয়।

Series Navigation<< কিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। এককিশোর উপন্যাস।। বিস্ময়কর সেতুবালক।। ইমরুল ইউসুফ।। পর্ব।। তিন >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *