কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। দশ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। প্রথম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। দ্বিতীয় পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। তৃতীয় পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। চতুর্থ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। পঞ্চম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। ষষ্ঠ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। সপ্তম পর্ব ।।
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। অষ্টম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। নবম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। দশ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। এগারো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। বারো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। তেরো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। চৌদ্দ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। পনেরো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। শেষ পর্ব
১০
ওসি কুতুবউদ্দিন পা রাখলেন শিক্ষকদের কক্ষে। তার সাথে ছয়জন পুলিশ। সালাম করল সবাই। বসলেন অফিসার। জানতে চাইলেন কী ঘটেছিল?
ভেঙে ভেঙে পুরো ঘটনা বললেন রেজা স্যার। খুব অল্প সময়ে ঘটে গেছে বড় একটা ঘটনা। যা অবিশ্বাস্য। কল্পনাও করতে পারেননি স্কুল থেকে তুলে নেবে। কিছুক্ষণ ভাবলেন ওসি সাহেব। এরপর মুখ তুলে বললেন, ওই গাড়ি নম্বরটা কেউ দেখেছিলেন?
ইংরেজি স্যার বললেন, গাড়ি যে ওদের ভাবতে পারিনি আমরা। স্কুলের সামনে থামিয়ে রেখেছিল। তারপরই বোমা ফাটল।
স্কুলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল আতঙ্ক। তখন গাড়ির নম্বর দেখার মতো স্থিরতা ছিল না কারোর।
মাথা নাড়লেন অফিসার। রেজা স্যার বললেন, গাড়িতে নম্বরপ্লেট ছিল না। ডানা চেষ্টা করেছিল দেখতে। আমাকে বলেছে না থাকার কথা।
ওরা প্ল্যান করেই এসেছিল। সেটা বোঝা যাচ্ছে।
শিক্ষকদের কক্ষ থেকে বের হলের ওসি সাহেব। ডাকলেন রেজা স্যারকে। গেলেন স্কুলের দক্ষিণ মাথায়। কৃষ্ণচূড়ার তলায় দাঁড়িয়ে সিগারেট জ্বালালেন। আপনার কী মনে হয় মাস্টার?
এটা ওদের কাজ, না মোতালেবের লোকেরা করেছে?
মোতালেবের লোকদের হাত থাকতে পারে। তবে আমার মনে হচ্ছে এটা কঙ্কাল পার্টির কাজ। দুদিন আগেও এই গাড়িটা এসেছিল। আমাকে জানিয়েছিল অয়ন। শঙ্কা প্রকাশ করেছিল।
ভুল করছেন। ওদের কথায় গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল।
তাহলে এই ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত।
গুরুত্ব দেইনি এমন না অফিসার। ওদের সতর্ক করেছি। আপনাকে জানিয়েছি। ওরা যে স্কুলে এসে হামলা করবে, তুলে নিয়ে যাবে এটা কল্পনার বাইরে ছিল।
মুখে তাকিয়ে আছেন। ওসি সাহেব বললেন, যদি কঙ্কাল পার্টি হয় তাহলে ভয় আছে। দ্রুত ওদের উদ্ধার করতে না পারলে অঘটন ঘটতে পারে।
আপনার কী মনে হয়, ওদের মেরে ফেলবে?
ফেলতেও পারে। বাঁচিয়ে রাখার থেকে মেরে ফেলা সহজ। নিরাপদও। কঙ্কাল বানিয়ে ফেললে আরও নিরাপদ।
অস্তিত্ব থাকবে না। কোথায় খুঁজবেন? সারা পৃথিবী হন্য হয়ে খুঁজলেও পাবেন না।
কাচের টুকরোর মতো পুরো পৃথিবীটা ভেঙে পড়ল রেজা স্যারের সামনে। এটা ভাবতে চাচ্ছেন না তিনি। ওদের কিছু হলে সেটা মেনে নিতে পারবেন না। তার আগে নিজের মৃত্যু কামনা করবেন। বেঁচে আছেন ওদের জন্য।
ওসি সাহেব বললেন, একটা জায়গায় ভরসা পাই।
কোথায়?
ওদের যদি মেরে না ফেলে তাহলে আটকে রাখতে পারবে না। অয়ন বড্ড চালাক। ফাঁকফোকর গলিয়ে বেরিয়ে আসবে অক্টোপাসের মতো। এই বিশ্বাস আছে আমার।
সে কথা রেজা স্যারের মনও বলছে। তবে সেই অপেক্ষায় থাকা ঠিক হবে না। ব্যবস্থা নিতে হবে দ্রুত। ওসি সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার পুলিশ বাহিনীকে তৎপর হতে বলেন। আশপাশের থানায় জানিয়ে দিন। যাতে দূরে নিয়ে যেতে না পারে। কাছে কোথাও রাখবে না মনে হচ্ছে।
পুলিশ তৎপর আছে। আপনি মনে করছেন বসে আছে! ওরা কতটা আপন হয়ে উঠেছে আমার জানেন না মাস্টার। ওদের খুব ভালো লাগে। কী কৌশল আর মেধা খাটায়। মুগ্ধ আমি।
রেজা স্যার কিছু বললেন না। ওসি সাহেব চলে গেলেন।
যাওয়ার আগে বললেন, চিন্তা করবেন না। ফোন খোলা রাখবেন।
খবর পেলেই জানাব। আশাকরি অল্প সময়ে উদ্ধার করতে পারব।
স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী চলে গেছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চেয়েছিলেন আটকাতে। পারেননি। ছুটি দিয়ে দিলেন স্কুল। শিক্ষকরাও একে একে চলে গেলেন। যা করার পুলিশ করবে। অপেক্ষা ছাড়া তাদের কিছু করার নেই।
সবাই চলে গেলেও যেতে পারছেন না রেজা স্যার।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন বারান্দার উত্তর মাথায়। চিন্তার কোনো কিনারা পাচ্ছেন না। হঠাৎ সমুদ্রে পড়ে গেছেন।
সাঁতার জানেন না। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। পা চলছে না। শরীরটা ভেঙে পড়তে চায়। ক্লাস সেভেনের সামনে এসে দাঁড়ালেন। ক্লাসটা শূন্য। খা খা করছে পুরো স্কুল। কোথাও শব্দ নেই। অথচ এই সময় শত শত শিক্ষার্থীর পদভারে মুখর থাকত স্কুল চত্বর। ছুটি হলে ওরা ছুটত হই হুল্লোড় করে। তিনি বসতেন গোয়েন্দা কোম্পানি নিয়ে। কাল ওই বাড়িতে গিয়েছিল অয়ন। কিছু একটা বলতে চেয়েছিল। শুনতে পারেননি। তখন শুনলে এই বিপদ এড়ানো যেত? হয়তো যেত। একটা খটকা প্রশ্ন তার সামনে। কেন তখন শুনলেন না। ভাবতে পারেননি এমন কিছু হবে। সব ভাবনা ছাপিয়ে গেছে। অনেকক্ষণ
দাঁড়িয়ে রইলেন। একা। চারপাশে কেউ নেই। হঠাৎ একটা পায়ের শব্দ। কেঁপে উঠলেন। কে এলো আবার। আচমকা ঘুরে দাঁড়ালেন।
দেখলেন পিয়ন রফিক। কিছু বললেন না। দাঁড়িয়ে আছেন নিশ্চুপ।
রফিক এসে সামনে দাঁড়াল। স্যার যাবেন না? সবাই চলে গেছে।
মাথা নাড়লেন রেজা স্যার। হ্যাঁ, যাবেন। এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছেন? জানেন না। কেন ভুলে গেছেন বাড়ির কথা?
মনে পড়ছে না। মনে তার চারটা মুখ। ওরা ছুটে চলছে। কত আয়োজন করে তাকে মুক্ত করে স্কুলে নিয়ে এসেছে। মন খারাপ করে স্কুল থেকে বেরিয়ে এলেন রেজা স্যার। ধরলেন বাড়ির পথ। হাঁটছেন বিষণŒ মনে। ভাবছেন একটা কিছু করতে হবে। বিপদে ধৈর্য ধরতে হয়। মন শক্ত করে এগিয়ে যেতে হয় সামনের দিকে। সেই শিক্ষাটা ওদের দিয়েছেন। আজ কেন ভেঙে পড়ছেন তিনি! পুলিশের ভরসায় বসে থাকবেন না।
খুঁজে বের করবেন চার গোয়োন্দাকে। স্কুলে ফিরবেন ওদের নিয়ে। ওরা না থাকলে স্কুলে আসতে পারবে না। পারবেন না ছাত্রদের সামনে দাঁড়াতে। পড়াতেও পারবেন না। থেমে যাবে সব কল্পনা। তার হৃদয়ের সবটুকু দখল করে আছে চার গোয়েন্দা।