কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। চতুর্থ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। প্রথম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। দ্বিতীয় পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। তৃতীয় পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। চতুর্থ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। পঞ্চম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। ষষ্ঠ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। সপ্তম পর্ব ।।
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। অষ্টম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। নবম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। দশ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। এগারো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। বারো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। তেরো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। চৌদ্দ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। পনেরো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। শেষ পর্ব
চতুর্থ পর্ব
স্কুল ছুটি শেষে রেজা স্যার বসলেন গোয়েন্দা কোম্পানির সদস্যদের নিয়ে। বললেন, ওসি সাহেবকে ফোন করেছি। উনি আসবেন। বিষয়টা সহজ মনে করা ঠিক হবে না। আমাকেও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। আবারো সাবধান করছি তোমাদের। কয়েক দিন সতর্ক থাকো। ওরা যখন এসেছে কিছু একটা গোলমাল আছে।
কথা শেষ করতে পারেননি রেজা স্যার। অয়ন বলল, ওসি সাহেব এসেছেন।
হাসতে হাসতে ওসি সাহেব দাঁড়ালেন রেজা স্যারের সামনে। আপনার বাহিনী নিয়ে কী পরামর্শ করছেন স্যার? ওরা যে কাহিনি করেছে আমার মাথা নষ্ট। তা কাহিনি তো অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। এবার কী করবেন?
নড়ে বসলেন রেজা স্যার। অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে! তা আবার কী?
ওসি সাহেবকে চেয়ার দিল অয়ন। পকেটে হাত দিয়ে ওসি সাহেব বের করলেন একটা কাগজ। খুলে কিছুক্ষণ দেখলেন। সবার চোখ সেই কাগজের ওপর। মুখ তুলে পা নাড়াতে নাড়াতে ওসি সাহেব, অবাক করা খবর দিলেন। বললেন, ওই লোকটাকে কেউ খুন করেনি।
স্থির হয়ে গেলেন রেজা স্যার। নতুন ভাবনা চাপল মাথায়। লোকটাকে কেউ খুন করেনি! তাহলে লোকটা মারা গেল কীভাবে? স্বাভাবিক মৃত্যুও না। গুলির চিহ্ন আছে। রক্তও ছি।
লোকটা মারা গেছে গুলিতে। তবে গুলি অন্য কেউ করেনি। নিজেই নিজেকে গুলি করেছে। তারপর মারা গেছে।
তার মানে আত্মহত্যা?
তাই তো মনে হচ্ছে।
এ কথা একদমই বিশ্বাস করতে পারছে না অয়ন। পেছন থেকে ওসি সাহেবের সামনে এসে দাঁড়াল। চোখ মুখ শক্ত করে বলল, হাস্যকর কথা অফিসার। মানুষটা পাগল ছিল না। যে নিজেই নিজেকে গুলি করবে। আরও ওই কঙ্কাল ঘরের মধ্যে ঢুকে। নিশ্চয়ই কোনো রহস্য আছে। হয়তো বের করতে পারেননি আপনি। নাহয় চেষ্টা করেননি। রহস্য বের করা সহজ না। তাই আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিলেন। এটাই পুলিশের কাজ।
হো হো করে হাসলেন অফিসার। মাথা গরম হলো অয়নের। দাঁত কেলিয়ে হাসা যায়। খুনের রহস্য বের করা সহজ না। আমরাই বের করব খুনের রহস্য। শব্দ না করে বলল। হাসি থামিয়ে অফিসার বললেন, ঠিক বলছ অয়ন। রহস্য আছে। তবে সেটা তুমি বললেই হবে না।
আপনি বললে হবে?
না, আমি বললেও হবে না। আমরা যা বলব ধারণা করে। ধারণা সবসময় ঠিক হয় না। তাই ধারণা করে কথা বলা উচিত না। তোমার কথায় যুক্তি আছে। লোকটা কেন আটকে থাকবে? কেন নিজেকে গুলি করে মারবে? পাগল তো ছিল না। আমিও বিশ্বাস করতাম না। তবে বাধ্য হ”িছ বিশ্বাস করতে। লোকটা নিজেই নিজেকে গুলি করেছে। এটাই সত্য। হতে পারে লোকটা আমাদের ভয়ে নিজেকে গুলি করেছে। নাহয় আমাদের থেকে বাঁচার জন্য আত্মহত্যা করেছে।
বুঝলাম না অফিসার। এই কথা বিশ্বাস করতে আপনাকে বাধ্য করল কে? ওদের ভয় পা”েছন আপনি? না অন্য কিছু।
আবারো হেসে উঠলেন অফিসার। ভয়। তোমার মনে হ”েছ ভয় পেয়েছি আমি? আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না ওসি কুতুবউদ্দিন। যমের সামনে বহুবার দাঁড়িয়েছি।
তাহলে কেন বিশ্বাস করলেন, ওটা আত্মহত্যা ছিল?
ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে। আমার কিছু করার নেই। আমিও অবাক হয়েছিলাম। লোকটা নিজেকে খুন করল! বিশ্বাস করতে পারিনি প্রথমে। পরে বিশ্বাস করলাম। কী করব, বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম। ল্যাবের পরীক্ষা বিশ্বাস না করে কোথায় যাবে তুমি!
চুপ হয়ে গেল অয়ন। কিছুক্ষণ ভাবল মাথা নিচু করে। তাহলে লোকটা খুনি। নিজেকে খুন করেছে। তা কেন? তাদের ভয়ে। না অন্য কোনো কারণ। এমনও তো হতে পারে যে লোকটার হাতে পিস্তল ছিল। গুলি করেছে অন্য কেউ। আচ্ছা অফিসার, ওনাকে যে গুলিটা করা হয়েছে সেটা ওই পিস্তল দিয়ে বের হয়েছিল?
ঘোলা হয়ে গেল অফিসারের চোখ। থমকে দাঁড়ালেন। এটা তো ভাবেননি। মুখে চিন্তার ছাপ। তাহলে গুলি অন্য পিস্তল দিয়েও বের হতে পারে? হ্যাঁ পারে। এখানে এসে থেমে গেল তার ভাবনা। বললেন, সেটা তো জানি না। একটা গুড পয়েন্ট বের করেছ অয়ন। গুলি অন্য পিস্তল দিয়েও বের হতে পারে।
বন্ধুদের মুখে হাসি। ওসি সাহেবকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে অয়ন। ও ঠিকই একটা জিনিস। ফিসফিস করে বলল নিলয়।
অয়ন বলল, এটাও জানতে হবে। গুলি কোন পিস্তল থেকে বের হয়েছে। এটাই আসল রহস্য। এমনও হতে পারে পিস্তলটা ওনার হাতে ছিল। গুলি অন্য পিস্তল দিয়ে বেরিয়ে ওনার বুক ভেদ করেছে।
দীর্ঘক্ষণ নিশ্চুপ বসে রইলেন ওসি সাহেব। মাথা ঘুরছে। তিনি ভাবেন একটা, অয়ন সামনে নিয়ে আসে অন্যটা। ঘটনা আরও জট পাকিয়ে গেল।
একটা বিষয় খেয়াল করেছ অয়ন। ওই কক্ষে দরজা কিন্তু একটা। সেটা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। তাহলে গুলি অন্য কেউ করল কীভাবে? বললেন রেজা স্যার।
অন্যদিকে ঘুরল অয়নের চিন্তা। দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ। মানুষটা মারা গেছে গুলিতে। পিস্তল ছিল তার হাতে। হিসাব মিলে গেছে। কিন্তু তার মনে হচ্ছে রহস্য আছে। আচ্ছা, যে লাশটা কবর থেকে তোলা হয়েছিল সেটার সুরতহাল হয়েছে অফিসার? স্বাভাবিক মৃত্যু, না খুন?
ওটাও খুন। তবে দুইটা খুন আলাদা।
সেটা তো হবেই। ওনাকে মেরেছে চাকু দিয়ে। এটা গুলি করে। আমরা ধরে নিতে পারি এদেরকেও ধরে এনেছিল। চেয়েছিল কঙ্কাল বানাতে। অন্য কারণও থাকতে পারে। কঙ্কাল না বানিয়ে কবর দিল কেন? এখানে একটা রহস্য রয়ে গেছে। ওরা লাশ চুরি করে কঙ্কাল বানায়। তাহলে ওই লাশটাকে কেন কবর দিল?
সেও একটা প্রশ্ন থেকে যায়। তবে এটা নিয়ে ঘাঁটার কিছু নেই। বাদ দাও। মরা মানুষ নিয়ে ঘাঁটা মানে সময় নষ্ট। গন্ধ ছড়াবে। নতুন কিছু খুঁজে বের করো। ওসি সাহেব তাকালেন, রেজা স্যারের দিকে। কী বললেন, ওরা কাল এসেছিল?
হ্যাঁ, আমাকে জানাল অয়ন। শুধু ওরা আসেনি। ভয়ংকর রূপ ধারণ করে এসেছে।
এসে লাভ হবে না। কিছুই পাবে না। আস্তানা ভেঙে দিয়েছি। নতুন করে গড়তে দেব না। ধরে ফেলব। লাল দালানের চার দেয়ালে পচে মরবে। আমি কুতুবউদ্দিন বলছি, ওদের হাড় মাংস আলাদা করব। একপাশে মাংস অন্যপাশে থাকবে হাড়। কেজি ধরে বিক্রি করব। ওরা কঙ্কাল হয়ে যাবে। তবে মরবে না।
ওরা এখন আতঙ্ক। কী করে বসে বলা যায় না অফিসার। গ্রেপ্তার করতে হবে। বলল অয়ন।
কিছু বলতে চাইলেন ওসি সাহেব। কিন্তু বলতে পারলেন না। তার আগেই এক বৃদ্ধা এসে দাঁড়ালেন দরজায়। হাতে লাঠি। তাতে ভর করে হাঁটেন। কাঁধে ঝুলছে পুরনো ব্যাগ। কাপড়ে ময়লা ধরা। সবার দৃষ্টি পড়ল তার ওপর। দেখল বৃদ্ধার মুখ। তার চোখে জল। কে এই বৃদ্ধা? কেউ চেনে না। এই গ্রামের কেউ হবে বলেও মনে হচ্ছে না। তার সামনে দাঁড়ালেন রেজা স্যার। জানতে চাইলেন কে আপনি? কাকে চাচ্ছেন?