কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। তৃতীয় পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। প্রথম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। দ্বিতীয় পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। তৃতীয় পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। চতুর্থ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। পঞ্চম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। ষষ্ঠ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। সপ্তম পর্ব ।।
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। অষ্টম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। নবম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। দশ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। এগারো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। বারো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। তেরো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। চৌদ্দ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। পনেরো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। শেষ পর্ব
তৃতীয় পর্ব
খানিক পরে দরজা থেকে ফিরে এলেন বাবা। অয়ন গেল মায়ের রুমে। মোবাইলটা হাতে নিল। কিছু হলেই ফোন করবে থানায়। ওসি সাহেবকে জানাবে। বাবাকে বলল, চলো, দোতলায় উঠি। দরজা ভাঙতে চাইলেও সময় লাগবে। ততক্ষণে পুলিশ এসে পড়বে। অন্যদেরও ফোন করে জানাতে পারব। অয়নের বুদ্ধিটা বেশ পছন্দ হলো বাবার। কিছু না বলে উঠে পড়লেন দোতলায়। বন্ধ করে দিলেন দরজা। গাড়ির শব্দটা তখন নেই। তবে ভয়টা আছে। বাবা বললেন, ওরা চলে গেছে মনে হয়। শব্দটা যে, পাচ্ছি না।
অয়নের মন বলছে অন্য কথা। ওরা যায়নি। গাড়ি থামিয়ে বসে আছে। বাড়ির ভেতর আসবে। বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, এখনই নিচে নামা যাবে না। অপেক্ষা করো।
কেন?
আমার মনে হচ্ছে ওরা যায়নি। গাড়ি থামিয়ে বসে আছে। আমরা ভাবব চলে গেছে। তারপর অ্যাটাক করবে। নাহয় রাত গভীর হওয়ার অপেক্ষা করছে। তখন মানুষ আসতে পারবে না।
ঠোঁট কামড়ালেন বাবা। ঠিকই বলছে অয়ন। কথায় যুক্তি আছে। তা কী করে বুঝব ওরা চলে গেছে?
বোঝার উপায় নেই। থানায় ফোন করেছিলাম। ওসি সাহেব বললেন এত রাতে পুলিশ পাঠাতে পারবেন না। সাবধানে থাকতে হবে আমাদের।
খেই খেই করে উঠলেন বাবা। খুব তো বললি পুলিশের কথা। পুলিশ এটা করবে, সেটা করবে। এবার দেখ। বলছিলাম না, বিপদে পুলিশ পাবি না।
গম্ভীর মুখে অয়ন বলল, চিন্তা করো না বাবা। কিছু হবে না।
বাবা কিছু বললেন না। সারা রাত বসে রইলেন। ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে। তবে সে রাতে ওরা হানা দেয়নি। তবু কেউ ঘুমাতের পারেননি। গাড়িটা চলে যাওয়ার শব্দও হয়নি। সকালে বাড়ির সামনে এলেন বাবা। দেখলেন কোনো গাড়ি নেই। তাহলে কেন ভয় পেলেন। ঘুমাতেও পারলেন না। ওরা এসেছিল! না সবটাই তার মনের ভয়।
সকালে ঘুমিয়েছিল অয়ন। ঘুম ভেঙেছে অনেকটা বেলা করে। মায়ের ডাকে। স্কুলের সময় যা”েছ অয়ন। ওঠ। তখন নিলয় এসেছে অয়নকে ডাকতে। তার ভেতর বেশ কৌতূহল। শুনবে রাতে কী হয়েছিল। ডাক দিল অয়নকে, স্কুলে যাবি না?
চোখ কচলাতে কচলাতে সামনে এলো অয়ন। যাব না কেন? দাঁড়া। ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল। হাত মুখ ধুয়ে আাসি।
হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা না খেয়েই স্কুল ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল অয়ন। পাশে নিলয়। নির্ঘুম রাতের ক্লান্তি অয়নের শরীর জুড়ে। ভয়ও আছে। রাস্তার মুখে আসতেই দেখল সামি আর দীপ। নিচু স্বরে বলল, তোরা দল বেঁধে স্কুলে আসবি। কেউ একা বের হবি না। আমাকেও ডেকে নিস।
সামি হেসে উঠল। এত ভয় পাচ্ছিস কেন অয়ন? কিছু হয়েছে নাকি? তোর চোখে মুখ দেখি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
দীপ একটু সামনে এসে অবাক কণ্ঠে বলল, হ্যাঁ তাই তো। তোর চোখে কমছে কম তিন টন ভয় দেখতে পাচ্ছি। রাতে মনে হয় ঘুমাসনি।
সবাই হাহা করে হেসে উঠল। অয়ন হাসল না। কিছু বললও না। মুখটা গম্ভীর করে রাখল। বললে ওরা বিশ্বাস করবে না। রাতের পরিস্থিতি বোঝানো যাবে না ওদের। তাই এড়িয়ে গেল। ওদের হাসি থামার পরে বলল, সতর্ক থাকা ভালো। শত্রæদের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছি। আমাদের পিছু নিতে পারে ওরা। গোয়েন্দাদেরও কিডন্যাপ করে। জানিস না। সিআইডিতে দেখিসনি।
নিলয় বলল, তা শেষপর্যন্ত গাড়িটা কী হলো অয়ন? কোথায় গেল?
জানি না। তুই হাসলেও ভয় আছে নিলয়। এটা মানতে হবে। সব কিছু হেসে উড়িয়ে দেয়াটা বোকামি। খেসারত দিতে হবে একিদন।
চোখ বাঁকিয়ে তাকাল নিলয়। হেসে উড়িয়ে দি”িছ মানে! আশ্চার্য কথা। এটা পাখি না ঘুড়ি যে উড়িয়ে দেব। কথা বলার আগে একটু ভাবিস। কী বলছিস বুঝতে পারছিস! শব্দের ভুল ব্যবহার। এই ভাষার জন্য আমরা লড়াই করেছি। জীবন দিয়েছি। সেই ভাষার ভুল প্রয়োগ মানতে পারি না। তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছিস।
রাগ হলো অয়নের। গাধার মতো কথা বলিস না। তোদের কাছে কোনো কথা বলতে নেই। বিশ্বাস করতে চাস না। উল্টো তর্ক জুড়ে দিস। মাথা নষ্ট করা ছাড়া কিছু হয় না তোদের দিয়ে।
কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকাল সামি। কী হয়েছে বলতো অয়ন? তোদের কথা বুঝতে পারছি না। নিলয় কী উড়িয়ে দিচ্ছে? আর তুই কী বিশ্বাস করাচ্ছিস?
পরে শুনিস। এখন বলা যাবে না। এটুকু বলি , একা কোথাও যাইস না। সমস্যা আছে। সামান্য না। বড় সমস্যা। আমার কথা বিশ্বাস নাহলে যাইস। কিছু হলে বুঝবি। তখন বুঝলেও কাজ হবে না।
ধুর, রাখ তোর সমস্যা। মানুষকে সমস্যা থেকে উদ্ধার করি আমরা। আমাদের হবে সমস্যা। এসব কে বলছে তোকে?
তেরচা চোখে তাকাল অয়ন। কথাটা গা করলি না। জানতাম এসব বলবি তোরা। তাই আসল কথাটা বলিনি।
পথে এসব নিয়ে আর কথা হলো না। অন্য কথা তুলল দীপ। আচ্ছা শোন, ক্লাস এইটের ওরা কী শুরু করেছে।
কী করছে? জানতে চাইল অয়ন।
বড় ভাই ডাকতে বলছে। সেদিন তো মারপিট লেগেই যেত। মাথা গরম হয়েছিল আমার। জানিস তো আমার মাথা গরম হলে সহজে ঠান্ডা হয় না। ওদের বড় ভাই ডাকতে হবে কেন? সাইজে তো সবগুলোই আমার ছোট। লিলিপুটের মতো।
ওসব রাখ। মাথায় অন্য চিন্তা আছে। পরে দেখব বড় ভাই না ছোট ভাই। বললেই ডাকতে হবে নাকি। বলল অয়ন।
স্কুলে পা রেখেই রেজা স্যার ছুটে এলেন ক্লাস সেভেনে। কিছুটা বিচলিত। অয়নকে ডেকে নিলেন আড়ালে। জানতে চাইলেন, রাতে কী বলছিলে অয়ন? কোথায় গাড়ি এসেছিল?
আমাদের বাজারে স্যার। কালো গাড়ি। ভেতরে চারজন মানুষ। মুখ বাঁধা। সবাই ভয় পেয়েছে। গাড়িটা বাজারে দাঁড়ায়নি। কঙ্কাল বাড়ির দিকে চলে গেছে। রাতে ঘটেছিল আর এক ঘটনা।
আবার কী ঘটেছিল? জানতে চাইলেন রেজা স্যার।
খেতে বসেছিলাম আমরা। তখন একটা গাড়ির শব্দ পেলাম। কানখাড়া করে শুনলাম আমাদের বাড়ির সামনে। বাবা বলল ওই গাড়িটা এসেছে। আমাদের বাড়িতে আসতে পারে ওরা। বাবার কথায় যুক্তি ছিল। আমাদের তুলে নেয়ার চেষ্টা করবে হয়তো। ভয়ের কারণ ছিল ওখানে। ভাত খেতে পারিনি। উঠে পড়লাম দোতলায়। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলাম। শব্দটা আর পা”িছ না স্যার। ভাবলাম গাড়ি থামিয়ে ওরা বসে আছে। যেকোনো সময় হানা দিতে পারে। এভাবে রাত ভোর হয়ে গেল। আমরা কেউ ঘুমাতে পারিনি। ওরাও হানা দেয়নি। তবে ভয়টা কমেনি। ওরা আবার আসতে পারে স্যার।
কিছুক্ষণ ভাবলেন রেজা স্যার। চিন্তা করো না। ওসি সাহেবকে এখনই ফোন করব। পুলিশ নিয়ে আসবেন। তারপর দেখি কী করা যায়।
ওসি সাহেবকে ফোন করেছিলাম রাতে। পুলিশ পাঠাতে বলেছিলাম। বললেন, পুলিশ পাঠানো যাবে না। পুলিশ এলে ধরা পড়ে যেত ওরা। পুলিশের ওপর পুরাটা ভরসা করতে পারি না আমরা।
আচ্ছা দেখি, ক্লাসে যাও। সাবধানে চলবে। ওদের ছাড়ব না। শেষ দেখব। চিন্তিত মুখে বারান্দার অন্য মাথায় গেলেন রেজা স্যার।
ক্লাসে ফিরল অয়ন। মুখে বিরাট হাসি। বন্ধুরা ছুটে এলো। জড়িয়ে ধরে নিলয় জানতে চাইল স্যার কী বললেন?
তোদের কাছে বলা যাবে না। বললেও তোরা বিশ্বাস করবি না। দাঁতের ফর্মেসি খুলে হাসবি। ওটা সহ্য হয় না। শেষে মেরে বসব, দাঁত যাবে পড়ে। যা বলার স্যার বলবেন।
সামি ধরল শক্ত করে। কী এমন কথাটা যে বলা যাবে না। বল, বিশ্বাস করব। রাগ করিস না। তোর কোন কথাটা অবিশ্বাস করলাম?
তোরা তো গুরুত্ব দিবি না। হা হা করে হেসে উঠবি। স্যার বললেন, সাবধানে থাকতে।
বন্ধুরা কিছু বলল না। কিছুটা ভয় জড়ো হলো মুখে। স্যার যখন বলছেন বিষয়টা হালকা করে দেখা যাবে না। ক্লাসে গিয়ে বসল। সবার মাথায় নতুন চিন্তা। ভয় দূর করতে পারছে না। তাদের সামনে ভয়ংকর বিপদ। সেটা অনুমান করতে পারছে। তখনই ক্লাসে ঢুকলেন ইংরেজি স্যার। সবাই সালাম করে দাঁড়াল।