উপন্যাস।।অধ্যাপক কেন মানুষ হতে চায় না।। মনি হায়দার।। ১২তম-পর্ব
- উপন্যাস।। অধ্যাপক কোনো মানুষ হতে চায় না।।মনি হায়দার।। ১ম পর্ব
- উপন্যাস।।অধ্যাপক কোনো মানুষ হতে চায় না।।মনি হায়দার।।২য় পর্ব
- উপন্যাস।। অধ্যাপক কোনো মানুষ হতে চায় না।। মনি হায়দার।। ৩য় পর্ব
- উপন্যাস।। অধ্যাপক কেন মানুষ হতে চায় না।।মনি হায়দার।।৬ষ্ঠ-পর্ব
- অধ্যাপক কোনো মানুষ হতে চায় না ।। মনি হায়দার ।।৫ম- পর্ব
- অধ্যাপক কোনো মানুষ হতে চায় না ।। মনি হায়দার ।। ৭ম- পর্ব
- উপন্যাস।। অধ্যাপক কেন মানুষ হতে চায় না।। মনি হায়দার।। ৮ম পর্ব
- উপন্যাস।। অধ্যাপক কেন মানুষ হতে চায় না ।। মনি হায়দার ।। ৯ম- পর্ব
- অধ্যাপক কেন মানুষ হতে চায় না।। মনি হায়দার।। ১০ম-পর্ব
- উপন্যাস।।অধ্যাপক কেন মানুষ হতে চায় না।। মনি হায়দার।। ১১-পর্ব
- উপন্যাস।।অধ্যাপক কেন মানুষ হতে চায় না।। মনি হায়দার।। ১২তম-পর্ব
- উপন্যাস।। অধ্যাপক কেন মানুষ হতে চায় না।। মনি হায়দার।। শেষ-পর্ব
ফাঁকে মাকসুদা বেগম আর দেলোয়ার দুজনকে কিছুটা এগিয়ে রেখেছে। অধ্যাপক আলী আসগরের অনুপস্থিতিতে প্রতিবেশি হিসেবে খোঁজ-খবর নেয়ার সূত্রে প্রায় আসে বাসায়। বাচ্চাদের আদর করে, ওদের জন্য খাবার আনে। বাচ্চাদুটো ন্যাওটা হয় দেলোয়ারের। দেলোয়ারের কৌশল দেখে মাকসুদা বেগম হাসেন আর হাসেন। হায় বাঘ কি কৌশলেই না এগুচ্ছে! হাসি ঠাট্টা করতে করতে একনাতে দেলোয়ার কেঁদেই ফেলল- জীবনটা আমার নরক হয়ে গেল।
কেন?
মানুষ সারাদিন পরিশ্রম করে বাসায় আসে সুন্দর একটা মুখ দেখার আশায়। আর আমি? আমি বাসায় ফিরে দেখি একটা রাক্ষসীর মুখ। জানেন ওর সঙ্গে আমি মাসে একাবারও-
বুঝি আপনার কষ্ট। কিন্তু বিয়ে তো দেখে শুনেই করেছিলেন।
তা করেছিলাম।
তাহলে এখন এত বিতৃষ্ণা কেন?
মাসু তখন সৌন্দর্য দেখেনি। বেঁচে থাকার জন্য, সিঁড়িতে ওঠার জন্য আমার একটা সিঁড়ি দরকার ছিল। সেটা আমি পেয়েছি। অস্বীকার করব না সানু আমাকে দারুণ ভালোবাসে। আমার খুশির জন্য ও সব করতে পারে। আমি বুঝি সব। কিন্তু ওর মুখের দিকে তাকালে একটা অশরীরী ভয় আমাকে তাড়া করে। নিকষ অন্ধকার কালেঅ ওর শরীর। হাসলে সব দাঁতগুলোক ঝকমক করে ওকে ভূতের মতো-
সত্যি খারাপ লাগছে আপনার জন্য- মন্তব্য করে মাকসুদা বেগম।
যখন খুব কষ্টে ছটফট করি তখন ছুটে আসি তোমার কাছে- অনেকটা ভিখেরির মতো অনুনয়ের সুরে বলে দেলোয়ার।
মাকসুদা বেগম ভেতরে উথাল পাথাল হয়। তার স্বামী আলী আসগর বিবাগিতএতগুলো বছরে একটিবারও এমন আবেগঘর হয়ে মনের কথঅ জবলেনি। দেলোয়ার দুটো অসাধারণ এবং অভিনব এবং অভিনব সম্বোধন করছে কিছুক্ষ আগে বলেছে মাসু, মাকসুদা বেগম-নামটাকে সংক্ষিপ্ত করেছে আর এখন বলল ‘তুমি’।
সঙ্গে সঙ্গে মাকসুদা বেগম এটাও ভাবে লোকটা কী ভয়ানক! নিজেকে প্রতিষ্টা দেয়ার জন্য একটি কুৎসিত মেয়েকে বিয়ে করেঠে। এখন প্রকিষ্ঠা অর্জনের পর নুলো যুবোচ্ছে-
সম্পর্কের এই বুনোট সময়ে যশোহর থেকে অধ্যাপক আলী আসগর আসেন অসুস্থ মীরে। কয়েকদিনে জ্বরও ছাড়ছে না-ভর্তি হয় হাসপাতালে। মৌলি, আহসান ছোট। প্রায়ই হাসপাতালে মাকসুদার সঙ্গী হয় দেলোয়ার। অধ্যাপক আসগর খুবই কৃতজ্ঞ সাবীদ হোসেন দেলোয়ারের উপর। এমন প্রতিবেশী যার থাকে তার আর ভাবনা কী!
অধ্যাপক আলী আসগরের কাছে মাকসুদা যায় সকালে। রাতে আসে বাসায়, সঙ্গী দেলোয়ার। এক রাতে স্কুটার আসতে আসতে হালকা শীতের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে মাকসুদা বেগম এবং ঢলে পড়ে দেলোয়ারের কাঁধের উপর। সাঈদ হোসেন দেলোয়ার আলতোভাবে প্রায়গুমন্ত মাকসুদা বেগমের শরীরটাকে টেনে বুকের উপর রাখে। আলো আধাঁনিন খেলার ঢাকার শহরে ভাঙা রাস্তায় দুজনের মধ্যে শরীরের কথা, গান, সুর তৈরি হতে থাকে। আধেঅ ঘুমে আধো জাগরণে মাকসুদা মোলায়েম শরীর, সুষমামন্ডিত স্তন, উরু, আদর করতে করতে কামনায় কম্পমান ঠোঁটে নামিয়ে আনে দেলোয়ার হোসেন তার ঠোঁটজোড়া। মাকসুদা এতোক্ষণের সীমান্ত ভেঙে দু’হাতে জাপটে ধরে সাঈদ হোসেন দেলোয়ারকে। অটো রিকসা কাঁপতে থাকে, ড্রাইভার মুচকি হাসতে হাসতে চালায়।
সে রাতে সাঈদ হোসেন দেলোয়ার আর ফিরে যায়নি সোনিয়া আক্তার সোনুর কাছে। সেই থেকে শুরু মাকসুদা আর সাঈদ হোসেন দেলোয়ারের মলরি কারখানার গোপন গল্প, কামের লেনদেন।
জয়পুরহাট সরকারী কলেজেও প্রিন্সিপাল মোদাব্বির হোসেন তার অফিসকক্ষে শিক্ষকদের সবাইকে ডেকে পাঠিয়েছেন। কারণ সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী আসগরের নিরুদ্দেশ বিষয়ে তাদের করণীয় সম্পর্কে মতামত জানতে। যথাসময়ে রুমে সব শিক্ষকেরা উপস্থিত হলে মোদাব্বির হোসেন নাক কপাল চোখ কুঁচকে বলেন-গতকাল রাতে আবার ঢাকা থেকে আমার বাসায় ফোন করেছিলেন অধ্যাপক আলী আসগরের স্ত্রী মাকসুদা বেগম। অধ্যাপক আলী আসগরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না- এ ব্যাপারে আমার আমাদের অথবা কলেজ কর্তৃপক্ষের কি করণীয়?
কপাল কুঁচকানো একটু কমিয়ে মোদাব্বির হোসেন তাকান উপস্থিত শিক্ষকদের দিকে। কয়েকজন শিক্ষক- আলী আসগরের ব্যাপারটা প্রথম শুনল। তারা অবাক হল, কিছুটা হায় হায় শব্দও উৎপাদন করল।
জাহাঙ্গীর মাহমুদ মুখ টিপে হাসে, তার হাসি দেখে হাসে পদার্থ বিজ্ঞাসের সহকারী অধ্যাপক সেলিম আহমেদ। হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে-কি ব্যাপার? হাসছেন কেন?
আমার একাট কথা মনে পেেছ তো- তাই হাসি চাপাতে পারছি না- কথা বলতে বলতে হাসতে থাকে, হাসিটা অটোমেটিক ভেতর থেকে আসছে, প্রথমে হাসছিল জাহাঙ্গীর মাহমুদ, জাহাঙ্গীর মাহমুদের হাসি দেখে হাসে পদার্থ বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক সেলিম আহমেদ, তার হাসি দেখে পাশে বসা ইসলামের ইতিহাসের প্রবীণ অধ্যাপক মাওলানা কেয়ায়েতউল্লাহও হাসতে আরম্ভ করে। হাসতেক হাসতে সেলিমকে জিজ্ঞেস করে- হাসছেন কেন?
সেলিম ইশারায় দেখায় জাহাঙ্গীরকে। মাওলানা কেফায়েতউল্লাহ ঘাড় লম্বা করে তাকায় জাহাঙ্গীরের দিকে- হাসার কারণটা কি?
ঠিক এই সময় প্রিন্সিপালের জানালার কার্ণিশে এসে উপস্থিত হয় অধ্যাপক টুনটুনি অথবা টুনটুনি পাখিন আকাশে জয়পুরহাট সরকারী কলেজের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক- অধ্যাপক আলী আসগর। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাসায় কিছুটা ক্লান্ত তিনি। হাঁপাচ্ছেন মুখ হা করে।
এত ক্ষণে হাসির ফোয়ারার দিকে নজর পড়ে প্রিন্সিপাল মোদাব্বির হোসের- কী ব্যাপার? হাসির কি হল?
কার্নিশ থেকে কান খাড়া করেন অধ্যাপক আলী আসগর-অতবা অধ্যাপক টুনটুনি।
স্যার, গলা উঁচু করে সেলিম-হাসির ঘটনাটা জাহাঙ্গীর জানে, কিন্তু বলছে না।
কি ঘটনা জানেন জাহাঙ্গীর?
স্যার-ঘটনা-না-
তাহলে?
আমার ভাবনার জন্য হাসি আসছে- কথা বলতে বলতে জাহাঙ্গীর হাসতেই থাকে।
হাসি থামান-শিক্ষকদের হাসি সংক্রমণ করে মোদাব্বির হোসেনকেও-আগে আপনার ভাবনাটা শুনি আমার-কুঁচকারো ভ্র“’র মাঝখারে হঠাৎ টান দেখা যায়।
স্যার?
হ্যাঁ বলুন।
আমার ভাবনাটা স্যার- আমাদের অতি ভদ্র এবং বিনয়ী শিক্ষক আলী আসগর বোধহয় কোনো তরুণী নতুন স্ত্রীর সঙ্গে মধুচন্দ্রিমা কাটাচ্ছেন-আমরা শুধু ভেবে হয়রান।
জাহাঙ্গীর মাহমুদের কথা শেষ হতে পারে না- পুরো কক্ষ জুড়ে হাসির ফোয়ারা ছোটে। গার্হস্থ্য বিজ্ঞানের ম্যাডাম আফরোজা আহমেদকে জীবনে হাসতে দেখেনি কেউ, মনে হয় তার ঠোঁট দুটো দাঁতের সঙ্গে সুপার গ্লু দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে, এমনকি কথা বলার সময়ও তার দাঁত দেখা যায় না, সেই আফরেনাজা আহমেদও াহাসছেন, তার ঠোঁট ফেটে ঝকঝকে সাদা দাঁত উকি দিয়েছে।
হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়ে যখন সবাই থামে, তখন সেলিম বআহমেদ বলে- দূর, এই বয়সে তিনি বিয়ে করবেন কেন?
ফোড়ন কাটে মাওলানা-আরে ভাই ভিমরতিতে ধরলে নব্বই বছরেও মানুষ বিয়ে করে, বাসর শয্যায় যায়-ছেলেপুলের পিতা-মাতা হয়।
আরে না- আসগর স্যার আদি অকৃত্রিম একজন সরল মানুষ-বলে বাংলার প্রভাষক প্রভাস আমিন-ওনার দ্বারা এসব নিম্ন শ্রেণীর কাজ হয়ো সম্ভব নয়। আমার ধারণা উনি কোনো বিপদে পড়ছেন-আমাদের উচত-তাঁর ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া।
আরে! আপনি দেখছি আমার ভাবনাকে সিরিয়াসলি নিয়েছেন-আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করে জাহাঙ্গীর মাহমুদ-আমির জানি, আসগর স্যার খুব ভালো মানুষ। তিনি ক্লাসে ক’টা মেয়ে পড়ান-সেটাও জানেন না- আমিঠাট্টা করছিলাম মাত্র।
কিন্তু এরকম একজন বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষককে নিয়ে এই নিম্নরুচির ঠাট্টা করাটা কি ঠিক? যখন তিনি কোথঅয় আমরা জানি না- নিখোঁজ প্রায়-
প্রিন্সিপাল মোদাব্বির হোসেন গলা উঁচু করে-শুনুন। আমি যে কারণে আপনাদের ডেকেছি, আপনারা শুনেছেনও বটে। এখন এই বিষয়ে পরামর্শ দিন-আমাদের বা কলেজ কর্তৃপক্ষের কি করণীয় আছে? যাইহোক আলী আসগর স্যার-আমাদের বা কলেজ কর্তৃপক্ষের কি করণীয় আছে? যাইহোক আলী আসগর স্যার-আমাদের কলি, দীর্ঘ তিন বছর ধরে এখানে আছে, আমাদের একটা কর্তব্য আছে-
আমার মনে হয়- থানায় একটা ডায়রী করানো যায়, বলে মাওলানা।
ভালো বলেছেন-সেক্ষেত্রে একজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে হবে। জাহাঙ্গীর আপনি একজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলুন, আগামীকাল আমাতে জানাবেন।
ঠিক আছে স্যার।
কাল দুপুরে ফোন করবেন আলী আসগর স্যারের স্ত্রী ঢাকার বাসা থেকে-তখন আরও খবর জানা যাবে। প্রিন্সিপাল উঠে দাঁড়ায়- আপনারা বসুন, সুনীল আপনাদের চা নাস্তা দিচ্ছে, আমি একটু বাইরে যাচ্ছে- প্রিন্সিপাল রুম থেকে বের হয়ে যায়। তার পেছনে পেছনে চলে যায়-প্রভাস আমিনও। চায়ের সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে ঢোকে সুনীয় সরকার।
দেখলেন বাংলঅর নতুন স্যার প্রভাস আমার সঙ্গে হায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চাইল-অভিযোগ জাহাঙ্গীরের।
আরে বাদ দেন-একজন শিক্ষক মন্তব্য করে-নতুন এসেছে, কোনটা ধান আর চাল এখনও বুঝতে শেখেনি। তবে এই কলেজে আলী আসগর স্যারের মতো মানুষ অচল, অপ্রচলিত। একটা টিউশনি পর্যন্ত করান না। ছাত্ররা পতে আগ্রহ দেখানে নাকি বলেন-আমি ক্লাসে আরও ভালো করে পড়াব, প্রাইভেট পড়ার প্রয়োজন নেই। কী চমৎকার অপদার্থ-
জাহাঙ্গীর তেঁতে উঠে, চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে- তার জন্য আমাদের মাকর্টে নষ্ট হচ্ছে, টিউশনির কথা বলা যায় না।
বললেই আলী আসগর স্যারের প্রসঙ্গ আসে- তার সাবজেক্টে প্রাইভেট লাগে না, আপনাদের সাবজেক্টে লাগে কেন? বলুন তো-এই কথার কি উত্তর দেই? প্রশ্ন করে অন্য আর একজন অধ্যাপক।
হঠাৎ কেফায়েতউল্লাহ গলা খাঁকারির সঙ্গে বলে-আচ্ছা, আলী আসগর স্যারের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর ইয়ে টিয়ে নয়তো?
কথার মধ্যে আবার হাসির ঢেউ ওঠে-হাসতে হাসতে জাহাঙ্গীর একটি অভিনব প্রসঙ্গ তোলে- আমার মাথায় একটা প্লান এসেছে।
কি প্লান? সেলিম আহমেদের জিজ্ঞাসা।
কোনো কেটা কক্ষে একদিন একটা ভার্জিন, দেখতে মুনতে চমৎকার-খাসা একটা মেয়ে আর আমাদের আলী আসগর স্যারকে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালঅ বন্ধ করে আমরা দাঁড়িয়ে থাকব বাইরে, দরজার পাশে- বলুন তো স্যার তখন কি করবেন?
মাওলানা চোখ লোভে চকচক করে ওঠে, জিগায় লালা নামে-কেন? আমরা যা করি তাই করবে আসগর স্যার।
সেটা কি?
মাওলানা কেফায়েতউল্লাহ আঠালো কন্ঠে জবাব দেয়-একটি এই রকম মেয়ে পেলে কি করব আমরা? জড়িয়ে ধরব, চুমু খাব, ওর কাপড় খুলব-তারপর-
অসম্ভব-প্রতিবাদ করে জাহাঙ্গীর।
কি অসম্ভব?