উপন্যাস

অধ্যাপক কোনো মানুষ হতে চায় না ।। মনি হায়দার ।। ৭ম- পর্ব

মাস্টার্স পাস করার পর তরুণ আসগর চাকরির জন্য পাগল হয়ে যান। ছাত্রজীবন থেকে টিউশনি করে আসছেন, আর ভালো লাগছে না তার। একটা চাকরি দরকার। খুব দরকার। মেসে থেকে, টিউশনি করে এই অন্ধকার জীবনের বেড়াজাল থেকে মুক্তি চান। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে এপ্লিকেশন পাঠাতে থাকেন মাসের পর মাস। দু’একটা জায়গা থেকে ইন্টারভিউ কার্ড আসে। সর্বপ্রকার প্রস্তুতি নিয়ে তিনি ইন্টাভিউ বোর্ডে যান। বাস্তব-অবাস্তব প্রশ্নের উত্তর দিতেন, কখনও কখনও দিতে ব্যর্থ হতেন। কিন্তু চাকরি আর হয় না। জীবনের প্রতি তীব্র ঘৃণায় হতাশায় যখন মাঝে-মধ্যে আত্মহত্যার কথা ভাবতে আরম্ভ করলেন তখনই তিনি ঢাকার উপকন্ঠে, মিরপুরের প্রাইভেট একটি কলেজে লেকচারারের চাকরি পান। জীবনে এই প্রথম একটি জায়গায় দাঁড়াতে পেরেছেন। হোক বেসরকারি চাকরি, হোক অল্প টাকার বেতন- তবুও একটা দাঁড়াবার জায়গা তো! দেখতে মুনতে ভালো, এমন চেহারা গড়ন, কলেজের কলিগ গোলাম মোস্তফা বিয়ের প্রসঙ্গ তোলেন এবং এক সন্ধ্যায় আলী আসগরসহ আরো কয়েকজন কলিগ নিয়ে মোস্তফার আত্মীয়র বাসা জুরাইন নিয়ে আসেন।

মাকসুদা ম্যাট্রিক পাস করেছে। কলেজে ভর্তিও হয়েছিল- তারপর কী এক অজানা কারণে কলেজে যায়নি। বাবা ব্যববসায়ী। পুরোনো ঢাকায় লোহা-লক্করের আমদারি-রফতারিকারক। মাকসুদাকে দেখেই পরম ভালো লেগে যায় আলী আসগরের। অপূর্ব শ্যামলিম মুখ, ভাসমান পদ্মের মতো দু’টি চোখ। মাথায় রাশি রাশি চুল। যেদিন দেখা সেদিনই বিয়ে, বাসরঘর-সবকিছু হয়ে যায়। দু’জন মানুষ। একজন মানবম অন্যজন মানবী- যৌবনের ঘ্রাণে, সংসারের সুষমায় একাকার। সেই থেকে শুরু একজন মাকসুদা বেগমের সঙ্গে একজন অধ্যাপক আলী আসগরের যাত্রা। কত যে দেখেছেন, অবাক হয়েছেন- মানুষের চরিত্রের ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি।

মাকসুদার ভেতরে অন্য কয়েকচিন মাকসুদা লুকিয়ে আছে। ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন চেহারা ও স্বার্থপরতা নিয়ে সেই আর্বিভূত হয়। সংসারের মধ্যে খুব ক্ষুদ্র গৌণ বিষয়ও অনেক বড় হয়ে দেখা দেয় তার কাছে। পেটে একে একে তিনটি সন্তান থাকত। অতীতের স্মৃতির ভেলায় চড়ে চড়ে অধ্যাপক টুনটুনি’র ট্রেন ঢাকায় প্রবেশ করে, টঙ্গী ছাড়িয়ে ট্রেনটা হু হু করে ঢুকছে মাঠঘাট, পথ-প্রান্তর সরিয়ে। যত ঢাকার কমলাপুরের কাছাকাছি হচ্ছে ট্রেন, অধ্যাপক টুনটুনির ভেতর এক ধরনের বিষাদের তিক্ততা হানা দেয়। কেন তিনি ঢাকায় ফিরে আসছেন? কোথায় যাবেন তিনি? সংসারে? কার সংসারে? কেন ফিরলেন তিনি? এতদিনের শ্রমে ঘামে তৈরী এই সংসার কি তার? তিনি অনাহূত একজন। অপাংক্তেয় একজন মানুষ মাত্র। অথবা ক্রীতদাস জীবনে তিল তিল তৃষ্ণায় গড়ে তোলা জ্ঞান বিক্রি করে যে অর্থ উপার্জন করেন, সেটা সংসারে দিয়ে দেবেন। দিয়েই তার মুক্তি। এছাড়া সংসারের যে তার কানাকড়ি দাম নেই-বুঝতে পেরেছেন, অবশেষে, সেই রাতের যাযাবর দৃশ্যাবলি দেখে। ট্রেন মহাখালি ভেদ করে ঢুবে যাচ্ছে ঢাকারা হৃৎপিণ্ডে। আবার তার বমি আসছে। অসুস্থ লাগছে। হায় জীবন, হায় সংসার এই সংসারের জন্য জীবনের যাবতীয় সুখ সুষমা দান করলেন- কি পেলেন বিনিময়ে?

আচ্ছা কতদিন কত বছর ধরে সাঈদ হোসেন দেলোয়ার সিঁদ কেটে তাঁর সাজানো বাগান সমান ঘরে ঢুকেছে? কি লাভ এখন এই অমার্জনীয় প্রশ্ন তোলে? কিন্তু তিনি কেন ঢাকায় ফিরছেন? তার তো উচিত ছিল অজানা গ্রামীন গুহায় চিরকালের মতো হারিয়ে যাওয়া। কেউ কাঁদবে না তার জন্য- এক দারবীয় পীড়ন তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। ট্রেন ছুটে চলছে কমলাপুরের দিকে। তারপরও তাকে কোথাও না কোথাও ফিরতে হবে! অনেকটা আত্মহনন আর কী!

কলেজের প্রিন্সিপাল মোদাব্বির হোসেন কুঁচকানো মুখে পত্রিকা রেখে বেল টেপেন। পিওন গোলাম আজম এসে মাথা নীচু করে দাঁড়ায়- স্যার?

পাশের রুমের জাহাঙ্গীর স্যার আছেন?

ঘাড় নাড়ে গোলাম আজম-আছে স্যার।

আমার রুমে আসতে বল।

আচ্ছা- চলে যায় গোলাম আজম। কুঁচকানো মুখ নিয়ে আবার চেয়ারে হেরান দিয়ে বসেন প্রিন্সিপাল মোদাব্বির হোসেন, ঢোকেন জাহাঙ্গীর মাহমুদ, কলেজের বিজ্ঞানের অধ্যাপক, কিন্তু প্রিন্সিপালের এক নম্বর দালাল। বিজ্ঞান শিক্ষা শিকেয় তুলে ধান্দা, ফন্দি ফিকিরে চব্বিশ ঘন্টা মশগুল থাকে।

স্যার! আমাকে ডেকেছেন?

হ্যাঁ, বসুন, কুঁচকানো মুখটাকে যতটা সম্ভব কুঁচকিয়ে তাকালেন জাহাঙ্গীর মাহমুদের দিকে-কিছুক্ষণ আগে ঢাকা থেকে একটি ফোন পেলাম।

মাহমুদের মুখ তীব্র উজ্জ্বলতায় ভরে ওঠে-মাননীয় মন্ত্রী বাহাদুর করেছেন?

আরে ধ্যাৎ! বিরক্তির  প্রকাশ করেন করেন প্রিন্সিপাল মোদাব্বির হোসন- খালি মাননীয় মন্ত্রী, মাননীয় মন্ত্রী করেন, আমাদের জন্য ওদের কোনো সময় আছে? খালি খালি কলেজ ফান্ড থেকে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে সংবর্ধনা দিলাম। এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুললাম। শালার আকাট-মূর্খ, ঠিকমতো বক্তৃতাও করতে পারে না, শব্দ চয়ন জানে না- মন্ত্রী হয়েছে। ব্যাটা- কত বড় নিমকহারাম ব্যাটাকে সোনার কলম উপহার দিলাম, কলেজের নানা সমস্যার প্রসঙ্গে বললাম, একটা টাকা অনুদান পর্যন্ত ঘোষণা করল না।

ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যায় জাহাঙ্গীর মাহমুদ। নিজের গালে মনে মনে একশো একটা থাপ্পর মারে। কথাটা একদমই  উচ্চারণ করা হয়নি। শালার মন্ত্রী! খচ্চর! অপদার্থ-স্টুপিড। জাহাঙ্গীর মনে মনে গালিগালাজ করে-পুরো কলেজে, জয়পুরহাটে তার উঁচু তালগাছের মতো মাথাটা এখন বামন তালগাছের মতো খাটো। কারণ এই ব্যাটা- মন্ত্রী।

ব্যাপারটা যে কেমন করে তার মাথায় ঢুকল- নিজেই বুঝতে পারে না। একমাত্র বিবাহিত স্ত্রী দূর সম্পর্কের খালাতো ভাই-মাননীয় মন্ত্রীর একান্ত সচিব- কথাটা জানার পর থেকেই জাহাঙ্গীর মাহমুদ উথাল-পাথাল হয়ে পড়ে। হোক না দূর সম্পর্কের খালাতো ভাই-ভাই তো বৌয়ের। এই তো মোক্ষম সময় এলাকায় একটা দাপট দেখানোর। বেশ কয়েকদিন ভেবে-চিন্তে একটা খসড়া পরিকল্পনা অমোচনীয় কালিতে আচ্ছামতো সুপার-গ্লু মেখে মগজের দেয়ালে সাটায় সে। সেই পরিকল্পনা অনুসারে প্রিয় প্রিন্সিপালকে জানায়।

শুনে তো প্রিন্সিপাল অবাক চোখে তাকায় মাহমুদের  দিকে-সত্যি বলেছেন?

কি?

আপনার খালাতো শ্যালক মাননীয় মন্ত্রীর একান্ত সচিব?

জ্বী স্যার। এই শুভ সংবাদটা দেয়ার জন্য আবার বৃদ্ধ খালু শ্বশুর সাহেব গতকাল বাসায় পাঁচ কেজি মিষ্টি নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। যেখানে যাচ্ছেন, যে বাসায় যাচ্ছেন মিষ্টি নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রিয় পুত্রের মাননীয় মন্ত্রীর একান্ত সচিব হওয়া কী চাট্টিখানি কথা!

তাতো বটেই-তাতো বটেই-মন্ত্রী বলে কথা! একটা ব্যাকুল দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে কুঁচকানো মুখে মোদাব্বির হোসেন।

বুঝলেন না স্যার-মন্ত্রীর সঙ্গে থাকতে থাকতে আমার শ্যালক জনাব খায়রুল আমলও প্রায় একজন মন্ত্রী।

কুঁচকানো মুখটা আরও কুঁচকে যায়- কীভাবে?

বুঝলেন না স্যার? একান্ত সচিব খায়রুল আলম ছাড়া মন্ত্রীর এক মুহূর্তও চলে না। কোথায় কার সঙ্গে কখন কবে দেখা সাক্ষাৎ করার ব্যাপার আছে, সবই ঠিক করে দেয় আমার শ্যালক, স্যার। খায়রুল আলম যদি বলে নট- সঙ্গে সঙ্গে মাননীয় মন্ত্রীও বলেন- নট।

খুবই চমৎকার সংবাদ- জাহাঙ্গীর- প্রিন্সিপাল ঝুঁকে পড়েন- একটা কাজ করা যায় না?

কি কাজ স্যার?

গভীর আগ্রহে জানতে চায় জাহাঙ্গীর মাহমুদ।

আপনার শ্যালককে দিয়ে মাননীয় মন্ত্রীকে কলেজ পরিদর্শনে নিয়ে আসেন। আমরা খুব বড় একটা সংবর্ধনা দিলাম- কলেজ ফান্ডে যদি কিছু দেন- কলেজটা উন্নত হত।

হাসে জাহাঙ্গীর মাহমুদ- আমিও স্যার ঠিক এই কথাটাও বলতে এসেছি- বুঝলেন না স্যার! দু’হাত কচলাতে থাকে সে অমার্জিত বাঁদরের মতো। আশ্চর্য ব্যাপার! আমার মনের কথাটা আপনি জেনে গেছেন। এটা স্যার আপনার অশেষ স্নেহের কারণেই সম্ভব-

তাহলে আজকেই কাজ আরম্ভ করুন। আপনাকে আহŸবায়ক করে একটা মাননীয় মন্ত্রী সংবর্ধনা কমিটি গঠন করি! কি বলেন? আপনি আপনার শ্যালককে দিয়ে মাননীয় মন্ত্রীর আসার তারিখটা কনফার্ম করুন।

টেবিলে চাপড় দেয় জাহাঙ্গীর মাহমুদ- ঠিক আছে স্যার।

পরের দিন কলেজের শিক্ষক রুমে, ক্লাসরুমে, কেন্টিনে, গাছতলায় একই আলোচনা। জাহাঙ্গীর স্যার খুব পাওয়ার ফুল লোক। তার আপন শ্যালক মন্ত্রীর একান্ত সচিব। খালাতো শ্যালক শব্দটা আর কেউ বলে না। কেউ জিজ্ঞেস না করলে জাহাঙ্গীর মাহমুদও ভেতরে ভেতরে খেলাটা খেলে আপন মনে দু’হাতে বাদ্য বাজায়। জাহাঙ্গীর কলেজ ফান্ড থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ঢাকায় আসে। অনেক কষ্টে, কাঠখড় পুড়িয়ে সাতদিন সচিবালয়ের গেটে ধর্না দিয়ে একদিন ঢুকতে পারে। শ্যালক খায়রুল আলম প্রথমে তো চিনতেই পারেনি, অনেক পরিচয় দেয়ার পর সামান্য কিছুটা চিনেছে সে দয়া করে। না চিনলেও তার কোনো ক্ষতি বৃদ্ধি হত না। চেনা পরিচয়ের পালা শেষ হলে প্রিন্সিপাল মোদাব্বির হোসেনের মতো মুখ না কুঁচকিয়ে দুই কপালের ভ্র“ কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করে খায়রুল- কি করতে পারি আপনার জন্য?

মাননীয় মন্ত্রীকে নিয়ে আমাদের কলেজে একবার পরিদর্শনে আসুন।

কী যে বলেন- মিঠে হাসি মুখে ঝুলিয়ে কথা বলে খায়রুল আলম- স্যারের সময় নাই। কতো কাজ স্যারের জানেন! স্যার শ্বাস নেয়ারই সময় পায় না-

হাত ধরে খপ করে জাহাঙ্গীর মাহমুদ- বড় আশা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি। জীবনে তো কখনও আসিনি।

ঠিক আছে বুঝলাম- মোলায়েমভাবে হাতটা সরিয়ে নিয়ে কথা বলে খায়রুল আলম- আমাদের মন্ত্রণালয় তো শিক্ষা মন্ত্রণালয় নয়। আপনাদের দরকার শিক্ষামন্ত্রী, উনি গেলে আপনাদের লাভ হবে। অনুদান-টনুদান পাবেন। আমাদের মন্ত্রণালয় তো জাহাজ কাটা মন্ত্রণালয়।

আমাদের অনুদান লাগবে না, আপনি আর মন্ত্রী পরিদর্শনে গেলেই আমরা ধন্য হব। পুরো এলাকায় মন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে আপনার নামেও মাইকিং করব। পোস্টারে পোস্টারে ঢেকে ফেলব জয়পুর হাট-লগে আপনাকে-

জাহাজ কাটা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর একান্ত সচিব কিছুটা সময় ভেবে, কাগজপত্র টেনে-ঘেঁটে, দেখে-টেখে বলে-ঠিক আছে, এ মাসে তো টাইম নাই। আগামী মাসের শেষের দিকে একদিন যাওয়া যেতে পারে। আপনি আগামী মাসের প্রথম দিকের একবার যোগাযোগ করুন।

একটুতেই জাহাঙ্গীর মাহমুদ হাতে চরকা কাটা ছায়াবুড়িসহ পুরো চাঁদটাকে হাতে পেয়ে যায়। সে বঙ্গবিজয়ী বীরের বেশে জয়পুরহাটে নামে এক ক্লান্ত সকালে বাস থেকে। বাস থেকে নেমেই সরাসরি কলেজে যায় এবং কল্পনার অজস্র গল্প-কল্প মিলিয়ে অদ্ভুত অসাধারণ গল্প বলে প্রিন্সিপাল আর শিক্ষকদের। মফস্বলের শিক্ষক মানেই কুয়ায় বাস করা একদল নাবালক ব্যাঙ।  তারা ভয় শ্রদ্ধা ও শিহরণে পুলকিত হয়ে জাহাঙ্গীর মাহমুদের সব গাল-গল্প বিশ্বাস করে। কলেজে এখন সে পদহীনতার মধ্যেও প্রিন্সিপালের চেয়েও বড় প্রিন্সিপাল।

তারপরের ঘটনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। যথাসময়ে ঢাকঢোল বাজিয়ে, ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে, রাস্তার দুই ধারে কলেজের ফুটন্ত মেয়েদের ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে স্বাগতম গান গাইয়ে মাননীয় মন্ত্রী, জাহাজ কাটা মন্ত্রণালয় এবং তাঁর একান্ত সচিবকে বরণ করে নেয়া হয়। অনেক খাওয়া-দাওয়া, আদর আপ্যায়ন ভোগ করে জাহাজ কাটা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী পৌনে একঘন্টা বক্তৃতা করলেন। তিনি গ্রাম সরকার, রাজাকার প্রতিপালন ও এর উপকারিতা, সাধারণ যাত্রীসমেত লঞ্চ ডুবিতে মানুষের মৃত্যুতে তার আন্তরিক ছাগল প্রদানের তরিকা, ছাগলের উপকারিতা, স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ বিষয়ক নিজস্ব রোজনামচা ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে বললেন। এমনকি এলাকাবাসী, কলেজ কর্তৃপক্ষ ও জাহাঙ্গীর মাহমুদকেও ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানালেন। সবশেষে বললেন- আপনাদের এখানে আসার আগে একটা মোটা অঙ্কের অনুদানের চেক আমি ভুল করে অফিসে ফেলে এসেছি, গিয়েই পাঠিয়ে দেব-

বলাবাহুল্য, আজ সাড়ে তিনমাস এখন পর্যন্ত সেই চেকটি জয়পুরহাট কলেজে এসে পৌঁছায়নি।

সুতরাং প্রিন্সিপাল মোদাব্বির হোসেন যদি দু’চারটা গালিগালাজ করেও থাকেন মাননীয় মন্ত্রীকে, তাতেও কিছু যায় আসে না জাহাঙ্গীর মাহমুদের।

প্রিন্সিপাল মোদাব্বির হোসেন এতদিনে বুঝে গেছেন নিজস্ব অভিজ্ঞতায়-ঐ চেক আর আসবে না। ছাগল পালন কর্মসূচির ছাগলেরা পুরোটাই খেয়ে ফেলেছে।

স্যার? কে ফোন করেছেন?

আমাদের আলী আসগর স্যারের বাসা থেকে।

কেন? উনি তো ছুটিতে এখন বাড়িতেই আছেন।

কুঁচকানো মুখে কুৎসিত হাসি উঁকি দেয়- মনে হয় কোনো ঘাপলা হয়েছে।

মানে?

আলী আসগরের বৌ ফোন করেছিলেন। তিনি জানতে চাইলেন স্যার কলেজে এসেছেন কি না! অথচ তিনি আসেননি। কেন আসেননি? কিছু বুঝলেন?

ঘাড় চুলকায় জাহাঙ্গীর-না স্যার, বুঝলাম না।

বুঝলেন না?

না স্যার।

বাসা খেকে ভেগেছে আলী আসগর।

কোথায়?

আমি কি জানি! তবে আমার মনে হয়- থেমে যান প্রিন্সিপাল মোদাব্বির হোসেন, কদাকার মুখে কদাকার হাসির বিশ্রী ঢেউ তোলে।

হাসলেন কেন স্যার!

আমার মনে হয়-আমাদের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী আসগর আর একটা বিয়ে করেছেন এবং পালিয়ে সেখানে নতুন বৌয়ের কাছে রাত্রিযাপন করছেন। আকন্ঠ মধুপান করছেন- হাসতে থাকেন মোদাব্বির হোসেন কালো কুঁচকুচেঁ তরমুজের বিচির দাঁত বের করে।

তার সঙ্গে হাসিতে যোগ দেয় জাহাঙ্গীর মাহমুদও- হাসতে হাসতে জাহাঙ্গীর মাহমুদ বলে-স্যার, আলী আসগর স্যারের কি এই বয়সে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করবার ক্ষমতা আছে?

আছে মিয়া? পুরুষ মানুষ বিয়া করবে- বয়স-টয়স কি? বিয়াটাই যথেষ্ট- হাস আরো প্রসারিত হয়।

জ্বী, ঠিকই বলেছেন- বাধ্যগত ছাগলের মতো স্বীকার করে জাহঙ্গীর।

কি রকম স্যার? গলা বাড়ায় জাহাঙ্গীর।

বুঝলেন না- একবার তাকে আমি অপমান করেছিলাম না? হয়তো কোনো ক্ষেত ্রপ্রস্তুত করে সে অপমানের প্রতিশোধ নিতে চাইছে।

জাহাঙ্গীর হাসে- সেই বুদ্ধি আসগর স্যারের মাথায় নেই স্যার।

Series Navigation<< অধ্যাপক কোনো মানুষ হতে চায় না ।। মনি হায়দার ।।৫ম- পর্বউপন্যাস।। অধ্যাপক কেন মানুষ হতে চায় না।। মনি হায়দার।। ৮ম পর্ব >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *