কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। দশ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব দুই
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব তিন
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব চার
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পাঁচ পর্ব
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব ছয়
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব সাত
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব আট
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব নয়
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। দশ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব এগারো
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। বারো
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব তেরো
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব চৌদ্দ
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। শেষ পর্ব
আতিকন বলল, না, আমি আলাদা ফ্ল্যাটে থাকব না। জয়িতা আমার মেয়ের মতোই হয়ে গেছে।
ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না। আমি এই বাসাতেই থাকব।
জয়িতাকে এই পৃথিবীতে হেলেন কেলারের মতো দৃষ্টিহীনদের জন্য আধুনিক দুনিয়ার মডেল বানাব।
রোল মডেল। আপনি আলাদা ফ্ল্যাটেই থাকবেন। সকালে আসবেন আর সন্ধ্যায় ফিরে যাবেন।
অফিসের চাকরির মতো।
না। আমি তা পারব না। জয়িতাকে ছাড়া আমি ঘুমাতে পারব না।
তাহলে একটা কাজ করা যায়। কান্টিবান্টিও এই বাসায় থাকবে।
আমার এতো বড় বাড়িতে এখন আপনারা দুজন মা-ছেলে থাকবেন।
মনে করবেন, এটিও আপনাদের বাড়ি।
আনন্দে জয়িতা আর কান্টিবান্টির চোখ থেকে পানি ঝরতে থাকে।
কাশেম পাটোয়ারি বললেন, আমি জয়িতার জন্য আরেকজন কেয়ার টেকার রেখে দিচ্ছি।
আপনি তাকে সুপারভাইজ করবেন।
না, তাহলে আপনার বাসায় আমি থাকব না, আতিকন বলল।
এই কাজ করলে, আমাদের প্রতি করুণাই দেখানো হবে।
আমি কাজের প্রাপ্যই নিতে চাই। করুণা নয়।
এটা আপনার ভুল ধারণা। বরং আমি যা করছি তা আপনার প্রাপ্য মর্যাদা
ফিরিয়ে দিতেই করছি। আপনি করুণা ভাবছেন কেন।
আপনি একজন বড় বিজ্ঞানীর মা। নিজে একজন অধ্যাপিকা ছিলেন।
তা হোক। আমি আমার কাজের প্রাপ্যই নেব। আলাদা কোনো সুযোগই নেব না।
তবে আমার দায়িত্ব পালন করতে করতে এখন মনে হয় জয়িতা যেন আমারই মেয়ে।
আমি সে-কথাই তো বলছি।
জয়িতার মা যেমন দায়িত্ব পালন করতেন আপনিও সেরকম দায়িত্ব পালন করবেন।
কান্টিবান্টিও আগের মতো চাকরি করবে। কোনো করুণা নয়।
শুধু আপনাদের আবাসিক সুবিধা দিচ্ছি আর আপনার একজন সহযোগী দিচ্ছি।
জয়িতা এতোক্ষণ চুপ করে ছিল। এখন বলল, হ্যাঁ মা। আপনি আর কথা বলবেন না।
আপনার পরিচয় আমরা বদলে দিতে চাই।
আতিকন জয়িতাকে জড়িয়ে ধরে। জয়িতার নরম চুলে হাত বুলিয়ে দেয়।
শেষ পর্যন্ত কাশেম পাটোয়ারী তাঁর কথা অনুযায়ীই কাজ করলেন। আতিকনও মেনে নিল।
আতিকন আর কাশে পাটোয়ারী নিজ নিজ কাজে চলে যাওয়ার পর বিজ্ঞানী কান্টিবান্টি জয়িতাকে বলল,
বলো জয়িতা আমাকে কেন পাকড়াও করা হয়েছে? জয়িতা বলল, আমার মাথায় একটা ধারণা এসেছে।
ফেসবুকে এমন কিছু করতে হবে যাতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা ব্যবহার করতে পারে।
এটা সম্ভব নয় জয়িতা। তোমার মাথায় সব আজগুবি ভাবনা। মোটেও আজগুবি নয়। অবশ্যই সম্ভব।
চোখে দেখতে পারো না বলেই এসব আজগুবি ভাবতে পারো। চোখে দেখতে পেলে অন্য কাজে করতে পারতে।
কান্টিবান্টির কথা শুনে কষ্টে জয়িতার বুক ফেটে যায়। সে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।
কান্টিবান্টিও বুঝতে পারেনি জয়িতা কাঁদবে। এমন কথায় কান্নার কী আছে, কান্টিবান্টির মাথায় খেলে না।
তবে জয়িতার কান্না দেখে সেও কষ্ট অনুভব করে। আর ভয়ও পায়, যদি জয়িতার বাবা জানতে পারেন
তাহলে পিঁপড়াডলা খাওয়ার আশঙ্কা আছে। তার এতো আদরের মেয়েকে কাঁদানো ঠিক হলো না।
কান্টিবান্টি দুঃখিত বলে। ক্ষমা চায়। জয়িতার মনও স্বাভাবিক হয়। সে বুঝতে পারে,
এ ধরনের কথা তার জীবনে প্রাপ্য। আরও শুনেছে। আরও শুনবে। এ-নিয়ে কাঁদা বোকামি ছাড়া কিছু নয়।
পরিস্থিতি দুজনেই সামলে নিয়ে কাজের কথায় ফিরে আসে।
জয়িতা বলল, আমি ধারণা দিচ্ছি, আর আপনি ফেসবুকের প্রোগ্রামিং করবেন।
এটা গাড়ি বানানোর চেয়ে সিম্পল। খুব সহজ।
বিজ্ঞানী কান্টিবান্টি নোটবুকে লিখে।
জয়িতা বলে যায়, আপনি জানেন আমরা ব্রেইলে লেখাপড়া করি। হাতের স্পর্শে লেখা বুঝতে পারি।
এখন আপনার প্রথম কাজ হলো কীবোর্ডটি তৈরি করা। আপনি ধোলাইখালে ইঞ্জিনিয়ার ঘুট্টুসের সাহায্য নিবেন।
বাবার কাছে ওর ঠিকানা আছে। তারপর কীবোর্ড এমনভাবে তৈরি করবেন যাতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা হাত দিয়ে বুঝতে পারে
কী-বোর্ডের কোনটি কোন হরফ। বুঝলেন?
বুঝলাম। তারপর?
তারপর কারসরের সঙ্গে শব্দের সংযোগ ঘটাতে হবে। আমার যখন দৃষ্টিশক্তি ছিল তখনকার স্মৃতি থেকে বলছি।
ধরেন, টুলবারে যেখানে যা লেখা আছে কারসর সেখানে গেলেই সেটি শব্দের কোডে প্রকাশ করবে। যেমন ধরেন,
আমি অনুমান করে কারসরটি উপরের দিকে নিলাম। কারসর হোম মেন্যুতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
ফাইল শব্দটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চারিত হবে। অনুরূপভাবে, ইনসার্ট, পেজ লেআউট, রেফারেন্সেস, মেইলিংস,
রিভিউ, ভিউ, অ্যাডস-ইন ইত্যাদি।
এভাবে প্রত্যেকটি মেন্যুতে যাওয়ার পরই কম্পিউটারে যাতে সঠিক উচ্চারণে শব্দ হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
অর্থাৎ কম্পিউটারের স্ক্রিনটা হবে ‘রিডিং স্ক্রিন’। কি, খুব সহজ না?
হ্যাঁ। খুব সহজ। এই সহজ ধারণাটি আমার মাথায় কেন এলো তাই ভাবছি। তাহলে তো আমি বিখ্যাত হয়ে যেতাম।
আপনিই তো বানাচ্ছেন। তাহলে বিখ্যাত হওয়ার বাকি কই? তাছাড়া গাড়ি বানিয়েই আপনি বিখ্যাৎ হয়ে গেছেন।
না। এটি তোমার ধারণা। আমি কেবল তোমার বুদ্ধি নিয়ে কাজ করছি। কামলা।
জয়িতা হাসে। কিছুক্ষণ নীরবতায় কেটে যায়। তারপর জয়িতা বলল, তাহলে ফেসবুক কীভাবে হতে পারে?
কান্টিবান্টি বলল, খুব সোজা। একটা ‘রিডিং স্ক্রিন’ তৈরি করলেই হলো।
চমৎকার। আপনার জ্ঞান সত্যি গভীর। আমি মুগ্ধ।
জয়িতা তুমিও আমার চেয়ে বড় বিজ্ঞানী। আমি মুগ্ধ। আমাকে এক মাস সময় দাও।
‘রিডিং স্ক্রিনের’ কম্পিউটার তৈরি করে দিচ্ছি। শুধু ফেসবুক নয়।
কম্পিটারের সব কিছুই তুমি ব্যবহার করতে পারবে। এখন আসি।
জয়িতা বলল, আসেন মানে কী? আপনি না এ বাসায় থাকবেন?
থাকব তো বটেই। মায়ের কাছে থাকব না? কিন্তু তারও একটা প্রস্তুতি আছে।
আমি সব প্রস্তুতি নিয়েই আসব। মাকে বলে যাচ্ছি।