সায়েন্স ফিকশন

ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। শেষ পর্ব

দোলাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য পথে নামে আরিফ। বহু বছর আগেকার সূত্র ধরে দোলাকে খুঁজছে ও। যদি খুঁজে পায়, যদি দেখে দোলা অপেক্ষায় আছে আরিফের, তবে হয়তো দোলাতেই থিতু হবে আরিফ। আর যদি কেবল দোলার ক্ষমা কুড়িয়ে আরিফ সোহাতে ফেরে, তাতেও আপত্তি নেই সোহার।
আশফাকের কাছে আরিফের এই রকম খবর পেয়ে আনন্দ হয় সোহার। এত দিনে আরিফ তবে মানুষ হ’ল! ও আরিফের মানুষ হয়ে ওঠার অপেক্ষাতেই তো ছিল। মনে মনে ভাবে, দোলার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে আরিফ, দোলার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আরেকজন মানুষ, সে দোলা আর আরিফের সন্তান। সোহার খুব ভাল লাগে এরকম ভাবতে। আরিফের মানুষ হয়ে ওঠার আনন্দে সোহা কাঁদতে বসল। বিছানা-বালিশ ভিজিয়ে দেওয়া কান্নায় বাঁধ সাধেনি লরা কিংবা আশফাক। বেশ কিছুদিন ধরে সোহা বলছিল, সর্বাধিনায়ক হতে চায় ও নিজেও। নিজের সন্তানের বাবা এবং মা ও নিজেই হবে। আশফাক তো সাবিনার কথা ফেলতে পারেনি কোনদিন। সিরিয়াসলি সাবিনা ওরফে সোহাকে সর্বাধিনায়ক বানিয়ে তোলার কাজ শুরু করবে বলে ভেবেছিল। লরা সায় দেয়নি। এখন সোহাকে আরিফের জন্য কাঁদতে দেখে লরা বলল, ব্যাপারটা হয়তো ওরকম নয়।
কি রকম?
প্রচলিত পথেই পরিবর্তন চায় এক্স।
আচ্ছা!
ওয়াই যদি অপকর্ম না করত, তা হলে এক্স কত ভালই না থাকত! এক্স এক্স কখনোই এক্স এক্স এক্স হতে চাইত না।
থ্রি এক্স!
হু! থ্রি এক্স।
একা এক্স ওয়াইকে নিয়ে চলেছে, দুইটা এক্সও চলেছে এতকাল। প্রাকৃতিক নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে এই চলা। এখন গায়ের জোরে থ্রি এক্স পথে নামিয়ে দিলে এক্সওয়াই আর এক্সএক্স ভাল নাও থাকতে পারে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে গেলে প্রকৃতির শাস্তি রোধ করবে কি দিয়ে? থ্রি এক্স মানে সর্বনাশ হবে, দেখে নিও।
আশফাক না বলে পারে না, থ্রি এক্স না হয় ঠেকানো গেল। কিন্তু ঐ যে মডিফাইড এক, একজন যদি আসে, তখন?
প্রকৃতির স্বার্থে প্রকৃতিই ঠেকাবে।
কিভাবে?
প্রকৃতির নিজের গড়া এক্সওয়াই অথবা এক্সএক্স দিয়েই ঠেকাবে। দেখে নিও।
লরা ওর বড় হতে থাকা পেটের উপর আদরের হাত রেখে বলে, বাবু সোনা! তুমি কিন্তু দুষ্টুদের আচ্ছা মতো শায়েস্তা করো, কেমন?
আশফাক আর লরা ছোট বাচ্চাদের মতো যা তা বলতে শুরু করে। ওদের দেখলে না হেসে পারবে না কেউ, এ্যাতো আদিখ্যেতা!

ওদিকে সোহার কান্না যখন ভরিয়ে তোলে আশপাশ, তখন বিষণ্ন বাতাসে ফিসফিস করে ওঠে কতগুলো স্বর। নির্মলেন্দু গুণের কবিতার ঢেউ তুলে বলে, কে কবে বলেছে হবে না? হবে, বউ থেকে হবে।/ একদিন আমিও বলেছি: ‘ওসবে হবে না।’/ বাজে কথা। আজ বলি হবে, বউ থেকে হবে।/ বউ থেকে হয় মানুষের পুনর্জন্ম, মাটি, লোহা,/ সোনার কবিতা—কী সে নয়?
‘সবাই মিলবে এসে মৌন-মিহি শিল্পে অতঃপর,/ তোমার প্রদত্ত দানে পূর্ণ হবে পৃথিবী আমার।’

Series Navigation<< ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। আঠারো পর্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *