ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব চৌদ্দ
- সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা// প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস //এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা//পর্ব দুই
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব তিন
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট // নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব চার
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট // নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব পাঁচ
- ধারাবাহিক// উপন্যাস // এক্সপেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব ছয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব সাত
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব আট
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব নয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব দশ
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব একাদশ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব বারো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব তেরো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব চৌদ্দ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব পনেরো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব ষোল
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব সতেরো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। আঠারো পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। শেষ পর্ব
উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা
জোসেফ মেঙ্গেলেদের একজন সোজা সাপটা নির্দেশ শোনাল। বোন ম্যারো থেকে আদিম এগ সেল তৈরির কায়দা জানা আছে আশফাকের। এই কাজটা করতে হবে ওকে, আপাতত।
এগ সেল থেকে স্পার্ম তৈরি করা সম্ভব। আসলে আশফাককে এগ সেল থেকে স্পার্ম তৈরি করতে পারতে হবে। এখানে যারা কাজ করছেন, তাদের প্রত্যেকের জন্য এরকম আলাদা আলাদা এসাইনমেন্ট নির্দিষ্ট ছিল। নিজেরা নিজেদের কাজকে নিজেদের মতো করে নাম দিত। আশফাক বলত, ও নারীকে সর্বক্ষমতার অধিকারী বানাচ্ছে।
নারী সর্বক্ষমতার অধিকারী!
নারী একাই ডিম আর স্পার্ম উৎপাদন করতে পারলে সর্বক্ষমতার অধিকারী তো হবেই, না কি?
আয়নারা তো বটেই, বাকি সবাই ওকে নারীবাদী আখ্যা দিয়েছে। যদিও এই নামটা ঠাট্টা করেই দেওয়া। নারী সর্বক্ষমতার অধিকারী হতে পারবে, তবে সেটা আলাদা করে বললেই নারীবাদী হতে হবে বক্তাকে। যুগে যুগে নারী কি দশ হাতে কাজ করে দেখিয়ে দেয়নি তার ক্ষমতা? নারী কি সর্বংসহা হয়ে এক্স ক্রোমোজোমের প্রবল দাপটকে প্রমাণ করেনি? সবই করেছে, তবে এসব নিয়ে বলতে যাওয়াকে ট্যাবু বানানো হয়েছিল চালাক সামাজিকতার শিক্ষাতে। বরঞ্চ নারী অবলা থাকলেই সুবিধা। বলতে গেলেই সমস্যা। নারী হোক পুরুষ হোক, যেই বলতে গেছে, তার কপালেই জুটেছে নারীবাদের গালি।
আশফাক ভাল করেই জানে, এই অল-ফিমেল কনসেপশন পৃথিবীর ভবিষ্যৎ পাল্টে দিতে পারে এক নিমিষে। নারী একাই যদি ভ্রুন তৈরি করতে পারে, তাহলে পুরুষের কোন ভূমিকাই থাকছে না। ড. বেঞ্জামিন হল তো পুরুষকে ‘স্পার্ম ব্যাংক’ বলেছিল, পুরুষের এই পদায়নও টিকবে না যদি নারী নিজেই স্পার্ম তৈরি করতে পারে।
তখন কি হবে?
নারী আর নারীর বৈবাহিক সম্পর্ক কি সিদ্ধ হবে? দুই নারী দিব্যি তাদের সন্তান উৎপাদন করতে পারবে। একজন দেবে ডিম্ব , আরেকজন স্পার্ম। একজন সন্তানের জেনেটিক বাবা, আরেকজন মা। আচ্ছা, দুই নারীরই তো গর্ভধারণের সুবিধা থাকছে, কেননা তাদের দুজনেরই গর্ভ-ফ্যাসিলিটি আছে। তাহলে কি স্পার্মদাতা নারী চাইলে গর্ভে ভ্রুনকে ধারণ করতে পারবে? কেন পারবে না? দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেবে, কে গর্ভধারণের কষ্ট সহ্য করবে। অথচ দুই পুরুষ চাইলেও গর্ভধারণের সুবিধাটা নিতে পারবে না। এক পুরুষ ডিম আর আরেক পুরুষ স্পার্ম দিলেও গর্ভ কোথায় যে ধারণ করবে? সেই তো নারীর ক্ষমতার কাছে হাত পাততে হবে। তবে করুন কণ্ঠে নয়, পেশির দাপট দেখিয়ে, জোর করে, এতকাল যা হয়ে এসেছে তার আর ব্যত্যয় কি ঘটবে? মনে হয় না।
ড. করিম নারনিয়া স্পার্ম তৈরির এই গবেষণা করছিলেন আর আশফাক ছিল তার সহযোগী। ইঁদুরের ভ্রুনাবস্থিত কোষ থেকে কৃত্রিম স্পার্ম কোষ তৈরি করে মেয়ে ইঁদুরের গর্ভ ঘটিয়েছিল আশফাকদের টিম। সাতটা সুস্থ সবল ইঁদুর বাচ্চার জন্মও তো হয়েছিল। গ্যামেট বায়োলজি নামে বংশবৃদ্ধির নতুন পথ খুলে গেছে এর মধ্য দিয়ে।
স্পেরমাটোগনিয়াল স্টেম সেল হচ্ছে এর প্রথম ধাপ। এই স্টেম সেলের পূর্ণতা প্রাপ্তিতেই সম্ভব ঘটাবে ডিম্ব কোষকে নিষিক্ত করার মতো স্পার্ম তৈরি। আশফাকরা এর আগে পুরুষের বোন ম্যারো থেকে স্পেরমাটোগনিয়াল কোষ সংগ্রহ করেছিল। স্পার্ম তৈরির পর সেই পুরুষের সন্তান জন্মানোর জন্য তার স্ত্রীর ডিম্বানুর সাথে নিষিক্ত করেছিল। আরিফ যে বাবা হতে পারবে, তখনি তো বুঝেছিল ও।
ড. করিম নারনিয়া নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন, যাতে নারীর বোন ম্যারো টিস্যু থেকে কৃত্রিম স্পার্ম কোষ তৈরির জন্য গবেষণা করা সম্ভব হয়। তাত্ত্বিকভাবে এ ঘটনা ঘটানো অসম্ভব তো নয়ই, অনৈতিকও নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বার্থে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনে গবেষণা করতে চাইছেন বিজ্ঞানের অনুমোদিত সীমানাকে মেনে নিয়েই।
জানা কথা, নীতিনির্ধারণী মহল মাথার ঘামে পায়ে ফেলে দিতে প্রচুর সময় নিচ্ছে এবং নেবে। আর জোসেফ মেঙ্গেলেজ গং অনুমোদনের ধার না ধেরে শুরু করে দিচ্ছে নারীর শরীর থেকে স্পার্ম তৈরির কাজ। এই স্পার্ম দিয়ে কিন্তু পুরুষ শিশুর জন্ম সম্ভব হবে না। পুরুষ ভ্রুন তৈরি করতে চাই পুরুষের স্পার্ম। এও কম মজার নয়। বাণিজ্যিক ভাবে চরম লাভজনক। নারী ডিম দেবে, স্পার্ম দেবে, এই ডিম আর স্পার্ম মিলে আরো নারী জন্ম দেবে, এই নারীরাও আবার ডিম দেবে, স্পার্ম দেবে, জন্ম নেবে আরো আরো নারী। ভবিষ্যতে নারী প্রজনন খামার লাভজনক ব্যবসা হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারে, কিছুই অসম্ভব নয়। জোসেফ মেঙ্গেলে-এর মতো বিজনেস মাফিয়াদের আরো অনেকেই হয়তো জড়িয়ে পড়েছে এই দৌড়ে। যে আগে পারবে, সেই করবে। কি করবে, তা নিয়ে ভাবতে গিয়ে আশফাকের শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। নারীর শরীর থেকে জোর করে এগ সেল নেওয়া হচ্ছে, তা থেকে স্পার্ম তৈরি করছে আশফাক নিজেই, আর সেই নারীটা আর কেউ নয়, ওর কেন যেন সোহাকে দেখতে হচ্ছে চোখ বুজলে। আহা, সোহা যেন এই ফাঁদে আটকা না পড়ে।
আহা, সোহা নয়, তবে আর কত কত সোহা যে ফাঁদে পড়ে গেছে, ভেবেই আশফাক আর দম নিতে পারে না। হাশ্ হাশ্ শব্দ হতে থাকে শ্বাসতন্ত্র থেকে।
বেগম রোকেয়া ‘সুলতানার স্বপ্ন’ দেখেছিলেন, যেখানে নারীস্থান আছে, সেই নারীস্থানে কেবলি নারী। পুরুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য নারীর ক্ষমতা-সামর্থ্যকে ইতিবাচক স্বপ্ন হিসেবে দেখেছিলেন যে বেগম রোকেয়া, তিনি আগামী পৃথিবীতে খামার হিসেবে গড়ে ওঠা নারীস্থানের সামান্যতম আভাস পেলে নিশ্চয় জ্ঞান হারাতেন।
আশফাক জ্ঞান হারাল।