ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট // নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব পাঁচ
- সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা// প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস //এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা//পর্ব দুই
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব তিন
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট // নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব চার
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট // নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব পাঁচ
- ধারাবাহিক// উপন্যাস // এক্সপেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব ছয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব সাত
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব আট
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব নয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব দশ
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব একাদশ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব বারো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব তেরো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব চৌদ্দ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব পনেরো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব ষোল
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব সতেরো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। আঠারো পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। শেষ পর্ব
কালকের শোধ আজ কি এড়ানো যায়?
জার্মানী চলে যাওয়ার ব্যস্ততার সময়েই স্মৃতি থেকে আরিফকে ঝেড়ে ফেলেছিল আশফাক। সোহাকে পারেনি। মেয়েটার বিষণ্নতা, মুখের আদলে সাবিনার ছাপ ওকে ভুলতে দেয়নি। ‘ইনফার্টল ম্যান, দ্য প্রব্লেমস এন্ড দ্য প্রবাবিলিটি অফ বোন ম্যারো সেল’ বিষয়ক একটি গবেষণা দলের সদস্য হিসেবে স্কলারশিপ পেয়ে আট মাস পর ও যখন জার্মানী গেল, তখনো সোহা ওর মনের গভীরে বাস করছিল। বার্লিনের ঠান্ডা বাতাস হু হু করে বইলে ও সোহার দীর্ঘশ্বাস টের পেত। এমনিতে চলে আসার সময় সোহা এবং আরিফকে লরার আন্ডারে রেফার করেছিল। এটা অবশ্য ইচ্ছে করেই করেছিল। লরা সোহার বিষণ্নতার চাদর একটু একটু করে যেন খুলে নেয়, অন্ততঃ চেষ্টাটা করে-এই অনুরোধ ও লরাকে করেছিল। লরা চেষ্টা করে যাচ্ছে। ওর মেইলে মাঝে মাঝে খবর পাচ্ছে সোহা ও আরিফের। আরিফের ব্যাপারে আশফাকের কোন আগ্রহ নেই জেনে লরা ইচ্ছে করেই ডিটেইলে যায় না। সোহার বিষয়ে লেখে। ইদানীং সোহা নাকি একাই দেখা করে লরার সাথে। শি নিডস ফ্রেন্ড। আশফাকের অনুরোধে লরা সোহার বন্ধু হয়েছে।
মাস দুয়েক হ’ল সোহা একটা চাকরি পেয়েছে। জামি জুটিয়ে দিয়েছে চাকরিটা। সারা দিন বাসায় বসে থাকতে থাকতে ও মরে যাচ্ছিল। জামির বন্ধুর একাউন্টিং ফার্মে ম্যানেজার হিসেবে জয়েন করল ও। এত সহজে ম্যানেজার হয়ে যাওয়া ওর পক্ষে সম্ভব ছিল না। জামি ফেভার না করলে হ’ত না।
আরিফ জামির এই ফেভার করার বিষয়টা জানে না। জানলে ওর চাকরি করার ব্যাপারে সায় দিত না। তবে আরিফ সায় না দিলেও সোহা থেমে থাকত না। ও ঘরের বাইরে যাওয়ার জন্য প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিল। লরাকে সেদিন বলছিল, কারো বাসায় ছুটা বুয়ার কাজ পেলেও আমি করতাম।
তো কর না। আমার বাসাতেই কর। আই নিড আ ছুটা বুয়া।
করব। সত্যি বলছি।
লরা ওর মরিয়া ভাব দেখে চুপ হয়ে গিয়েছিল। তবে জামিকে যখন একই রকম ভাবে বলেছিল, ‘আমাকে একটা কাজ দাও প্লিজ’, তখন জামি চুপ থাকেনি। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুকে ফোন করে বলেছে, চাকরি দিতে হবে। তাই বলে যেন তেন পোস্টে নয়। ম্যানেজার হয়ে যাওয়াটা এভাবেই ঘটল সোহার কপালে।
জামি হচ্ছে বড় আপার দেবর এবং আরিফের বন্ধু। জামির মাধ্যমেই আরিফের সাথে পরিচয় ঘটেছিল সোহার। আরিফ জামিকেই জানিয়েছিল সোহাকে সে বিয়ে করতে চায়। জামি উদ্যোক্তা হয়ে দুই পরিবারকে সমঝোতায় আনে এবং ওদের বিয়েটা ঘটিয়ে দেয়। সেই অর্থে জামি ওদের বিয়ের ঘটক। খুব সামাজিক ছেলে জামি। ট্রাভেল এজেন্সিতে ব্যবসার সুবাদে প্রচুর লোকের সাথে ওর জানাশোনা। এজন্যই আরিফের সামনে একদিন সোহা বলেছিল, চাকরির ব্যাপারে জামি ভাইকে বলব ভাবছি। সোহা তখন অবশ্য আরিফের চোখে রাগ ঝলকে উঠতে দেখেছিল।
জামিকে কি ঈর্ষা করে আরিফ ? করতেই পারে। সব দিক দিয়ে আরিফের চেয়ে যোগ্য জামি। এমন কি রেহানাকে দুটো সন্তান উপহার দিতে পেরেছে সে। আরিফ দুটো কেন, একটাও পারেনি।
আরিফকে রেগে উঠতে দেখে সোহার মাথায়ও রাগ চেপেছিল। কোন ভাবেই সোহার উপকারে আসতে পারছে না, খবরদারি করার বেলায় ষোল আনা। সোহা রাগটাকে বুঝতে না দিয়ে হাসতে হাসতে বলেছিল, ও কিন্তু আমাকে ভাল একটা চাকরি দিতে পারে।
দিলেই কি নিতে হবে নাকি ?
কেন নেব না ?
ইন্টার্ভ্যু দিয়ে নিজের যোগ্যতায় চাকরি নাও, আমি কিছু বলবো না।
সেটা তো কত দিচ্ছি। পাচ্ছি না তো। নিজের যোগ্যতা থাকলেই কি সব হয় ? বল, হয় ?
সোহার ইঙ্গিত স্পষ্ট বুঝেছে আরিফ। রাগে মুখটা লাল হয়ে যায় ওর। নোংরা হয়ে যায় উচ্চারণ। বলে, তুমি কি একটা খানকি ? দিলেই নেবে ?
নেব।
চাকরি ছাড়া আরো কিছু দিতে চাইলে ?
নেব। নেব না কেন ? আমার কি ইচ্ছে হয় না ?
জামি সোহাকে সন্তান দিতে চাইবে কি ? চাইতেও পারে। সোহার প্রতি আকর্ষণ বোধ করাটা অসম্ভব কিছু নয়। আর সোহাও তো এক পায়ে খাড়া। আরিফকে সামনে রেখে ও চুপিচুপি জামির মাল শরীরে ঢোকালে কে কি বুঝবে ? আরিফ নিজেকে ভেড়া হিসেবে খুঁটিতে বাঁধা দেখতে পেয়েছিল। ব্যা ব্যা করে চিল্লাচ্ছে।
জামি অবশ্য এরকম কথা কোনদিনই বলেনি। রেহানার সাথে ওর যে সম্পর্ক, তার ভেতরে গভীরতা দেখতে পেয়েছিল সোহা। আরিফ জামিকে ঈর্ষা করে, আর সোহা ঈর্ষা করে রেহানাকে। ইন্টারমিডিয়েট পাশ অত্যন্ত সাধারণ চেহারার শ্যামলা মেয়েটা ওর চেয়ে কম যোগ্যতায় ওর চেয়ে অনেক অনেক বেশি কিছু পেয়ে গেছে। ছোট্ট দুটো দস্যি মেয়ে সামলাতে গলদঘর্ম রেহানাকে দেখতে কী অপূর্ব যে লাগে ! একটা মেয়ে সাড়ে চার বছরের, আরেকটার বয়স দেড় বছর। দুটোই পাল্লা দিয়ে মাকে দখল করতে চায়, পরস্পর মারামারি করে, কান্নাকাটি করে, ইস্….রেহানা রেগে ওঠে ঠিকই, কিন্তু ওর সারা শরীরে অপার্থিব সুখ চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ে। সোহা ওদের বাসায় যায় রেহানার সুখ দেখে ঈর্ষাণি¡ত হতে। ওর বাচ্চারাও খুশি হয় সোহাকে দেখে। সোহার কাছে সব বিচার জমা করে দুজন।
জয়িতা বলে, ও আমাকে মালে কেন ? আমি ওর বলো না ?
জয়ন্তী বলে, তা তা তা তা তা। আম দা দু পা তা লা। বুবু, বুবু।
জয়িতা বলে, কত বড় দুস্টু। কি বলছে জান ? বুবু মালে।
সোহা জয়িতার দিকে চোখ পাকিয়ে বলে, মার কেন ছোট বোনকে ?
ও যে মালে !
জয়ন্তী ডাকে, মা মা।
জয়ন্তী ভাষা হারিয়ে ফেললে কেবলি মা ডাকতে থাকে। যেন মা শব্দটা দিয়েই ওর সব কথা ও বোঝাতে পারবে। সোহার কোলের ভেতর ঢুকে ডাকে, ‘মা মা।’ সোহার শরীরটা কাঁপতে থাকে ডাক শুনে।
তখন হয়তো রান্নাঘর থেকে রেহানা ছুটে আসে। বলে, ওদের নিয়ে আর পারি না। ছোটটা তো বোঝেই না। বড়টাও বোঝে না। সারা দিন মারামারি।
রেহানা সোফায় বসতে না বসতেই জয়িতা মায়ের কোলে গিয়ে বসে। তখন জয়ন্তী সোহার কোল খালি করে রেখে ছুটে চলে যায় সত্যিকারের মায়ের কোল দখল করতে। জয়িতাকে টেনে, খামচে তুলতে চায়। না পেরে কাঁদে। জয়িতাও চোখ পাকিয়ে বলতে থাকে, আমি আমার মায়েল প্রথম বাচ্চা। জানিস্ ?
সোহা জয়িতাকে ডাকে দু’হাত বাড়িয়ে। তুমি আমার কাছে এস।
নাহ্ !
সোহা জয়ন্তীকে টেনে নিতে চায়। ছোট্ট শরীরটা বেঁকে যায় কান্নায়। মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে থাকে, যতক্ষণ না রেহানা ওকে কোলে তুলে না নেয়। জয়ন্তী কোলে উঠলে জয়িতা গ্যাঞ্জাম শুরু করে। তখন অগত্যা রেহানা দুজনকে দুই কোলে নিয়ে নেয়। সোহা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে সুখী রেহানাকে।
জামিকে প্রশ্ন করেছিল, তোমার বউ তোমার দিকে তাকানোর টাইম পায় ?
পায় না। তাকাতে চায়ও না মনে হয়।
জামি হাসতে থাকে হা হা করে। সোহা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে জামির সুখকে। জামি বাসায় এলে জয়ন্তী আর জয়িতা রেহানাকে রেহাই দেয়। জামির শরীরের উষ্ণতা দখলের জন্য লড়াই শুরু করে। জামি তখন ভুলে যায় অন্যদের উপস্থিতি। দুটো ছোট্ট শরীর নিয়ে লুফালুফি করতে করতে জামি কিরকম আবোল তাবোল বলতে থাকে, এই যে মা, গুদুগুদু মা, পাখি সোনা, ছোট পাখি, বড় পাখি, এই যে ….!
সোহা বোকা বোকা হাসি নিয়ে দেখতে থাকে জামির শিশু হয়ে যাওয়ার খেলাটা। জামির জায়গায় আরিফকে কল্পনা করতে ওর খুব ভাল লাগে। একটা সময় টের পায়, ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। ভাল লাগাটা কষ্টে পরিণত হয়ে ওকে চেপে ধরতে চাইছে। দম নেওয়ার জন্য ও তখন সরিয়ে দেয় সব কল্পনা, সব ইচ্ছা, আকাঙ্খা। শুধুমাত্র সোহা হয়ে ওঠে আবার।
চাকরি কেমন লাগছে ? জামি জানতে চেয়েছিল।
বাসা থেকে বেরুতে পেরে আমি বেঁচে গেছি। একা একা দম বন্ধ হয়ে আসত।
তোমরা আলাদা থাক কেন ? মোহাম্মদপুরে আরিফদের এত বড় বাড়ি। সবার সাথে থাকলে একা একা লাগবে না।
না না। শিউরে ওঠে সোহা। ওখানে থাকব না। সন্তান নেই দেখে যেসব কথাবার্তা হয়, তা আরিফের পক্ষেই সহ্য করা সম্ভব হয়নি। ও-ই তো বেরিয়ে এল ও বাড়ি ছেড়ে। আমরা আমাদের মত থাকতে চাই।
শ্বাশুড়িটা দজ্জাল?
শ্বশুরটা ডেঞ্জারাস। এখনো তিনি তাঁর বৃদ্ধা স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন।
বাপের ব্যাটা। জামি ঠাট্টা করে।
রেহানা পাল্টা ঠাট্টা করে বলে, সব পুরুষই আসলে বউ পেটাতে গর্ব বোধ করে।
আমিও করি। জামি গম্ভীর মুখে বলে।
তুমি কি রেহানাকে মার ? সোহার চোখে অবিশ্বাস আর বিস¥য় দেখে হেসে দেয় জামি। বলে, এখনো সময় করে উঠতে পারিনি। তবে একদিন…হুম্ম্… তোমাকে ফ্যানের সাথে বেঁধে পেটানোর খুব শখ আমার।
রেহানা বলে, ঘরে মেয়ে আছে মনে রেখ। পরের মেয়ের সাথে অন্যায় করলে নিজের মেয়ে কিন্তু ভাল থাকবে না।
দূর ! আমার মেয়েদের আমি বিয়ে দেব নাকি ? মা, আমার বড় পাখিটা, তুমি কি বিয়ে করবে মা ?
নাহ্ !
জামি এবার জয়ন্তীকে প্রশ্নটা করে, তুমি কি বিয়ে করবে ?
জয়ন্তী ছোট্ট মাথাটা উপর নিচ করে বোঝায়, সে বিয়ে করতে রাজি আছে।
সবাই হেসে দেয় হা হা করে। খুব মজার কান্ড করে ফেলেছে মনে করে জয়ন্তী হাততালি দিতে থাকে ছোট্ট হাত দুটো দিয়ে। মুখে বলে, ‘হাতালি হাতালি।’
সোহা ভাবে, রেহানা কি মেয়েদের কথা বলে জামির নিষ্ঠুর হওয়াটা ঠেকাচ্ছে ? মেয়ে না হয়ে ওদের যদি ছেলে হ’ত, তাহলে কি রেহানা এই যুক্তি দিতে পারত ? আর ঐ সাড়ে চার বছরের জয়িতা কেমন সিরিয়াসলি বলল, ও বিয়ে করবে না। কেন ? জয়িতা কি বিয়েকে ভয় পেতে শিখে গেছে ?
সোহা প্রশ্ন করেছিল জয়িতাকে, কেন বিয়ে করবে না মা ?
কলব না।
কেন ?
না না না।
করলে কি হয় ?
চলে যেতে হয়।
কোথায় ?
শ্বশুলবাড়ি।
ঠিকই তো। জয়িতা ওর ছোট্ট জগত থেকে এইটুকু শিখে গেছে, বিয়ে মা বাবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। ওর মাকে দেখেই ও শিখেছে।
সোহার কলিগ হাসনা আপার এক ছেলে একে মেয়ে। হাসনা আপা সেদিন এক বিয়েবাড়িতে যাওয়ার গল্প করছিলেন। স্টেজে বর-বউকে দেখে তার সাত বছরের ছেলে নাকি আবদার করছিল, এক্ষুণি বিয়ে করবে। হাসনা আপার মেয়েটা ? নয় বছরের মেয়েটা নিচু গলায় ধমকাচ্ছিল ভাইকে, ছি ! বিয়ের কথা বলতে নেই। লোকে খারাপ বলবে।
ছেলে বিয়ে করতে চায়, এ কথা বলে হাসিতে ভেঙ্গে পড়ছিলেন হাসনা আপা। সোহা তখন ঠাট্টা করে প্রশ্ন করেছিল, আপনার মেয়েটা ভাগ্যিস বিয়ে করতে চায়নি। তাহলে তো বিপদে পড়ে যেতেন।
হাসনা আপা গম্ভীর হয়ে জবাব দিলেন, মেয়েকে বেহায়া করে বড় করছি না। আমার মেয়ে এখনি পায়জামা পরে। অপরিচিত কারোর সামনে যেতে চায় না। মাস্টার রেখেছি, তার সামনে যেতেও মেয়ের আমার কী লজ্জা !
সোহা হাসনা আপার মেয়েটার মেয়ে হয়ে ওঠার কথা ভাবে, ছেলেটার ছেলে হয়ে ওঠার কথা ভাবে আর ওর দীর্ঘশ্বাস বের হয় বুক ফেটে। ভাবে, আমার যদি একটা মেয়ে হ’ত ! আমার যদি একটা ছেলে হ’ত! আমি ওকে মানুষ-ই থাকতে দিতাম। কিছুতেই ওকে পুতুল হতে দিতাম না।
প্রতিবার পিরিয়ডের সময় সোহা বেশি বেশি দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে থাকে। জরায়ুর গায়ে আশ্রয় নিতে চাওয়া একটি ডিম নিষিক্ত হতে না পারার অভিমানে ভেসে চলে যাচ্ছে। এই যে রক্তস্রোত, তা আসলে ভ্রুণ তৈরি করত, ভ্রুণের শরীর তৈরি করত, একটু একটু করে বড় হতে হতে সোহার সন্তানে পরিণত হ’ত। অভিমানে ভার হয়ে ওঠে ওর তলপেট। স্বাভাবিক ব্যথার চেয়েও বেশি ব্যথার অনুভূতি ওর মগজে ঠাঁই নেয়। আরিফের জন্য, স্বামীর জন্য, বিয়ে নামক সামাজিক প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার জন্য ও এই রক্তস্রোতের সাথে ভাসিয়ে দিচ্ছে নিজের মা হওয়ার ইচ্ছাটাকে। এর কোন মানে হয় ? আরিফের সাথে বিয়ে না হয়ে যদি জামির সাথে বিয়ে হ’ত, তাহলে তো এরকম হ’ত না।
প্রতি বার শারীরিক মিলনের সময় আরিফের বীর্য ওকে ভিজিয়ে দিলে শরীরটা কেমন অস্বস্তিতে কুঁকড়ে যায় সোহার। শরীরের উপর এই অর্থহীন বীর্যপাত ওর আর সহ্য করতে ইচ্ছে হয় না। সেক্সের প্রতি ওর কোন আগ্রহ নেই। কী লাভ ! রাগ করে বলেছিল, কন্ডোম ইউজ কর।
দূর ! ফিলিংস আসে না।
অত ফিলিংস আসতে হবে না।
তাছাড়া, ডাক্তারই তো বারণ করেছে। ইন এনি চা›স, বাচ্চা তো হতে পারে।
ঘোড়াড্ডিম হবে। কচু হবে। ছাই হবে। ফুঁসতে ফুঁসতে বলে সোহা।
একদম উড়িয়ে দিচ্ছ যে !
তো কি করব ? মাথায় করে রাখব ? বাচ্চা দেওয়ার ক্ষমতা নেই আবার বড় বড় কথা।
রাগে ফুঁসে উঠেছিল আরিফও। রাগের মাথায় বলে ফেলেছিল দোলার কথা। এতে ফল হ’ল ভয়াবহ। সোহা এখন সব সময়ই আরিফের উপর ক্ষেপে থাকে। দশটা কথা বললে একটার জবাব দেয়, তা-ও বাঁকা ভাবে। গত পাঁচ মাস ওরা এক সাথে ঘুমায়নি, কেউ কাউকে ছুঁয়েও দেখেনি। গত কিছু দিন ধরে অফিসে যাওয়ার সময়ও কেউ কাউকে বিদায় দেয় না। যে আগে বেরিয়ে যায়, সে দরজাটা টান দিয়ে যায়। মুখে কিছু বলা হয় না।
দোলার কষ্টকর মুহূর্তগুলো প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এভাবে এতদিন পর ওদেরকে জড়িয়ে ধরল, ভাবা যায় !