সায়েন্স ফিকশন

ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট // নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব চার

আগামীতে কি হবে?
বাড়ি বলতে একখানা বেড কাম ড্রইং কাম ডাইনিং। পাশেই টয়লেট, ছোট্ট এক চিলতে কিচেন, সাথে লাগোয়া দেড়ফুটি চওড়া বারান্দা। ব্য¯ত ডাক্তার আশফাকের টাকা আছে হাইফাই ফ্ল্যাটে থাকার। ও থাকে না। একা মানুষ, মাঝ রাত্রে কেবল একটু ঘুমাতে আসে। মাসে দুই মাসে ঐ কিচেনটাতে পা-ও পড়ে না। কী দরকার বড় বাসার ? ভাল বাসার ? ভালবাসা ! আশফাক নিজের সাথে নিজে কথা বলে। ভালবাসা কি চড়ুই পাখি ? ফুড়ুৎ আসে, ফুড়ুৎ উধাও। কখন আসে কেউ জানে না। কখন যাবে কেউ জানে না।
ড. বেঞ্জামিন হল আলাপের মুহূর্তে একটা ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিলেন। আশফাক অগোছালো মানুষ, লোকটাকে ভাল লেগেছিল বলে ঠিক করে তুলে রেখেছিল কার্ডটা। বের করে এনে দেখে ইমেইল নাম্বারটা। এরপর বসে পড়ে কম্পিউটারের সামনে।
হাই হ্যালো শেষ করে আসল প্রশ্নটা করে, নারী কি তবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে যাচ্ছে ?
এত তাড়াতাড়ি জবাব পেয়ে যাবে, ও ভাবতেও পারেনি। পর দিন চেম্বারে বসেই মেইলে ঢোকে। ড. বেঞ্জামিনের মেইল এসেছে দেখে আর দেরি করে না। সামনে বসে থাকা পেশেন্ট দম্পতিকে ‘জাস্ট আ মিনিট’ বলে পড়তে লেগে যায়। ড. বেঞ্জামিন লিখেছেন, ইট ইজ ভেরি ইন্টারেস্টিং দ্যাট দেয়ার ওয়্যার এনি স্টরিজ এট অল। পরীক্ষার ফলাফল হিসেবে ডিম এবং স্পার্ম তৈরি করা গেছে, একে বলা যায় কৃত্রিম গ্যামেট। সফল হলে বলা যেত, নারীরা স্পার্ম তৈরি করতে পারবে। ভাল করে বলি, এক্স ক্রমোজোম সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। ডিম্বাশয়ের স্টেম সেল এবং অন্যান্য সেল থেকে এটি করার চেষ্টা চলছিল। ফলাফল এখনো সাফল্যব্যঞ্জক নয়। হলে নারীরা খুশি হবে, বলাই বাহুল্য। নারী, আই মিন এক্সএক্স আর তখন সেক্স-অবজেক্ট থাকবে না। মানবজাতির বংশধারার দৌড় সম্ভবতঃ নতুন এক মোড় নিচ্ছে। এত তাড়াতাড়ি ভয় পেয়ে যেও না। যখন ক্লোন ভেড়া ডলির জন্ম হ’ল, তখনো রব উঠেছিল, পুরুষের দিন শেষ। আমরা পুরুষরা তখনো ধৌত হয়েছি। তাতে কি? আছি তো। এনি ওয়ে, তুমি কেমন আছ ?
লরার সাথে কথা বলা দরকার। চেম্বারে ঠান্ডা মাথায় সেটা সম্ভব নয়। অগত্যা ড. বেঞ্জামিনের মেইলের প্রিন্ট আউট নিয়ে লরার বাসায় গিয়েছিল ও। দুপুরের এই সময়টায় লরা বাসায় ফেরে। গোসল-টোসল সেরে আবার বের হয়। ওকে বসতে বলে গোসল করতে গেল লরা। যাওয়ার সময় বিজ্ঞানী গ্রেগরি স্টকের লেখা বই ‘রিডিজাইনিং হিউম্যান’ ধরিয়ে দিল আশফাকের হাতে। এই বইয়ে অনেকগুলো গবেষণার ‘গল্প’ আছে। একটি যেমন, দুই নারী সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারে। একজন স্পার্ম উৎপন্ন করবে, অন্যজন অসাইট (ড়ড়পুঃব) বা ডিম। এক্সএক্স আর এক্সএক্স একাই একশ’ হবে?
গোসল সেরে আসা দারুন ফ্রেশ লরাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিল আশফাক। ওর মুগ্ধতা টের পেলেও পাত্তা দিল না লরা। প্রশ্ন করছিল, তাহলে কি স্পার্ম উৎপন্নকারী নারী হবে সন্তানের পিতা ?
গ্রামার তো তা-ই বলে।
এই দুই নারী কি বিয়ে করে সšতান জন্ম দেবে ?
বিয়ের দরকার আছে কি ?
বিয়ের দরকারটা কেন ?
এখনো পর্যšত সন্তানের জন্মপরিচয় চিহ্নিত করার জন্য। স্বাভাবিক নিয়মে পুরুষ নারীকে গর্ভবতী করে পালিয়ে যেতে পারে। নারী যতখানি না ঝামেলায় পড়বে, তার চেয়ে বেশি পড়বে সšতান। সামাজিক সিস্টেম বাবা চায়। মা যতখানি না, তার চেয়েও বেশি বাবাকে চায়। কারণ তো বুঝতেই পারছিস্, নারী ভাগলভা হতে পারে না, পুরুষ পারে। রাহুল সংস্কৃতায়্যনের ভলগা থেকে গঙ্গা বইটা পড়েছিস্? নারী আর পুরুষের বিয়ের সিস্টেম তখনো আসেনি। নারী ছিল গোত্র প্রধান। যখন যার যাকে ভাল লাগত, তার সাথে মিলিত হ’ত। ভাই স্বামী বা পুত্র স্বামীর ঔরসে জন্ম হ’ত নারীর সন্তানের। সে কালে কেবল মা ছিল, বাবা নয়। যখন নারী কৃষির কায়দা শিখে ফেলল, শিখিয়ে দিল পুরুষকে। নারীর জন্য সবচেয়ে বড় ভুল হ’ল ওটাই। পুরুষ দ্রুত শস্যকে সম্পদ হিসেবে বুঝতে শিখল, তখন যাযাবর জীবন ত্যাগ করে এক জায়গায় থিতু হতে চাইল, গড়ে তুলল পরিবার। নারী আর পুরুষের ভূমিকা কি হবে, এটা ঠিক করে নিল। নারী ঘর-সংসার সামলাবে, সন্তান পালন করবে। পুরুষ করবে ঘরের বাইরের কাজ। নারী হয়ে গেল সামাজিক হিসাব-নিকাশের বাইরের মানুষ, কালক্রমে নারীর গায়ে লেগে গেল তকমাটা- নারী বাইরের জগতের কিছু বোঝে না। পুরুষ বোঝে। পুরুষের হাতে অর্থনৈতিক শক্তি, সম্পদের মালিকানা। পুরুষের সম্পদের ইনভেন্টরিভুক্ত হয়ে গেল নারীও। সম্পদ বংশানুক্রমে টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে পুরুষের দরকার সন্তান, সন্তানের দরকার বাপের ঠিকুজি। তাই বলে পুরুষ কি সাধু সন্ত হয়ে গেল? মোটেও না। সম্পদের রেজিস্টার বহির্ভুত ফুর্তির শখ বা আদিম জীবনের যখন যাকে মনে ধরে তার সাথে মিলিত হওয়ার আদিম ইচ্ছের কারণে গড়ে উঠল বেশ্যাখানা। যে নারী এক কালে ক্ষমতার কেন্দ্রে বাস করত, পুরুষকে কৃষি কাজ শিখিয়ে দিয়ে সেই নারী হয়ে গেল পুরুষের ভোগ্যা। আদিম সমাজে যথাচার বেআইনি না হলেও সমাজে গৃহস্থ নারী-পুরুষের সংজ্ঞাটা ফিক্সড হয়ে যাওয়ায় গৃহস্থ পুরুষের বারনারী গমনকে পাপ বা বেআইনী কর্ম বলে গণ্য করা হ’ল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোন কালেই এই কর্মটি বন্ধ হ’ল না। পাপের দায়ভার নারীর কাঁধে দিয়ে যে পুরুষ নারীকে বেশ্যা আর নষ্ট নারী বলে গাল দিয়েছে, সেই পুরুষ বেশ্যা বা নষ্ট নারীর শয্যা অপবিত্র করে নিষিদ্ধ আনন্দে মেতে উঠেছে। নিজের মনে বা শরীরে বিন্দুমাত্র দায় না নিলেও কোন দায় নেই পুরুষের। সব দায়, সব কলংক নারীর। বুঝেছিস্?
আশফাকের দীর্ঘ বর্ক্তৃতা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে লরা। বলে, দিন পাল্টে যাচ্ছে। পুরুষ না চাইলেও প্রকৃতি নারীর স্থান পুনরুদ্ধারে উঠে পড়ে লেগেছে বলে মনে হচ্ছে।
লরা উত্তেজনা নিয়ে বলে, নারী পুরুষের মত সেক্সের মাধ্যমে স্পার্ম দিতে পারবে না। ল্যাবরেটরিতে যেতে হবে। নারী এবং নারীর বিয়ে হচ্ছে। এদের যে কেউ সন্তান জন্ম দিতে পারছে। নারীর গর্ভ থাকার সুবিধাটা পুরুষকে দেয়নি প্রকৃতি। ফলে পুরুষ আর পুরুষের বিয়ে হলেও এদের কেউ সন্তান গর্ভে নিতে পারবে না। গর্ভ খুঁজতে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াচ্ছে? সন্তান জন্মদান যদি বিয়ের উদ্দেশ্য হয়, তবে নারী আর নারীর বিয়ে কিন্তু সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। পুরুষ আর পুরুষের বিয়ে নামক এগ্রিমেন্ট অবৈধ। ভেবে দ্যাখ্ এ্যাশ, সন্তান জন্মদানের উদ্দেশ্যে যে এগ্রিমেন্ট হবে দুই নারীতে, তাকে যদি বিয়ে বলিস্, তবে ল্যাবরেটরিই হবে কাজী অফিস।
বুঝলাম। কিন্তু, নারী-পুরুষের বিয়ে হবে না, ভাবা যায় ?
হবে না কেন ?
কী দরকার ?
আইন জারী করা যায়, পুরুষের সাথে সেক্স করিতে চাহিলে বিবাহ করিতে হইবে। বিবাহ ছাড়া সেক্স গুরুতর দন্ডনীয় অপরাধ।
হাসে লরা। বলে, এতকাল পুরুষ সেক্স করতে চাইলে নারী বলত, তুমি আমাকে বিয়ে করবে কথা দাও। এখন উল্টোটা হবে মনে হচ্ছে। পুরুষ বলবে, প্লি­ইজ নারী, তুমি আমাকে বিবাহ কর।
আশফাক লরাকে কাছে টেনে ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, নারী, তুমি আমাকে বিবাহ কর।
তারপর ?
তারপর আর কি ? আমরা সুখেশান্তিতে ঘর করতে থাকব।
তারপর ?
আমাদের ছেলেমেয়ে হবে।
তারপর ?
তাদেরও ছেলেমেয়ে হবে।
তারপর ?
দ্য স্টরি কনটিনিউজ।
লরা বলে, নারী পুরষের কাছ থেকে স্পার্ম নিলে তার কোন চয়েজ থাকে না। স্পার্মটা সুস্থ-সবল কি না, বংশগত কোন রোগ বহন করছে কি না, ছেলে হবে না মেয়ে হবে, কিছুই কিন্তু বুঝতে পারে না। অথচ সেটাকে বড় করে তোলার দশ মাস দশ দিনের অমানুষিক কষ্ট নারীকেই সইতে হয়। এরপর সমস্যাযুক্ত সšতান জন্মদানের অপরাধটা নারীর কাঁধে এসে পড়ে। সন্তানটাও তার জীবনটাকে বহন করতে বাধ্য হয়। অথচ দুজনই নির্দোষ।
বুঝতে পারছি, তুই কি বলতে চাইছিস্।
লরা হাসে।
আগে তুই আমাকে বিয়ে র্ক।
তারপর ?
এরপর তুই আর আমি….
লরা আশফাকের গালে চাপড় বসিয়ে দেয়। ওর গাল দুটো লাল হয়ে গেছে দেখে হার্ট বিট মিস্ করে আশফাক। ইস্, কী চমৎকার অনুভূতি ! লরা আশফাকের দিকে তাকাতে পারে না। ঘাড় ফিরিয়ে কি যেন কি দেখছে খুব মনোযোগ দিয়ে।
প্রায় ফিসফিস করেই বলে আশফাক, প্রমিজ। নো চাইল্ড বাই নেচারাল সেক্স। দ্যাটস্ ফর অনলি আওয়ার এনজয়মেন্ট।
লরা খামচি মেরে আশফাকের চুল ধরে। ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে আশফাক। লরা ছেড়ে দিলে নিজের মাথায় হাত বোলায়। তারপর আবার লরার দিকে তাকিয়ে বলে, প্রমিজ।
লরা সোফার কুশনের দিকে হাত বাড়ায়। ছুঁড়ে মারবে। আশফাক ঠেকানোর ভঙ্গিতে হাত দুটো সামনে এনে বলে, যখন আমরা বাবা-মা হতে চাইব, তখন…
চোখ কুঁচকে তাকায় লরা। তখন ?
‘আমার স্পার্ম টেস্ট করে নেব। নো হাজিপাজি কেউ, মোস্ট পারফেক্ট ওয়ান মাস্ট বি ইন দ্য….আশফাক সামনে থাকা হাত দুটোকে লরার তলপেটে রেখে অন্য রকম গলায় বলে, ইন দ্য মোস্ট পারফেক্ট ওয়ে।
লরার তলপেট অবশ হয়ে গেছে। ও ভেতরে ভেতরে নতজানু হতে গিয়ে সামলে নেয় নিজেকে। বলে, একসিডেন্ট হয়ে গেলে কি করবি ?
একসিডেন্ট….একসিডেন্ট…. ! আশফাকের মাথা কাজ করে না। তখন লরা ওকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে, তখন তুই আর কি করবি ? একসিডেন্টলি ইন এনি চান্স রোগা-পটকা-ডিজাবল বাচ্চা যদি এসে যায়, তখন ?
তুই আর আমি তো আমাদের বাবা-মায়ের ইন এনি চান্সেরই ফসল, না কি ?
এ যুগে ওরকম চান্স আমি কেন নেব ? তুই ফোট্, এ্যাশ, ফোট্।
প্রযুক্তি আমাদের সম্পর্কগুলো এলেমেলো করে দিল। কিছুই কি আর হবে না আগের মত ? লরার কঠিন মুখটার দিকে তাকিয়ে আশফাকের কেবলি এই কথাটি মনে হতে থাকে। এ কি প্রযুক্তির অভিশাপ ? ওর আরেকটা কথা মনে হয়, পুরুষের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য মেয়েরা যেন উন্মুখ হয়ে আছে। বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ কি এভাবে সত্য হবে ? কালে পুরুষ কি সত্যিই অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে ? ন্যুয়র্ক টাইমস-এর কলাম লেখক মরিন ডোউড ‘আর মেন নেসেসারি ?’ শিরোনাম দিয়ে একখান বই-ই লিখে ফেলেছেন। আশফাক বইটা এখনো পড়েনি। পড়তে হবে। পারলে বইটার বঙ্গানুবাদও করতে হবে। বাংলা ভাষাভাষী পুরুষেরা জানুক, কী দুর্দিন ঘনিয়ে আসছে ! পুরুষের বীর্য বিনা বসুন্ধরা সম্ভব হতে যাচ্ছে। হায় হায় !
পরের মেইলে ড. বেঞ্জামিন হলকে লেখে আশফাক, বীর্য-ই পুরুষের পৌরুষ। পুরুষের শক্তি। পুরুষের বীর্যের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে পুরুষের প্রয়োজনটা কি থাকে ?
ফিরতি মেইলে ড. বেঞ্জামিন স্বীকার করলেন, এই পয়েন্টে পুরুষ আসলেই আননেসেসারি হয়ে যায়। এরপরও কথা থাকে। মানবসভ্যতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য নারী বাধ্য হবে সব পুরুষকে বাদ না দিতে। ‘উইম্যান নিড সাম অব আস।’ একজন সক্ষম পুরুষই তো পারে অসংখ্য স্পার্ম তৈরি করতে। কাজে কাজেই অসংখ্য নারীর সন্তানাকাঙ্খা পূরণের জন্য একজন পুরুষই কি যথেষ্ট নয় ?
পুরুষের ভাগ্য কি তবে শুধুই স্পার্ম-ব্যাঙ্ক হওয়া ? আশফাক ভয়ে ভয়ে প্রশ্নটা করে। মনে মনে চাইছিল, ড. বেঞ্জামিন জানাবেন, নো নো নো। ম্যান ইজ নট আ বুল। স্পার্ম-ব্যাঙ্কিং বহু কাল ধরে ধরে ডেইরি শিল্পে গোপ্রজননে ব্যবহৃত হচ্ছে। পুরুষ তো মানুষ, বলদ নয়। কভি নেহি, এভাবে ব্যবহৃত হতে পুরুষ রাজী নয়। আশফাক চাইছিল, ড. বেঞ্জামিন ওর মতো করেই বলুক, কভি নেহি। উনি বললেন, তবে একটু অন্য ভাবে। যেসব দম্পতি বাচ্চা চায়, স্বাভাবিক ভাবে স্বামীর স্পার্ম কাজ করছে না, এরা এই পদ্ধতিতে উপকৃত হতে পারে। বোন ম্যারো থেকে স্পার্ম উৎপন্ন তো পুরুষও করতে পারে। পুরুষের কি বোন ম্যারো নেই ?
নারীর বোন ম্যারো নেই ? লরা প্রশ্ন করেছিল। নারী কেন নিজের থাকতে অন্যের কাছে হাত পাতবে ? যা এ্যাশ, ফোট্। তুই একা না, তোরা পুরুষরা সবাই ফোট্। হু নিডস ম্যান ?
ড. বেঞ্জামিনের মাধ্যমেই আশফাক সুযোগ পেয়ে যায় দারুন এক টিমের সাথে দারুন এক বিষয় নিয়ে গবেষণা করার। জার্মানীর গোটিনগেন য়্যুনিভার্সিটির গবেষকদের একটি টিম ড. করিম নারনিয়ার নেতৃত্বে বোন ম্যারো সেল নিয়ে গবেষণা করছিলেন। নিউক্যাসল য়্যুনিভার্সিটি এবং বৃটেনের দ্য নর্থ-ইস্ট ইংল্যান্ড স্টেম সেল ইনস্টিটিউটে কর্মরত ড. করিম নায়েরনিয়া জার্মানীর গোটিনগেন য়্যুনিভার্সিটির গবেষক দলেরও প্রধান। আশফাক এই টিমের সদস্য হয়ে যায়। জার্মানী চলে যাওয়ার আগে রোমান্টিক ভঙ্গিতে লরাকে বলে, তুই প্রেম দিলি না বলে আমি দেবদাস হতে চললুম।
লরা মুচকি হাসে। বলে, আমি কি পার্বতী ?
না, তুই চন্দ্রমুখীও। ফিরে আসি, তোর আসর আমি একাই মাতাব। তুই আমাকে নাচ দেখাবি, গান শোনাবি।
পেশেন্টরা লরাকে চেনে রাগী আর গম্ভীর হিসেবে। একমাত্র এ্যাশ-ই পারে ওকে নিয়ে এভাবে কথা বলতে। ওর উপর রাগ করে কোন লাভ নেই। এ্যাশের মনটা তো ও চেনে। লরা ওখানে নিজের ছায়াটা দেখতে পাচ্ছে বলে ভাবলেও বিভ্রান্তি ভেবে ঝেড়ে ফেলে ছায়ার ঐ অস্তিত্বটুকু। একবার মরে যেতে চেয়েছিল, সে-ই যথেষ্ট। এই বয়সে আর কোন বিভ্রান্তির প্রয়োজন নেই ওর।

Series Navigation<< ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব তিনধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট // নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব পাঁচ >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *