কিশোর উপন্যাস

কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। ষষ্ঠ পর্ব

ষষ্ঠ পর্ব

ষষ্ঠ পর্ব

            বন্ধুদের নিয়ে বিকেলে কঙ্কাল বাড়িতে গেল অয়ন। পুরো পথে কথার খই ভাজল নিলয়। ওর সামনে কেউ কথা বলতে পারে না। অয়ন একটা কথায়ও সাড়া দেয়নি। নিজের মতো হাঁটছে। কিছু একটা ভাবছে। বাড়ির কাছাকাছি এসে ঘুরে দাঁড়াল। হাত জাগিয়ে থামাল। নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, এভাবে গেলে হবে না। প্ল্যান করে যেতে হবে। ওত পেতে থাকতে পারে ওরা। ফাঁদে পড়ে যাব। ধরে মুখ বেঁধে পলিব্যাগ ভরে নিয়ে যাবে। বন্ধ হয়ে যাবে তোর কথা। কথা না বলে থাকতে পারবি ? কথা দূরে থাক, শ্বাসও টানতে পারবি না।
          চটে উঠল না নিলয়। চেঁচিয়ে বলল না, রাখ তোর প্ল্যান। যাব, ওদের পেলে গরুর মতো বেঁধে নিয়ে আসব। হঠাৎ ভয় হানা দিল নিলয়ের মনে। কেমন চুপসে গেছে। পাল্টে গেছে মুখের রং। বল, কী প্ল্যান করতে চাচ্ছিস? 
           কিছুক্ষণ ভাবল অয়ন। তারপর ডান হাত দিয়ে মাথায় একটা ধাক্কা মারল। বলল, প্ল্যানটা এসেছে। শোন, তিনটা গ্রæপ করব আমরা। এক গ্রুপে থাকবে সামি। বাড়ির ভেতর যাবে না ও। খানিক দূরে বসে থাকবে আড়ালে। কেউ যেন দেখতে না পায়। 
              সামি বলল, কেন বাড়ির ভেতর যাব না? তোর মতো ভয়ে কাঁপি নাকি? আমি যাব।
              চোখ রাঙিয়ে অয়ন বলল, এক লাইন বেশি বুঝিস না। কথাটা শেষ করতে দে। তুই আড়ালে বসে থাকবি। এতটা দূরত্বে আমাদের চিৎকার যেন তোর কান পর্যন্ত পৌঁছায়। 
              আবির বলল, চিৎকার করব কেন?
               সেটা আরও পরের কথা। এখন ভাবিস না। সামি আড়ালে বসে থাকল। আমি, নিলয়, আর আবির থাকব একটা গ্রæপে। বাকি থাকল সাদ আর রিয়াদ। ওরা দুজন একটা গ্রুপ। প্রথমে বাড়ির ভেতর যাবে সাদ আর রিয়াদ। আমরা থাকব ওদের পেছনে। ওরা দেখবে বাড়ির ভেতর কেউ আছে কিনা। ওই লোকগুলো থাকলেও ওদের চিনবে না। বলবে ঘুরতে এসেছি। আমাদের দেখলে আটকে ফেলবে। কারণ, ওরা আমাদের চেনে। ওরা না থাকলে সাদ আর রিয়াদ শিস দেবে। তখন আমরা যাব। আমরা বিপদে পড়লে চিৎকার করব। আমাদের চিৎকার শুনলে সামি ফোন করবে রেজা স্যারকে। বাড়িতেও ফোন করে খবর জানাতে পারবে। সবাইকে নিয়ে এখানে আসবে। কৌশলে সময় নষ্ট করার চেষ্টা করব আমরা। যাতে ওরা ধরে ফেললেও অন্য কোথাও নিয়ে যেতে না পারে। 
        নিলয় বলল, ভালো প্ল্যান। এখন চল। সন্ধ্যা নেমে পড়বে। 
        থাম, আর একটা কথা। রাস্তা দিয়ে যাব না আমরা। 
        তাহলে কোথা দিয়ে যাবি?
        নদীর পাড় দিয়ে চা বাগানের ভেতরে যাব। তারপর পাহাড় পেরিয়ে ওই বাড়ির পেছনে। 
        তাতে দেরি হয়ে যাবে। বলল আবির। 
        হোক। এই পথ নিরাপদ। রাস্তা দিয়ে গেলে পালানোর জায়গা থাকবে না। আমাদের শক্তি কম। তাই কৌশল করতে হবে। 
         ঠিক আছে। এখন চল। বলল সামি।
         বন্ধুদের নিয়ে পথ পাল্টিয়ে অয়ন হাঁটল নাদীর পাড় দিয়ে। ঢুকল চা বাগানে। মাথা নুইয়ে চুপি চুপি অনেক দূর গেল। এরপর মাথা তুলল। দেখল কেউ নেই বাগানে। দূরে কয়েকখানা ছোট ঘর। শ্রমিকরা থাকে। সেদিকে তাকিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করল। প্রায় চলে এসেছে কঙ্কাল বাড়ির কাছে। নিরাপদ একটা জায়গা দেখে সামিকে বসাল। তুই এখানে শুয়ে থাকবি। তোর গায়ের ওপরে লতাপাতা দিয়ে রাখব। কেউ বুঝবে না মানুষ আছে। তারপরও সাবধান। একটুও নড়বি না। আমাদের রাডার তুই। তোকে ধরে ফেললে আমরা হেরে যাব। কারো সাথে মোবাইল নেই। মনে রাখিস, একটাই মোবাইল সেটা তোর কাছে। 
             আচ্ছা অত চিন্তা করিস না। আমাকে ধরা সহজ না। বোকা ভাবছিস নাকি। বেশি ঝামেলা দেখলে দৌড়ে নদীর পাড়ে চলে যাব। লাফিয়ে নদীতে পড়ব। ভয় নেই, সাঁতার জানি। 
            অয়ন বলল, না, তা করতে হবে না। চুপচাপ এখানে ঝোপের আড়ালে বসে থাক।  চোখ কান সজাগ রাখবি। অন্যদিকে মন দিস না। 
            আবির বলল, ঘুমিয়ে পড়িস না আবার। তোর তো অভ্যাস খারাপ। যখন তখন ঘুমিয়ে পড়িস। তাহলে কিš‘ চালান হয়ে যাবি।
            সাদ বলল, তুই ঘুমিয়ে পড়লে আমরা গুম হয়ে যাব।
            এত জ্ঞান দিস না। তোরা এখন যা। বেশি দেরি করিস না অয়ন। 
            দেরি করব না। পকেটে হাত দিতে দিতে বলল অয়ন। এরপর একটা চাকু বের করল। ধরল সামির সামনে। বন্ধুরা চমকে উঠল। চাকু! কোথায় পেয়েছিস অয়ন? এটা দিয়ে কী করবি? জানতে চাইল নিলয়।
           চাকুটা নাড়াতে নাড়াতে সামান্য হাসল অয়ন। কী মনে করছিস, আমাদের ধরাটা এত সহজ? সামনে পেলে ওদের একটাকেও ছাড়ব না। 
             বন্ধুদের সাহস কিছুটা বেড়ে গেল। সেই সাহস নিয়ে হাঁটছে অয়নের পেছনে। চুপচাপ আড়ালে বসে রইল সামি। বাড়ির সীমানায় গিয়ে দাঁড়াল অয়ন। সাদ আর রিয়াদকে বলল, আমরা এখানে বসব। বাড়ির ভেতরে যাবি তোরা। কাউকে দেখলে একটা শিস দিবি। না দেখলে দুইটা। তখন আমরা আসব। তোদের শিসের অপেক্ষায় থাকব। খুব সাবধান। দ্রুত ঘরের পেছনে চলে যাবি। দরজা বন্ধ থাকবে। ভেতরে লোক থাকতে পারে। সেটাও বোঝার চেষ্টা করবি।  
            মাথা নেড়ে সাদকে নিয়ে বাড়ির ভেতর গেল রিয়াদ। খুব সাবধানে পা ফেলছে। তাকাচ্ছে এদিক সেদিক। সাদ হাঁটছে পেছনে। বুক কাঁপছে তার। যদি ধরে ফেলে। ওরা আসবে, না ওখান থেকে পালাবে! কিছুই ঠিক বুঝতে পারছে না।
            উঠানে গিয়ে দাঁড়াল রিয়াদ আর সাদ। বাড়িটা নিস্তব্ধ। পাখি ডাকার শব্দও নেই। চারপাশ জঙ্গল। শিহরে উঠল রিয়াদ। তাকাল সাদের মুখের দিকে। কাউকে দেখছে না। ঘরের সামনের দুয়ারে তালা। বেশ পুরনো। জং ধরা। এরপর দুজন খুব কাছাকাছি হয়ে পেছন দিকে গেল। ফিসফিস করে সাদের কানের কাছে মুখ নিয়ে রিয়াদ বলল, কিছু টের পেলে আওয়াজ করবি না। দৌড় দিবি। এক দৌড়ে ওদের কাছে চলে যাব। 
              মাথা নাড়ল সাদ। দাঁড়াল পেছনের দরজায়। কিছুই দেখছে না। দরজা বন্ধ। ভেতরে মানুষ আছে বলে মনে হ”েছ না। এই বাড়িতে মানুষ থাকবে এত সাহস কার আছে? ওখানে আর দাঁড়াল না। দ্রুত সামনে চলে এলো। সব শক্তি দিয়ে শিস দিল রিয়াদ। একটা দিয়ে একটুও সময় নষ্ট করল না। পরেরটা আরও জোরে দিল। 
             শিসের শব্দ শুনেই বন্ধুদের নিয়ে ছুটে এলো অয়ন। চাকুটা বের করে হাতে নিল। ছোট স্বরে রিয়াদের কাছে জানতে চাইল, ঘরের পেছনে গিয়েছিলি?
            মাথা নাড়ল রিয়াদ। হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। ওরা নেই।
            বন্ধুদের নিয়ে পেছনে গেল অয়ন। বাড়িটা আরও বেশি ভুতুড়ে মনে হচ্ছে। সবকিছু কেমন ঝিমিয়ে পড়েছে। তাদের মনেও খুব বেশি উত্তেজনা নেই। হঠাৎ চা ল্যতা হারিয়েছে। অদৃশ্য একটা ভয় ঘাপটি মেরে আছে কোথাও। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল বন্ধ। দরজাটা চাপানো, না ভেতর থেকে বন্ধ? প্রশ্ন জাগল অয়নের মনে। চাপিয়ে রেখেছিল তারা। কিন্তু আজ দরজাটা খোলার সাহস পাচ্ছে না। ভেতরের উচ্ছ্বাসটা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। বন্ধুরাও সাহস দেখাচ্ছে না। আবির বলল, ভেতরে যেতে হবে না। ওই পাশে চল। দরজা থাকলে বাইরে থেকেও বোঝা যাবে। সেদিন দেখেছি দরজা নেই। শেষবেলায় ঘরের ভেতর ঢুকতে হবে না। 
          অয়নও ভাবল তাই। দ্রুত এখান থেকে বের হতে হবে। সেই রুমের দেয়ালের পাশে দাঁড়াল। কোনো দরজা নেই। একটাই দরজা। সেটা ভেতরে। 
          সাদ বলল, আমার মনে একটা সন্দেহ জাগছে। 
          সেটা আবার কী? বলে ফেল। আটকে রাখিস না। বলল নিলয়। 
          ওই রুম থেকে সুড়ঙ্গ পথ থাকতে পারে। যা দিয়ে অনেক দূরে চলে গেছে ওরা। 
          অয়নের চিন্তা বাঁক পাল্টাল। সাদ খারাপ বলেনি। সুড়ঙ্গ থাকতে পারে। সেটা ভাবেনি সে। তবে রুমের ভেতর সেরকম কিছু দেখেনি। 
          আবির বলল, তাহলে ঘরের ভেতর ঢুকবি?
          কালো গাড়ির কথা মনে পড়ল অয়নের। ভেসে উঠল বাবার মুখ। কোনো বিপদে পড়লে রক্ষা হবে না। মেরে ফেলবে বাবা। খানিক ভেবে বলল, আজ না। বিষয়টা মাথায় রাখলাম। স্যারকে জানাব। এখানে থাকা ঠিক হবে না। দ্রæত বের হতে হবে। কিছুক্ষণ পরেই অন্ধকারে ডুবে যাবে এই বাড়ি। পথ হারিয়ে ফেলব আমরা। 
           ঘরের সামনে এলো সবাই। কর্কশ কণ্ঠে অচেনা একটা পাখি ডাকছে। সে ডাকে ভয়ের বার্তা। দ্রæত পা বাড়াল বের হওয়া পথে। বাড়ির সীমানা পেরিয়ে চলে এলো চা বাগানে। যেখানে বসেছিল সামি। সামিকে দেখছে না। কোথায় গেল ? চিন্তার ভাজ পড়ল মাথায়। এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। দেখছে না। নিলয়ের দিকে তাকিয়ে অয়ন বলল, আমরা তো শব্দ করিনি। তাহলে সামি কোথায় গেল?
Series Navigation<< কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। পঞ্চম পর্বকিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। সপ্তম পর্ব ।। >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *